Ajker Patrika

জনগণের টাকায় নীল নদে বিশাল বাঁধ বানাল ইথিওপিয়া, অস্বস্তিতে প্রতিবেশীরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯: ১৫
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বাঁধ নির্মাণ করেছে ইথিওপিয়া। ছবি: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বাঁধ নির্মাণ করেছে ইথিওপিয়া। ছবি: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে কূটনৈতিক অঙ্গনে মিসরকে টেক্কা দেওয়ার পর, ইথিওপিয়া অবশেষে নীল নদের একটি উপনদীতে নিয়ন্ত্রণ পেল। দেশটি শিগগির বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধগুলোর মধ্যে অন্যতম বাঁধ উদ্বোধন করতে যাচ্ছে। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক আমলের একটি চুক্তি কার্যত বাতিল হয়ে যাচ্ছে। ওই চুক্তির বলে মিসর নীল নদের পানির সিংহভাগ ব্যবহারের নিশ্চয়তা পেয়েছিল।

প্রায় ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলার ব্যয়ে এই গ্র্যান্ড ইথিওপিয়ান রেনেসাঁস ড্যাম (গার্ড) প্রকল্পটি নীল নদের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। এর বিশাল জলাধার গ্রেটার লন্ডনের প্রায় সমান। এই বাঁধ কেবল একটি অবকাঠামো নয়, এটি এখন ইথিওপীয়দের জাতীয় গর্বের প্রতীক। দেশটি প্রায়শই জাতিগত বিভেদে জর্জরিত থাকলেও এই বাঁধ সব ইথিওপীয়কে ঐক্যবদ্ধ করেছে।

উজানে বাঁধের কারণে নীল নদ অববাহিকায় মিসরের ধান উৎপাদন কমে যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
উজানে বাঁধের কারণে নীল নদ অববাহিকায় মিসরের ধান উৎপাদন কমে যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক থিংকট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের বিশ্লেষক মোসেস ক্রিসপাস ওকেলো বিবিসিকে বলেন, ‘ইথিওপীয়রা হয়তো তাদের প্রধান খাদ্য কী হবে, তা নিয়ে একমত না-ও হতে পারে, কিন্তু বাঁধ নিয়ে তারা সবাই একমত।’

এই প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থায়ন এসেছে দেশের সাধারণ মানুষ ও প্রবাসী ইথিওপীয়দের অনুদান এবং সরকারি বন্ড বিক্রির মাধ্যমে। এর ফলে বাঁধটি জনগণের মালিকানা ও অর্জনের এক প্রতীক হয়ে উঠেছে। প্রকল্পটি চালু হলে এটি আফ্রিকার বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে, যা দেশের ১৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাবে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎসও হবে। ইথিওপিয়ার লক্ষ্য প্রতিবেশী দেশগুলো; যেমন কেনিয়া ও জিবুতিতে বিদ্যুৎ রপ্তানি বাড়ানো এবং ভবিষ্যতে লোহিতসাগর পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা।

নীল নদে বাঁধ নির্মাণ নিয়ে দ্বন্দ্ব নিরসনে ২০১৯ সালের হোয়াইট হাউসে মিসর, সুদান ও ইথিওপিয়ার প্রতিনিধি দল। ছবি: হোয়াইট হাউস
নীল নদে বাঁধ নির্মাণ নিয়ে দ্বন্দ্ব নিরসনে ২০১৯ সালের হোয়াইট হাউসে মিসর, সুদান ও ইথিওপিয়ার প্রতিনিধি দল। ছবি: হোয়াইট হাউস

তবে মিসরের জন্য এই বাঁধ গভীর উদ্বেগের কারণ। দেশটির প্রায় ৯৩ শতাংশ অঞ্চল মরুভূমি এবং ১০ কোটি ৭০ লাখ মানুষ তাদের জীবনের জন্য সম্পূর্ণভাবে নীল নদের পানির ওপর নির্ভরশীল। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক আব্বাস শারাকে বলেন, ‘নীল নদ আমাদের জীবন। বাঁধটি ৬৪ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি জমা করছে, যা আমাদের বার্ষিক ভাগের চেয়ে বেশি। এটি আমাদের জন্য একটি বিশাল ক্ষতি।’ তাঁর আশঙ্কা, এই বাঁধ মিসরে ‘পানি সংকট হেতু দারিদ্র্য’ আরও বাড়াবে।

অধ্যাপক শারাকে জানান, ইথিওপিয়া মিসরের তৎকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে বাঁধ নির্মাণের একতরফা সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সময় হোসনি মুবারকের পতনের পর মিসর এক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। তবে এখন মিসর পানির বিকল্প উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম পানির শোধনাগার নির্মাণ এবং ৫ হাজারের বেশি কুয়া খনন।

ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবিয়া আহমেদ। ছবি: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবিয়া আহমেদ। ছবি: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

বাঁধ নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে ব্যাপক কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও বিশেষজ্ঞরা যুদ্ধের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। ইথিওপিয়ার পক্ষের সাবেক আলোচক ফেকাহমেদ নেগাশ বলেন, বাঁধটিতে বোমা হামলা চালানো মিসর ও সুদানের জন্য ‘আত্মঘাতী’ হবে। কারণ, এতে বিপুল জলরাশি বেরিয়ে এসে দুটি দেশকেই ধ্বংস করে দেবে। মিসরীয় অধ্যাপক শারাকেও যুদ্ধের বিরোধিতা করে বলেন, ‘তারা আমাদের ভাই। আমরা একই পানি পান করি।’ তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ইথিওপিয়া এই বাঁধকে সুদানসহ আঞ্চলিক সামরিক ক্ষমতা প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। একই সঙ্গে, তিনি বাঁধের কারণে ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির কথাও তুলে ধরেন। ইথিওপিয়া অবশ্য এই আশঙ্কাগুলো ভিত্তিহীন বলে দাবি করছে।

বাঁধের উদ্বোধনের পর ইথিওপিয়ার পরবর্তী লক্ষ্য হলো লোহিতসাগরে প্রবেশাধিকার ফিরে পাওয়া। ১৯৯১ সালে ইরিত্রিয়ার স্বাধীনতার সময় এই অধিকার হারিয়েছিল তারা। প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ সম্প্রতি বলেছেন, ‘কোনো বৃহৎ দেশ সমুদ্রবন্দর ছাড়া হয় না।’ বাঁধের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইথিওপিয়া এখন নিজেদের একটি ‘মহান জাতি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং: বিমানের সঙ্গে থাকবে বিদেশি কোম্পানি

চন্দ্রগ্রহণের সময় মুমিনের করণীয় আমল

শেখ হাসিনার শত্রু ছিলাম, তাঁকে বের করেছি, তাঁর ভাগনির চাকরি খেয়েছি: ববি হাজ্জাজ

বেতন চাইলে গৃহকর্মীদের পিস্তল দেখান সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি শামসুদ্দোহা, ৯৯৯-এ কল পেয়ে গ্রেপ্তার

চন্দ্রগ্রহণ চলছে, ব্লাড মুন দেখা যাবে রাত সাড়ে ১১টায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত