Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া আলোচনায় ডাক পায়নি, ইউক্রেন নিয়ে জরুরি বৈঠকে ইউরোপ

জেলেনস্কিকে ছাড়া পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করতে চান ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
জেলেনস্কিকে ছাড়া পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করতে চান ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্কের তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা নীরবতা ভেঙেছে। ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর বাইডেন প্রশাসন রাশিয়ার বিপরীতে গিয়ে দাঁড়ায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তির প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের উন্নয়নে কাজ শুরু করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর শান্তি আলোচনায় বসার পরিকল্পনা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউক্রেনকে ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই শান্তি আলোচনা জন্ম দিয়েছে বিতর্কের। ইউরোপের নেতারা বিষয়টি নিয়ে আগামী সপ্তাহে এক জরুরি সম্মেলন ডেকেছেন।

প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের। তিনি বলেন, এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ‘প্রজন্মে একবার আসা মুহূর্ত’ এবং এটা স্পষ্ট, ইউরোপকে ন্যাটোতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।

স্টারমার বিশ্বাস করেন, তাঁর ভূমিকা হবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে একত্রিত করা, যাতে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করা যায়। এই মাসের শেষে হোয়াইট হাউসে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে ইউরোপীয় নেতাদের মতামত নিয়ে আলোচনা করবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

স্যার কিয়ার ওয়াশিংটন থেকে ফিরে এলে ইউরোপীয় নেতাদের আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও উপস্থিত থাকবেন।

স্যার কিয়ার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে একসঙ্গে রাখার জন্য কাজ করবে যুক্তরাজ্য। এই দুই শক্তি আমাদের বাহ্যিক শত্রুদের থেকে মনোযোগ সরানোর সুযোগ দিতে পারবে না।’

তিনি আরও বলেন, এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এক প্রজন্মে একবার আসা মুহূর্ত, যেখানে আমাদের আজকের বাস্তবতা ও রাশিয়া থেকে আসা হুমকির বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে মনোযোগী হতে হবে।

স্টারমার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা এবং রাশিয়া থেকে আসা হুমকির মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে ইউরোপকে অবশ্যই ন্যাটোতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।’

গতকাল শনিবার জেলেনস্কি ইউরোপের জন্য একটি ‘ইউরোপীয় সেনাবাহিনী’ গঠনের আহ্বান জানান, কারণ ইউএস হয়তো আর ইউরোপের সহায়তায় এগিয়ে আসবে না।

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের বক্তব্য স্পষ্ট করেছে ইউরোপ ও আমেরিকার পুরোনো সম্পর্ক ‘শেষের দিকে’ এবং মহাদেশটিকে ‘এতে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে’।

এদিকে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সৌদি আরবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের আলোচকদের সঙ্গে বৈঠক করতে চলেছেন হোয়াইট হাউসেরশীর্ষ কর্মকর্তারা।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেন বিষয়ক বিশেষ দূত বলেছেন, ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করা হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করার যে কোনো আলোচনায় তারা অংশ নিতে পারবেন না।

বিশেষ দূত কিথ কেলগ বলেন, ‘আগের আলোচনাগুলো ব্যর্থ হয়েছিল কারণ এতে অতিরিক্ত পক্ষ জড়িত ছিল। এটি কিছুটা বিরক্তিকর লাগতে পারে, কিন্তু আমি যা বলছি তা একদম নিখাঁদ সত্য।’

ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত একটি ব্যর্থ যুদ্ধবিরতি চুক্তি ছিল মিনস্ক চুক্তি। ইউরোপ এর প্রভাব থেকে এখনো বের হতে পারেনি। ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যস্থতায় হওয়া এই চুক্তিতে পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে চালানো হয়েছিল।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে মার্কিন প্রতিনিধি মাইকেল ম্যাককল বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সৌদি আরবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের আলোচকদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করবেন।

তবে ম্যাককল বলেন, সৌদি আরবে আলোচনায় জেলেনস্কিকেও রাখা হতে পারে। হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ম্যাককল বলেন, তিনি বুঝতে পেরেছেন জেলেনস্কিকে সৌদি আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই বৈঠকের লক্ষ্য হলো ট্রাম্প, পুতিন ও জেলেনস্কির একটি বৈঠকের ব্যবস্থা করা, যাতে ‘অবশেষে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও এই সংঘাতের অবসান ঘটানো যায়’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত