ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত গাজা উপত্যকা। প্রাচীনকাল থেকেই সমুদ্রপথে বাণিজ্যের জন্য পরিচিত এই অঞ্চল। ১৯১৭ সাল পর্যন্ত অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকার পর ব্রিটিশ শাসন থেকে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয় মিসর। এরপর গত শতাব্দীর শেষভাগ থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে গাজার প্রায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। গত শনিবার থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলা।
গাজার সাম্প্রতিক ইতিহাসের কিছু প্রধান ঘটনা এখানে তুলে ধরা হলো।
১৯৪৮-ব্রিটিশ শাসনের সমাপ্তি
১৯৪০=এর দশকের শেষ দিকে ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটলে সেখানে ইহুদি ও আরবদের মধ্যে সহিংসতা তীব্র আকার ধারণ করে। নতুন প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে এর আরব প্রতিবেশীদের সংঘর্ষ ১৯৪৮ সালের মে মাসে যুদ্ধের রূপ নেয়। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর থেকে পালিয়ে গাজায় আশ্রয় নেয়।
উত্তরে সিনাই ঠেকে দক্ষিণে অ্যাশকেলন পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ২৫ মাইল (৪০ কিলোমিটার) দীর্ঘ উপত্যকার দখল নেয় মিসরীয় সেনাবাহিনী। শরণার্থীদের আগমনে গাজার জনসংখ্যা তিন গুণ বেড়ে হয় প্রায় ২ লাখ।
১৯৫০ ও ৬০-এর দশক—মিসরীয় বাহিনীর শাসন
সামরিক শাসনের অধীনে গাজার নিয়ন্ত্রণ দুই দশক ধরে রাখে মিসর। ফিলিস্তিনিদের মিসরে কাজ এবং পড়াশোনা করার অনুমতিও দেওয়া হয়। বেশির ভাগ শরণার্থী নিয়ে গঠিত ফিলিস্তিনি গেরিলা গ্রুপ ফেদায়েন প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ইসরায়েলে হামলা চালায়।
ইউএনআরডব্লিউএ নামে গাজায় একটি শরণার্থী সংস্থা খোলে জাতিসংঘ। সংস্থাটি গাজায় প্রায় ১৬ লাখ নিবন্ধিত ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের পাশাপাশি জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া এবং পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জন্য নানা সেবা দিয়ে আসছে।
১৯৬৭-যুদ্ধ এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দখল
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে গাজা উপত্যকা দখল করে নেয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সে বছরই ইসরায়েলের করা এক আদমশুমারিতে গাজায় জনসংখ্যা ৩ লাখ ৯৪ হাজার বলে উল্লেখ করা যায়; যার ৬০ শতাংশই শরণার্থী।
মিসরীয়দের চলে যাওয়ায় গাজার অনেক শ্রমিক ইসরায়েলের অভ্যন্তরে কৃষি, নির্মাণ এবং পরিষেবা শিল্পে চাকরি নিয়েছিল। অঞ্চলটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। পরবর্তী দশকগুলোতে তৈরি করা ইসরায়েলি বসতিগুলো পাহারা দেওয়ার জন্য রয়ে যায় সৈন্যরা। আর এগুলোই হয়ে ওঠে ফিলিস্তিনিদের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের উৎস।
১৯৮৭-ফিলিস্তিনের প্রথম গণজাগরণ ও হামাস গঠন
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের ২০ বছর পর ফিলিস্তিনিদের প্রথম ইন্তিফাদা বা গণজাগরণের সূচনা হয়। ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বরে গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ফিলিস্তিনি শ্রমিকদের বহনকারী একটি গাড়িকে চাপা দেয় ইসরায়েলের একটি ট্রাক। এতে নিহত হয় চারজন ফিলিস্তিনি শ্রমিক। এরপর পাথর ছুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ। পর্যায়ক্রমে আসে ধর্মঘট ও হরতাল।
ফিলিস্তিনিদের ক্ষুব্ধ মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে মিসরভিত্তিক মুসলিম ব্রাদারহুড গঠন করে ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন, হামাস। গাজায় প্রতিষ্ঠিত হয় এর ঘাঁটি। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের ধ্বংস ও ইসলামি শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নিবেদিত সংগঠন হামাস হয়ে ওঠে ইয়াসির আরাফাতের ধর্মনিরপেক্ষ ফাতাহ পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বী, যারা ছিল প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের নেতৃত্বে।
১৯৯৩-অসলো চুক্তি এবং ফিলিস্তিনের আধা স্বায়ত্তশাসন
১৯৯৩ সালে ঐতিহাসিক অসলো শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। এই অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির অধীনে ফিলিস্তিনিদের প্রথমবারের মতো গাজা এবং পশ্চিম তীরের জেরিকোতে সীমিত নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয়েছিল। কয়েক দশক নির্বাসনের পর গাজায় ফিরে যান ইয়াসির আরাফাত।
নবগঠিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে কিছুটা স্বায়ত্তশাসনের পাশাপাশি পাঁচ বছর পর ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয় অসলো চুক্তি। কিন্তু তা কখনোই বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা চুক্তি প্রত্যাহার করার অভিযোগ তোলে ইসরায়েল। অন্যদিকে, ইসরায়েলের বসতি নির্মাণ অব্যাহত থাকায় ক্ষুব্ধ হয় ফিলিস্তিনিরা।
শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে বোমা হামলা চালায় হামাস ও ইসলামিক জিহাদ। এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় ফিলিস্তিনিদের চলাচলের ওপর আরও বেশি করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকে ইসরায়েল। অন্যদিকে, হামাসের বিরুদ্ধে ইয়াসির আরাফাতের সংশ্লিষ্টরা তোলেন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ।
২০০০-ফিলিস্তিনের দ্বিতীয় ইন্তিফাদা
২০০০ সালে ফিলিস্তিনের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার আগমনে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। ফিলিস্তিনিদের দ্বারা আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং গুলিবর্ষণের বিপরীতে ইসরায়েল চালায় বিমান হামলা। ফিলিস্তিনিদের চলাচলের সুযোগ আরও সংকুচিত হয় এবং অঞ্চলটিতে শুরু হয় কারফিউ।
ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রতীক এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাদের সরাসরি সংযোগের একমাত্র সূত্র গাজা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছিল না মিসর কিংবা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিমানবন্দরকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখত ইসরায়েল। ২০০১ সালের ১১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার কয়েক মাস পর গাজা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রাডার অ্যানটেনা এবং রানওয়ে ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েল।
মাছ ধরা ছিল গাজার অধিবাসীদের আয়ের অন্যতম উৎস। নৌযানের মাধ্যমে অস্ত্র নিয়ে আসা হচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলে ফিলিস্তিনিদের মাছ ধরার সুযোগ সংকুচিত করে দেওয়া হয়।
২০০৫-গাজা থেকে ইসরায়েলি বসতি সরিয়ে নেওয়া
২০০৫ সালের আগস্টে ইসরায়েল গাজা থেকে তার সমস্ত সৈন্য এবং বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে নিয়েছিল। তত দিনে বহির্বিশ্ব থেকে গাজাকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলিদের পরিত্যক্ত ভবন ও অবকাঠামো ভেঙে ফেলে ফিলিস্তিনিরা। এ সময় অঞ্চলটিতে সশস্ত্র গোষ্ঠী, চোরাকারাবারী এবং উদ্যোক্তারা ভিড় জমায়। অবৈধ নানা ব্যবসা গড়ে ওঠে এখানে। ইসরায়েলি বসতি অপসারণের সঙ্গে সঙ্গে গাজায় স্থাপিত অনেক কারখানা, গ্রিনহাউস এবং ওয়ার্কশপগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। এসব প্রতিষ্ঠানে গাজার অনেক অধিবাসীর কর্মসংস্থান হয়েছিল।
২০০৬-হামাসের অধীনে বিচ্ছিন্নতা
২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের সংসদীয় নির্বাচনে আকস্মিক বিজয় অর্জন করে হামাস। এরপর আরাফাতের উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের অনুগত বাহিনীকে উৎখাত করে তারা গাজার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দখল করে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশির ভাগই তখন হামাস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ফিলিস্তিনিদের সহায়তা বন্ধ করে দেয়। কারণ, তারা হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।
ইসরায়েল হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শ্রমিকদের দেশে প্রবেশ করা বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস বন্ধ করে দেয়। ইসরায়েলি বিমান হামলায় বিকল হইয়ে যায় গাজার একমাত্র বৈদ্যুতিক কেন্দ্র। যার ফলে ব্যাপক ব্ল্যাকআউট হয়। নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণ দেখিয়ে গাজা দিয়ে মানুষ এবং পণ্য চলাচলের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইসরায়েল ও মিসর।
২০১৪ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করা মিসরের সামরিক-সমর্থিত নেতা আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি হামাসকে হুমকি হিসেবে দেখে গাজার সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেন এবং উড়িয়ে দেন বেশির ভাগ টানেল। এরপর গাজার অর্থনীতি আবার বিপরীত দিকে যাত্রা করে।
দ্বন্দ্ব চক্র
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি জঙ্গিগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা ও প্রতিশোধের চক্রে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার অর্থনীতি।
২০২৩ সালের আগে রক্তক্ষয়ী বেশ কিছু সংঘর্ষ হয়েছিল ২০১৪ সালে। তখন হামাস এবং অন্যান্য গোষ্ঠী ইসরায়েলের কেন্দ্রস্থলের শহরগুলোতে রকেট হামলা চালায়। বিমান হামলা এবং সাঁজোয়া যান দিয়ে তখন গাজার আশপাশের এলাকাগুলোকে ধ্বংস করে ইসরায়েল। এই হামলায় নিহত হয় ২ হাজার ১০০-এর বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিনি। অন্যদিকে ইসরায়েল জানায়, সংঘর্ষে ৬৭ জন ইসরায়েলি সেনা এবং ছয় বেসামরিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।
২০২৩-অতর্কিত হামলা
গাজার কর্মীদের অর্থনৈতিক প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে হামাস হয়তো ইসরায়েলকে বিশ্বাস করাতে পেরেছিল যে যুদ্ধ করতে করতে অনেকটাই ক্লান্ত এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। তবে গোপনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছিল হামাসের যোদ্ধাদের।
৭ অক্টোবর হামাসের বন্দুকধারীরা ইসরায়েলের ওপর চালায় আকস্মিক আক্রমণ। শত শত লোককে হত্যা এবং কয়েক ডজন ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। ইসরায়েলের শহরগুলোতেও তাণ্ডব চালায় তারা। গত ৭৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হামলার মাধ্যমে এর ভয়াবহ প্রতিশোধ নেয় ইসরায়েল। একের পর এক বিমান হামলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় গাজা। হতাহতের সংখ্যা কেবল বেড়েই চলেছে।
ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত গাজা উপত্যকা। প্রাচীনকাল থেকেই সমুদ্রপথে বাণিজ্যের জন্য পরিচিত এই অঞ্চল। ১৯১৭ সাল পর্যন্ত অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকার পর ব্রিটিশ শাসন থেকে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয় মিসর। এরপর গত শতাব্দীর শেষভাগ থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে গাজার প্রায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। গত শনিবার থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলা।
গাজার সাম্প্রতিক ইতিহাসের কিছু প্রধান ঘটনা এখানে তুলে ধরা হলো।
১৯৪৮-ব্রিটিশ শাসনের সমাপ্তি
১৯৪০=এর দশকের শেষ দিকে ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটলে সেখানে ইহুদি ও আরবদের মধ্যে সহিংসতা তীব্র আকার ধারণ করে। নতুন প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে এর আরব প্রতিবেশীদের সংঘর্ষ ১৯৪৮ সালের মে মাসে যুদ্ধের রূপ নেয়। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর থেকে পালিয়ে গাজায় আশ্রয় নেয়।
উত্তরে সিনাই ঠেকে দক্ষিণে অ্যাশকেলন পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ২৫ মাইল (৪০ কিলোমিটার) দীর্ঘ উপত্যকার দখল নেয় মিসরীয় সেনাবাহিনী। শরণার্থীদের আগমনে গাজার জনসংখ্যা তিন গুণ বেড়ে হয় প্রায় ২ লাখ।
১৯৫০ ও ৬০-এর দশক—মিসরীয় বাহিনীর শাসন
সামরিক শাসনের অধীনে গাজার নিয়ন্ত্রণ দুই দশক ধরে রাখে মিসর। ফিলিস্তিনিদের মিসরে কাজ এবং পড়াশোনা করার অনুমতিও দেওয়া হয়। বেশির ভাগ শরণার্থী নিয়ে গঠিত ফিলিস্তিনি গেরিলা গ্রুপ ফেদায়েন প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ইসরায়েলে হামলা চালায়।
ইউএনআরডব্লিউএ নামে গাজায় একটি শরণার্থী সংস্থা খোলে জাতিসংঘ। সংস্থাটি গাজায় প্রায় ১৬ লাখ নিবন্ধিত ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের পাশাপাশি জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া এবং পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জন্য নানা সেবা দিয়ে আসছে।
১৯৬৭-যুদ্ধ এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দখল
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে গাজা উপত্যকা দখল করে নেয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সে বছরই ইসরায়েলের করা এক আদমশুমারিতে গাজায় জনসংখ্যা ৩ লাখ ৯৪ হাজার বলে উল্লেখ করা যায়; যার ৬০ শতাংশই শরণার্থী।
মিসরীয়দের চলে যাওয়ায় গাজার অনেক শ্রমিক ইসরায়েলের অভ্যন্তরে কৃষি, নির্মাণ এবং পরিষেবা শিল্পে চাকরি নিয়েছিল। অঞ্চলটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। পরবর্তী দশকগুলোতে তৈরি করা ইসরায়েলি বসতিগুলো পাহারা দেওয়ার জন্য রয়ে যায় সৈন্যরা। আর এগুলোই হয়ে ওঠে ফিলিস্তিনিদের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের উৎস।
১৯৮৭-ফিলিস্তিনের প্রথম গণজাগরণ ও হামাস গঠন
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের ২০ বছর পর ফিলিস্তিনিদের প্রথম ইন্তিফাদা বা গণজাগরণের সূচনা হয়। ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বরে গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ফিলিস্তিনি শ্রমিকদের বহনকারী একটি গাড়িকে চাপা দেয় ইসরায়েলের একটি ট্রাক। এতে নিহত হয় চারজন ফিলিস্তিনি শ্রমিক। এরপর পাথর ছুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ। পর্যায়ক্রমে আসে ধর্মঘট ও হরতাল।
ফিলিস্তিনিদের ক্ষুব্ধ মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে মিসরভিত্তিক মুসলিম ব্রাদারহুড গঠন করে ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন, হামাস। গাজায় প্রতিষ্ঠিত হয় এর ঘাঁটি। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের ধ্বংস ও ইসলামি শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নিবেদিত সংগঠন হামাস হয়ে ওঠে ইয়াসির আরাফাতের ধর্মনিরপেক্ষ ফাতাহ পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বী, যারা ছিল প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের নেতৃত্বে।
১৯৯৩-অসলো চুক্তি এবং ফিলিস্তিনের আধা স্বায়ত্তশাসন
১৯৯৩ সালে ঐতিহাসিক অসলো শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। এই অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির অধীনে ফিলিস্তিনিদের প্রথমবারের মতো গাজা এবং পশ্চিম তীরের জেরিকোতে সীমিত নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয়েছিল। কয়েক দশক নির্বাসনের পর গাজায় ফিরে যান ইয়াসির আরাফাত।
নবগঠিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে কিছুটা স্বায়ত্তশাসনের পাশাপাশি পাঁচ বছর পর ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয় অসলো চুক্তি। কিন্তু তা কখনোই বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা চুক্তি প্রত্যাহার করার অভিযোগ তোলে ইসরায়েল। অন্যদিকে, ইসরায়েলের বসতি নির্মাণ অব্যাহত থাকায় ক্ষুব্ধ হয় ফিলিস্তিনিরা।
শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে বোমা হামলা চালায় হামাস ও ইসলামিক জিহাদ। এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় ফিলিস্তিনিদের চলাচলের ওপর আরও বেশি করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকে ইসরায়েল। অন্যদিকে, হামাসের বিরুদ্ধে ইয়াসির আরাফাতের সংশ্লিষ্টরা তোলেন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ।
২০০০-ফিলিস্তিনের দ্বিতীয় ইন্তিফাদা
২০০০ সালে ফিলিস্তিনের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার আগমনে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। ফিলিস্তিনিদের দ্বারা আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং গুলিবর্ষণের বিপরীতে ইসরায়েল চালায় বিমান হামলা। ফিলিস্তিনিদের চলাচলের সুযোগ আরও সংকুচিত হয় এবং অঞ্চলটিতে শুরু হয় কারফিউ।
ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রতীক এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাদের সরাসরি সংযোগের একমাত্র সূত্র গাজা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছিল না মিসর কিংবা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিমানবন্দরকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখত ইসরায়েল। ২০০১ সালের ১১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার কয়েক মাস পর গাজা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রাডার অ্যানটেনা এবং রানওয়ে ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েল।
মাছ ধরা ছিল গাজার অধিবাসীদের আয়ের অন্যতম উৎস। নৌযানের মাধ্যমে অস্ত্র নিয়ে আসা হচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলে ফিলিস্তিনিদের মাছ ধরার সুযোগ সংকুচিত করে দেওয়া হয়।
২০০৫-গাজা থেকে ইসরায়েলি বসতি সরিয়ে নেওয়া
২০০৫ সালের আগস্টে ইসরায়েল গাজা থেকে তার সমস্ত সৈন্য এবং বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে নিয়েছিল। তত দিনে বহির্বিশ্ব থেকে গাজাকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলিদের পরিত্যক্ত ভবন ও অবকাঠামো ভেঙে ফেলে ফিলিস্তিনিরা। এ সময় অঞ্চলটিতে সশস্ত্র গোষ্ঠী, চোরাকারাবারী এবং উদ্যোক্তারা ভিড় জমায়। অবৈধ নানা ব্যবসা গড়ে ওঠে এখানে। ইসরায়েলি বসতি অপসারণের সঙ্গে সঙ্গে গাজায় স্থাপিত অনেক কারখানা, গ্রিনহাউস এবং ওয়ার্কশপগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। এসব প্রতিষ্ঠানে গাজার অনেক অধিবাসীর কর্মসংস্থান হয়েছিল।
২০০৬-হামাসের অধীনে বিচ্ছিন্নতা
২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের সংসদীয় নির্বাচনে আকস্মিক বিজয় অর্জন করে হামাস। এরপর আরাফাতের উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের অনুগত বাহিনীকে উৎখাত করে তারা গাজার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দখল করে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশির ভাগই তখন হামাস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ফিলিস্তিনিদের সহায়তা বন্ধ করে দেয়। কারণ, তারা হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।
ইসরায়েল হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শ্রমিকদের দেশে প্রবেশ করা বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস বন্ধ করে দেয়। ইসরায়েলি বিমান হামলায় বিকল হইয়ে যায় গাজার একমাত্র বৈদ্যুতিক কেন্দ্র। যার ফলে ব্যাপক ব্ল্যাকআউট হয়। নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণ দেখিয়ে গাজা দিয়ে মানুষ এবং পণ্য চলাচলের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইসরায়েল ও মিসর।
২০১৪ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করা মিসরের সামরিক-সমর্থিত নেতা আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি হামাসকে হুমকি হিসেবে দেখে গাজার সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেন এবং উড়িয়ে দেন বেশির ভাগ টানেল। এরপর গাজার অর্থনীতি আবার বিপরীত দিকে যাত্রা করে।
দ্বন্দ্ব চক্র
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি জঙ্গিগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা ও প্রতিশোধের চক্রে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার অর্থনীতি।
২০২৩ সালের আগে রক্তক্ষয়ী বেশ কিছু সংঘর্ষ হয়েছিল ২০১৪ সালে। তখন হামাস এবং অন্যান্য গোষ্ঠী ইসরায়েলের কেন্দ্রস্থলের শহরগুলোতে রকেট হামলা চালায়। বিমান হামলা এবং সাঁজোয়া যান দিয়ে তখন গাজার আশপাশের এলাকাগুলোকে ধ্বংস করে ইসরায়েল। এই হামলায় নিহত হয় ২ হাজার ১০০-এর বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিনি। অন্যদিকে ইসরায়েল জানায়, সংঘর্ষে ৬৭ জন ইসরায়েলি সেনা এবং ছয় বেসামরিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।
২০২৩-অতর্কিত হামলা
গাজার কর্মীদের অর্থনৈতিক প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে হামাস হয়তো ইসরায়েলকে বিশ্বাস করাতে পেরেছিল যে যুদ্ধ করতে করতে অনেকটাই ক্লান্ত এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। তবে গোপনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছিল হামাসের যোদ্ধাদের।
৭ অক্টোবর হামাসের বন্দুকধারীরা ইসরায়েলের ওপর চালায় আকস্মিক আক্রমণ। শত শত লোককে হত্যা এবং কয়েক ডজন ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। ইসরায়েলের শহরগুলোতেও তাণ্ডব চালায় তারা। গত ৭৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হামলার মাধ্যমে এর ভয়াবহ প্রতিশোধ নেয় ইসরায়েল। একের পর এক বিমান হামলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় গাজা। হতাহতের সংখ্যা কেবল বেড়েই চলেছে।
ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত গাজা উপত্যকা। প্রাচীনকাল থেকেই সমুদ্রপথে বাণিজ্যের জন্য পরিচিত এই অঞ্চল। ১৯১৭ সাল পর্যন্ত অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকার পর ব্রিটিশ শাসন থেকে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয় মিসর। এরপর গত শতাব্দীর শেষভাগ থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে গাজার প্রায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। গত শনিবার থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলা।
গাজার সাম্প্রতিক ইতিহাসের কিছু প্রধান ঘটনা এখানে তুলে ধরা হলো।
১৯৪৮-ব্রিটিশ শাসনের সমাপ্তি
১৯৪০=এর দশকের শেষ দিকে ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটলে সেখানে ইহুদি ও আরবদের মধ্যে সহিংসতা তীব্র আকার ধারণ করে। নতুন প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে এর আরব প্রতিবেশীদের সংঘর্ষ ১৯৪৮ সালের মে মাসে যুদ্ধের রূপ নেয়। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর থেকে পালিয়ে গাজায় আশ্রয় নেয়।
উত্তরে সিনাই ঠেকে দক্ষিণে অ্যাশকেলন পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ২৫ মাইল (৪০ কিলোমিটার) দীর্ঘ উপত্যকার দখল নেয় মিসরীয় সেনাবাহিনী। শরণার্থীদের আগমনে গাজার জনসংখ্যা তিন গুণ বেড়ে হয় প্রায় ২ লাখ।
১৯৫০ ও ৬০-এর দশক—মিসরীয় বাহিনীর শাসন
সামরিক শাসনের অধীনে গাজার নিয়ন্ত্রণ দুই দশক ধরে রাখে মিসর। ফিলিস্তিনিদের মিসরে কাজ এবং পড়াশোনা করার অনুমতিও দেওয়া হয়। বেশির ভাগ শরণার্থী নিয়ে গঠিত ফিলিস্তিনি গেরিলা গ্রুপ ফেদায়েন প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ইসরায়েলে হামলা চালায়।
ইউএনআরডব্লিউএ নামে গাজায় একটি শরণার্থী সংস্থা খোলে জাতিসংঘ। সংস্থাটি গাজায় প্রায় ১৬ লাখ নিবন্ধিত ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের পাশাপাশি জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া এবং পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জন্য নানা সেবা দিয়ে আসছে।
১৯৬৭-যুদ্ধ এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দখল
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে গাজা উপত্যকা দখল করে নেয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সে বছরই ইসরায়েলের করা এক আদমশুমারিতে গাজায় জনসংখ্যা ৩ লাখ ৯৪ হাজার বলে উল্লেখ করা যায়; যার ৬০ শতাংশই শরণার্থী।
মিসরীয়দের চলে যাওয়ায় গাজার অনেক শ্রমিক ইসরায়েলের অভ্যন্তরে কৃষি, নির্মাণ এবং পরিষেবা শিল্পে চাকরি নিয়েছিল। অঞ্চলটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। পরবর্তী দশকগুলোতে তৈরি করা ইসরায়েলি বসতিগুলো পাহারা দেওয়ার জন্য রয়ে যায় সৈন্যরা। আর এগুলোই হয়ে ওঠে ফিলিস্তিনিদের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের উৎস।
১৯৮৭-ফিলিস্তিনের প্রথম গণজাগরণ ও হামাস গঠন
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের ২০ বছর পর ফিলিস্তিনিদের প্রথম ইন্তিফাদা বা গণজাগরণের সূচনা হয়। ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বরে গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ফিলিস্তিনি শ্রমিকদের বহনকারী একটি গাড়িকে চাপা দেয় ইসরায়েলের একটি ট্রাক। এতে নিহত হয় চারজন ফিলিস্তিনি শ্রমিক। এরপর পাথর ছুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ। পর্যায়ক্রমে আসে ধর্মঘট ও হরতাল।
ফিলিস্তিনিদের ক্ষুব্ধ মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে মিসরভিত্তিক মুসলিম ব্রাদারহুড গঠন করে ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন, হামাস। গাজায় প্রতিষ্ঠিত হয় এর ঘাঁটি। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের ধ্বংস ও ইসলামি শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নিবেদিত সংগঠন হামাস হয়ে ওঠে ইয়াসির আরাফাতের ধর্মনিরপেক্ষ ফাতাহ পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বী, যারা ছিল প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের নেতৃত্বে।
১৯৯৩-অসলো চুক্তি এবং ফিলিস্তিনের আধা স্বায়ত্তশাসন
১৯৯৩ সালে ঐতিহাসিক অসলো শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। এই অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির অধীনে ফিলিস্তিনিদের প্রথমবারের মতো গাজা এবং পশ্চিম তীরের জেরিকোতে সীমিত নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয়েছিল। কয়েক দশক নির্বাসনের পর গাজায় ফিরে যান ইয়াসির আরাফাত।
নবগঠিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে কিছুটা স্বায়ত্তশাসনের পাশাপাশি পাঁচ বছর পর ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয় অসলো চুক্তি। কিন্তু তা কখনোই বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা চুক্তি প্রত্যাহার করার অভিযোগ তোলে ইসরায়েল। অন্যদিকে, ইসরায়েলের বসতি নির্মাণ অব্যাহত থাকায় ক্ষুব্ধ হয় ফিলিস্তিনিরা।
শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে বোমা হামলা চালায় হামাস ও ইসলামিক জিহাদ। এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় ফিলিস্তিনিদের চলাচলের ওপর আরও বেশি করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকে ইসরায়েল। অন্যদিকে, হামাসের বিরুদ্ধে ইয়াসির আরাফাতের সংশ্লিষ্টরা তোলেন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ।
২০০০-ফিলিস্তিনের দ্বিতীয় ইন্তিফাদা
২০০০ সালে ফিলিস্তিনের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার আগমনে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। ফিলিস্তিনিদের দ্বারা আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং গুলিবর্ষণের বিপরীতে ইসরায়েল চালায় বিমান হামলা। ফিলিস্তিনিদের চলাচলের সুযোগ আরও সংকুচিত হয় এবং অঞ্চলটিতে শুরু হয় কারফিউ।
ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রতীক এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাদের সরাসরি সংযোগের একমাত্র সূত্র গাজা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছিল না মিসর কিংবা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিমানবন্দরকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখত ইসরায়েল। ২০০১ সালের ১১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার কয়েক মাস পর গাজা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রাডার অ্যানটেনা এবং রানওয়ে ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েল।
মাছ ধরা ছিল গাজার অধিবাসীদের আয়ের অন্যতম উৎস। নৌযানের মাধ্যমে অস্ত্র নিয়ে আসা হচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলে ফিলিস্তিনিদের মাছ ধরার সুযোগ সংকুচিত করে দেওয়া হয়।
২০০৫-গাজা থেকে ইসরায়েলি বসতি সরিয়ে নেওয়া
২০০৫ সালের আগস্টে ইসরায়েল গাজা থেকে তার সমস্ত সৈন্য এবং বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে নিয়েছিল। তত দিনে বহির্বিশ্ব থেকে গাজাকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলিদের পরিত্যক্ত ভবন ও অবকাঠামো ভেঙে ফেলে ফিলিস্তিনিরা। এ সময় অঞ্চলটিতে সশস্ত্র গোষ্ঠী, চোরাকারাবারী এবং উদ্যোক্তারা ভিড় জমায়। অবৈধ নানা ব্যবসা গড়ে ওঠে এখানে। ইসরায়েলি বসতি অপসারণের সঙ্গে সঙ্গে গাজায় স্থাপিত অনেক কারখানা, গ্রিনহাউস এবং ওয়ার্কশপগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। এসব প্রতিষ্ঠানে গাজার অনেক অধিবাসীর কর্মসংস্থান হয়েছিল।
২০০৬-হামাসের অধীনে বিচ্ছিন্নতা
২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের সংসদীয় নির্বাচনে আকস্মিক বিজয় অর্জন করে হামাস। এরপর আরাফাতের উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের অনুগত বাহিনীকে উৎখাত করে তারা গাজার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দখল করে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশির ভাগই তখন হামাস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ফিলিস্তিনিদের সহায়তা বন্ধ করে দেয়। কারণ, তারা হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।
ইসরায়েল হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শ্রমিকদের দেশে প্রবেশ করা বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস বন্ধ করে দেয়। ইসরায়েলি বিমান হামলায় বিকল হইয়ে যায় গাজার একমাত্র বৈদ্যুতিক কেন্দ্র। যার ফলে ব্যাপক ব্ল্যাকআউট হয়। নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণ দেখিয়ে গাজা দিয়ে মানুষ এবং পণ্য চলাচলের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইসরায়েল ও মিসর।
২০১৪ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করা মিসরের সামরিক-সমর্থিত নেতা আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি হামাসকে হুমকি হিসেবে দেখে গাজার সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেন এবং উড়িয়ে দেন বেশির ভাগ টানেল। এরপর গাজার অর্থনীতি আবার বিপরীত দিকে যাত্রা করে।
দ্বন্দ্ব চক্র
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি জঙ্গিগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা ও প্রতিশোধের চক্রে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার অর্থনীতি।
২০২৩ সালের আগে রক্তক্ষয়ী বেশ কিছু সংঘর্ষ হয়েছিল ২০১৪ সালে। তখন হামাস এবং অন্যান্য গোষ্ঠী ইসরায়েলের কেন্দ্রস্থলের শহরগুলোতে রকেট হামলা চালায়। বিমান হামলা এবং সাঁজোয়া যান দিয়ে তখন গাজার আশপাশের এলাকাগুলোকে ধ্বংস করে ইসরায়েল। এই হামলায় নিহত হয় ২ হাজার ১০০-এর বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিনি। অন্যদিকে ইসরায়েল জানায়, সংঘর্ষে ৬৭ জন ইসরায়েলি সেনা এবং ছয় বেসামরিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।
২০২৩-অতর্কিত হামলা
গাজার কর্মীদের অর্থনৈতিক প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে হামাস হয়তো ইসরায়েলকে বিশ্বাস করাতে পেরেছিল যে যুদ্ধ করতে করতে অনেকটাই ক্লান্ত এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। তবে গোপনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছিল হামাসের যোদ্ধাদের।
৭ অক্টোবর হামাসের বন্দুকধারীরা ইসরায়েলের ওপর চালায় আকস্মিক আক্রমণ। শত শত লোককে হত্যা এবং কয়েক ডজন ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। ইসরায়েলের শহরগুলোতেও তাণ্ডব চালায় তারা। গত ৭৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হামলার মাধ্যমে এর ভয়াবহ প্রতিশোধ নেয় ইসরায়েল। একের পর এক বিমান হামলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় গাজা। হতাহতের সংখ্যা কেবল বেড়েই চলেছে।
ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত গাজা উপত্যকা। প্রাচীনকাল থেকেই সমুদ্রপথে বাণিজ্যের জন্য পরিচিত এই অঞ্চল। ১৯১৭ সাল পর্যন্ত অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকার পর ব্রিটিশ শাসন থেকে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয় মিসর। এরপর গত শতাব্দীর শেষভাগ থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে গাজার প্রায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। গত শনিবার থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলা।
গাজার সাম্প্রতিক ইতিহাসের কিছু প্রধান ঘটনা এখানে তুলে ধরা হলো।
১৯৪৮-ব্রিটিশ শাসনের সমাপ্তি
১৯৪০=এর দশকের শেষ দিকে ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটলে সেখানে ইহুদি ও আরবদের মধ্যে সহিংসতা তীব্র আকার ধারণ করে। নতুন প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে এর আরব প্রতিবেশীদের সংঘর্ষ ১৯৪৮ সালের মে মাসে যুদ্ধের রূপ নেয়। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর থেকে পালিয়ে গাজায় আশ্রয় নেয়।
উত্তরে সিনাই ঠেকে দক্ষিণে অ্যাশকেলন পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ২৫ মাইল (৪০ কিলোমিটার) দীর্ঘ উপত্যকার দখল নেয় মিসরীয় সেনাবাহিনী। শরণার্থীদের আগমনে গাজার জনসংখ্যা তিন গুণ বেড়ে হয় প্রায় ২ লাখ।
১৯৫০ ও ৬০-এর দশক—মিসরীয় বাহিনীর শাসন
সামরিক শাসনের অধীনে গাজার নিয়ন্ত্রণ দুই দশক ধরে রাখে মিসর। ফিলিস্তিনিদের মিসরে কাজ এবং পড়াশোনা করার অনুমতিও দেওয়া হয়। বেশির ভাগ শরণার্থী নিয়ে গঠিত ফিলিস্তিনি গেরিলা গ্রুপ ফেদায়েন প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ইসরায়েলে হামলা চালায়।
ইউএনআরডব্লিউএ নামে গাজায় একটি শরণার্থী সংস্থা খোলে জাতিসংঘ। সংস্থাটি গাজায় প্রায় ১৬ লাখ নিবন্ধিত ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের পাশাপাশি জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া এবং পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জন্য নানা সেবা দিয়ে আসছে।
১৯৬৭-যুদ্ধ এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দখল
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে গাজা উপত্যকা দখল করে নেয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সে বছরই ইসরায়েলের করা এক আদমশুমারিতে গাজায় জনসংখ্যা ৩ লাখ ৯৪ হাজার বলে উল্লেখ করা যায়; যার ৬০ শতাংশই শরণার্থী।
মিসরীয়দের চলে যাওয়ায় গাজার অনেক শ্রমিক ইসরায়েলের অভ্যন্তরে কৃষি, নির্মাণ এবং পরিষেবা শিল্পে চাকরি নিয়েছিল। অঞ্চলটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। পরবর্তী দশকগুলোতে তৈরি করা ইসরায়েলি বসতিগুলো পাহারা দেওয়ার জন্য রয়ে যায় সৈন্যরা। আর এগুলোই হয়ে ওঠে ফিলিস্তিনিদের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের উৎস।
১৯৮৭-ফিলিস্তিনের প্রথম গণজাগরণ ও হামাস গঠন
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের ২০ বছর পর ফিলিস্তিনিদের প্রথম ইন্তিফাদা বা গণজাগরণের সূচনা হয়। ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বরে গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ফিলিস্তিনি শ্রমিকদের বহনকারী একটি গাড়িকে চাপা দেয় ইসরায়েলের একটি ট্রাক। এতে নিহত হয় চারজন ফিলিস্তিনি শ্রমিক। এরপর পাথর ছুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ। পর্যায়ক্রমে আসে ধর্মঘট ও হরতাল।
ফিলিস্তিনিদের ক্ষুব্ধ মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে মিসরভিত্তিক মুসলিম ব্রাদারহুড গঠন করে ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন, হামাস। গাজায় প্রতিষ্ঠিত হয় এর ঘাঁটি। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের ধ্বংস ও ইসলামি শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নিবেদিত সংগঠন হামাস হয়ে ওঠে ইয়াসির আরাফাতের ধর্মনিরপেক্ষ ফাতাহ পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বী, যারা ছিল প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের নেতৃত্বে।
১৯৯৩-অসলো চুক্তি এবং ফিলিস্তিনের আধা স্বায়ত্তশাসন
১৯৯৩ সালে ঐতিহাসিক অসলো শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। এই অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির অধীনে ফিলিস্তিনিদের প্রথমবারের মতো গাজা এবং পশ্চিম তীরের জেরিকোতে সীমিত নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয়েছিল। কয়েক দশক নির্বাসনের পর গাজায় ফিরে যান ইয়াসির আরাফাত।
নবগঠিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে কিছুটা স্বায়ত্তশাসনের পাশাপাশি পাঁচ বছর পর ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয় অসলো চুক্তি। কিন্তু তা কখনোই বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা চুক্তি প্রত্যাহার করার অভিযোগ তোলে ইসরায়েল। অন্যদিকে, ইসরায়েলের বসতি নির্মাণ অব্যাহত থাকায় ক্ষুব্ধ হয় ফিলিস্তিনিরা।
শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে বোমা হামলা চালায় হামাস ও ইসলামিক জিহাদ। এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় ফিলিস্তিনিদের চলাচলের ওপর আরও বেশি করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকে ইসরায়েল। অন্যদিকে, হামাসের বিরুদ্ধে ইয়াসির আরাফাতের সংশ্লিষ্টরা তোলেন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ।
২০০০-ফিলিস্তিনের দ্বিতীয় ইন্তিফাদা
২০০০ সালে ফিলিস্তিনের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার আগমনে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। ফিলিস্তিনিদের দ্বারা আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং গুলিবর্ষণের বিপরীতে ইসরায়েল চালায় বিমান হামলা। ফিলিস্তিনিদের চলাচলের সুযোগ আরও সংকুচিত হয় এবং অঞ্চলটিতে শুরু হয় কারফিউ।
ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রতীক এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাদের সরাসরি সংযোগের একমাত্র সূত্র গাজা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছিল না মিসর কিংবা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিমানবন্দরকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখত ইসরায়েল। ২০০১ সালের ১১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার কয়েক মাস পর গাজা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রাডার অ্যানটেনা এবং রানওয়ে ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েল।
মাছ ধরা ছিল গাজার অধিবাসীদের আয়ের অন্যতম উৎস। নৌযানের মাধ্যমে অস্ত্র নিয়ে আসা হচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলে ফিলিস্তিনিদের মাছ ধরার সুযোগ সংকুচিত করে দেওয়া হয়।
২০০৫-গাজা থেকে ইসরায়েলি বসতি সরিয়ে নেওয়া
২০০৫ সালের আগস্টে ইসরায়েল গাজা থেকে তার সমস্ত সৈন্য এবং বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে নিয়েছিল। তত দিনে বহির্বিশ্ব থেকে গাজাকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলিদের পরিত্যক্ত ভবন ও অবকাঠামো ভেঙে ফেলে ফিলিস্তিনিরা। এ সময় অঞ্চলটিতে সশস্ত্র গোষ্ঠী, চোরাকারাবারী এবং উদ্যোক্তারা ভিড় জমায়। অবৈধ নানা ব্যবসা গড়ে ওঠে এখানে। ইসরায়েলি বসতি অপসারণের সঙ্গে সঙ্গে গাজায় স্থাপিত অনেক কারখানা, গ্রিনহাউস এবং ওয়ার্কশপগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। এসব প্রতিষ্ঠানে গাজার অনেক অধিবাসীর কর্মসংস্থান হয়েছিল।
২০০৬-হামাসের অধীনে বিচ্ছিন্নতা
২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের সংসদীয় নির্বাচনে আকস্মিক বিজয় অর্জন করে হামাস। এরপর আরাফাতের উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের অনুগত বাহিনীকে উৎখাত করে তারা গাজার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দখল করে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশির ভাগই তখন হামাস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ফিলিস্তিনিদের সহায়তা বন্ধ করে দেয়। কারণ, তারা হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।
ইসরায়েল হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শ্রমিকদের দেশে প্রবেশ করা বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস বন্ধ করে দেয়। ইসরায়েলি বিমান হামলায় বিকল হইয়ে যায় গাজার একমাত্র বৈদ্যুতিক কেন্দ্র। যার ফলে ব্যাপক ব্ল্যাকআউট হয়। নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণ দেখিয়ে গাজা দিয়ে মানুষ এবং পণ্য চলাচলের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইসরায়েল ও মিসর।
২০১৪ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করা মিসরের সামরিক-সমর্থিত নেতা আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি হামাসকে হুমকি হিসেবে দেখে গাজার সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেন এবং উড়িয়ে দেন বেশির ভাগ টানেল। এরপর গাজার অর্থনীতি আবার বিপরীত দিকে যাত্রা করে।
দ্বন্দ্ব চক্র
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি জঙ্গিগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা ও প্রতিশোধের চক্রে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার অর্থনীতি।
২০২৩ সালের আগে রক্তক্ষয়ী বেশ কিছু সংঘর্ষ হয়েছিল ২০১৪ সালে। তখন হামাস এবং অন্যান্য গোষ্ঠী ইসরায়েলের কেন্দ্রস্থলের শহরগুলোতে রকেট হামলা চালায়। বিমান হামলা এবং সাঁজোয়া যান দিয়ে তখন গাজার আশপাশের এলাকাগুলোকে ধ্বংস করে ইসরায়েল। এই হামলায় নিহত হয় ২ হাজার ১০০-এর বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিনি। অন্যদিকে ইসরায়েল জানায়, সংঘর্ষে ৬৭ জন ইসরায়েলি সেনা এবং ছয় বেসামরিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।
২০২৩-অতর্কিত হামলা
গাজার কর্মীদের অর্থনৈতিক প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে হামাস হয়তো ইসরায়েলকে বিশ্বাস করাতে পেরেছিল যে যুদ্ধ করতে করতে অনেকটাই ক্লান্ত এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। তবে গোপনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছিল হামাসের যোদ্ধাদের।
৭ অক্টোবর হামাসের বন্দুকধারীরা ইসরায়েলের ওপর চালায় আকস্মিক আক্রমণ। শত শত লোককে হত্যা এবং কয়েক ডজন ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। ইসরায়েলের শহরগুলোতেও তাণ্ডব চালায় তারা। গত ৭৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হামলার মাধ্যমে এর ভয়াবহ প্রতিশোধ নেয় ইসরায়েল। একের পর এক বিমান হামলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় গাজা। হতাহতের সংখ্যা কেবল বেড়েই চলেছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনসংলগ্ন কাকদ্বীপে কালীপ্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক ঝড় উঠেছে। প্রতিমা ভাঙচুরের পর পুলিশের একটি ভ্যানে করে সেই প্রতিমা সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় বিজেপি সরাসরি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে...
১ ঘণ্টা আগে১৯৫৯ সালের ৬ জুন পশ্চিম তীরের কোবার গ্রামে জন্ম মারওয়ান বারগুতির। দরিদ্র শ্রমিক পরিবারের সন্তান তিনি। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পশ্চিম তীর দখলের পর ইসরায়েলি দখলদারির মধ্যে বেড়ে ওঠেন বারগুতি। পরিবারের সদস্যদের বর্ণনা অনুযায়ী, শিশু বয়স থেকে রাজনীতি-সচেতন ছিলেন বারগুতি। ছোটবেলায় তিনি দেখেছিলেন, ইসরা
৩ ঘণ্টা আগেলন্ডনের পশ্চিমাঞ্চলে একটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপের অবিশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় এক নারীকে ১৫০ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৪ হাজার টাকারও বেশি। এই ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে স্থানীয় কাউন্সিলে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই নারী।
৩ ঘণ্টা আগেজেফ্রি এপস্টেইনের কুখ্যাত যৌন পাচার চক্রের অন্যতম ভুক্তভোগী ভার্জিনিয়া জিউফ্রের মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে তাঁর স্মৃতিকথা। ‘নোবডিজ গার্ল’ নামের এই বইটিতে ভার্জিনিয়া দাবি করেছেন, একজন প্রখ্যাত প্রধানমন্ত্রীও তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন।
৪ ঘণ্টা আগেকলকাতা প্রতিনিধি
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনসংলগ্ন কাকদ্বীপে কালীপ্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক ঝড় উঠেছে। প্রতিমা ভাঙচুরের পর পুলিশের একটি ভ্যানে করে সেই প্রতিমা সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় বিজেপি সরাসরি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ‘তোষণ নীতি’র অভিযোগ তুলেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজেপি এ ঘটনায় রাজ্য পুলিশকে আক্রমণ করে একাধিক অভিযোগ এনেছে। বিজেপি নেতা অমিতাভ মালব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে অভিযোগ করেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ মা কালীকে একটি পুলিশ ভ্যানে করে নিয়ে গেছে! লজ্জা, লজ্জা—এই কলঙ্ক লুকানোর কোনো জায়গা নেই।’
বিজেপির এ নেতা আরও অভিযোগ করেন, ‘প্রশাসন প্রথমে গ্রামবাসীকে ভয় দেখিয়ে মন্দিরের গেটে তালা লাগায়। তারা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু স্থানীয়দের তীব্র প্রতিবাদের মুখে তা আবার খুলতে বাধ্য হয়।’
বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করে বলেন, ‘দোষীদের গ্রেপ্তার না করে মা কালীর প্রতিমা পুলিশ ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে! সাতজন হিন্দুরক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আপনাদের রাজ্য, আপনারা যা চান, তা-ই করতে পারেন!’
কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. সুকান্ত মজুমদার সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগ করেন, ‘রাজ্য সরকার কট্টরপন্থীদের তোষণে ব্যস্ত। ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তার দলের নেতারা বারবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতি ও বিশ্বাসে আঘাত হেনেছেন। কিন্তু মা কালীকে পুলিশ ভ্যানে নেওয়ার মতো লজ্জাজনক ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।’
সুকান্ত মজুমদার আরও বলেন, ‘এই ঘটনা শুধু নিন্দনীয় নয়, বরং প্রতিটি ভক্তের মাথা লজ্জায় নত করার মতো।’
এই অভিযোগের জবাবে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ এনেছে। দলের পক্ষ থেকে এক মুখপাত্র বলেন, পুলিশ এর ব্যাখ্যা দিয়েছে। কিন্তু কিছু লোক একে বিকৃত রাজনীতি হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনসংলগ্ন কাকদ্বীপে কালীপ্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক ঝড় উঠেছে। প্রতিমা ভাঙচুরের পর পুলিশের একটি ভ্যানে করে সেই প্রতিমা সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় বিজেপি সরাসরি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ‘তোষণ নীতি’র অভিযোগ তুলেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজেপি এ ঘটনায় রাজ্য পুলিশকে আক্রমণ করে একাধিক অভিযোগ এনেছে। বিজেপি নেতা অমিতাভ মালব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে অভিযোগ করেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ মা কালীকে একটি পুলিশ ভ্যানে করে নিয়ে গেছে! লজ্জা, লজ্জা—এই কলঙ্ক লুকানোর কোনো জায়গা নেই।’
বিজেপির এ নেতা আরও অভিযোগ করেন, ‘প্রশাসন প্রথমে গ্রামবাসীকে ভয় দেখিয়ে মন্দিরের গেটে তালা লাগায়। তারা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু স্থানীয়দের তীব্র প্রতিবাদের মুখে তা আবার খুলতে বাধ্য হয়।’
বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করে বলেন, ‘দোষীদের গ্রেপ্তার না করে মা কালীর প্রতিমা পুলিশ ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে! সাতজন হিন্দুরক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আপনাদের রাজ্য, আপনারা যা চান, তা-ই করতে পারেন!’
কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. সুকান্ত মজুমদার সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগ করেন, ‘রাজ্য সরকার কট্টরপন্থীদের তোষণে ব্যস্ত। ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তার দলের নেতারা বারবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতি ও বিশ্বাসে আঘাত হেনেছেন। কিন্তু মা কালীকে পুলিশ ভ্যানে নেওয়ার মতো লজ্জাজনক ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।’
সুকান্ত মজুমদার আরও বলেন, ‘এই ঘটনা শুধু নিন্দনীয় নয়, বরং প্রতিটি ভক্তের মাথা লজ্জায় নত করার মতো।’
এই অভিযোগের জবাবে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ এনেছে। দলের পক্ষ থেকে এক মুখপাত্র বলেন, পুলিশ এর ব্যাখ্যা দিয়েছে। কিন্তু কিছু লোক একে বিকৃত রাজনীতি হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।
ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত গাজা উপত্যকা। প্রাচীনকাল থেকেই সমুদ্রপথে বাণিজ্যের জন্য পরিচিত এই অঞ্চল। ১৯১৭ সাল পর্যন্ত অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকার পর ব্রিটিশ শাসন থেকে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয় মিসর। এরপর গত শতাব্দীর শেষভাগ থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে গাজার প্রায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। গত শ
১১ অক্টোবর ২০২৩১৯৫৯ সালের ৬ জুন পশ্চিম তীরের কোবার গ্রামে জন্ম মারওয়ান বারগুতির। দরিদ্র শ্রমিক পরিবারের সন্তান তিনি। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পশ্চিম তীর দখলের পর ইসরায়েলি দখলদারির মধ্যে বেড়ে ওঠেন বারগুতি। পরিবারের সদস্যদের বর্ণনা অনুযায়ী, শিশু বয়স থেকে রাজনীতি-সচেতন ছিলেন বারগুতি। ছোটবেলায় তিনি দেখেছিলেন, ইসরা
৩ ঘণ্টা আগেলন্ডনের পশ্চিমাঞ্চলে একটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপের অবিশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় এক নারীকে ১৫০ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৪ হাজার টাকারও বেশি। এই ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে স্থানীয় কাউন্সিলে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই নারী।
৩ ঘণ্টা আগেজেফ্রি এপস্টেইনের কুখ্যাত যৌন পাচার চক্রের অন্যতম ভুক্তভোগী ভার্জিনিয়া জিউফ্রের মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে তাঁর স্মৃতিকথা। ‘নোবডিজ গার্ল’ নামের এই বইটিতে ভার্জিনিয়া দাবি করেছেন, একজন প্রখ্যাত প্রধানমন্ত্রীও তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন।
৪ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
চলমান যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে এই মুক্তিপ্রাপ্তদের তালিকায় ছিলেন না ফিলিস্তিনের সবচেয়ে আলোচিত বন্দী মারওয়ান বারগুতি। ফাতাহ আন্দোলনের শীর্ষ নেতা এবং ফিলিস্তিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত বারগুতি।
জনমত জরিপের তথ্য অনুসারে, বারগুতি ফিলিস্তিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক এবং মনে করা হয়, তিনি ফিলিস্তিনি সমাজে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম। কিন্তু দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০০২ সাল থেকে তিনি ইসরায়েলের কারাগারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
১৯৫৯ সালের ৬ জুন পশ্চিম তীরের কোবার গ্রামে জন্ম মারওয়ান বারগুতির। দরিদ্র শ্রমিক পরিবারের সন্তান তিনি। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পশ্চিম তীর দখলের পর ইসরায়েলি দখলদারির মধ্যে বেড়ে ওঠেন বারগুতি। পরিবারের সদস্যদের বর্ণনা অনুযায়ী, শিশু বয়স থেকে রাজনীতি-সচেতন ছিলেন বারগুতি। ছোটবেলায় তিনি দেখেছিলেন, ইসরায়েলি সৈন্যরা কীভাবে তাঁদের গ্রামে হামলা চালিয়ে তাঁর প্রিয় কুকুরটিকে গুলি করে মেরে ফেলে।
বারগুতি কৈশোরে যোগ দেন ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ দলে। এই ফাতাহ সে সময় গোপনে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করত। ১৮ বছর বয়সে ইসরায়েলি বাহিনী প্রথম বারগুতিকে গ্রেপ্তার করে। এরপরই তাঁর জীবনে নেমে আসে নির্মম নির্যাতনের অধ্যায়।
২০১৭ সালে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বারগুতি বলেন, ইসরায়েলি কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁকে নগ্ন অবস্থায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল এবং এক ইসরায়েলি সেনা তাঁর যৌনাঙ্গে আঘাত করেছিল।
দখলদার বিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার অভিযোগে বারগুতি চার বছর ছয় মাস কারাভোগ করেন। ১৯৮৩ সালে মুক্তি পেয়ে তিনি রামাল্লার নিকটবর্তী বিরজেইত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় হন।
১৯৮৭ সালে ইসরায়েল তাঁকে জর্ডানে নির্বাসিত করে। ওই বছরই শুরু হয় প্রথম ইন্তিফাদা, যা পাঁচ বছর স্থায়ী হয়। বারগুতি তখন প্রবাসে থেকে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের কাজ চালান। পরে ১৯৯৩ সালে অসলো শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে তাঁর দেশে ফেরার সুযোগ হয়।
দেশে ফিরে ১৯৯৪ সালে তিনি ফাতাহর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আরাফাতের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হন। কিন্তু অসলো চুক্তির পর ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ এবং চলাচলে নিষেধাজ্ঞা অনেক ফিলিস্তিনিকে হতাশ করে তোলে। ১৯৯৫ সালে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনের হত্যাকাণ্ডের পর উত্তেজনা আরও বাড়ে। এ সময় আরাফাতের প্রভাব কমতে থাকলেও বারগুতির জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়তে থাকে।
২০০০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর, লিকুদ নেতা অ্যারিয়েল শ্যারন আল-আকসা মসজিদ চত্বরে প্রবেশ করলে ফিলিস্তিনজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। এ থেকেই পরে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সূচনা। এতে বারগুতি হয়ে ওঠেন আন্দোলনের অন্যতম মুখ্য নেতা।
বারগুতির সহকর্মী আহমাদ গ্লোনেইম বলেন, তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের নেতা; টি-শার্ট ও প্যান্ট পরে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিতেন।
২০০২ সালে ইসরায়েলি বাহিনী তাঁকে হত্যা করার জন্য একাধিক অভিযান চালায়। কয়েকবার অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি। অবশেষে গ্রেপ্তার হন এবং পাঁচটি হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগে তাঁকে পাঁচবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ইসরায়েলের একটি আদালত। তবে বারগুতি বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন।
লন্ডনের সাওয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিশেষজ্ঞ নিমের সুলতানি বলেন, ‘বারগুতির বিচার ছিল রাজনৈতিক। আসলে লক্ষ্য ছিল আরাফাত ও দ্বিতীয় ইন্তিফাদা আন্দোলনকেই অপরাধী প্রমাণ করা।’
২০০৪ সালে আরাফাতের মৃত্যু হলে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হচ্ছিল বারগুতিকে। কিন্তু তখন তিনি কারাগারে বন্দী। ২০০৬ সালে চ্যানেল-৪কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বারগুতি বলেছিলেন, ইসরায়েল দখলবিরোধী প্রত্যেক মানুষকেই সন্ত্রাসী মনে করে। কিন্তু সেটি সত্য নয়।
২০০২ সাল থেকে বারগুতি বিভিন্ন কারাগারে বন্দী। বেশির ভাগ সময় তাঁকে একা একা থাকতে হয়েছে। একাকী বন্দিত্বের পর তিনি কারাগারে শিক্ষাদান শুরু করেন। এরপর ২০১০ সালে তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক বিজ্ঞানে পিএইচডি অর্জন করেন। ২০১৭ সালে ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দীকে নিয়ে তিনি অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। তখন দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে তিনি লেখেন, ‘ইসরায়েল একটি দ্বৈত আইনি ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যা কার্যত বিচারিক বর্ণবাদের শামিল।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর থেকে কারাগারে তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হয়। পরিবারের দাবি, তাঁকে মারধর করা হয়েছে, খাবার-পানিতে কড়াকড়ি আনা হয়েছে, ওজন কমেছে প্রায় ১০ কেজি।
২০২৫ সালের আগস্টে ডানপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রী ইতামার বেন গাভিরের ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। সেখানে তাঁকে বারগুতিকে হুমকি দিতে দেখা যায়।
সাম্প্রতিক ঘটনায় বারগুতির অবস্থান স্পষ্ট জানা না গেলেও বারগুতি বরাবরই ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন করেছেন।
তিনি হিব্রু ও ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী, যা তাঁকে সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগে সক্ষম করেছে। ইসরায়েলের সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সদস্য মেইর শিত্রিত বলেন, ‘তিনি শান্তির পক্ষে ছিলেন, সত্যিকারের শান্তির।’
২০০৬ সালে চ্যানেল-৪-এ এক সাক্ষাৎকারে বারগুতি বলেন, নারী, শিশুসহ বেসামরিক নাগরিক হত্যা কোনোভাবেই ন্যায্য নয়। ফিলিস্তিন বা ইসরায়েল কোথাও নয়। তিনি আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের উচিত আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্রচেষ্টাকে সুযোগ দেওয়া, তবে দখলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অধিকার আমাদের আছে।’
ফাতাহ ও হামাস—দুই সংগঠনই বারগুতির মুক্তির দাবিতে একমত। ২০১১ ও ২০২৫ সালের বন্দিবিনিময় আলোচনাতেও তাঁর নাম তোলা হয়েছিল, তবে ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র মিডল ইস্ট আইকে জানায়, সাম্প্রতিক বন্দিবিনিময় তালিকায় তাঁর নাম ছিল। এমনকি ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফও এতে সম্মত হন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অফিস তা বাদ দেয়।
ইসরায়েলি চ্যানেল-১৪ জানায়, বারগুতির মুক্তিকে ‘লাল রেখা’ (অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে দেখছেন জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেন গাভির। বারগুতিকে মুক্তি দিলে তিনি সরকারের জোট ভাঙার হুমকিও দেন। তবু ইসরায়েলের সাবেক গোয়েন্দাপ্রধানসহ অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, বারগুতি মুক্তি পেলে ফিলিস্তিনে নতুন রাজনৈতিক ধারার সূচনা হতে পারে।
বারগুতির মুক্তির কোনো তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। গাজার শেষ জিম্মিদের মুক্তির পর ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলোর চাপও এখন দুর্বল। তবে তাঁর জনপ্রিয়তা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের জন্য রাজনৈতিক হুমকি বলে মনে করছেন অনেকে। অন্যদিকে ইসরায়েলের ডানপন্থী মহল তাঁকে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের প্রতীক হিসেবে দেখে, যা তাদের দখলনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ।
বারগুতির ছেলে আরব বারগুতি মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ৭৬ জন রাজনৈতিক বন্দীকে হারিয়েছি। এবার বাবার জীবন বাঁচাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ জরুরি। তিনি এমন একজন নেতা, যিনি পুরো ফিলিস্তিনের আস্থা অর্জন করেছেন। সে কারণেই বর্তমান ইসরায়েলি সরকার তাঁকে ভয় পায়।’
তথ্যসূত্র: দ্য মিডল ইস্ট আই
চলমান যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে এই মুক্তিপ্রাপ্তদের তালিকায় ছিলেন না ফিলিস্তিনের সবচেয়ে আলোচিত বন্দী মারওয়ান বারগুতি। ফাতাহ আন্দোলনের শীর্ষ নেতা এবং ফিলিস্তিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত বারগুতি।
জনমত জরিপের তথ্য অনুসারে, বারগুতি ফিলিস্তিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক এবং মনে করা হয়, তিনি ফিলিস্তিনি সমাজে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম। কিন্তু দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০০২ সাল থেকে তিনি ইসরায়েলের কারাগারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
১৯৫৯ সালের ৬ জুন পশ্চিম তীরের কোবার গ্রামে জন্ম মারওয়ান বারগুতির। দরিদ্র শ্রমিক পরিবারের সন্তান তিনি। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পশ্চিম তীর দখলের পর ইসরায়েলি দখলদারির মধ্যে বেড়ে ওঠেন বারগুতি। পরিবারের সদস্যদের বর্ণনা অনুযায়ী, শিশু বয়স থেকে রাজনীতি-সচেতন ছিলেন বারগুতি। ছোটবেলায় তিনি দেখেছিলেন, ইসরায়েলি সৈন্যরা কীভাবে তাঁদের গ্রামে হামলা চালিয়ে তাঁর প্রিয় কুকুরটিকে গুলি করে মেরে ফেলে।
বারগুতি কৈশোরে যোগ দেন ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ দলে। এই ফাতাহ সে সময় গোপনে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করত। ১৮ বছর বয়সে ইসরায়েলি বাহিনী প্রথম বারগুতিকে গ্রেপ্তার করে। এরপরই তাঁর জীবনে নেমে আসে নির্মম নির্যাতনের অধ্যায়।
২০১৭ সালে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বারগুতি বলেন, ইসরায়েলি কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁকে নগ্ন অবস্থায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল এবং এক ইসরায়েলি সেনা তাঁর যৌনাঙ্গে আঘাত করেছিল।
দখলদার বিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার অভিযোগে বারগুতি চার বছর ছয় মাস কারাভোগ করেন। ১৯৮৩ সালে মুক্তি পেয়ে তিনি রামাল্লার নিকটবর্তী বিরজেইত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় হন।
১৯৮৭ সালে ইসরায়েল তাঁকে জর্ডানে নির্বাসিত করে। ওই বছরই শুরু হয় প্রথম ইন্তিফাদা, যা পাঁচ বছর স্থায়ী হয়। বারগুতি তখন প্রবাসে থেকে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের কাজ চালান। পরে ১৯৯৩ সালে অসলো শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে তাঁর দেশে ফেরার সুযোগ হয়।
দেশে ফিরে ১৯৯৪ সালে তিনি ফাতাহর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আরাফাতের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হন। কিন্তু অসলো চুক্তির পর ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ এবং চলাচলে নিষেধাজ্ঞা অনেক ফিলিস্তিনিকে হতাশ করে তোলে। ১৯৯৫ সালে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনের হত্যাকাণ্ডের পর উত্তেজনা আরও বাড়ে। এ সময় আরাফাতের প্রভাব কমতে থাকলেও বারগুতির জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়তে থাকে।
২০০০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর, লিকুদ নেতা অ্যারিয়েল শ্যারন আল-আকসা মসজিদ চত্বরে প্রবেশ করলে ফিলিস্তিনজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। এ থেকেই পরে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সূচনা। এতে বারগুতি হয়ে ওঠেন আন্দোলনের অন্যতম মুখ্য নেতা।
বারগুতির সহকর্মী আহমাদ গ্লোনেইম বলেন, তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের নেতা; টি-শার্ট ও প্যান্ট পরে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিতেন।
২০০২ সালে ইসরায়েলি বাহিনী তাঁকে হত্যা করার জন্য একাধিক অভিযান চালায়। কয়েকবার অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি। অবশেষে গ্রেপ্তার হন এবং পাঁচটি হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগে তাঁকে পাঁচবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ইসরায়েলের একটি আদালত। তবে বারগুতি বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন।
লন্ডনের সাওয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিশেষজ্ঞ নিমের সুলতানি বলেন, ‘বারগুতির বিচার ছিল রাজনৈতিক। আসলে লক্ষ্য ছিল আরাফাত ও দ্বিতীয় ইন্তিফাদা আন্দোলনকেই অপরাধী প্রমাণ করা।’
২০০৪ সালে আরাফাতের মৃত্যু হলে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হচ্ছিল বারগুতিকে। কিন্তু তখন তিনি কারাগারে বন্দী। ২০০৬ সালে চ্যানেল-৪কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বারগুতি বলেছিলেন, ইসরায়েল দখলবিরোধী প্রত্যেক মানুষকেই সন্ত্রাসী মনে করে। কিন্তু সেটি সত্য নয়।
২০০২ সাল থেকে বারগুতি বিভিন্ন কারাগারে বন্দী। বেশির ভাগ সময় তাঁকে একা একা থাকতে হয়েছে। একাকী বন্দিত্বের পর তিনি কারাগারে শিক্ষাদান শুরু করেন। এরপর ২০১০ সালে তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক বিজ্ঞানে পিএইচডি অর্জন করেন। ২০১৭ সালে ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দীকে নিয়ে তিনি অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। তখন দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে তিনি লেখেন, ‘ইসরায়েল একটি দ্বৈত আইনি ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যা কার্যত বিচারিক বর্ণবাদের শামিল।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর থেকে কারাগারে তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হয়। পরিবারের দাবি, তাঁকে মারধর করা হয়েছে, খাবার-পানিতে কড়াকড়ি আনা হয়েছে, ওজন কমেছে প্রায় ১০ কেজি।
২০২৫ সালের আগস্টে ডানপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রী ইতামার বেন গাভিরের ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। সেখানে তাঁকে বারগুতিকে হুমকি দিতে দেখা যায়।
সাম্প্রতিক ঘটনায় বারগুতির অবস্থান স্পষ্ট জানা না গেলেও বারগুতি বরাবরই ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন করেছেন।
তিনি হিব্রু ও ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী, যা তাঁকে সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগে সক্ষম করেছে। ইসরায়েলের সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সদস্য মেইর শিত্রিত বলেন, ‘তিনি শান্তির পক্ষে ছিলেন, সত্যিকারের শান্তির।’
২০০৬ সালে চ্যানেল-৪-এ এক সাক্ষাৎকারে বারগুতি বলেন, নারী, শিশুসহ বেসামরিক নাগরিক হত্যা কোনোভাবেই ন্যায্য নয়। ফিলিস্তিন বা ইসরায়েল কোথাও নয়। তিনি আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের উচিত আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্রচেষ্টাকে সুযোগ দেওয়া, তবে দখলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অধিকার আমাদের আছে।’
ফাতাহ ও হামাস—দুই সংগঠনই বারগুতির মুক্তির দাবিতে একমত। ২০১১ ও ২০২৫ সালের বন্দিবিনিময় আলোচনাতেও তাঁর নাম তোলা হয়েছিল, তবে ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র মিডল ইস্ট আইকে জানায়, সাম্প্রতিক বন্দিবিনিময় তালিকায় তাঁর নাম ছিল। এমনকি ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফও এতে সম্মত হন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অফিস তা বাদ দেয়।
ইসরায়েলি চ্যানেল-১৪ জানায়, বারগুতির মুক্তিকে ‘লাল রেখা’ (অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে দেখছেন জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেন গাভির। বারগুতিকে মুক্তি দিলে তিনি সরকারের জোট ভাঙার হুমকিও দেন। তবু ইসরায়েলের সাবেক গোয়েন্দাপ্রধানসহ অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, বারগুতি মুক্তি পেলে ফিলিস্তিনে নতুন রাজনৈতিক ধারার সূচনা হতে পারে।
বারগুতির মুক্তির কোনো তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। গাজার শেষ জিম্মিদের মুক্তির পর ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলোর চাপও এখন দুর্বল। তবে তাঁর জনপ্রিয়তা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের জন্য রাজনৈতিক হুমকি বলে মনে করছেন অনেকে। অন্যদিকে ইসরায়েলের ডানপন্থী মহল তাঁকে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের প্রতীক হিসেবে দেখে, যা তাদের দখলনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ।
বারগুতির ছেলে আরব বারগুতি মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ৭৬ জন রাজনৈতিক বন্দীকে হারিয়েছি। এবার বাবার জীবন বাঁচাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ জরুরি। তিনি এমন একজন নেতা, যিনি পুরো ফিলিস্তিনের আস্থা অর্জন করেছেন। সে কারণেই বর্তমান ইসরায়েলি সরকার তাঁকে ভয় পায়।’
তথ্যসূত্র: দ্য মিডল ইস্ট আই
ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত গাজা উপত্যকা। প্রাচীনকাল থেকেই সমুদ্রপথে বাণিজ্যের জন্য পরিচিত এই অঞ্চল। ১৯১৭ সাল পর্যন্ত অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকার পর ব্রিটিশ শাসন থেকে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয় মিসর। এরপর গত শতাব্দীর শেষভাগ থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে গাজার প্রায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। গত শ
১১ অক্টোবর ২০২৩ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনসংলগ্ন কাকদ্বীপে কালীপ্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক ঝড় উঠেছে। প্রতিমা ভাঙচুরের পর পুলিশের একটি ভ্যানে করে সেই প্রতিমা সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় বিজেপি সরাসরি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে...
১ ঘণ্টা আগেলন্ডনের পশ্চিমাঞ্চলে একটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপের অবিশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় এক নারীকে ১৫০ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৪ হাজার টাকারও বেশি। এই ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে স্থানীয় কাউন্সিলে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই নারী।
৩ ঘণ্টা আগেজেফ্রি এপস্টেইনের কুখ্যাত যৌন পাচার চক্রের অন্যতম ভুক্তভোগী ভার্জিনিয়া জিউফ্রের মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে তাঁর স্মৃতিকথা। ‘নোবডিজ গার্ল’ নামের এই বইটিতে ভার্জিনিয়া দাবি করেছেন, একজন প্রখ্যাত প্রধানমন্ত্রীও তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন।
৪ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
লন্ডনের পশ্চিমাঞ্চলে একটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপের অবিশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় এক নারীকে ১৫০ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৪ হাজার টাকারও বেশি। এই ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে স্থানীয় কাউন্সিলে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই নারী।
বুধবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য টাইমস জানিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে গত ১০ অক্টোবর রিচমন্ড অঞ্চলে। কিউ এলাকার বাসিন্দা বুরজু ইয়েসিলিউর্ত সকালে কাজে যাওয়ার পথে তাঁর কাপে বাকি থাকা সামান্য কফি রাস্তার পাশের ড্রেনে ঢেলে দেন। কারণ তিনি ভেবেছিলেন, বাসে উঠতে গিয়ে ওই কফিটুকু শরীরে ছিটকে পড়তে পারে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তিন আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা ওই বাসটিকে তাড়া করে এসে থামান এবং ১৯৯০ সালের ব্রিটিশ পরিবেশ সুরক্ষা আইন-এর ৩৩ নম্বর ধারায় বুরজু ইয়েসিলিউর্তকে জরিমানা করেন।
এই বিষয়ে পরে অপর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে ইয়েসিলিউর্ত বলেন, ‘আমি ভাবলাম দায়িত্বশীল কাজ করছি। কিন্তু হঠাৎ তিন অফিসার এসে আমাকে ঘিরে ধরলেন—এটা সত্যিই ধাক্কার মতো ছিল।’
তিনি জানান, তাঁকে জানানো হয়, তরল বর্জ্যও ড্রেনে ফেলা আইনত নিষিদ্ধ এবং তা পরিবেশদূষণ হিসেবে গণ্য হয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কফির অবশিষ্ট অংশটুকু নিকটস্থ ডাস্টবিনে ফেলা উচিত ছিল।
ইয়েসিলিউর্ত অভিযোগ করেন, ঘটনাস্থলের কোথাও কোনো সতর্কবার্তা বা সাইনবোর্ড ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, কোনো সাইন আছে কি? তারা কিছু বলল না।’ ঘটনাটি তাঁকে ভীত ও অস্থির করে তুললেও পরে তিনি তাঁর কাজে যান।
জরিমানার পরিমাণ ১৫০ পাউন্ড হলেও ১৪ দিনের মধ্যে তা পরিশোধ করলে ১০০ পাউন্ডে নামানো যাবে। ইয়েসিলিউর্ত অবশ্য এখনো অর্থ পরিশোধ করেননি। এর বদলে তিনি কাউন্সিলে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘আইনটি যদি এত কড়াকড়ি হয়, তবে সড়ক ও বাসস্টপে স্পষ্টভাবে সতর্কতামূলক সাইন থাকা উচিত।’
এদিকে এই বিষয়ে রিচমন্ড কাউন্সিল জানিয়েছে, ইয়েসিলিউর্তকে বৈধভাবেই জরিমানা করা হয়েছে এবং কর্মকর্তারা পেশাদার ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করেছেন। কাউন্সিলের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা রিচমন্ডের জলপথ ও সড়ক পরিষ্কার রাখতে বদ্ধপরিকর। প্রয়োজন হলে আইন প্রয়োগ করা হয়। কেউ যদি মনে করেন তাঁর ওপর আরোপ করা জরিমানাটি অন্যায্য, তবে তিনি পর্যালোচনার আবেদন করতে পারেন।’
যুক্তরাজ্যের পরিবেশ সুরক্ষা আইনে বলা আছে, এমন কোনো বর্জ্য বা তরল ফেলা অপরাধ যা মাটি বা জল দূষণের কারণ হতে পারে। এমনকি রাস্তার পাশে থাকা ড্রেনে তরল ঢালাও এর অন্তর্ভুক্ত।
লন্ডনের পশ্চিমাঞ্চলে একটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপের অবিশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় এক নারীকে ১৫০ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৪ হাজার টাকারও বেশি। এই ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে স্থানীয় কাউন্সিলে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই নারী।
বুধবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য টাইমস জানিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে গত ১০ অক্টোবর রিচমন্ড অঞ্চলে। কিউ এলাকার বাসিন্দা বুরজু ইয়েসিলিউর্ত সকালে কাজে যাওয়ার পথে তাঁর কাপে বাকি থাকা সামান্য কফি রাস্তার পাশের ড্রেনে ঢেলে দেন। কারণ তিনি ভেবেছিলেন, বাসে উঠতে গিয়ে ওই কফিটুকু শরীরে ছিটকে পড়তে পারে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তিন আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা ওই বাসটিকে তাড়া করে এসে থামান এবং ১৯৯০ সালের ব্রিটিশ পরিবেশ সুরক্ষা আইন-এর ৩৩ নম্বর ধারায় বুরজু ইয়েসিলিউর্তকে জরিমানা করেন।
এই বিষয়ে পরে অপর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে ইয়েসিলিউর্ত বলেন, ‘আমি ভাবলাম দায়িত্বশীল কাজ করছি। কিন্তু হঠাৎ তিন অফিসার এসে আমাকে ঘিরে ধরলেন—এটা সত্যিই ধাক্কার মতো ছিল।’
তিনি জানান, তাঁকে জানানো হয়, তরল বর্জ্যও ড্রেনে ফেলা আইনত নিষিদ্ধ এবং তা পরিবেশদূষণ হিসেবে গণ্য হয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কফির অবশিষ্ট অংশটুকু নিকটস্থ ডাস্টবিনে ফেলা উচিত ছিল।
ইয়েসিলিউর্ত অভিযোগ করেন, ঘটনাস্থলের কোথাও কোনো সতর্কবার্তা বা সাইনবোর্ড ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, কোনো সাইন আছে কি? তারা কিছু বলল না।’ ঘটনাটি তাঁকে ভীত ও অস্থির করে তুললেও পরে তিনি তাঁর কাজে যান।
জরিমানার পরিমাণ ১৫০ পাউন্ড হলেও ১৪ দিনের মধ্যে তা পরিশোধ করলে ১০০ পাউন্ডে নামানো যাবে। ইয়েসিলিউর্ত অবশ্য এখনো অর্থ পরিশোধ করেননি। এর বদলে তিনি কাউন্সিলে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘আইনটি যদি এত কড়াকড়ি হয়, তবে সড়ক ও বাসস্টপে স্পষ্টভাবে সতর্কতামূলক সাইন থাকা উচিত।’
এদিকে এই বিষয়ে রিচমন্ড কাউন্সিল জানিয়েছে, ইয়েসিলিউর্তকে বৈধভাবেই জরিমানা করা হয়েছে এবং কর্মকর্তারা পেশাদার ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করেছেন। কাউন্সিলের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা রিচমন্ডের জলপথ ও সড়ক পরিষ্কার রাখতে বদ্ধপরিকর। প্রয়োজন হলে আইন প্রয়োগ করা হয়। কেউ যদি মনে করেন তাঁর ওপর আরোপ করা জরিমানাটি অন্যায্য, তবে তিনি পর্যালোচনার আবেদন করতে পারেন।’
যুক্তরাজ্যের পরিবেশ সুরক্ষা আইনে বলা আছে, এমন কোনো বর্জ্য বা তরল ফেলা অপরাধ যা মাটি বা জল দূষণের কারণ হতে পারে। এমনকি রাস্তার পাশে থাকা ড্রেনে তরল ঢালাও এর অন্তর্ভুক্ত।
ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত গাজা উপত্যকা। প্রাচীনকাল থেকেই সমুদ্রপথে বাণিজ্যের জন্য পরিচিত এই অঞ্চল। ১৯১৭ সাল পর্যন্ত অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকার পর ব্রিটিশ শাসন থেকে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয় মিসর। এরপর গত শতাব্দীর শেষভাগ থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে গাজার প্রায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। গত শ
১১ অক্টোবর ২০২৩ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনসংলগ্ন কাকদ্বীপে কালীপ্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক ঝড় উঠেছে। প্রতিমা ভাঙচুরের পর পুলিশের একটি ভ্যানে করে সেই প্রতিমা সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় বিজেপি সরাসরি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে...
১ ঘণ্টা আগে১৯৫৯ সালের ৬ জুন পশ্চিম তীরের কোবার গ্রামে জন্ম মারওয়ান বারগুতির। দরিদ্র শ্রমিক পরিবারের সন্তান তিনি। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পশ্চিম তীর দখলের পর ইসরায়েলি দখলদারির মধ্যে বেড়ে ওঠেন বারগুতি। পরিবারের সদস্যদের বর্ণনা অনুযায়ী, শিশু বয়স থেকে রাজনীতি-সচেতন ছিলেন বারগুতি। ছোটবেলায় তিনি দেখেছিলেন, ইসরা
৩ ঘণ্টা আগেজেফ্রি এপস্টেইনের কুখ্যাত যৌন পাচার চক্রের অন্যতম ভুক্তভোগী ভার্জিনিয়া জিউফ্রের মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে তাঁর স্মৃতিকথা। ‘নোবডিজ গার্ল’ নামের এই বইটিতে ভার্জিনিয়া দাবি করেছেন, একজন প্রখ্যাত প্রধানমন্ত্রীও তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন।
৪ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
জেফ্রি এপস্টেইনের কুখ্যাত যৌন পাচার চক্রের অন্যতম ভুক্তভোগী ভার্জিনিয়া জিউফ্রের মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে তাঁর স্মৃতিকথা। ‘নোবডিজ গার্ল’ নামের এই বইটিতে ভার্জিনিয়া দাবি করেছেন, একজন প্রখ্যাত প্রধানমন্ত্রীও তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন।
ভার্জিনিয়ার আত্মহত্যার ছয় মাস পর গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ‘নোবডিজ গার্ল’ শিরোনামের বইটি। এতে তিনি তাঁর ওপর ঘটে যাওয়া ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন, একসময় তিনি ভেবেছিলেন হয়তো যৌন দাসী হিসেবেই তাঁর মৃত্যু হবে। তবে ১৯ বছর বয়সেই তিনি এপস্টেইনের কবল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
বইটিতে ভার্জিনিয়া লিখেছেন, ‘তারা আমাকে অসংখ্য ধনী ও ক্ষমতাধর মানুষের হাতে তুলে দিত। আমাকে মাঝেমধ্যেই অপমান, মারধর ও রক্তাক্ত করা হতো।’
তিনি দাবি করেন, এপস্টেইনের ক্যারিবীয় দ্বীপে অবস্থানকালে তাঁকে এমন একজন ব্যক্তির কাছে পাঠানো হয় যিনি তাঁকে সবচেয়ে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করেছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
তিনি আরও লেখেন, ‘সেই মানুষটি আমাকে একাধিকবার শ্বাসরোধ করেছিল, আমার ভয় দেখে আনন্দ পেয়েছিল। আমাকে যখন আঘাত করছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তখন ভয়ংকরভাবে হাসছিলেন।’
পরে কেঁদে কেঁদে তিনি এপস্টেইনকে অনুরোধ করেন যেন তাঁকে আর সেই ব্যক্তির কাছে না পাঠানো হয়। কিন্তু এপস্টেইন ঠান্ডা গলায় উত্তর দিয়েছিলেন, ‘এ রকমটা মাঝে মাঝে হবেই।’
বুধবার (২২ অক্টোবর) সিএনএন জানিয়েছে, বইটির যুক্তরাষ্ট্র সংস্করণে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ‘একজন প্রখ্যাত প্রধানমন্ত্রী’ বলা হয়েছে। তবে যুক্তরাজ্য সংস্করণে ওই ব্যক্তিকে ‘সাবেক মন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই পার্থক্যের কারণ এখনো স্পষ্ট নয়।
এই আত্মজীবনী প্রকাশের ফলে নতুন করে আলোচনায় এসেছে ধনী ও ক্ষমতাধরদের সঙ্গে এপস্টেইনের সম্পর্ক। বিশেষ করে, ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রুর নাম আবারও সামনে এসেছে। ভার্জিনিয়ার আগে অভিযোগ করেছিলেন, এপস্টেইন তাঁকে অ্যান্ড্রুর সঙ্গে তিনবার যৌন সম্পর্কে বাধ্য করেছিলেন। এর মধ্যে প্রথমবার যখন তিনি অ্যান্ড্রুর সঙ্গে মিলিত হন তখন তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর।
অ্যান্ড্রু সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও ২০২২ সালে তিনি ভার্জিনিয়ার সঙ্গে আদালতের বাইরে মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন। ভার্জিনিয়া দাবি করেছেন, সেই সময়টিতে অ্যান্ড্রুর দল অনলাইনে ‘ট্রল’ ভাড়া করে তাঁকে হয়রানির চেষ্টা করেছিল।
এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘মেইল অন সানডে’ জানিয়েছে, অ্যান্ড্রু ২০১১ সালে নিজের এক দেহরক্ষীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ভার্জিনিয়ার বিরুদ্ধে প্রমাণ খুঁজে বের করতে। এই বিষয়ে লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ তদন্ত করছে।
এই স্মৃতিকথা প্রকাশের ফলে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সুনাম আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যদিও ব্রিটিশ রাজপরিবার বহু বছর ধরেই বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইছিল। সম্প্রতি এই কেলেঙ্কারির দায়ে রাজপরিবারের উপাধি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন অ্যান্ড্রু।
জেফ্রি এপস্টেইনের কুখ্যাত যৌন পাচার চক্রের অন্যতম ভুক্তভোগী ভার্জিনিয়া জিউফ্রের মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে তাঁর স্মৃতিকথা। ‘নোবডিজ গার্ল’ নামের এই বইটিতে ভার্জিনিয়া দাবি করেছেন, একজন প্রখ্যাত প্রধানমন্ত্রীও তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন।
ভার্জিনিয়ার আত্মহত্যার ছয় মাস পর গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ‘নোবডিজ গার্ল’ শিরোনামের বইটি। এতে তিনি তাঁর ওপর ঘটে যাওয়া ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন, একসময় তিনি ভেবেছিলেন হয়তো যৌন দাসী হিসেবেই তাঁর মৃত্যু হবে। তবে ১৯ বছর বয়সেই তিনি এপস্টেইনের কবল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
বইটিতে ভার্জিনিয়া লিখেছেন, ‘তারা আমাকে অসংখ্য ধনী ও ক্ষমতাধর মানুষের হাতে তুলে দিত। আমাকে মাঝেমধ্যেই অপমান, মারধর ও রক্তাক্ত করা হতো।’
তিনি দাবি করেন, এপস্টেইনের ক্যারিবীয় দ্বীপে অবস্থানকালে তাঁকে এমন একজন ব্যক্তির কাছে পাঠানো হয় যিনি তাঁকে সবচেয়ে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করেছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
তিনি আরও লেখেন, ‘সেই মানুষটি আমাকে একাধিকবার শ্বাসরোধ করেছিল, আমার ভয় দেখে আনন্দ পেয়েছিল। আমাকে যখন আঘাত করছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তখন ভয়ংকরভাবে হাসছিলেন।’
পরে কেঁদে কেঁদে তিনি এপস্টেইনকে অনুরোধ করেন যেন তাঁকে আর সেই ব্যক্তির কাছে না পাঠানো হয়। কিন্তু এপস্টেইন ঠান্ডা গলায় উত্তর দিয়েছিলেন, ‘এ রকমটা মাঝে মাঝে হবেই।’
বুধবার (২২ অক্টোবর) সিএনএন জানিয়েছে, বইটির যুক্তরাষ্ট্র সংস্করণে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ‘একজন প্রখ্যাত প্রধানমন্ত্রী’ বলা হয়েছে। তবে যুক্তরাজ্য সংস্করণে ওই ব্যক্তিকে ‘সাবেক মন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই পার্থক্যের কারণ এখনো স্পষ্ট নয়।
এই আত্মজীবনী প্রকাশের ফলে নতুন করে আলোচনায় এসেছে ধনী ও ক্ষমতাধরদের সঙ্গে এপস্টেইনের সম্পর্ক। বিশেষ করে, ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রুর নাম আবারও সামনে এসেছে। ভার্জিনিয়ার আগে অভিযোগ করেছিলেন, এপস্টেইন তাঁকে অ্যান্ড্রুর সঙ্গে তিনবার যৌন সম্পর্কে বাধ্য করেছিলেন। এর মধ্যে প্রথমবার যখন তিনি অ্যান্ড্রুর সঙ্গে মিলিত হন তখন তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর।
অ্যান্ড্রু সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও ২০২২ সালে তিনি ভার্জিনিয়ার সঙ্গে আদালতের বাইরে মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন। ভার্জিনিয়া দাবি করেছেন, সেই সময়টিতে অ্যান্ড্রুর দল অনলাইনে ‘ট্রল’ ভাড়া করে তাঁকে হয়রানির চেষ্টা করেছিল।
এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘মেইল অন সানডে’ জানিয়েছে, অ্যান্ড্রু ২০১১ সালে নিজের এক দেহরক্ষীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ভার্জিনিয়ার বিরুদ্ধে প্রমাণ খুঁজে বের করতে। এই বিষয়ে লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ তদন্ত করছে।
এই স্মৃতিকথা প্রকাশের ফলে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সুনাম আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যদিও ব্রিটিশ রাজপরিবার বহু বছর ধরেই বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইছিল। সম্প্রতি এই কেলেঙ্কারির দায়ে রাজপরিবারের উপাধি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন অ্যান্ড্রু।
ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত গাজা উপত্যকা। প্রাচীনকাল থেকেই সমুদ্রপথে বাণিজ্যের জন্য পরিচিত এই অঞ্চল। ১৯১৭ সাল পর্যন্ত অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকার পর ব্রিটিশ শাসন থেকে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয় মিসর। এরপর গত শতাব্দীর শেষভাগ থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে গাজার প্রায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। গত শ
১১ অক্টোবর ২০২৩ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনসংলগ্ন কাকদ্বীপে কালীপ্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক ঝড় উঠেছে। প্রতিমা ভাঙচুরের পর পুলিশের একটি ভ্যানে করে সেই প্রতিমা সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় বিজেপি সরাসরি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে...
১ ঘণ্টা আগে১৯৫৯ সালের ৬ জুন পশ্চিম তীরের কোবার গ্রামে জন্ম মারওয়ান বারগুতির। দরিদ্র শ্রমিক পরিবারের সন্তান তিনি। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পশ্চিম তীর দখলের পর ইসরায়েলি দখলদারির মধ্যে বেড়ে ওঠেন বারগুতি। পরিবারের সদস্যদের বর্ণনা অনুযায়ী, শিশু বয়স থেকে রাজনীতি-সচেতন ছিলেন বারগুতি। ছোটবেলায় তিনি দেখেছিলেন, ইসরা
৩ ঘণ্টা আগেলন্ডনের পশ্চিমাঞ্চলে একটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপের অবিশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় এক নারীকে ১৫০ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৪ হাজার টাকারও বেশি। এই ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে স্থানীয় কাউন্সিলে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই নারী।
৩ ঘণ্টা আগে