Ajker Patrika

থাইল্যান্ডের সঙ্গে কম্বোডিয়ার সংঘাতে আঞ্চলিক মোড়ল চীনের ভূমিকা কী

অনলাইন ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘর্ষ আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে নতুন এক উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। আসিয়ান সংগঠনটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্রুত বিকাশমান অঞ্চলে অর্থনৈতিক সহযোগিতার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। এই অঞ্চলটিতে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীন প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।

এই সংঘর্ষ নিয়ে বৃহস্পতিবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চীন। বেইজিংয়ে এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেছেন, ‘আমরা চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আশা করি, উভয় দেশ সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মিটিয়ে নেবে।’

নিউজউইকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া উভয় দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে চীন। তবে কম্বোডিয়ার সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কম্বোডিয়ার সরকার চীনা নৌবাহিনীকে থাইল্যান্ড উপসাগরে একটি নৌ-ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এটি গোলযোগপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরের কাছে। এই অঞ্চলটিতে চীনের একচ্ছত্র আধিপত্যের চেষ্টা অনেক দিন ধরেই বিতর্ক এবং উত্তেজনার জন্ম দিয়ে আসছে।

বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের জন্য দুই দেশই একে অপরকে দায়ী করেছে। থাইল্যান্ড দাবি করেছে, কম্বোডিয়ার গোলাবর্ষণের জবাবে তারা এফ-১৬ জেট দিয়ে কম্বোডিয়ার দুটি সামরিক ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে।

সীমান্তে অন্তত ছয়টি স্থানে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কম্বোডিয়ার গোলাবর্ষণে এক শিশুসহ ১১ জন বেসামরিক নাগরিক ও এক সৈনিক নিহত হন, আহত হন আরও ৩১ জন।

এদিকে কম্বোডিয়ার দিক থেকে কোনো হতাহতের খবর দেওয়া না হলেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত থাইল্যান্ডের হামলাকে কোনো প্ররোচনা ছাড়াই পূর্বপরিকল্পিত সামরিক আগ্রাসন বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আত্মরক্ষার জন্যই কাম্বোডিয়ান সেনারা প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয়েছে।’

এই সংঘাত নিয়ে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক আদালতের (আইসিজে) দ্বারস্থ হয়েছে কম্বোডিয়া। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, আদালতের মাধ্যমে দুই দেশের সীমান্ত বিরোধের সমাধান চাওয়া হলেও, এই উদ্যোগ সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ থাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করে না।

এদিকে, আসিয়ান-এর বর্তমান সভাপতি দেশ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম দুই দেশকে শান্তির পথে এগোনোর আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এই সংগঠনের ‘অহস্তক্ষেপ নীতির’ কারণে তারা এই সংকটে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না বলে মনে করেন সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক বিশ্লেষক টিটা স্যাংলি। তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে চীনই একমাত্র বাস্তবতানির্ভর বাহ্যিক মধ্যস্থতাকারী হতে পারে। কারণ কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড—দুই দেশেই তাদের প্রভাব রয়েছে।’

তবে এই মধ্যস্থতার ক্ষেত্রেও সংশয় রয়েছে। চীনের সঙ্গে উভয় দেশেরই ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও কম্বোডিয়া ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। থাইল্যান্ড এই পক্ষপাতমূলক সম্পর্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন।

বিষয়টি এখন শুধু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অভ্যন্তরীণ সংকট নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়—চীন, আসিয়ান বা জাতিসংঘ—কারা এই সংকট সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ওসি হয়েও আমার কম দামি ফোন, দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই’, ভুক্তভোগীকে মোহাম্মদপুরের ওসি

মোহাম্মদপুর থানায় ভুক্তভোগীকে হেনস্তা: চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার, ৩ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

এনসিপির পদযাত্রা উপলক্ষে ‘স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত’, প্রধান শিক্ষকের দুই রকম বক্তব্য

হিন্দু মন্দির নিয়ে কেন সংঘাতে জড়াল বৌদ্ধ-অধ্যুষিত থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মহড়া শুরু, চলবে ৩০ জুলাই পর্যন্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত