Ajker Patrika

কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তান  গোপন বৈঠক

কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তান  গোপন বৈঠক

কাশ্মীরে দীর্ঘকাল ধরে চলা উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য দুবাইয়ে ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। গত জানুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহর  দুবাইয়ে  এই বৈঠক আয়োজিত হয়। এই বৈঠকের সম্পর্কে অবগত রয়েছেন এমন কয়েকজনের বরাত দিয়ে  সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে। 

২০১৯ এ যে পুলওয়ামা হামলার পর থেকেই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ফের একবার তলানিতে গিয়ে ঠেকে।  ২০১৯ সালের ৫ই আগস্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে। সেই থেকে দুই দেশের সম্পর্কের বরফ আরো কঠিন হয়েছে।

জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করায় ভীষণ ক্ষুব্ধ হয় পাকিস্তান। এর ফলে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনমন হয়। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য স্থগিত হয়ে যায়।

বৈঠক সম্পর্কে অবগত দুজন ব্যক্তি জানান্য, ভারত এবং পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা আরব আমিরাত সরকারের মধ্যস্থতায় দুবাইয়ে বৈঠক করেন।

তবে এ নিয়ে জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। 

এই গরম আবহের মধ্যেও রয়টার্সের রিপোর্ট মোতাবেক যদি দুই দেশের প্রতিনিধিরা সীমান্তে উত্তেজনা কমানোর জন্য বৈঠকে বসে থাকেন, সেক্ষেত্রে এটা সমগ্র এশিয়ার জন্য এক দারুণ বার্তা বলেই মনে করছে সচেতন মহল। ধীরে ধীরে যাতে এই দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কের উন্নতি হয় সেই নিয়েই দুবাইয়ে এই বৈঠক হয় বলে রয়টার্স সূত্রে দাবি।

উল্লেখ্য, রয়টার্সের দাবি মতে যদি দুই দেশ জানুয়ারিতে সীমান্ত নিয়ে বৈঠক করেও থাকে, তবুও কাশ্মীর সীমান্তে এখনও কড়া পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে। পাকিস্তানের তরফে একদিন শেলিং হামলায় বিরতি থাকলেও পাক মদতপুষ্ট বলে দাবি জঙ্গি সংগঠনগুলি কিন্তু কাশ্মীরে নিজেদের সক্রিয় রেখেছে। যার জেরে একের পর এক এনকাউন্টারের ঘটনা সামনে আসছে। প্রায়ই গুলি বিনিময় হয় কাশ্মীরে। কাশ্মীরের এই সমস্যা আদৌ মেটে কিনা, বা মিটলেও সেই দিন কবে সে দিকেই তাকিয়ে দেশবাসী।

এ বৈঠকের বিষয়ে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বিষয়ক শীর্ষ বিশ্লেষক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, আমার মনে হয় কয়েক মাস ধরেই তৃতীয় কোনো দেশে গোপনে বৈঠক করে যাচ্ছেন ভারত ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। ধারণা করছি, তারা এমন বৈঠক করেছেন থাইল্যান্ডে, দুবাইতে অথবা লন্ডনে।

তবে এমন বৈঠক এর আগেও হয়েছে। বিশেষ করে যখন কোনো সঙ্কট সৃষ্টি হয় তখন এমন বৈঠক হয়। এ নিয়ে প্রকাশ্যে স্বীকারোক্তি দেওয়া হয় না। দিল্লির  একটি সূত্র বলেছেন, এখনও অনেক বিষয় আছে, যেগুলো ভুলপথে যেতে পারে। এটা সম্ভাবনাপূর্ণ। এ জন্য কোনো পক্ষই এ বিষয়গুযলোকে প্রকাশ্যে স্বীকার করেনা। এমনকি আমরা জানতেও পারিনি ওই বৈঠকে কে কে অংশ নিয়েছিলেন।

এটা তো কোনো শান্তি প্রক্রিয়া নয়। আপনি এটাকে বলতে পারেন পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন হিসেবে। নতুন করে সম্পর্ক বাড়ানোর ক্ষেত্রে উভয় দেশেরই কারণ থাকতে পারে। গত বছর চীনের সঙ্গে সীমান্তে এক অচলাবস্থায় পৌঁছে ভারত। অন্যদিকে চীনের মিত্র পাকিস্তান অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং আইএমএফের বেইলআউট কর্মসূচিতে জড়িত পাকিস্তান। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ অবস্থায় কাশ্মীর সীমান্তে উত্তেজনা দীর্ঘ সময় ধরে রাখার সামর্থ নেই পাকিস্তানের। যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে আফগানিস্তান সীমান্ত স্থিতিশীল রাখতে হবে পাকিস্তানকে।

এ নিয়ে রয়টার্সের   সাবেক সাংবাদিক মাইরা ম্যাকডোনাল্ড বলেন, একেবারে একেবারে কথা না বলার চেয়ে কিছু বলা ভারত ও পাকিস্তানের জন্য ভালো। প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে আলোচনার চেয়ে এ আলোচনা নীরবে  চালিয়ে যাওয়া উত্তম।

এদিকে জানুয়ারিতে  গোপন বৈঠকের সীমান্তে সংঘাত বন্ধ করতে একমত হয় ভারত ও পাকিস্তান ।  এখন পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘাতে বহ মানুষ নিহত হয়েছেন। অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত