Ajker Patrika

ইউক্রেন নিয়ে আলোচনার নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে চায় ইউরোপ

অনলাইন ডেস্ক
লন্ডনে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন জাস্টিন ট্রুডো সহ ইউরোপের নেতারা। ছবি: সংগৃহীত
লন্ডনে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন জাস্টিন ট্রুডো সহ ইউরোপের নেতারা। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক আলোচনার নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে উদ্যোগী হয়েছেন ইউরোপের নেতারা। এই লক্ষ্যে আজ রোববার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার লন্ডনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এই সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি সহ ইউরোপের একাধিক নেতা অংশ নেন।

সিএনএন বলেছে—এই সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কিকে তিরস্কার করায় পশ্চিমা বিশ্ব হতবাক হয়েছে। অন্যদিকে উল্লসিত হয়েছে মস্কো। এই ঘটনার পর তাই নতুন করে শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নেন ইউরোপের নেতারা।

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্টারমার বলেছেন—ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং আরও কিছু দেশ একসঙ্গে মিলে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের একটি পরিকল্পনা তৈরি করবে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

এই প্রক্রিয়াটি গত মাসে রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের শুরু করা আলোচনার বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। ইউরোপের নেতারা মনে করছেন, ট্রাম্প ও জেলেনস্কির সরাসরি আলোচনায় উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।

গতকাল শনিবার জেলেনস্কিকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেন স্টারমার। রাজা তৃতীয় চার্লসও জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ব্রিটিশ জনগণ তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়।

এ ছাড়া সম্মেলনের আগে স্টারমার ও জেলেনস্কি ২.৮ বিলিয়ন ডলারের ঋণ ত্বরান্বিত করতে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ব্রিটিশ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থ আগামী সপ্তাহেই ইউক্রেন পেতে পারে।

জেলেনস্কি বলেন, ‘এই অর্থ ইউক্রেনে অস্ত্র উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হবে। যুদ্ধ শুরু করেছে রাশিয়া, তাই তাদেরকেই এর মূল্য দিতে হবে।’

ট্রাম্প ও তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সম্প্রতি জেলেনস্কিকে ‘আমেরিকার সাহায্যের প্রতি অকৃতজ্ঞ’ বলে মন্তব্য করেন। তাঁরা ইউক্রেনের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াকে ‘বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ানোর’ শামিল বলে আখ্যা দেন।

এই পরিস্থিতি ইউরোপের জন্য এক দুঃস্বপ্নের মতো। স্টারমার বলেন, ‘কেউই এমন দৃশ্য দেখতে চায় না। এই বিভেদ দূর করাই আমার প্রধান লক্ষ্য।’

স্টারমার ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের কিছু অবস্থান বদলাতে পেরেছেন। তিনি ট্রাম্পকে জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরশাসক’ বলার মতো মিথ্যা মন্তব্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছেন এবং ইউক্রেনের ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলাতে সক্ষম হয়েছেন।

ইউক্রেনের স্বল্পমেয়াদি সামরিক ও অর্থনৈতিক চাহিদা মেটানো, যুদ্ধের স্থায়ী সমাধান এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা—এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে লন্ডনের সম্মেলনে।

স্টারমার বলেন, ‘এটি ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য এক প্রজন্মে একবার আসা সুযোগ। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, কানাডার বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর নেতারা এই সম্মেলনে ছিলেন।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি স্টারমারকে সতর্ক করে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পশ্চিমা বিশ্ব যেন বিভক্ত না হয়ে পড়ে।’

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউক্রেন যুদ্ধ এখন এক সাংঘাতিক সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে। ইউরোপের নেতারা শান্তি আলোচনার নতুন পথ তৈরি করার চেষ্টা করছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আলোচনার বিকল্প হতে পারে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন ইউরোপের এই প্রচেষ্টাকে কীভাবে গ্রহণ করবে, সেটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত