Ajker Patrika

বৃদ্ধনিবাসে পরিণত হচ্ছে কেরালার যে শহর

আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৬: ৫৫
বৃদ্ধনিবাসে পরিণত হচ্ছে কেরালার যে শহর

শুনে অবাক হবেন, ভারতের মতো জনবহুল দেশের কোনো কোনো শহর ধুঁকছে জনসংখ্যা সংকটে। এসব জায়গায় জন্মহার যেমন কম, তেমনি অনেকেই শহর ছেড়েছেন উন্নত জীবনের আশায়। অনেকটা মৃত শহর বা ঘোস্ট টাউনে পরিণত হয়েছে এগুলো, যেখানে বাস মূলত বয়স্কদের। এমনই এক জায়গা কেরালার কুমবানাদ। সেখানে গিয়েছিলেন বিবিসির সৌতিক বিশ্বাস। 

বিগত বছরগুলোতে কেরালার এই অলস শহরের স্কুলগুলো অস্বাভাবিক এক সমস্যায় ভুগছে। শিক্ষার্থী বড় দুষ্প্রাপ্য এখানে, তাদের খোঁজে বের হতে হয় শিক্ষকদের। শুধু তাই নয়, স্কুলে ছাত্রছাত্রী আনতে গাঁটের পয়সা খরচ করতে হয় তাঁদের। 

১৫০ বছর আগে স্থাপিত কুমবানাদের সরকারি আপার প্রাইমারি স্কুলে এখন শিক্ষার্থী আছে কেবল টেনেটুনে ৫০ জন। ১৯৮০ সালের দিকে সংখ্যাটা ছিল ৭০০। এই শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই আবার দরিদ্র পরিবারের, যাদের শহরের প্রান্তে অবস্থান। এর মধ্যে সর্বোচ্চ শ্রেণি গ্রেড সেভেনের শিক্ষার্থী কেবল সাতজন। শুধু তাই নয়, শিক্ষকদের এই শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়ার ভাড়াও গুনতে হয়। এমনকি এখানে যে কয়েকটি বেসরকারি স্কুল আছে, তার শিক্ষকদেরও শিক্ষার্থীর খোঁজে বের হতে হয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছাত্রছাত্রী আছে যে স্কুলে, সেটির শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ৭০। 

বাসিন্দারা বাড়ি ছেড়ে যাওয়ায় ১৫ শতাংশ ঘরেই ঝুলছে তালা‘আমাদের কী করার আছে? শহরে কোনো ছেলেমেয়ে নেই। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, এখানে খুব কম মানুষই বাস করে।’ বলেন ওই প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল জয়াদেবী আর.। 

কথাটা মোটেই মিথ্যা নয়। কুমবানাদ শহরটির অবস্থান কেরালার পাথানামথিতা জেলার ঠিক কেন্দ্রে। এখানে জনসংখ্যা যেমন কমছে, তেমনি যারা বাস করছেন তাঁদের বেশির ভাগই বয়স্ক। 

কুমবানাদ ও আশপাশের আধা ডজন গ্রামে মোটামুটি হাজার পঁচিশেক মানুষের বাস। এখানকার ১১ হাজার ১১৮পি বাড়ির শতকরা ১৫ শতাংশ বাড়িতে ঝুলছে তালা। এসব বাড়ির বাসিন্দারা অন্য কোথাও চলে গেছেন কিংবা ছেলেমেয়ের সঙ্গে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। জানান স্থানীয় গ্রাম কাউন্সিল প্রধান আশা সি জে। 

আন্নাম্মা জেকব তাঁর দুই তলা বাড়িতে একাকী জীবন কাটাচ্ছেন কয়েক দশক ধরেএকটি হাসপাতাল, রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত একটি ক্লিনিক, ৩০টির বেশি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ৩টি বৃদ্ধনিবাস এখানকার চুলে পাক ধরা লোকের হার যে বেশি তার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এদিকে দুই ডজনের বেশি ব্যাংক, এর মধ্যে আধ কিলোমিটারেরও কম জায়গার মধ্যে ৮টি শাখা পৃথিবীর নানা প্রান্তে বাস ও কাজ করা শহরের মানুষদের অর্থ গ্রহণের জন্য প্রতিযোগিতা করছে। গত বছর ভারতে প্রবাসীদের কাছ থেকে যে ১০ হাজার কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা পায় তার ১০ শতাংশ আসে কেরালায়। 

ভারতে এক যুগের জনসংখ্যা বৃদ্ধির শেষ যে জরিপ (২০০১-১১) করা হয়, তাতে তলানিতে ছিল কেরালা ও তার প্রতিবেশী রাজ্য তামিলনাড়ু। জাতীয় গড় আয়ু ৬৯ হলেও কেরালায় জন্মগ্রহণকারী শিশু ৭৫ বছর আয়ুর আশা করতে পারে। 

চাক্কো মাম্মেন তাঁর কলার খামারে দিনে চার ঘণ্টা শ্রম দেনজন্মহারও কম। একজন নারী গড়ে এখানে ১.৭ থেকে ১.৯টি সন্তান জন্ম দেন। ছোট পরিবারগুলো সন্তানদের শিক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়। এতে তরুণেরা ভালো সুযোগের জন্য দেশে ও দেশের বাইরে পাড়ি জমাচ্ছেন বয়স্ক মা-বাবাকে রেখে। 

আন্নাম্মা জেকব তাঁর দোতলা বাড়িতে একাকী জীবন কাটাচ্ছেন কয়েক দশক ধরে। ৭৪ বছরের অন্নাম্মার স্মৃতিতে কেবল নিঃসঙ্গতা। তাঁর যন্ত্রকৌশল প্রকৌশলী স্বামী ১৯৮০-র দশকেই মারা যান। তাঁর পঞ্চাশে পা দেওয়া ছেলে দুই দশকের বেশি সময় ধরে আবুধাবিতে বাস ও কাজ করছেন। অন্নাম্মার এক মেয়ে থাকেন কয়েক মাইলের মধ্যে, তবে তাঁর স্বামী দুবাইয়ে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করছেন তিন যুগ ধরে। 

আন্নাম্মার নিকটতম দুই প্রতিবেশীর একজন বাড়িতে তালা দিয়ে মা-বাবাকে নিয়ে গেছে বাহরাইনে, সেখানে নার্সের কাজ করেন তিনি। অপর প্রতিবেশী দুবাই চলে গেছেন, বাড়িটা ভাড়া দিয়েছেন এক বৃদ্ধ দম্পতিকে। 

পুলিশ একাকী থাকা বয়স্ক ব্যক্তিদের বাড়ি যায় তাঁদের খোঁজ নিতেতবে কুমবানাদের অনেক অধিবাসী জায়গাটি ছেড়ে চলে গেলেও ক্ষয় একে পুরোপুরি আঁকড়ে ধরেনি। ফাঁকা বাড়িগুলো নিয়মিত রং করা হয়, যেন যেকোনো দিন মানুষ আশা করছে। যদিও এ ধরনের আগমনের ঘটনা ঘটে কমই। 

 ‘এটা খুব নিঃসঙ্গ এক জীবন। আমার শরীরও ভালো থাকে না।’ বলেন আন্নাম্মা জেকব। তবে হার্টে সমস্যা ও বাত থাকার পরও ছেলে ও নাতিদের সঙ্গে সময় কাটাতে বিদেশে পাড়ি জমান তিনি। 

আন্নাম্মার বাড়ি থেকে কয়েক লেন দূরে চাক্কো মাম্মেন তাঁর কলার খামারে দিনে চার ঘণ্টা শ্রম দেন। তাঁরও হার্টের সমস্যা আছে, সঙ্গে ডায়াবেটিস। ৬৪ বছরের চাক্কো তিন দশক ওমানে কাজ করে পরে দেশে ফিরে আসেন।

পুলিশ একাকী থাকা এই বৃদ্ধদের খোঁজ-খবর নেয় নিয়মিত। তবে এখানে অপরাধের হার কম। পুলিশ জানায়, চুরির ঘটনা এখানে একেবারেই কম, কারণ মানুষ ঘরে বেশি টাকা বা মূল্যবান জিনিস রাখে না। শেষ কবে এখানে খুনের ঘটনা ঘটেছে তাও মনে করতে পারেন না তাঁরা। 

বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া শহরের বড় এক সমস্যা‘সবকিছু মিলিয়ে খুব শান্তিপূর্ণ জায়গা এটি। আমরা কেবল প্রতারণার অভিযোগ পাই। আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে প্রতারিত হন বৃদ্ধরা, কিংবা তাঁদের স্বাক্ষর নকল করে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।’ বলেন স্থানীয় পুলিশ স্টেশনের চিফ ইন্সপেক্টর সাজিশ কুমার ভি। 

শহরে অপরাধ কম হওয়ায় পুলিশ বয়স্ক ব্যক্তিদের দেখভালে বেশি সময় দিতে পারে। ২০২০ সালে একটি বাড়িতে বারবার বেল চেপে সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে পুলিশ। দেখতে পায়, ওই বাড়ির বাসিন্দায় এক বয়স্ক নারী মাটিতে পড়ে আছেন। 

 ‘আমরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে সুস্থ হন তিনি। আমাদের আরেকটি কর্তব্য শহরের বাসিন্দাদের বৃদ্ধনিবাস বা ওল্ড হোমে নিয়ে যাওয়া। আমরা নিয়মিত বয়স্কদের খবর নিই, তাঁদের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই।’ বলেন চিফ ইন্সপেক্টর কুমার। 

শহরে হুইলচেয়ারে পৌঁছা যায় এমন তিনটি ওল্ড হোম আছে। এগুলো বেশ খোলামেলা, দরজা ও হলওয়ে প্রশস্ত। এদের একটি পাঁচতলা দালানের দ্য আলেক্সান্ডার মারথোমা মেমোরিয়াল জেরিয়াট্রিক সেন্টার। এর সঙ্গেই আছে ১৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল। এই বৃদ্ধনিবাসে ৮৫ থেকে ১০১ বছর বয়সী ১০০ জন বৃদ্ধের দেখভাল করা হয়। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ শয্যাশায়ী, পরিবারকে মাসে ৫০ হাজার রুপি করে গুনতে হয় এই সেবার বিনিময়ে। কখনো ছেলেমেয়েরা এসে থাকেন তাঁদের সঙ্গে। 

এর কাছেই ৭৫ বছরের পুরোনো ধর্মগিরি ওল্ড এজ হোম। সেখানে ৬০ জন স্থানীয় বাসিন্দার বাস, যাদের প্রত্যেকের বয়স ৬০-র বেশি। 

অসুস্থ বয়স্ক মানুষ, বৃদ্ধনিবাস, শ্রমিক সংকট, তরুণদের অভিবাসন, জনসংখ্যা হ্রাস, মৃতপ্রায় শহর—এই সবকিছুই যেন এখন কুমবানাদের চিত্র। 

‘জনসংখ্যাতাত্ত্বিক পরিবর্তনের এক গল্প এই শহর। শেষ পর্যন্ত গোটা ভারতের গল্প হবে এটি।’ বলেন মুম্বাইভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন সায়েন্সের অধ্যাপক কে এস জেমস। 

বিবিসি থেকে অনুবাদ ইশতিয়াক হাসান

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: আসামি গ্রেপ্তারের আশা ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আসিফ-মাহফুজকে ঘিরে এনসিপিতে নতুন সমীকরণ

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বৃষ্টি, বন্যা আর আবর্জনা: গাজাবাসীর অন্তহীন শীতের রাতের দুঃসহ বেদনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ২৭
গাজায় বৃষ্টি ও বন্যায় পরিস্থিতি অনেক বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের বাইরে যেতে না দেওয়া মৃত্যুর মিছিলে প্রতিদিনই নতুন নাম যুক্ত হচ্ছে। ছবি: আনাদোলু
গাজায় বৃষ্টি ও বন্যায় পরিস্থিতি অনেক বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের বাইরে যেতে না দেওয়া মৃত্যুর মিছিলে প্রতিদিনই নতুন নাম যুক্ত হচ্ছে। ছবি: আনাদোলু

প্রবল বৃষ্টি আর তীব্র বাতাসে গাজা উপত্যকার বাস্তুচ্যুত মানুষের জীবন আবারও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মধ্য গাজার আল-ইয়ারমুক স্টেডিয়ামে একটি অস্থায়ী তাঁবুতে স্ত্রী ও সাত মেয়েকে নিয়ে থাকেন সাবার দাওয়াস। বেইত লাহিয়ায় ইসরায়েলের হামলায় বাড়ি ধ্বংস হওয়ার পর থেকেই এই তাঁবুই তাদের একমাত্র আশ্রয়। শীত শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই তাঁবু ভেঙে পড়ার ভয়ে ছিলেন তিনি।

দুই সপ্তাহ আগে টানা বৃষ্টিতে তাঁবুর ভেতরে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি জমে যায়। ঠাণ্ডায় তাঁর মেয়েরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আত্মীয়ের কাছ থেকে টাকা ধার করে প্লাস্টিকের ত্রিপল কিনে কাঠের খুঁটি দিয়ে তাঁবু শক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন সাবার। কিন্তু কয়েক দিন আগে গাজায় আঘাত হানা সর্বশেষ ঝড়ে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

মিডল ইস্ট আইকে সাবার বলেন, ‘বৃষ্টির প্রথম রাত আমি নিজের হাতে তাঁবুটি ধরে রেখেছিলাম, তখন চারদিক থেকে বৃষ্টির পানি ঢুকছিল ভেতরে।’ তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছিল যেন আমি কিছুই করিনি। বৃষ্টির প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁবুটি আমাদের ওপর ভেঙে পড়েছিল।’ ভেতরের সবকিছু ভিজে যাওয়ায় তার মেয়েরা সারারাত কাঁপতে থাকে। সাবার বলেন, ‘আমাদের সব কাপড়, কম্বল এবং খাবার ভিজে গিয়েছিল। আমি জানতাম না কী করব বা আমার পরিবারকে কোথায় নিয়ে যাব।’

সাবারের সবচেয়ে ছোট মেয়ে মাত্র ২ বছর বয়সী, পেটের ক্যান্সারে আক্রান্ত। দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে ঠাণ্ডা তাঁর জন্য আরও বিপজ্জনক। সাবার বলেন, ‘আমি তাকে ক্যাম্পের এক তাঁবু থেকে অন্য তাঁবুতে সরিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। সবকিছু প্লাবিত, এবং তার ফ্লু হয়েছে। আমি তার জন্য ওষুধও জোগাড় করতে পারছি না। এমন দিন আসবে জানলে আমি আরও আগেই আমার জীবনের অবসান চাইতাম।’ যুদ্ধবিরতির বাস্তবতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি কি এমন দেখতে হয়? আমরা আমাদের বাড়িতে থাকার পরিবর্তে ভঙ্গুর তাঁবুতে ঠাণ্ডায় মারা যাচ্ছি।’

এই দুর্ভোগ শুধু একটি পরিবারের নয়। ক্যাম্পজুড়ে বহু পরিবার একই পরিস্থিতির মুখে। কয়েক তাঁবু দূরে থাকেন ৩৬ বছর বয়সী সানা আল-আয়ুবি। তাঁর স্বামী দুই পা হারিয়েছেন। দুই সন্তান সারাহ ও মোহাম্মদকে নিয়ে তিনি একটি জরাজীর্ণ তাঁবুতে থাকেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পশ্চিম গাজা সিটির তেল আল-হাওয়ায় তাদের বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় এই ক্ষতি হয়। তখন সানা গর্ভবতী ছিলেন এবং গুরুতর আহত হন। সুস্থ হয়ে ওঠার পর থেকেই পরিবারটি তাঁবুতেই আশ্রয় নিয়েছে।

টানা বৃষ্টিতে অকেজো পয়ঃনিষ্কাশন কূপ উপচে পড়েছে। সানা বলেন, ‘তিন দিন ধরে বৃষ্টি থামেনি। ওপর থেকে আমাদের ওপর পানি পড়ছে, আর তাঁবুর নিচ থেকে পয়ঃবর্জ্য উঠে আসছে।’ এক পর্যায়ে তাঁবুর মাঝখানের কাঠের খুঁটি ভেঙে পরিবারের ওপর পড়ে যায়।

তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী পানির মধ্যে হামাগুড়ি দিচ্ছিলেন। তাঁর শরীর পুরোপুরি ভিজে গিয়েছিল। আমি একটি ঝাঁটা দিয়ে তাঁবুটি ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু বৃষ্টি খুব তীব্র ছিল।’ তাঁবু পানিতে ডুবে থাকায় তার স্বামী কৃত্রিম পা ব্যবহার করতে পারছেন না। সানা জানান, ‘আমাকে তাঁকে বাইরে নিয়ে যেতে হয়েছে। আমরা ঠাণ্ডায় জমে যাচ্ছি। তাঁর পায়ে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হচ্ছে কারণ সেগুলি এতক্ষণ ভেজা ছিল।’

পয়ঃনিষ্কাশনের পানি ঢুকে পড়ায় তাদের বেশিরভাগ বিছানা ও কাপড় ফেলে দিতে হয়েছে। তাঁবুর নিচের একটি পয়ঃনিষ্কাশন গর্ত ফেটে যাওয়ার পর গাজা পৌরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কেউ আসেনি বলে অভিযোগ তাঁর। যুদ্ধের আগে সানা ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং নিজের বাড়ির নিচে একটি ছোট লার্নিং সেন্টার চালাতেন। এখন পুরো পরিবার ক্যাম্পে বিতরণ করা ত্রাণের খাবারের ওপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন শুকনো জামাকাপড়, একটি তাঁবু বা ওষুধ কেনার সামর্থ্য রাখি না।’

উত্তর গাজা সিটির আল-কারামা এলাকায় ২৮ বছর বয়সী নেসমা হাসান তাঁর চার বছরের মেয়েকে নিয়ে পরিবারের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ির অবশিষ্টাংশে থাকছেন। তাঁর স্বামী আলী ২০২২ সালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন। যুদ্ধবিরতির এক মাস আগে তাদের চারতলা ভবনটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কেবল ছাদযুক্ত দুটি কক্ষ অবশিষ্ট থাকে।

নেসমা বলেন, ‘আমরা শীতের জন্য প্রস্তুত হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। আমরা কাঠ, ত্রিপল এবং প্লাস্টিকের চাদর কিনেছিলাম। কিন্তু যখন বৃষ্টি শুরু হলো, বাতাস সবকিছু ছিঁড়ে নিয়ে গেল।’ অবশিষ্ট কক্ষগুলোর প্রতিটি কোণ থেকেই পানি চুইয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সারারাত ধরে পানি সরাচ্ছিলাম। আসবাবপত্র এবং তোষক ভিজে গিয়েছিল। বৃষ্টি এত ভারী ছিল যে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না।’

বন্যা থেকে বাঁচতে নেসমা ও তাঁর মেয়ে কক্ষের এক কোণে গুটিসুটি মেরে ছিলেন। নেসমা বলেন, ‘আমার মেয়ে তিন দিন ধরে ঠাণ্ডায় ভুগছে। আমি তাকে জামাকাপড়ের স্তরে স্তরে মুড়িয়ে রাখি, টুপি এবং গ্লাভস পরাই, কিন্তু এখনও মনে হয় আমরা রাস্তায় ঘুমাচ্ছি।’

তিনি জানান, বজ্রপাতের শব্দ, ঘরের ভেতরে বৃষ্টির ফোঁটা আর ধ্বংসস্তূপে বাতাসের শব্দে তার মেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি বাইরে ধ্বংসস্তূপের ওপর একটি তাঁবু স্থাপনের কথা ভাবছেন। নেসমা বলেন, ‘যুদ্ধের আগে আমি শীতকাল ভালোবাসতাম। এটি ছিল উষ্ণতা এবং পরিবারের সময়। এখন আমি কেবল এর শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থাকি, ভয়ে আছি যে বাড়ির বাকি অংশ আমাদের ওপর ভেঙে পড়বে।’

গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, গত তিন দিনে প্রবল বৃষ্টি ও তীব্র বাতাসে আংশিকভাবে ধ্বংস হওয়া বাড়ি ভেঙে পড়ে অন্তত ১১ জন নিহত এবং ১১ জন আহত হয়েছেন। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, তারা ১৩টি আংশিকভাবে ধ্বংস হওয়া বাড়ি ধসে পড়ার ঘটনায় সাড়া দিয়েছে, যার বেশিরভাগই গাজা সিটি ও উত্তরাঞ্চলে। একই সঙ্গে শত শত প্লাবিত তাঁবু থেকে পানি সরানো এবং নিষ্কাশন খাল খুলে দেওয়ার কাজ করেছে তাদের দলগুলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: আসামি গ্রেপ্তারের আশা ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আসিফ-মাহফুজকে ঘিরে এনসিপিতে নতুন সমীকরণ

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে হামলায় নিহত বেড়ে ১৫, আহত ৪০ জনেরও বেশি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৬
হামলার সময় বন্ডি সৈকত আতঙ্কিত মানুষদের ছোটাছুটি। ছবি: সংগৃহীত
হামলার সময় বন্ডি সৈকত আতঙ্কিত মানুষদের ছোটাছুটি। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে এক ইহুদি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দুই বন্দুকধারীর গুলিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ জনে। এবং ৪০ জনেরও বেশি মানুষ এই ঘটনায় আহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার এই ঘটনা ঘটে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন—অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম শহরের অন্যতম বড় পর্যটন কেন্দ্র এই বন্ডাই বিচে গুলিবর্ষণের সময় প্রায় ৫০ রাউন্ড গুলি চালানো হয়। ইহুদীদের হানুক্কা উৎসব পালনের জন্য আয়োজিত বার্ষিক এই অনুষ্ঠানে প্রায় ১ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ বলেছে, বন্দুকধারীদের মধ্যে একজন হলেন ৫০ বছর বয়সী পিতা সাজিদ আকরাম, যিনি অফিসারদের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন। অন্যজন হলেন তাঁর ২৪ বছর বয়সী ছেলে নাভিদ আকরাম, যিনি হাসপাতালে পুলিশের হেফাজতে গুরুতর আহত অবস্থায় আছেন।

অস্ট্রেলিয়ার সময় সন্ধ্যা ৭টা বেজে ৪৭ মিনিটে নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে জানায়, তারা বন্ডাই বিচে একটি ‘ক্রমবর্ধমান ঘটনা’র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। তারা সতর্ক করে বলে, ‘ঘটনাস্থলে উপস্থিত সবাইক নিরাপদে আশ্রয় নিতে হবে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, কালো পোশাক পরা দুই বন্দুকধারী ভিড়ের দিকে গুলি চালাচ্ছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা একজন অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হেরাল্ডকে বলেন, বন্দুকধারীরা নির্বিচারে শিশু এবং বয়স্কদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। কিছু ছবিতে লোকজনকে অন্যদের বুকের ওপর সিপিআর করতে দেখা যায়।

এই ঘটনার পর বিরোধী দলের নেতা সুসান লে বলেন, অস্ট্রেলিয়ানরা গভীর শোকে মূহ্যমান, ‘ঘৃণ্য সহিংসতা একটি আইকনিক অস্ট্রেলিয়ান সম্প্রদায়ের কেন্দ্রস্থলে আঘাত করেছে, যে জায়গাটিকে আমরা সবাই খুব ভালোভাবে জানি এবং ভালোবাসি, সেটি হলো বন্ডাই।’ তিনি বলেন, ‘এই হামলায় যে প্রাণহানি হয়েছে তা গুরুতর এবং আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত হয়ে সকল অস্ট্রেলিয়ানকে পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অফিসিয়াল পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি। এই হামলাটি ঘটেছে যখন আমাদের ইহুদি সম্প্রদায় হানুক্কা বাই দ্য সি উদযাপনের জন্য একত্রিত হয়েছিল। এটি ছিল শান্তি এবং ভবিষ্যতের আশার একটি উদযাপন, যা ঘৃণা দ্বারা ছিন্ন করা হলো।’

অস্ট্রেলিয়ান জিউয়িশ অ্যাসোসিয়েশন এই গুলিবর্ষণের ঘটনায় আলবানিজ প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেছে এবং বলেছে যে দেশের ইহুদিরা এখন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, ‘আজ রাতে যা ঘটেছে তা একটি ট্র্যাজেডি, তবে এটি সম্পূর্ণরূপে অনুমেয় ছিল। আলবানিজ সরকারকে বহুবার সতর্ক করা হয়েছিল, কিন্তু ইহুদি সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্য তারা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। আজ রাতে, অনেক ইহুদি ভাবছেন যে অস্ট্রেলিয়ায় তাদের কোনো ভবিষ্যৎ আছে কিনা। আমাদের চিন্তা আমাদের সম্প্রদায় এবং ক্ষতিগ্রস্থ সকলের সাথে রয়েছে, যাদের মধ্যে কেউ কেউ আমাদের খুব ঘনিষ্ঠ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: আসামি গ্রেপ্তারের আশা ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আসিফ-মাহফুজকে ঘিরে এনসিপিতে নতুন সমীকরণ

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি। ছবি: ডেইলি মেইল
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি। ছবি: ডেইলি মেইল

দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে—অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার কবলেও পড়েছিলেন। তবে সৌভাগ্য এই যে, দুই ঘটনায়ই তিনি অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন!

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ডেইলি মেইল জানিয়েছে, বন্ডাই বিচে আহত অস্ত্রোভস্কি একজন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী। রক্তে ভেজা শরীর ও ব্যান্ডেজে মোড়ানো অবস্থায় তিনি অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি পরিবার নিয়ে এখানে এসেছিলাম। চারদিকে শিশু, বৃদ্ধ, পরিবার—সবাই আনন্দ করছিল। হঠাৎ করেই সবকিছু বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়। চারদিকে গুলির শব্দ, মানুষ দৌড়াচ্ছে, লুকোচ্ছে—পুরো জায়গা জুড়ে ভয়াবহ আতঙ্ক।’

অস্ত্রোভস্কি জানান, কোন দিক থেকে গুলি আসছিল, তা কেউ বুঝতে পারছিল না। তিনি বলেন, ‘আমি নিজ চোখে দেখেছি এক বন্দুকধারী চারদিকে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। শিশুদের মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখেছি, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের আহত হতে দেখেছি—এটা ছিল এক রক্তাক্ত বিভীষিকা।’

অস্ত্রোভস্কি এটাও জানান, তিনি ১৩ বছর ইসরায়েলে ছিলেন এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতাও তাঁর আছে। তাঁর ভাষায়, ‘সেই ঘটনার পর আবার এমন ভয়াবহ দৃশ্য দেখলাম। কখনো ভাবিনি অস্ট্রেলিয়ায়, তাও আবার বন্ডাই বিচের মতো জায়গায় এমন কিছু ঘটবে।’

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বিখ্যাত বন্ডাই বিচে ইহুদি ধর্মীয় উৎসব হানুকা উদ্‌যাপনের সময় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৯ জন। স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ‘চানুকাহ বাই দ্য সি’ নামে একটি অনুষ্ঠানের মাঝেই এই হামলা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্যাম্পবেল প্যারেড এলাকায় একটি গাড়ি থেকে নেমে দুই সশস্ত্র ব্যক্তি এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যেই উৎসবের আনন্দ রূপ নেয় বিভীষিকায়। পর্যটন এলাকা জুড়ে একের পর এক গুলির শব্দ শোনা যায়।

ঘটনাস্থলে বহু মানুষকে আহত অবস্থায় ঘাসের ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায়। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীদের একজনকে ঘটনাস্থলেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অপরজন আহত অবস্থায় আটক রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: আসামি গ্রেপ্তারের আশা ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আসিফ-মাহফুজকে ঘিরে এনসিপিতে নতুন সমীকরণ

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪৯
বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সশস্ত্র হামলাকারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন এক পথচারী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সেই পথচারী হাজারো মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন।

ভাইরাল ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সাদা শার্ট পরা ওই পথচারী পার্কিং লট থেকে দৌড়ে গিয়ে রাইফেল হাতে থাকা হামলাকারীকে পেছন থেকে জাপটে ধরেন। এরপর তিনি হামলাকারীর কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেন এবং সেটি হামলাকারীর দিকেই তাক করেন।

অকস্মাৎ পেছন থেকে জাপটে ধরায় হামলাকারী ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং পিছু হটেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই পথচারীর এমন সাহসী পদক্ষেপে বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে।

যদিও ওই পথচারীর পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি, তবে তাঁর এই অবিশ্বাস্য সাহসিকতার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক ব্যক্তি ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার হিরো (একজন সাধারণ বেসামরিক) হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন। কেউ কেউ সাহসী আর কেউ কেউ...এই ধরনের।’ অন্য একজন বলেছেন, ‘এই অস্ট্রেলিয়ান বন্ডাই বিচে সন্ত্রাসীদের একজনকে নিরস্ত্র করে অসংখ্য জীবন বাঁচিয়েছেন। হিরো।’

নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্স এটিকে তাঁর দেখা ‘সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দৃশ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই লোকটি একজন প্রকৃত হিরো। তিনি নির্ভয়ে হামলাকারীর দিকে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করলেন এবং অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করলেন। আমি নিশ্চিত যে, ওই ব্যক্তির সাহসিকতার জন্যই অনেক মানুষ বেঁচে আছেন।’

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজও হামলার সময় অন্যদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসা নাগরিকদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই অস্ট্রেলীয়রা বিপদেও ছুটে গেছেন অন্যদের রক্ষা করতে। তাঁদের সাহসিকতাই অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।

উল্লেখ্য, গুলির ঘটনায় এখন পর্যন্ত হামলাকারীসহ ১২ জন নিহত বলে জানা গেছে। দুই হামলাকারীর মধ্যে একজন গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে আছেন। এ ঘটনায় তৃতীয় কোনো বন্দুকধারী জড়িত ছিলেন কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: আসামি গ্রেপ্তারের আশা ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আসিফ-মাহফুজকে ঘিরে এনসিপিতে নতুন সমীকরণ

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামায়াতের দুই ছাত্রনেতা আশরাফ ও মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত