Ajker Patrika

ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে কুয়াশা এখন নতুন খেলোয়াড়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের হুলিয়াপোল থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। ছবি: সিএনএন
ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের হুলিয়াপোল থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। ছবি: সিএনএন

ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে এখন আবহাওয়া নিজেই এক নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ঘন কুয়াশা দুই পক্ষের জন্যই যেমন বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তেমনি কখনো কখনো দিয়েছে কৌশলগত সুবিধাও।

রোববার (১৬ নভেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, কুয়াশার কারণে ফ্রন্টলাইনে ড্রোনের ব্যবহার এখন কমে গেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় পক্ষই আকাশ থেকে নজরদারিতে বাধার মুখে পড়ছে। তবে এই ঘন কুয়াশাকেই কাজে লাগিয়ে রাশিয়ান বাহিনী গত শুক্রবার দক্ষিণ ইউক্রেনের ভভচা নদীর ওপর একটি পন্টুন সেতু স্থাপন করতে সক্ষম হয়।

অনানুষ্ঠানিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ সাইট ‘ডিপস্টেট’-এর তথ্যমতে, কুয়াশায় কম দেখা যাওয়ার সুযোগ নিয়ে রুশ বাহিনী অন্তত ১০টি সাঁজোয়া যান নদী পার করে দাখনে গ্রামে ছড়িয়ে দেয়।

ইউক্রেনীয় সেনা সদস্য স্তানিস্লাভ বুনিয়াতভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, ‘কুয়াশা খুব ঘন, শত্রুসেনারা জমায়েত হচ্ছে।’ দোনেৎস্ক অঞ্চলের পোক্রোভস্কেও ড্রোন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে, আর যুদ্ধক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার মাত্রা বেড়েছে।

স্থানীয় এক ইউক্রেনীয় সেনা বলেছেন, ‘দনবাসের কুয়াশায় চলাচল সুবিধাজনক, ড্রোন আপনাকে সহজে লক্ষ্য করতে পারে না। কিন্তু আমাদের জন্যও কঠিন। পুরো পরিস্থিতি যেন এক অদ্ভুত পাশা খেলা।’

কুয়াশার আড়ালকে ব্যবহার করেই ইউক্রেনীয় বাহিনী সাম্প্রতিক দিনগুলোতে পোক্রোভস্কে আকস্মিক হামলা চালিয়েছে। সামরিক বিশ্লেষক ডেভিড অ্যাক্স জানান, কুয়াশায় আড়াল নিয়ে ইউক্রেনীয় ইউনিটগুলো রুশ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হানা দিচ্ছে, বিশেষ করে রেললাইন পেরিয়ে।

অ্যাক্স আরও জানান, আকাশে নজরদারি কমে যাওয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রে বিভ্রান্তি বেড়েছে। এই পরিস্থিতি রাশিয়ার জন্য যেমন আক্রমণাত্মক অগ্রযাত্রাকে সহজ করছে, তেমনি ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য অভিযানে ও অবরুদ্ধ ইউনিট উদ্ধারেও সহায়ক হতে পারে।

ইতিমধ্যে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে রাশিয়ার অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইয়াবলুকোভে ও নিকটস্থ আরও দুটি গ্রাম দখল করেছে। ইউক্রেনীয় বাহিনী বলেছে, গত এক দিনে প্রায় ৪০টি সংঘর্ষ হয়েছে এবং রুশ সেনাদের প্রায় ৩০০ জন হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

তবে ইউক্রেনের সেনাপ্রধান ওলেক্সান্দ্র সিরস্কি সতর্ক করে বলেছেন, দক্ষিণাঞ্চলে পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। সংখ্যায় বেশি থাকার জেরে রুশ বাহিনী তিনটি গ্রাম দখল করেছে। বর্তমানে রুশ বাহিনী জাপোরিঝিয়া শহর থেকে মাত্র ৯০ কিলোমিটার দূরে এবং হুলিয়াইপোলের ১০ কিলোমিটারের ভেতরে পৌঁছে গেছে। সেখান থেকে নতুন করে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিরল যৌনবিকৃতি ছিল হিটলারের, ডিএনএ বিশ্লেষণে শনাক্ত

পূবালী ব্যাংকে চাকরি, ৫০ বছরেও আবেদনের সুযোগ

বিহারে নির্বাচনে ভরাডুবির পর লালু যাদবের ঘরে আগুন, বাপ–ভাইকে ত্যাজ্য করলেন রোহিনী

উৎপাদনে ফিরছে বেক্সিমকো টেক্সটাইল, হাজারো শ্রমিকের জন্য আশার বার্তা

বেসরকারি স্কুল-কলেজের সভাপতির দায়িত্বে ডিসি-ইউএনও

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দিল্লি গাড়িবোমা হামলা ছিল আত্মঘাতী, জইশ সদস্য উমর বিস্ফোরণে নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লালকেল্লায় আত্মঘাতী হামলাকারী উমর উন নবী। ছবি: সংগৃহীত
লালকেল্লায় আত্মঘাতী হামলাকারী উমর উন নবী। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) নিশ্চিত করেছে, দিল্লির লালকেল্লার বিস্ফোরণ ছিল একটি আত্মঘাতী হামলা। এনআইএ জানিয়েছে, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন আত্মঘাতী হামলাকারী উমর উন নবী। তাঁর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল বলে জানিয়েছে এনআইএ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে এনআইএর বরাতে জানিয়েছে, আমির রশিদ আলী নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে মিলে এই হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন উমর উন নবী। গত সোমবারের ওই হামলায় ব্যবহৃত গাড়িটি আমিরের নামেই রেজিস্টার্ড ছিল। তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের সাম্বুরা, পাম্পোর এলাকার বাসিন্দা।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গাড়ি কেনার কাজে সাহায্য করতে আমির দিল্লিতে এসেছিলেন এবং পরে সেই গাড়িকেই আইইডিতে (গাড়িবোমা) রূপান্তর করা হয়।

ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, বিস্ফোরণে নিহত গাড়িচালকই ছিলেন উমর উন নবী। তিনি ফরিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার বাসিন্দা। এনআইএ নবীর আরও একটি গাড়ি জব্দ করেছে, যা এখন তদন্তাধীন।

এদিকে এনআইএ আজ রোববার তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে দাবি করে জানিয়েছে, গ্রেপ্তার চার ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট সংযোগ না পাওয়ায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মুক্তিপ্রাপ্তরা হলেন চিকিৎসক রেহান, মোহাম্মদ, মুস্তাকিম ও সার বিক্রেতা দিনেশ সিংলা। সম্প্রতি তাঁদের হরিয়ানার নুহ এলাকা থেকে আটক করা হয়েছিল।

তাঁদের মধ্যে তিনজন চিকিৎসকই আগে উমর উন নবীর সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন এবং আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের নাম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আলোচনায় এসেছে।

এনআইএ এ পর্যন্ত ৭৩ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নিয়েছে, এর মধ্যে আহত ব্যক্তিরাও রয়েছেন। তদন্ত চলছে দিল্লি পুলিশ, জম্মু–কাশ্মীর পুলিশ, হরিয়ানা পুলিশ, উত্তর প্রদেশ পুলিশসহ একাধিক রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সংস্থার সমন্বয়ে। বিস্ফোরণের পেছনে আরও বড় কোনো চক্র রয়েছে কি না, কারা কারা যুক্ত—এসব জানতেই তদন্ত এখন একাধিক রাজ্যে সমান্তরালভাবে এগোচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে ধীরগতিতে চলতে থাকা একটি হুন্ডাই আই-২০ গাড়ি বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১৩ জন নিহত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিরল যৌনবিকৃতি ছিল হিটলারের, ডিএনএ বিশ্লেষণে শনাক্ত

পূবালী ব্যাংকে চাকরি, ৫০ বছরেও আবেদনের সুযোগ

বিহারে নির্বাচনে ভরাডুবির পর লালু যাদবের ঘরে আগুন, বাপ–ভাইকে ত্যাজ্য করলেন রোহিনী

উৎপাদনে ফিরছে বেক্সিমকো টেক্সটাইল, হাজারো শ্রমিকের জন্য আশার বার্তা

বেসরকারি স্কুল-কলেজের সভাপতির দায়িত্বে ডিসি-ইউএনও

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিরল যৌনবিকৃতি ছিল হিটলারের, ডিএনএ বিশ্লেষণে শনাক্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৪২
অ্যাডলফ হিটলার। ছবি: সংগৃহীত
অ্যাডলফ হিটলার। ছবি: সংগৃহীত

নাজি জার্মানির স্বৈরশাসক অ্যাডলফ হিটলার একটি বিরল জিনগত যৌন বিকৃতিতে ভুগতেন। সম্প্রতি প্রকাশিত ডিএনএ বিশ্লেষণে দেখা গেছে হিটলারের ছিল ‘কালম্যান সিনড্রোম’। এই ব্যাধি কিশোর বয়সে যৌন অঙ্গের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। নতুন গবেষণার আলোকে ‘হিটলার্স ডিএনএ: ব্লুপ্রিন্ট অব এ ডিক্টেটর’ নামে যুক্তরাজ্যে নির্মিত একটি তথ্যচিত্রে এই তথ্য উঠে এসেছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য টাইমস জানিয়েছে, গবেষকেরা হিটলারের যে রক্ত বিশ্লেষণ করেছেন, তা সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৯৪৫ সালে। হিটলার আত্মহত্যা করার পর তাঁর সোফা থেকে কেটে সংগ্রহ করা এক টুকরো কাপড়ে ওই রক্ত ছিল। পরে ডিএনএ পরীক্ষায় চিহ্নিত হয়েছে—হিটলারের যৌন অঙ্গের বিকাশে ত্রুটি ছিল এবং তাঁর দেরিতে বা অসম্পূর্ণভাবে বয়ঃসন্ধি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের তথ্য বলছে, কালম্যান সিনড্রোম থাকা পুরুষদের ক্ষেত্রে ছোট লিঙ্গ, অণ্ডকোষের অস্বাভাবিকতা, বন্ধ্যত্ব এবং যৌন আকাঙ্ক্ষা কম থাকার মতো শারীরিক লক্ষণ দেখা যেতে পারে। এমনকি গবেষণাটি ইঙ্গিত দিয়েছে, হিটলারের মাইক্রোপেনিস থাকার সম্ভাবনা ছিল ১০ শতাংশ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁর ছোট যৌনাঙ্গ নিয়ে সহযোদ্ধাদের ঠাট্টার কথাও নথিভুক্ত রয়েছে।

২০১৫ সালে পাওয়া হিটলারের ১৯২৩ সালের একটি চিকিৎসা প্রতিবেদনেও উল্লেখ ছিল—তাঁর ডান অণ্ডকোষ বিকশিত হয়নি, যা কালম্যান সিনড্রোমের সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ।

পটসডামের ইতিহাসবিদ অ্যালেক্স জে কে–এর মতে, এই শারীরিক অবস্থাই হয়তো ব্যাখ্যা করতে পারে কেন হিটলার সম্পূর্ণভাবে রাজনীতিকে ঘিরেই জীবন কাটিয়েছিলেন এবং ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন প্রায় নিঃসঙ্গ। অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নাৎসি নেতাদের স্ত্রী, সন্তান বা সম্পর্ক থাকলেও হিটলার ছিলেন ব্যতিক্রম—ব্যক্তিগত সম্পর্কে প্রায় অনুপস্থিত।

গবেষণার আরেকটি দিক হলো—ডিএনএ বিশ্লেষণে দেখা গেছে হিটলারের অটিজম, সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার বিকার গঠনের সম্ভাবনা ছিল জনসংখ্যার শীর্ষ এক শতাংশের মধ্যে। তবে গবেষকেরা জোর দিয়ে বলেছেন, জিন কখনোই আচরণের একমাত্র ব্যাখ্যা নয়, বরং এটি মানুষের চরিত্র ও সিদ্ধান্তের খুব ছোট একটি অংশ।

গবেষণার প্রধান জিনতত্ত্ববিদ প্রফেসর টুরি কিং মত দিয়েছেন, বিষয়টি অত্যন্ত ব্যঙ্গাত্মক—কারণ হিটলার নিজে ‘জিনগত বিশুদ্ধতা’ নিয়ে মগ্ন ছিলেন। কিং বলেন, ‘নিজের জিনগত ফলাফল দেখলে সম্ভবত নিজেকেই তিনি (হিটলার) গ্যাস চেম্বারে পাঠাতেন।’

তবে কিং পরিষ্কার করেছেন, এই গবেষণা কোনোভাবেই হিটলারের নৃশংসতার দায় কমায় না। একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করেছেন—এই তথ্য যেন একই রোগে আক্রান্ত মানুষদের প্রতি ভুল ধারণা বা কলঙ্ক তৈরি না করে।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী স্যার সাইমন ব্যারন-কোহেনও বলেছেন, আচরণ কখনোই ১০০ শতাংশ জিনগত হয় না। তিনি বলেন, ‘হিটলারের নিষ্ঠুরতাকে এই রোগগুলোর সঙ্গে জুড়ে দিলে এসব রোগে আক্রান্ত নিরীহ মানুষের জন্য তা অন্যায় হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিরল যৌনবিকৃতি ছিল হিটলারের, ডিএনএ বিশ্লেষণে শনাক্ত

পূবালী ব্যাংকে চাকরি, ৫০ বছরেও আবেদনের সুযোগ

বিহারে নির্বাচনে ভরাডুবির পর লালু যাদবের ঘরে আগুন, বাপ–ভাইকে ত্যাজ্য করলেন রোহিনী

উৎপাদনে ফিরছে বেক্সিমকো টেক্সটাইল, হাজারো শ্রমিকের জন্য আশার বার্তা

বেসরকারি স্কুল-কলেজের সভাপতির দায়িত্বে ডিসি-ইউএনও

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিহারে ভরাডুবির পর পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ুর জোটসঙ্গীরা কি কংগ্রেস ত্যাগ করবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ছবি: আইএএনএস
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ছবি: আইএএনএস

২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল কংগ্রেসের কাঠামোগত দুর্বলতাকে আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এটি আগামী বছর চারটি রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভা নির্বাচনে আঞ্চলিক মিত্রদের সঙ্গে কংগ্রেসের দলীয় হাইকমান্ডের প্রভাবকে সীমিত করবে।

দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তৎপরতা—দেশজুড়ে শোরগোল করে সফর, প্রচার কোনোটিই আসন বাড়াতে কাজে লাগছে না। এর কারণ রাজ্য পর্যায়ে সংগঠন দুর্বল এবং প্রার্থী বাছাই ও প্রচারে আঞ্চলিক নেতাদের আধিপত্য ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

আর বারবার এমন ভরাডুবি রাজ্য নেতা ও জোটসঙ্গীদের কাছে স্পষ্ট করেছে যে, কংগ্রেসের হাইকমান্ড ভোটে জয়ের কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। ফলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ‘নৈতিক আধিপত্য’ বা দর-কষাকষির ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। বিপরীতে আঞ্চলিক নেতাদের ক্ষমতা আরও বাড়ছে, যেখানে তাঁদের নিজস্ব রাজ্য রাজনীতি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই চলছে।

বিহার সেই বাস্তবতাকে আরও পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ও বাম—দুই দিক থেকেই চাপ

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের মতে, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে এখন রাজ্য ইউনিটের সিদ্ধান্তেই চলতে হবে। কিছুদিন আগে খবর এসেছিল, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুশি করতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্য কংগ্রেসে পরিবর্তন এনেছে। অনেকে বলছেন, মমতার বিরুদ্ধে তির্যক বক্তব্যের কারণে অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে সরিয়ে ‘নরম স্বভাবের’ শুভংকর সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

শুভংকর সরকারকে অনেকে নমনীয় ও সমন্বয়কারী মুখ হিসেবে দেখছেন। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন—রাজ্য রাজনীতিতে তিনি কোনো জাতীয় মিত্রকে গুরুত্ব দিতে চান না। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সোনিয়া গান্ধীর সম্পর্ক কিছুটা সৌহার্দ্যপূর্ণ হলেও রাহুল গান্ধীর প্রতি তাঁর মনোভাব অনেকটাই শীতল।

অন্যদিকে বামফ্রন্ট কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের জোট। তবে তারাও এখন একা লড়াইয়ের কথা ভাবছে। দীর্ঘদিন কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে ফল না পাওয়ায় বাম শিবিরের ভেতরে অসন্তোষ বেড়েছে। কংগ্রেসের অভিজ্ঞ নেতারাও বলছেন—আগামী দিনগুলো আরও কঠিন হবে।

আসামে জোটসঙ্গীদের দাবি আরও বেশি

আসামে বিহারের ফলাফল কংগ্রেসের অবস্থান আরও দুর্বল করে দিয়েছে। এখানে বদরুদ্দিন আজমলের নেতৃত্বাধীন এআইইউডিএফ ও কংগ্রেস মাঝে মাঝে নির্বাচনী সমঝোতায় এলেও তা সব সময় ফলপ্রসূ হয়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবার রাজ্যের মিত্র দলগুলো আসন বণ্টন থেকে প্রচার কৌশল—সবক্ষেত্রেই আরও স্বাধীনতা দাবি করবে।

তামিলনাড়ুতে কংগ্রেস ‘কনিষ্ঠ অংশীদার’

তামিলনাড়ুর রাজনীতি বহুলাংশেই আঞ্চলিক। ডিএমকে বা এআইএডিএমকের মতো দ্রাবিড় দলগুলোই এখানে প্রভাবশালী। ফলে কংগ্রেসকে তারা মূলত ‘মৌসুমি মিত্র’ বলেই বিবেচনা করে।

বিহারের ফলাফলের পর ডিএমকে আরও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেবে—কংগ্রেস কেবল কনিষ্ঠ অংশীদারই থাকবে। আসন বণ্টন বা প্রচারের কৌশল কোনো ক্ষেত্রেই কংগ্রেসের দর-কষাকষির সুযোগ নেই। ডিএমকে (দ্রাবিড় মুন্নেত্র কাজাগম) নেতৃত্ব ইতিমধ্যে সতর্ক করেছে, কংগ্রেস যেন নতুন কোনো মিত্র, যেমন অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ থালাপতি বিজয়ের দল তামিলাগা ভেটরি কাজগমের দিকে ঝুঁকতে না পারে।

সম্প্রতি তামিলনাড়ুর উপমুখ্যমন্ত্রী উদয়নিধি স্টালিনের মন্তব্য—হাত (কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতীক) তাদের ছেড়ে যাচ্ছে না—ইতিমধ্যে রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন তুলেছে। বিশ্লেষকদের মতে, বার্তা পরিষ্কার—ডিএমকের ছায়া থেকে বের হওয়ার ক্ষমতা কংগ্রেসের নেই।

কেরালার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত কংগ্রেস

রাজনৈতিক বিশ্লেষক টি জে শ্রীলালের মতে, কেরালায় বিজেপি এখনো কোনো ভিত্তি খুঁজে পায়নি। তাই কেরালায় বিজেপি কোনো হুমকি নয়। ২০২৬ সালের নির্বাচনে মূলত ক্ষমতাসীন বাম গণতান্ত্রিক জোট (এলডিএফ) ও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত গণতান্ত্রিক জোটের (ইউডিএফ) সরাসরি লড়াই হবে।

কিন্তু কেরালায় কংগ্রেসের ভেতরে এখন নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব তীব্র। বহু নেতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। কংগ্রেস এমপি শশী থারুর জুলাই মাসে একটি জরিপ শেয়ার করেছিলেন, যেখানে ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে চান বলে উল্লেখ ছিল। এতে নেতৃত্বের টানাপোড়েন আরও প্রকাশ্যে আসে।

এ ছাড়া মল্লিকার্জুন খাড়গেকে সভাপতি প্রার্থী করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পর থেকে থারুরের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বিষয়টি সামনে এনে কংগ্রেস নেতা কে মুরলিধরন মন্তব্য করেছিলেন—‘থারুর আগে ঠিক করুন, আপনি কোন দলের!’

টি জে শ্রীলালের মতে, রমেশ চেন্নিথালা ও কেসি বেণুগোপালও মুখ্যমন্ত্রী হতে চান।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হওয়ার জন্য তাদের হাতে আসা কোনো সুযোগই কাজে লাগাতে পারেনি। এলডিএফ যদি পরপর তৃতীয় মেয়াদে কেরালার ক্ষমতায় ফিরে আসে, তবে আমি অবাক হব না।’ বিহারের ফল স্পষ্ট করে দিয়েছে, রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ এখন আর নয়াদিল্লির ঘোষণার ওপর নয়, বরং দলটি কত দ্রুত ও কার্যকরভাবে তাদের রাজ্য স্তরের সাংগঠনিক কাঠামোকে ঠিক করবে, তার ওপরই বেশি নির্ভর করবে।

আইএএনএস থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিরল যৌনবিকৃতি ছিল হিটলারের, ডিএনএ বিশ্লেষণে শনাক্ত

পূবালী ব্যাংকে চাকরি, ৫০ বছরেও আবেদনের সুযোগ

বিহারে নির্বাচনে ভরাডুবির পর লালু যাদবের ঘরে আগুন, বাপ–ভাইকে ত্যাজ্য করলেন রোহিনী

উৎপাদনে ফিরছে বেক্সিমকো টেক্সটাইল, হাজারো শ্রমিকের জন্য আশার বার্তা

বেসরকারি স্কুল-কলেজের সভাপতির দায়িত্বে ডিসি-ইউএনও

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাক্ষসী মাছ শোল-গজার পৌঁছে গেছে শ্রীলঙ্কায়—ফন্দি এঁটেছেন জেলেরাও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
শ্রীলঙ্কায় জেলের হাতে ধরা পড়া একটি স্নেকহেড। ছবি: দ্য ইনডিপেনডেন্ট
শ্রীলঙ্কায় জেলের হাতে ধরা পড়া একটি স্নেকহেড। ছবি: দ্য ইনডিপেনডেন্ট

‘স্নেকহেড’ তথা শোল, টাকি ও গজার মাছ বাংলাদেশে সুপরিচিত হলেও শ্রীলঙ্কায় এরা একেবারেই নতুন। এই প্রজাতির মাছ এখন দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দেদুরু ওয়া জলাধারের স্থানীয় জেলে ও কৃষক পরিবারগুলোর জীবিকায় বড় ধরনের হুমকি তৈরি করেছে। তবে সংকটের মাঝেও নতুন সম্ভাবনা খুঁজছেন স্থানীয়রা।

রোববার (১৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে—গত দুই বছরে দেদুরু ওয়া জলাধারের জেলেরা লক্ষ্য করেছেন, তাঁদের জালে আগের মতো আর স্থানীয় মাছ বা চিংড়ি ধরা পড়ছে না। বরং অচেনা স্নেকহেড মাছ বিপুল সংখ্যায় দেখা দিতে শুরু করেছে।

এই মাছ এর আগে শ্রীলঙ্কায় কখনো ছিল না। কর্তৃপক্ষের ধারণা—থাইল্যান্ড বা ইন্দোনেশিয়া থেকে শখের অ্যাকোরিয়ামের জন্য আমদানি করা এসব মাছ যখন বড় হয়ে যায়, তখন মালিকেরা সেগুলো জলাধারে ছেড়ে দেন। সেখান থেকেই শুরু হয় অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার। দ্রুত বংশবৃদ্ধির কারণে এসব মাছ স্থানীয় মাছ ও চিংড়ি প্রজাতিগুলোকে হুমকির মুখে ফেলছে।

গবেষক ড. কেলুম উইজনায়েকে জানান, শ্রীলঙ্কার জলাশয়গুলোতে স্নেকহেড মাছগুলোকে খেয়ে ফেলবে বা বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করবে এমন কোনো প্রাকৃতিক শিকারি নেই। শিকারি না থাকা আর স্থানীয় মাছগুলোকে খাদ্য হিসেবে পেয়ে স্নেকহেড মাছ দেদুরু ওয়া জলাধারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠেছে। এরা পানির ওপরে উঠে অক্সিজেন নিতে পারে এবং খুব অল্প পানিতেও টিকে থাকে। তাদের ধারালো দাঁত, শক্ত চোয়াল এবং ব্যাপক খাওয়ার প্রবণতা স্থানীয় জীববৈচিত্র্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। স্থানীয় মাছ যেখানে সাধারণত এক কেজির কম হয়, সেখানে সাত কেজি ওজন পর্যন্ত স্নেকহেড ধরা পড়েছে।

জেলে রঞ্জিত কুমারা বলেন, ‘২০১৬ সালে যখন মাছ ধরা শুরু করি, তখন নানা জাতের চিংড়ি ও মূল্যবান মাছ পাওয়া যেত। এখন সেগুলো প্রায় বিরল। স্নেকহেড জালে ধরা যায় না—শুধু অ্যাংলিংয়ের (ছিপ দিয়ে) মাধ্যমেই ধরা সম্ভব।’

শোল মাছ খাওয়া শিখে যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার স্থানীয় মানুষেরা। দ্য ইনডিপেনডেন্ট
শোল মাছ খাওয়া শিখে যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার স্থানীয় মানুষেরা। দ্য ইনডিপেনডেন্ট

সংকট মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষ ছিপ দিয়ে মাছ ধরা প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেছিল। তারপরও স্নেকহেড নিয়ন্ত্রণে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তবে স্থানীয়রা আশা হারাতে চান না। রঞ্জিত কুমারা প্রস্তাব দিয়েছেন—সরকার যদি অ্যাংলিং টুরিজম চালু করে, তবে একদিকে স্নেকহেড নিয়ন্ত্রণ হবে, অন্যদিকে জেলে ও কৃষক পরিবারগুলোর জন্য নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি হবে।

এদিকে স্থানীয় জেলে সুজিওয়া করিয়াওয়াসাম স্নেকহেড মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করছেন, যা বাজারে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘চাহিদা বাড়ছে। যত বেশি স্নেকহেড ধরা পড়বে, ততই এর বিস্তার কমবে।’

সংকটের মধ্যেও এভাবেই নতুন সম্ভাবনার পথে এগোতে চাইছে দেদুরু ওয়া গ্রামের মানুষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিরল যৌনবিকৃতি ছিল হিটলারের, ডিএনএ বিশ্লেষণে শনাক্ত

পূবালী ব্যাংকে চাকরি, ৫০ বছরেও আবেদনের সুযোগ

বিহারে নির্বাচনে ভরাডুবির পর লালু যাদবের ঘরে আগুন, বাপ–ভাইকে ত্যাজ্য করলেন রোহিনী

উৎপাদনে ফিরছে বেক্সিমকো টেক্সটাইল, হাজারো শ্রমিকের জন্য আশার বার্তা

বেসরকারি স্কুল-কলেজের সভাপতির দায়িত্বে ডিসি-ইউএনও

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত