Ajker Patrika

ক্ষমতাচ্যুত রাজাকে স্বাগত জানাতে র‍্যালি, পরিবেশের ক্ষতি করার দায়ে জরিমানা লাখ রুপি

আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৫, ১৭: ০৫
শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির নেতা–কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত
শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির নেতা–কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

নেপালের ক্ষমতাচ্যুত রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে স্বাগত জানাতে একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিল রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি (আরপিপি)। কিন্তু এই আয়োজনের কারণে পরিবেশের ক্ষতি করার দায়ে দলটিকে ১ লাখ রুপি জরিমানা করেছে কাঠমান্ডু মহানগর কর্তৃপক্ষ (কেএমসি)।

নেপালের সংবাদমাধ্যম দ্য কাঠমান্ডু পোস্টের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গতকাল রোববার আরপিপি ক্ষমতাচ্যুত রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে স্বাগত জানাতে একটি র‍্যালির আয়োজন করে। এতে প্রায় ১০ হাজার সমর্থক জড়ো হন ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রধান প্রবেশপথে।

পরে এই র‍্যালি ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, তিলগঙ্গা, গোসালাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছে শেষ হয়।

কাঠমান্ডু মহানগর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, র‍্যালিতে অংশগ্রহণকারী আরপিপি নেতা–কর্মীরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ময়লা ফেলে পরিবেশের ক্ষতি করেছেন। তাই দলটিকে ১ লাখ রুপি জরিমানা করা হয়।

মহানগর কর্তৃপক্ষ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন-২০১১ ও কাঠমান্ডু মহানগর পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০২১–এর অধীনে রাস্তায় আবর্জনা ফেলা, গাছপালা ও অন্যান্য সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধনসহ বিভিন্ন বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে এই জরিমানা করে।

ক্ষমতাচ্যুত রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের জরিমানার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা, রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি, সুশাসন ও আইনের শাসনে বিশ্বাস করি। রাজাকে (ক্ষমতাচ্যুত) স্বাগত জানানোর সময় হাজার হাজার মানুষ অনিচ্ছাকৃতভাবে রাস্তায় কিছু জিনিস ফেলতে পারে। আমরা মহানগর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। ১ লাখ রুপি জরিমানা তাদের অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে।’

মহানগর কর্তৃপক্ষ একটি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে, র‍্যালির সময় দলটির নেতা–কর্মীরা রাস্তা, ফুটপাত ও ডিভাইডারগুলোতে আবর্জনা ফেলেছেন। এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে এবং দূষণ ছড়িয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে নেপালের তৎকালীন রাজা বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বড় ভাই বীরেন্দ্র নিহত হওয়ার পর ওই বছরই রাজা হিসেবে জ্ঞানেন্দ্রর অভিষেক হয়। ৭৭ বছর বয়সী জ্ঞানেন্দ্র ২০০৫ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তখন তাঁর নির্বাহী ও রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল না।

তবে ২০০৫ সালে জ্ঞানেন্দ্র পুরোপুরিভাবে ক্ষমতা দখল করেন। তিনি সরকার ও পার্লামেন্ট ভেঙে দেন, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের কারাগারে পাঠান। এরপর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দেশ শাসনের কাজে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেন।

তাঁর এসব পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে রাজা জ্ঞানেন্দ্রর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। একপর্যায়ে ২০০৬ সালে তিনি একটি বহুদলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। মাওবাদীদের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে সেই সরকার। এর মধ্য দিয়ে এক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধের অবসান হয়।

২০০৮ সালে প্রায় ২৪০ বছরের পুরোনো হিন্দু রাজতন্ত্রকে বিলুপ্ত করার বিষয়ে দেশটির পার্লামেন্টে ভোট হয়। ভোটাভুটিতে রাজতন্ত্র বিলোপের পক্ষে রায় এলে রাজা জ্ঞানেন্দ্র পদত্যাগ করেন। এরপর নেপালে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত