Ajker Patrika

প্রাচীন মিসরীয় এক ব্যক্তির জিনে মিলল চমকপ্রদ পূর্বপুরুষের পরিচয়

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৫, ২০: ০০
জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে মিসরীয় ওই ব্যক্তির ত্রিমাত্রিক মুখাবয়ব তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। ছবি: সিএনএন
জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে মিসরীয় ওই ব্যক্তির ত্রিমাত্রিক মুখাবয়ব তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। ছবি: সিএনএন

প্রথমবারের মতো প্রাচীন মিসরের এক ব্যক্তির সম্পূর্ণ জিনোম (ডিএনএর পূর্ণ তথ্য) বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ঘটনাটি বিশ্বজুড়ে গবেষকদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ব্যতিক্রমী এই আবিষ্কার প্রাচীন মিসরীয়দের আদিপুরুষ সম্পর্কে আমাদের জানার নতুন জানালা খুলে দিয়েছে।

সিএনএন জানিয়েছে, প্রায় ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ৮০০ বছর আগে প্রাচীন মিসরের প্রাচীন রাজবংশ ও পিরামিড নির্মাণের সময়কালেই কায়রো শহরের দক্ষিণে অবস্থিত নুয়াইরাত গ্রামে এক ব্যক্তিকে একটি মাটির পাত্রে দাফন করা হয়েছিল। সেখান থেকে পাওয়া ওই কঙ্কাল প্রাচীন মিসর থেকে পাওয়া এযাবৎকালের সবচেয়ে পুরোনো ডিএনএ নমুনা।

সম্প্রতি ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির জিনের ৮০ শতাংশ এসেছে উত্তর আফ্রিকার আদি জনগোষ্ঠী থেকে এবং ২০ শতাংশ এসেছে পশ্চিম এশিয়া ও মেসোপটেমিয়ার (বর্তমান ইরাক, ইরান ও জর্ডান অঞ্চল) জনগোষ্ঠী থেকে। এর ফলে বোঝা যাচ্ছে, বহু আগে থেকেই মিসর ও উর্বর উপত্যকা (ফার্টাইল ক্রিসেন্ট) অঞ্চলের জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সাংস্কৃতিক ও জিনগত সংযোগ ছিল।

গবেষণার প্রধান লেখক ড. অ্যাডেলিন মোরেজ জ্যাকবস বলেন, ‘একটি দাঁতের গোড়া থেকে সংগৃহীত ডিএনএ, কঙ্কাল ও দাঁতের গঠন বিশ্লেষণ করে আমরা ওই ব্যক্তির জীবন ও পূর্বপুরুষদের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেয়েছি।’

এই আবিষ্কার আরও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, এটি ডিএনএ বিশ্লেষণের নতুন প্রযুক্তি ‘শটগান সিকোয়েন্সিং’-এর সাফল্য। মিসরের গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ডিএনএ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, তাই অতীতে বহুবার চেষ্টা করা হলেও পূর্ণ জিনোম বের করা সম্ভব হয়নি। এবার একটি দাঁতের সিমেন্টাম অংশ থেকে সংগৃহীত নমুনা দুটি বেশ ভালোভাবেই সংরক্ষিত ছিল, যা বিশ্লেষণে ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তি প্রায় ৫ ফুট লম্বা ছিলেন এবং মৃত্যুকালে বয়স ছিল ৪৪ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে। তাঁর দাঁত, কশেরুকা ও হাড়ে পাওয়া গেছে দীর্ঘ সময় ধরে কঠোর পরিশ্রমের চিহ্ন। তিনি হয়তো একজন মৃৎশিল্পী ছিলেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, তাঁর দাফন ছিল অনেকটাই আড়ম্বরপূর্ণ, যা সাধারণত উচ্চ শ্রেণির মানুষদের করা হতো। তাই ধারণা করা হচ্ছে, হয়তো তিনি তাঁর পেশায় এতটাই দক্ষ ছিলেন যে সামাজিক মর্যাদায় উন্নীত হয়েছিলেন।

গবেষণার আরেক লেখক ড. লিনাস গার্ডল্যান্ড-ফ্লিংক বলেছেন, ‘এটা মাত্র একজন ব্যক্তির জিনোম হলেও আমাদের বলে দেয় যে, মিসরের প্রাচীন জনগণের মধ্যে উত্তর আফ্রিকান ও মেসোপটেমিয়ান পূর্বপুরুষদের মিশ্রণ ছিল।’

এই গবেষণা এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমাদের নিয়ে যায়, যখন মানুষ কৃষি, পশুপালন ও স্থায়ী বসতির দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। সেই সময়ে বিনিময় প্রথা শুধু পণ্য বা প্রযুক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং মানুষের যাত্রা ছিল আরও বিস্তৃত।

গবেষণাটি শুধু এক ব্যক্তির জীবন নয়, বরং মানব ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাঁধার অংশ খুলে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে মিসরের আরও পুরোনো নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা আরও জানতে পারব—কারা ছিলেন সেই প্রথম মিসরীয়, যাঁদের হাত ধরে গড়ে উঠেছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সময় টিকে থাকা সভ্যতা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘অপারেশন সিঁদুরে’ তিন শত্রুর মোকাবিলা করেছে ভারত, অন্য দেশের নাম জানালেন সেনা কর্মকর্তা

যুবলীগ নেতাকে ধরতে নয়, বাসাটি ঘেরাওয়ের নেপথ্যে অন্য কারণ

‘একটা মার্ডার করেছি, আরও ১০০টা মার্ডার করব’, ভিডিও ভাইরাল

মহাকাশে হারিয়ে গেল ৯ কোটি ডলারের স্যাটেলাইট, জলবায়ু গবেষণায় বড় ধাক্কা

ভুল করার পর জাদেজাকে কী বলে সতর্ক করেছেন বাংলাদেশের আম্পায়ার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত