Ajker Patrika

হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সন্তানের স্কুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলায় বাবা-মাকে ধরে নিয়ে গেল পুলিশ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৫, ১৬: ৩৬
ম্যাক্সি অ্যালেন ও লেভাইন দম্পতি ও তাঁদের সন্তান। ছবি: সংগৃহীত
ম্যাক্সি অ্যালেন ও লেভাইন দম্পতি ও তাঁদের সন্তান। ছবি: সংগৃহীত

৯ বছর বয়সী মেয়ের স্কুলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলায় বাবা-মাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। ম্যাক্সি অ্যালেন ও রোজালিন্ড লেভাইন নামের ওই দম্পতিকে লন্ডনের উত্তরে হার্টফোর্ডশায়ারের ৬ পুলিশ কর্মকর্তা তাদের ৩ বছর বয়সী ছোট মেয়ের সামনে থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং আট ঘণ্টা ধরে একটি সেলে আটকে রাখে।

লন্ডনের দ্য টাইমস পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই দম্পতি জানিয়েছেন—তাদের স্কুল প্রাঙ্গণে হয়রানি, বিদ্বেষপূর্ণ যোগাযোগ এবং গোলমাল সৃষ্টির অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পাঁচ সপ্তাহ তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, এ বিষয়ে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৯ জানুয়ারি ওই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে স্কুল কর্তৃপক্ষ অ্যালেন ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে অসংখ্য ইমেইল পাঠানো এবং অভিভাবকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ‘অবমাননাকর’ মন্তব্যের অভিযোগ আনে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা এবং হোয়াটসঅ্যাপে স্কুল গভর্নিং বডির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ’ করার পর কাউলি হিল প্রাইমারি স্কুল এর আগে ওই দম্পতিকে বিদ্যালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।

টাইমস রেডিওর প্রযোজক ৫০ বছর বয়সী অ্যালেন সংবাদপত্রটিকে জানান, তাদের ৯ বছর বয়সী মেয়ে সাশার অভিভাবক সম্মেলনে তাঁদের যোগ দিতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, তাঁদের সঙ্গে যা করা হয়েছে, তা হার্টফোর্ডশায়ার কনস্ট্যাবুলারির ‘মারাত্মক বাড়াবাড়ি’ এবং কাউলি হিল প্রাইমারির এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ছিল ‘অস্বস্তিকর অভিভাবকদের মুখ বন্ধ করা।’

অ্যালেন আরও বলেন, ‘এটা ছিল একেবারে দুঃস্বপ্নের মতো। আমি বিশ্বাস করতে পারিনি যে, এমন কিছু ঘটতে পারে। একটি সরকারি কর্তৃপক্ষ তদন্ত বন্ধ করার জন্য পুলিশ ব্যবহার করতে পারে আমরা ভাবতেও পারিনি। আমরা ব্যক্তিগতভাবেও কখনো খারাপ বা হুমকি দিয়ে কথা বলিনি এবং সব সময় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অথচ কোন যোগাযোগগুলোকে অপরাধমূলক বলা হচ্ছে, তা আমাদের কখনো জানানো হয়নি, যা সম্পূর্ণ কাফকার গল্পের মতো।’

গত বছর মে মাসে এই সংঘাতের শুরু। অ্যালেন জানান, তিনি স্কুল গভর্নিং বডির কাছে জানতে চেয়েছিলেন, আগের প্রধান শিক্ষক ৬ মাস আগে অবসরের ঘোষণা দেওয়া সত্ত্বেও কেন উন্মুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়নি। এক মাস পর স্কুলের গভর্নিং বডির চেয়ারপারসন জ্যাকি স্প্রিংস অভিভাবকদের কাছে একটি চিঠি লেখেন বলে অভিযোগ, যেখানে তিনি ‘গোলযোগ’ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।

অ্যালেন বলেন, তিনি ও তাঁর স্ত্রী একটি ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ওই সতর্কবার্তার বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। লেভাইন জানান, তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লুইস থমাসের বিষয়ে একটি মন্তব্য করেছিলেন, যেখানে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টের প্রতি স্কুলের অতিপ্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে বলে ইঙ্গিত করেছিলেন।

এর কিছুক্ষণ পরই স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই দম্পতিকে স্কুল প্রাঙ্গণে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বলে অভিযোগ। তাদের নাকি বলা হয়েছিল, তারা কেবল ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবেন এবং পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে তারা নিয়মিতভাবে তা করেছিলেন বলে জানান।

দম্পতি জানান, তারা বারবার স্কুলকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করেছিলেন। কারণ, তাদের মেয়ের মৃগী রোগ রয়েছে। তাঁরা প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের উদ্বেগের বিষয় সহ একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেন।

এরপর স্কুল কর্তৃপক্ষ নাকি মনে করে যে ই-মেইলের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে গেছে এবং তারা হার্টফোর্ডশায়ার পুলিশের কাছে পরামর্শ চেয়েছিল।

ডিসেম্বরে এক পুলিশ কর্মকর্তা পরিবারটিকে একটি সতর্কবার্তা দেন এবং তাদের নাকি সাশাকে স্কুল থেকে বের করে নিতে বলেন। গ্রেপ্তারের এক সপ্তাহ আগে, পরের মাসেই তারা তা করেছিলেন। লেভাইন বলেন, যখন পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁর দরজায় এসে দাঁড়ান, তখন তিনি ভেবেছিলেন তাঁর বড় মেয়ে মারা গেছে, কারণ ‘ছয়জন পুলিশ কর্মকর্তা কেন তার দরজায় আসবে, তার অন্য কোনো কারণ তিনি ভাবতে পারেননি।’

লেভাইন বলেন, ‘আমার বুক ধুকপুক করছিল, ভাবছিলাম কোনো ভয়ানক কিছু ঘটেছে। তাই যখন আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো, অদ্ভুতভাবে আমি প্রথমে কিছুটা স্বস্তি বোধ করলাম। তারপর আমি ভাবতে শুরু করলাম, এসব কী? কী হচ্ছে?’

দম্পতি জানান, তারা পরবর্তী ১১ ঘণ্টা স্টিভেনেজ থানায় কাটিয়েছেন, যেখানে তাদের সতর্কতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং মধ্যরাতের দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

দ্য টাইমসকে দেওয়া এক বিবৃতিতে কাউলি হিল প্রাইমারি স্কুল বলেছে, ‘দুজন অভিভাবকের কাছ থেকে আসা প্রচুর সরাসরি যোগাযোগ এবং সামাজিক মাধ্যমে তাদের করা পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পুলিশের পরামর্শ চেয়েছিলাম, কারণ এটি স্কুলের কর্মী, অভিভাবক ও গভর্নিং বডির সদস্যদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’

স্কুলটি আরও বলেছে, ‘অভিভাবকদের যেকোনো উদ্বেগের কথা জানাতে আমরা সব সময়ই স্বাগত জানাই, তবে আমরা অনুরোধ করি তারা যেন উপযুক্ত উপায়ে এবং স্কুলের প্রকাশিত অভিযোগ পদ্ধতি অনুসরণ করে এটি করেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড়

বাংলাদেশের ১৮ বছরের সেই অপেক্ষা তবে ফুরোচ্ছে

খাবারে চেতনানাশক মিশিয়ে সিঁধ কেটে চুরির সময় গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ

চোর সন্দেহে যুবককে পিটুনি, প্রতিবাদ করায় দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা

জুলাই আন্দোলনের নারীদের সম্মাননা নিয়ে প্রশ্নে যা বলল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত