Ajker Patrika

কাশ্মীর হামলায় জড়িত টিআরএফ কি জঙ্গি সংগঠন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ২১: ৫৪
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত মনোরম শহর পহেলগাম ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে খ্যাত।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত মনোরম শহর পহেলগাম ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে খ্যাত।

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে গতকাল মঙ্গলবার পর্যটকদের ওপর চালানো ভয়াবহ হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ নামে পরিচিত ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চালানো হামলাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম ভয়াবহ বলে মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনার পর টিআরএফ গোষ্ঠীটি এবং এর নেপথ্যে থাকা শক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

গোষ্ঠীটি সম্পর্কে বিভিন্ন সূত্র থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে এসেছে—

টিআরএফ কী

দিল্লিভিত্তিক থিংকট্যাংক ‘সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টাল’-এর তথ্য অনুযায়ী, টিআরএফ ২০১৯ সালে আত্মপ্রকাশ করে এবং এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার (LeT) একটি শাখা বা সহযোগী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টিআরএফ সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন ফোরামগুলোতে ‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ নাম ব্যবহার করে এবং সেখানেই তারা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগাম এলাকায় গতকালের হামলার দায় স্বীকার করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক একটি বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত লস্কর-ই-তাইয়েবা। পাকিস্তানি ইসলামপন্থী সালাফি জিহাদি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বাইয়ে তিন দিনের ভয়াবহ হামলাসহ ভারত ও পশ্চিমা দেশগুলোতে বিভিন্ন হামলার ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র মুম্বাই শহরের ১২টি স্থানে হামলা চালায় লস্কর-ই-তাইয়েবার ১০ জঙ্গি। ওই আক্রমণে ১৮০ জন নিরীহ মানুষ নিহত হন এবং তিন শতাধিক মানুষ গুরুতর আহত হন। দ্য তাজমহল প্যালেস হোটেল ও ওবেরাই ট্রাইডেন্ট হোটেলের হামলা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। প্রায় ৬৪ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী সেই হোটেল থেকে ২০০ জিম্মিকে মুক্ত করতে পেরেছিল।

সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টালের প্রধান অজয় সাহনি মনে করেন, টিআরএফ মূলত লস্কর-ই-তাইয়েবার একটি ফ্রন্ট বা ছদ্মবেশী রূপ। তিনি বলেন, এই গোষ্ঠীগুলো মূলত গত কয়েক বছরে তৈরি করা হয়েছে, বিশেষ করে যখন পাকিস্তান ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (FATF) মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার চাপে ছিল এবং জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করার চেষ্টা করছিল।

গোষ্ঠীটি কি ধরনের কার্যক্রমে জড়িত

অজয় সাহনির মতে, এর আগে বড় ধরনের কোনো হামলার দায় সরাসরি এই গোষ্ঠী স্বীকার করেনি। তবে তিনি বলেন, টিআরএফের সমস্ত অপারেশন মূলত লস্কর-ই-তাইয়েবার অপারেশন। কোথায় হামলা চালানো হবে, সে বিষয়ে তাদের কিছুটা স্বাধীনতা থাকতে পারে, তবে চূড়ান্ত অনুমোদন লস্কর-ই-তাইয়েবা থেকেই আসে। যেহেতু টিআরএফ পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করেছে, সেহেতু ধরে নেওয়া যায়, তাদের এই পরিকল্পনার পেছনে লস্কর-ই-তাইয়েবার হাত রয়েছে।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালে পার্লামেন্টকে জানিয়েছিল, জম্মু ও কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার পরিকল্পনা ও সমন্বয়ে টিআরএফ জড়িত ছিল। মন্ত্রণালয় আরও জানায়, গোষ্ঠীটি সীমান্ত পেরিয়ে নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানও সমন্বয় করে থাকে। সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, দুই বছর ধরে টিআরএফ অনলাইন মাধ্যমে ভারতপন্থী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে হুমকি দিয়ে আসছিল।

পাকিস্তান কী বলছে

কাশ্মীরি জঙ্গিদের সমর্থন ও অর্থায়ন করার অভিযোগ পাকিস্তান বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। ইসলামাবাদ দাবি করে, তারা কেবল নৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে থাকে। তবে কাশ্মীর পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক হামলা ঘিরে নতুন করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স, ব্লুমবার্গ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত