Ajker Patrika

চাল নিয়ে মজা করে মন্ত্রিত্ব গেল জাপানের কৃষিমন্ত্রীর

বিবিসি
চাল নিয়ে মন্তব্যের জেরে পদত্যাগ করতে হলো জাপানের কৃষিমন্ত্রীকে। ছবি: এএফপি
চাল নিয়ে মন্তব্যের জেরে পদত্যাগ করতে হলো জাপানের কৃষিমন্ত্রীকে। ছবি: এএফপি

আমি এত চাল উপহার পাই যে আমার কেনার দরকার হয় না— কিছুটা মজার ছলে হাসতে হাসতে এক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেছিলেন জাপানের কৃষিমন্ত্রী। তিনি ভেবেছিলেন বাকিরাও মজা পাবে। কিন্তু হলো হিতে বিপরীত। দেশজুড়ে যখন জীবনযাত্রার ব্যয় উচ্চ, চালের দাম বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ, তখন কৃষিমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন মজা নিতে পারেনি জাপানের মানুষ। তীব্র ক্ষোভের মুখে কৃষিমন্ত্রী তাকু ইতোকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।

চাল জাপানে রাজনীতিতে বেশ স্পর্শকাতর বিষয়। চাল সংকটের কারণে দেশটিতে বড় বড় রাজনৈতিক বিপর্যয়ের নজির আছে। ১৯১৮ সালে চালের দামবৃদ্ধি ঘিরে ব্যাপক দাঙ্গার ধারাবাহিকতায় সরকারে পতন ঘটে।

এবার কৃষিমন্ত্রীর পদত্যাগের ফলে চাপের মুখে পড়ল প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সংখ্যালঘু সরকার। চালের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে এমনিতে জনপ্রিয়তা কমছিল সরকারের। কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য সরকারকে সংকটে ফেলে দিল।

জাপানে চালের হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ সংকট রয়েছে বলে জানান ইবারাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতিবিদ কুনিও নিশিকাওয়া। তবে সরকারের দিক থেকে চাহিদার ভুল হিসাবকে প্রধান কারণ হিসাবকেই দায়ী করেন তিনি।

১৯৯৫ সাল পর্যন্ত জাপান সরকার কৃষি সমবায়গুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতো। চাহিদা হিসাব করে চালের উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হত। কিন্তু পরে এ সংক্রান্ত আইন বাতিল হয়। তখন কৃষি মন্ত্রণালয় একাই চালের চাহিদা হিসাব করে লক্ষ্য নির্ধারণ করতো।

নিশিকাওয়া বলছেন, সমন্বয়হীনতার কারণে ২০২৩ ও ২৪ সালে জাপানের সরকার চালের প্রকৃত চাহিদার হিসাব ভুল ধরেছে। সরকার অনুমান করেছিল চালের চাহিদা হবে ৬ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন, কিন্তু বাস্তবে তা ছিল ৭ দশমিক শূন্য ৫ মিলিয়ন টন। এদিকে প্রকৃত উৎপাদন হয়েছে অনুমানেরও কম— মাত্র ৬ দশমিক ৬১ মিলিয়ন টন।

চালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ খুঁজে বের করেছেন বিশ্লেষকেরা। জাপানে চালের দাম বেশ বেড়ে যায় করোনার পর। অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতির কারণে কম দামি খাবার চালের চাহিদা বেড়ে যায়। এছাড়া বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধিও চালের চাহিদা বাড়ার কারণ। সব মিলে বেশ বেড়েছে চালের দাম।

চাহিদার চেয়ে অনেক কম চাল উৎপাদনের কথা স্বীকার করে জাপানের কৃষি মন্ত্রণালয় বলেছে, গরমের কারণে উৎপাদন যেমন কমেছে, তেমনি গুণমান খারাপ হয়েছে।

স্বল্প লাভের কারণে জাপানে চাল উৎপাদন খুব একটা লাভজনকও নয়। করোনার আগে টানা কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে কমেছে চালের চাহিদা। কোসুকে কাসাহারা নামের এক কৃষক বিবিসিকে বলেন, এতদিন ৬০ কেজি চাল উৎপাদনে খরচ পড়ে প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ ইয়েন। সেই চাল বিক্রি করতে হতো ১৯ হাজার ইয়েনে। অর্থাৎ লাভ মাত্র ৫০০ ইয়েন!

তাই কৃষকদের ধান চাষ কমাতে উদ্বুদ্ধ করে গেছে সরকার। তিন বছর আগেও উৎপাদন কমানোর জন্য ভর্তুকি দেওয়া হতো। তবে হঠাৎ বদলে গেছে সেই চিত্র। চালের চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় আবার ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে কৃষকদের।

হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে গেছে দামও। দাম কমাতে দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য মজুত রাখা চালও বাজারে ছেড়ে দিয়েছে সরকার। চাল সংকট এতই প্রকট হয়েছে যে গত ২৫ বছরের মধ্যে এবছরই প্রথম চাল আমদানি করতে হয়েছে জাপানকে। দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে চাল আমদানি করেছে দেশটি। পরিকল্পনা চলছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আমদানিরও। কিন্তু এতেও ক্ষোভে ফুঁসছেন জাপানিরা।

তাদের ভাষ্য, বিদেশি চাল তারা কিনবেন না। জাপানি কৃষকেরা যেখানে চাল চাষ করে অর্থ পান না, সেখানে বিদেশ থেকে আমদানির পক্ষে রায় নেই তাদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ভিসায় ছয় দেশ

এর জবাব দেশে দিইনি, জাপানে দিলে বিপদ হবে: পদত্যাগ প্রশ্নে ড. ইউনূস

চারটি গুলির পর নিরস্ত্র মেজর সিনহার গলায় পাড়া দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়: অ্যাটর্নি জেনারেল

‘বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতলেও পাকিস্তানের কোনো লাভ হবে না’

বাজে হারের পরও পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত