Ajker Patrika

তালেবান শাসনে নারী স্বাধীনতা কোন পথে

ইমরান খান
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ২২: ২০
Thumbnail image

২০ বছর পর আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ফিরেছে তালেবান। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশের শাসনভার ছিল তাদের হাতে। তখন ইসলামি আইনের নামে পশতুন গোষ্ঠীর কিছু নিয়ম সংযুক্ত করে নারীদের জীবন পুরোপুরি ঘরবন্দী করে ফেলে তারা। নারীদের শিক্ষা, রাজনীতি, চাকরি, খেলাধুলা, পর্দা ও পুরুষ সঙ্গী ছাড়া বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। তবে এবার ক্ষমতায় ফেরার আগে-পরে তালেবানের দেওয়া কিছু আশ্বাস নাগরিকদের মাঝে আশার সঞ্চার করেছিল। মনে হচ্ছিল, হয়তো নতুন এক তালেবান দেখবে বিশ্ব। যে তালেবান হবে আগের চেয়ে পরিণত ও বিবেচনাসম্পন্ন। তবে ১৫ আগস্ট ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে তাদের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো এই প্রশ্ন তুলতেই পারে—নতুন আশ্বাসের মোড়কে কি পুরোনো তালেবানই ফিরে এল? 

নারী অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাইপুরোনো অভিজ্ঞতা নেতিবাচক হওয়ায় তালেবান শাসনে এবার নারীর অধিকার কেমন হবে, তা নিয়ে শুরু থেকেই বিশ্বব্যাপী শঙ্কা ছিল। ১৪ জুলাই জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেন, ‘মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কারণে আফগান নারীদের অবর্ণনীয় ক্ষতি হবে।’ নিউইয়র্ক টাইমসে ১৯ আগস্ট প্রকাশিত এক নিবন্ধে নোবেলজয়ী নারী আন্দোলনকর্মী মালালা ইউসুফজাই বলেন, ‘তারা নারীদের বিশেষ মর্যাদা দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু এগুলো সব মিথ্যা এবং ভাঁওতাবাজি।’

এরই মাঝে তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন গণমাধ্যমকে বললেন, ‘অবশ্যই আমরা নারীদের শিক্ষা, কাজ এবং বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

একপক্ষের শঙ্কা, আর অন্য পক্ষের আশ্বাসের দোলাচলে আফগান নারীরা আসলে কী পাচ্ছেন, কেমন আছেন, তা বুঝতে আমরা বরং তালেবান সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপের দিকে নজর দিই।

ছেলে ও মেয়েদের এক ক্লাসে না বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছেশিক্ষা
১৯৯৬ থেকে ২০০১ শাসনামলে ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের পড়াশোনার অনুমতি ছিল না। এবার তালেবানের পক্ষ থেকে আফগান নারীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। তবে ক্ষমতায় এসে নারী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাইনবোর্ড বদলে লাগানো হয় ‘প্রার্থনা, নির্দেশনা, ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ’ শীর্ষক সাইনবোর্ড।

শুরুতে শুধু ছাত্র ও পুরুষ শিক্ষকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নারী শিক্ষক ও ছাত্রীদের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবান সরকারের এই ঘোষণার পর আফগানিস্তান হলো পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যার মোট জনসংখ্যার অর্ধেক মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।

কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের এমন অবস্থানেও তাদের ভাবনায় কোনো বদল আসেনি। ২৭ সেপ্টেম্বর এক টুইট বার্তায় কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য মোহাম্মদ আশরাফ ঘাইরাত ঘোষণা দেন, ‘যত দিন প্রকৃত ইসলামি পরিবেশ সবার জন্য তৈরি করা সম্ভব না হয়, তত দিন মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বা কাজ করতে দেওয়া হবে না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে আফগানিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল্লাহ মুনির বলেন, ‘আজ কোনো পিএইচডি, মাস্টার্স ডিগ্রির মূল্য নেই। আপনারা দেখুন যে মোল্লা ও তালেবান যারা এখন ক্ষমতায় আছে, তাঁদের কারোরই কোনো পিএইচডি, মাস্টার্স অথবা উচ্চবিদ্যালয়ের ডিগ্রি পর্যন্ত নেই। কিন্তু তবু তাঁরা সবার চেয়ে বড় পদে রয়েছেন।’ 

এতে গত দুই দশকে মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থায় আসা দেশটির হাজার হাজার নারী বিপদে পড়ে যায়। অবশেষে ২৯ আগস্ট তালেবানের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল বাকি হাক্কানি বলেন, আফগানিস্তানের জনগণ ইসলামি শরিয়া আইন অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যেতে পারবে। তবে ছেলেমেয়ে একসঙ্গে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে না। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতেও ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে পড়তে পারবে না বলে জানায় তালেবান। এর পর থেকে আলাদা আলাদা শ্রেণিকক্ষে ছেলেমেয়েদের ক্লাস শুরু হয়।

এরপরও যে শঙ্কা কাটেনি, তার প্রমাণ বিবিসি ঘোষিত বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকা। প্রতি বছরের মতো এবারও প্রকাশিত বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন আফগানিস্তানের ৪৬ জন নারী। নতুন আবিষ্কার এবং বিশ্বকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় তাঁদের নাম এসেছে। তবে তালেবানশাসিত আফগানিস্তানে ওই নারীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তালিকায় বেশ কয়েকজনের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে; দেওয়া হয়নি তাঁদের ছবিও।

কোনো নারী সদস্য ছাড়াই ৮ সেপ্টেম্বর ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে তালেবানরাজনীতি
তালেবানের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই নারী অধিকারের বিষয়টি একদম তোয়াক্কা না করার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে আফগান সরকার কাঠামো নিয়ে কেন্দ্রীয় স্তর থেকে আসা প্রথম ঘোষণায় ১৭ আগস্ট তালেবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের সদস্য এনামুল্লাহ সামানগনি বলেন, ‘নারীরা পিছিয়ে থাকুক—এটি ইসলামিক আমিরাতের চাওয়া নয়। শরিয়া আইন মেনেই নারীদের আফগান সরকারের অংশ করা হবে।’

এই বক্তব্যে নারীরা কিছুটা আশা পেলেও ৭ সেপ্টেম্বর তালেবান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করে, তাতে কোনো নারীকে রাখা হয়নি। এ প্রসঙ্গে আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম টিওএলওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তালেবানের মুখপাত্র সৈয়দ জেকরুল্লাহ হাশিমি বলেন, ‘নারীরা মন্ত্রী হতে পারে না। এটি এমন বিষয়, যেটি আপনি তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেন, কিন্তু তারা সেটি নিতে পারবে না। তাদের কাজ হলো জন্ম দেওয়া।’ নারীদের সমাজের অর্ধাংশ ভাবতেও নারাজ তিনি। তাঁর প্রশ্ন, ‘গত ২০ বছরে নারীদের নিয়ে আফগানিস্তানে যা হয়েছে, তা কি পতিতাবৃত্তি ছাড়া কিছু?’ 

সরকার গঠন ও জেকরুল্লাহ হাশিমির এই বক্তব্য তালেবান শাসনামলে নারীদের রাজনীতির ভবিষ্যৎ খুব সহজেই অনুমেয়।

 দেশের সকল পার্লার বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান সদস্যরাকর্মসংস্থান
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু নারীর কর্মসংস্থান হয়েছিল। তাঁদের আপাতত কর্মস্থলে যেতে নিষেধ করেছেন উপাচার্য। 

আগের মেয়াদে আফগানিস্তানের সব বিউটি পার্লার বন্ধ করে দিয়েছিল তালেবান। ২০০১ সালের পর তালেবান সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে জাতিসংঘের একটি সংস্থা ও আফগান সরকারের অর্থায়নে ছয় মাসের একটি বিউটি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হয়। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক নারী উপার্জনের উৎস হিসেবে বেছে নেন বিউটি স্যালন পেশাকে, যা পরে অনেক লাভজনক একটি পেশায় পরিণত হয়। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট ক্ষমতা দখলের পরও তালেবান নেতারা বিউটি পার্লার বন্ধ করে দিয়েছে। সকল দেয়াল থেকে নারীদের ছবি মুছে দিয়েছে তালেবান, যা নারীদের বিজ্ঞাপন করার পথও বন্ধ করে দেয়। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েন অনেক নারী।

তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সময় রাজধানী কাবুলের বিমানবন্দরে প্রায় ৮০ নারী কর্মী নিয়োজিত ছিলেন। এদের মধ্য থেকে ১২ সেপ্টেম্বর কর্মস্থলে ফিরেছেন মাত্র ১২ আফগান নারী। এর কারণ নারী প্রশ্নে তালেবান দৃষ্টিভঙ্গি, যা গোষ্ঠীটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমির কথায় স্পষ্ট—‘আফগান নারীদের পুরুষের সঙ্গে কাজ করা উচিত নয়।’

আফগানিস্তান ছেড়ে পাকিস্তানের পথে নারী ফুটবলাররাখেলাধুলা
নব্বইয়ের দশকে তালেবানের শাসনামলে আফগানিস্তানে নারীদের সব ধরনের খেলাধুলা বন্ধ ছিল। ফের দেশটির দখল নিয়ে নারীদের খেলাধুলার ব্যাপারে একই মনোভাব প্রকাশ করেছে তালেবান। ফলে নারী ফুটবলারেরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ১৪ সেপ্টেম্বর ৮১ জন নারী ফুটবলার তোরখাম সীমান্তের উত্তর-পশ্চিমাংশ দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছেন। এদের মধ্যে অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৮ দলের খেলোয়াড়েরা ছিলেন।

বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসিও সব স্বীকৃত দেশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) নতুন চেয়ারম্যান মিরওয়াইস আশরাফ ক্রিকেট বোর্ডের স্টাফদের সঙ্গে পরিচিতিমূলক এক সভায় ঘোষণা দেন, ‘নারী ক্রিকেট আইসিসির প্রধান আবশ্যিকতাগুলোর একটি। এটি নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাদের মেয়েরা স্বাভাবিক নিয়মেই ক্রিকেট খেলবে। আমরা তাদের মৌলিক চাহিদা ও তাদের প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা দিতে চাই।’

এই খেলা এখনো শুরুর আলো দেখতে পারেনি। অন্যান্য খেলার চিত্র কী হবে, তা এখনই বলা যাবে না।

আফগানিস্তান ছেড়ে পাকিস্তানের পথে নারী ফুটবলাররাচলাফেরা
আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে তালেবান শাসনামলে আফগান নারীদের বোরকা পরা বাধ্যতামূলক ছিল। তবে এবার তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন আফগানিস্তানে নারীদের বোরকা প্রসঙ্গে বলেন, ‘নারীরা মাথায় হিজাব পরেছেন কি-না সেটা পর্যবেক্ষণ করা হবে। তবে পুরো শরীর ঢাকা বোরকা পরতেই হবে, এমন নয়।’

এর মধ্যে ২৬ ডিসেম্বর দেশটির পুণ্যের প্রচার ও পাপ প্রতিরোধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, আফগান নারীরা পুরুষ আত্মীয় ছাড়া ৭২ কিলোমিটারের বেশি দূরে ভ্রমণ করতে পারবেন না। যানবাহনে চলাচল করতেও ইসলামিক হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যানবাহন মালিকদেরও শুধু হিজাব পরা নারীদের পরিবহনের আহ্বান জানানো হয়েছে। 

নাটক-সিনেমায় নারীদের অভিনয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। টেলিভিশন সাংবাদিকদের খবর উপস্থাপনার সময় হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নারীদের জন্য টিভি চ্যানেল চালু করা নারী সাংবাদিক জেহরা নবীর টেলিভিশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেন, ‘কর্মীদের নিয়ে কাজ করার নিরাপদ জায়গা পাচ্ছি না।’ আগস্টে চাকরি হারানো সাংবাদিক সোনিয়া আহমাদিয়ার বলেন, ‘গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করা হচ্ছে।’

২৪ আগস্ট তালেবানের মুখপাত্র যাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, নারীদের আপাতত ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। নারীদের কর্মস্থলে যোগদানে স্থায়ীভাবে বাধা দেওয়া হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তাঁরা যাতে কাজে ফিরতে পারেন, কর্তৃপক্ষ সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি। 

আফগান নারী খাতিরানারীদের কোন চোখে দেখে তালেবান
১৫ আগস্ট ভারতের নিউজ এইটটিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আফগান নারী খাতিরা বলেন, ‘তালেবানের চোখে নারীরা মানুষ নয়। তাদের কাছে নারী মানেই এক টুকরো মাংস।’ তারা নারী শরীরকে কুকুরের খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করে বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর এ বক্তব্য নিয়ে অবশ্য বিতর্কও কম হয়নি। এর মধ্যেই বিবিসির সাংবাদিক জিয়া শাহরিয়ারের টুইটারে শেয়ার করা এক ভিডিওতে একজন তালেবান কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা কি কেউ কাটা তরমুজ কেনেন? নাকি পুরো তরমুজ কেনেন? অবশ্যই পুরোটা কেনেন। হিজাব না পরা মেয়েরা হলো কাটা তরমুজ।’

এসব বক্তব্যের মধ্যেই নারী অধিকারের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের চাপের মুখে পড়ে তালেবান। চাপে রাখার কৌশল হিসেবে বিশ্বের শক্তিশালী বেশ কয়েকটি দেশ আফগানিস্তানের বেশ কিছু তহবিল স্থগিত করে।

এর মাঝেই তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ ডিক্রি প্রকাশের সময় বলেন, ‘নারী কোনো সম্পত্তি নয়; বরং মুক্ত ও অভিজাত মানুষ। শান্তি বা অন্য কোনো কিছুর জন্য তাকে কেউ কারও কাছে হস্তান্তর করতে পারে না।’ ডিক্রিতে বিয়ে ও সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নিয়ে সুস্পষ্টভাবে বক্তব্য দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, জোরপূর্বক কোনো নারীর বিয়ে দেওয়া উচিত নয়। আর প্রয়াত স্বামীর সম্পত্তিতে নারীর অধিকার রয়েছে। এই ভাষ্য প্রচারের জন্য তথ্য ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতকে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এই ডিক্রি বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে।

নারী অধিকার খর্ব হওয়ার প্রতিবাদে রাজপথে আফগান নারীরানারীর বাক স্বাধীনতা
নারী অধিকারের নানা প্রসঙ্গে আফগানিস্তানের হেরাতে কিছুসংখ্যক নারী নিজেদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। তালেবান নেতৃত্বের কাছে তাঁরা দাবি করেন—শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং কাজের অধিকার যেন খর্ব না হয়। এগুলো যেকোনো মানুষের মৌলিক অধিকার। বিক্ষোভকারীরা আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাইরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। তাঁরা তালেবানের সঙ্গে লড়াই করে নিহত আফগান সৈন্যদের সম্মান জানায়। কেউ কেউ মাইক্রোফোন নিয়ে জড়ো হয় এবং কাজ চালিয়ে যাওয়ার দাবি জানায়।

এ মিছিল পণ্ড করতে ফাঁকা গুলি এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে তালেবান। তালেবানরা নারীদের অধিকারে ‘কোনো সমস্যা করবে না’ ঘোষণার একদিন পর এ ঘটনা ঘটল।

শুধু আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করে ক্ষান্ত হয়নি তালেবান। ৮ সেপ্টেম্বর কাবুলের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত কারত-এ-চর এলাকায় নারীদের তালেবানবিরোধী আন্দোলনের খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া আফগান সংবাদমাধ্যম তাকির দুই সাংবাদিক দারায়াবি ও নাকদিকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে তালেবান সদস্যরা। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রতিবেদক মার্কাস ইয়াম ও আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম ইটিলাট্রোজের প্রকাশ করা ছবিতে দেখা যায় অন্তর্বাস পরা দুই সাংবাদিকের গায়ে আঘাতের চিহ্ন। ইটিলাট্রোজের প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবান ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যম ইউরো নিউজের স্থানীয় প্রধান, টিওএলও নিউজের ক্যামেরা পারসন ওয়াহিদ আহমাদি এবং আরিয়ানা নিউজের ক্যামেরাপারসন সামিমকেও গ্রেপ্তার করে তালেবান।

অর্থনৈতিক সংকট ও আইএসের হামলার পাশাপাশি তালেবানের সামনে বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল নারী ইস্যু। এ ক্ষেত্রে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের আগে থেকেই নানা সুমধুর বাণী শোনাতে থাকে। সরকারেও নারীর অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দেয় গোষ্ঠীটি। তবে তালেবান সরকার গঠনের পর একের পর এক বিধিনিষেধ জারি করা হয় নারীদের ওপর। তবে ২০ বছর আগের তালেবানের চেয়ে এখনকার তালেবান নারী অধিকারের বিষয়টি কিছুটা হলেও নমনীয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকেরা। মেয়েদের শিক্ষা, খেলাধুলা নিষিদ্ধসহ বোরকা পরার বাধ্যবাধকতা ছিল। এবার সেসব দিক থেকে তালেবান খানিকটা সরে এসেছে বলাই যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত