Ajker Patrika

লেপার্ড ট্যাংকের জন্য মরিয়া ইউক্রেন 

লেপার্ড ট্যাংকের জন্য মরিয়া ইউক্রেন 

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ সেনাদের মোকাবিলায় জার্মানির লেপার্ড-২ ট্যাংকের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে ইউক্রেন। যুদ্ধের শুরু থেকেই পশ্চিমাদের কাছ থেকে নিয়মিত অস্ত্র সহায়তা পেয়ে আসছে ইউক্রেন। এবার তাদের কাছে সরাসরি ট্যাংক সহায়তা চেয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল শুক্রবার জার্মানির রামস্টেইন বিমানঘাঁটিতে ন্যাটো ও ৫০টি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা বৈঠক শুরু করেছেন। ওই বৈঠকের ঠিক আগে পশ্চিমাদের কাছে দ্রুত এই ট্যাংক সরবরাহের আবেদন জানিয়েছেন জেলেনস্কি। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। 

রামস্টেইন বিমানঘাঁটিতে বৈঠকে বসা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের উদ্দেশে জেলেনস্কি বলেন, এক শ ধন্যবাদ মানে এক শ ট্যাংক নয়। জার্মান পাবলিক টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের কাছে লেপার্ড থাকলে সেটা আমাদের দিন।’ এ সময় লেপার্ড ট্যাংক ইউক্রেনকে দেওয়া নিয়ে জার্মানির দ্বিধার কড়া সমালোচনা করেন জেলেনস্কি। বার্লিনকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, লেপার্ডগুলো শুধু আত্মরক্ষায় ব্যবহার করা হবে। 

এ দিকে জার্মানির ওপর ইউক্রেনকে লেপার্ড–২ ট্যাংক সরবরাহের চাপ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু গতকালকের বৈঠক শেষে এখনো তারা কোনো রকমের প্রতিশ্রুতি দেয়নি। এই ট্যাংক ব্যবহারকারী ইউরোপের অন্য দেশগুলোকে ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার চাপও বাড়ছে জার্মানির ওপর। 

জার্মানির নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস রামস্টেইনে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘লেপার্ড ট্যাংকগুলোর জন্য কখন সিদ্ধান্ত হবে এবং সিদ্ধান্তটি কেমন হতে পারে তা আমরা কেউই বলতে পারি না।’ জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্বীকার করেছেন যে জার্মানি একতরফাভাবে ট্যাংক সরবরাহে বাধা দিচ্ছে। তিনি বলেন, যখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তখন তিনি দ্রুত অগ্রসর হতে চেয়েছিলেন। এ জন্য প্রাথমিকভাবে কাজও শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ সকালে আমি আমার মন্ত্রণালয়কে বলেছিলাম আমাদের সামরিক বাহিনীতে এবং কারখানায় নির্মাণাধীন লেপার্ড ট্যাংকের একটা তালিকা তৈরি করতে।’ 

এ দিকে গতকাল সম্মেলনের শুরুতে ইউক্রেনকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। তিনি বলেন, ‘এটি ধীরে এগোনোর সময় নয়। এখন সবকিছু নিয়ে নামার সময়। ইউক্রেনের জনগণ আমাদের দিকে চেয়ে আছে।’ তবে ট্যাংকের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিছু বলেননি। 

ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের প্রায় ১১ মাস। ন্যাটোর সামরিক ব্যক্তিরা মনে করছেন মস্কো সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে নতুন করে সেনাসমাবেশ শুরু করেছে। তারা নতুন করে আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। শিগগিরই রাশিয়ার সেনা বাহিনীকে পিছু হটাতে ইউক্রেনের সামনে বড় রকমের সুযোগ আসবে বলে মনে করছেন পশ্চিমারা। তাঁদের ধারণা মস্কোর গোলাবারুদ এবং প্রশিক্ষিত সেনার অভাব রয়েছে। 

স্বাভাবিকভাবেই ইউক্রেন ও এর মিত্রদের কথা সমর্থনে নারাজ রাশিয়া। এই যুদ্ধে ন্যাটোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততার বিষয়ে সতর্ক করে রাশিয়া বলছে, ইউক্রেনকে অতিরিক্ত ট্যাংক সরবরাহে যুদ্ধের বর্তমান গতিপ্রকৃতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। গতকাল ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি, এ ধরনের অস্ত্র সরবরাহ মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনবে না, বরং এটি ইউক্রেন ও দেশটির জনগণের সমস্যা বাড়াবে।’ 

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের জন্য আরও ২৫০ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজে আরও সাঁজোয়া যান ও গোলাবারুদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ফিনল্যান্ড নতুন করে ৪৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার সমপরিমাণের অস্ত্র সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। তবে এর মধ্যে জার্মানির তৈরি লেপার্ড-২ ট্যাংক নেই। জার্মানি বলছে, সবাই মতৈক্য হলেই এই ট্যাংক পাঠানো যাবে। ইউরোপজুড়ে ন্যাটো সেনাবাহিনীতে বিপুলসংখ্যক লেপার্ড ট্যাংক আছে। ইউক্রেনের জন্য এ ধরনের ট্যাংক সবচেয়ে উপযুক্ত বলে আসছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। তবে এই ট্যাংক রপ্তানির যেকোনো সিদ্ধান্ত আটকে দেওয়ার ক্ষমতা বার্লিনের হাতে রয়েছে। জার্মানির এই ট্যাংক রপ্তানি করতে এবং যেসব ইউরোপীয় দেশ এটি ব্যবহার করছে তাদের অন্য দেশে এই ট্যাংক পাঠাতে বার্লিন সরকারের অনুমতি লাগে বলে জার্মানির আইনে আছে। জার্মান আইনের অধীনে পোল্যান্ড বা ফিনল্যান্ডের মতো দেশগুলো এসব ট্যাংক পুনরায় রপ্তানি করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে বার্লিনের সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। 

এ দিকে যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে যে তারা ইউক্রেনে ১৪টি চ্যালেঞ্জার–২ ট্যাংক পাঠাবে। কিন্তু কিয়েভ আরও ট্যাংক চায়। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, তিনি আশা করেছিলেন যে ৫০ মিত্ররা ‘সবাই এই বার্তাটি শুনতে পাবেন যে ২০২৩ সালে ট্যাংকটি গুরুত্বপূর্ণ।’ 

জার্মানির লেপার্ড ট্যাংকগুলো এই যুদ্ধে আপাতত ইউক্রেনের জন্য সব সমীকরণ সহজ করে দিতে পারে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। ব্রিটিশ ট্যাংকের তুলনায় এই ট্যাংকের সরবরাহ অনেক বেশি রয়েছে এবং এক ডজনেরও বেশি দেশ এটি ব্যবহার করছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মিয়ানমারে নিযুক্ত প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাকে দেশে ফেরার নির্দেশ

সরকারি কর্মচারীদের পদ-পদবি-বেতন কাঠামো নিয়ে পাল্টা অবস্থানে দুই পক্ষ

আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে যা বলল পাকিস্তানের পত্রিকা দ্য ডন

বাংলাদেশ এড়িয়ে সমুদ্রপথে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে নতুন প্রকল্প ভারতের

মোহাম্মদপুরে আলোকচিত্রী ও জিগাতলায় শিক্ষার্থী খুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত