Ajker Patrika

গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ব্যায়াম নয়

ডা. ফরিদা ইয়াসমিন সুমি
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ব্যায়াম নয়

গর্ভাবস্থা নারীর জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এ সময় সুষম খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত বিশ্রামের পাশাপাশি হালকা ব্যায়াম করাও জরুরি। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ব্যায়াম করলে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন। তবে মনে রাখতে হবে, কোনো অবস্থাতেই এ সময় অতিরিক্ত ব্যায়াম করা যাবে না।

গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত সময় ধরে এবং তীব্র মাত্রার ব্যায়াম করা উচিত নয়। গর্ভবতীর শারীরিক অবস্থা বুঝে এ সময় সাধারণত প্রতিদিন ১০ থেকে ৩০ মিনিট হালকা থেকে মাঝারি ব্যায়ামই শরীরকে সুস্থ রাখতে যথেষ্ট। সপ্তাহে ৫ দিনের শরীরচর্চা গর্ভকালীন বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা করবে। এ সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সুন্দরভাবে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।

শারীরিক যেসব জটিলতায় ব্যায়াম করা নিষেধ, সেসব ক্ষেত্র ছাড়া প্রত্যেকের জন্যই ব্যায়াম অত্যন্ত উপকারী।

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম যে উপকার করে

  • বমিভাব ও অরুচি কমায়
  • কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেট ফাঁপা কমায়
  • পিঠ ও কোমরব্যথা কমায়
  • বিষণ্নতা কমায়, মন ভালো রাখে
  • অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে
  • প্রাণচাঞ্চল্য ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়
  • অনিদ্রা দূর করে ভালোভাবে ঘুমাতে সাহায্য করে
  • গর্ভকালীন জটিলতা, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, প্রি-একলাম্পসিয়া ও একলাম্পসিয়া কমায়
  • স্বাভাবিক প্রসবে সাহায্য করে
  • প্রসবের পর দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে
  • রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে শিশুর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে

গর্ভাবস্থায় যেসব হালকা থেকে মাঝারি ব্যায়াম করা যেতে পারে

  • গর্ভকালীন পুরো সময়ই হাঁটাহাঁটি করা যায়। এটি সবচেয়ে নিরাপদ ব্যায়াম। দিনে ২০ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটা যেতে পারে।
  • প্রতিদিন ১৫ মিনিট জগিংও করতে পারেন। তবে বেশি ক্লান্তি অনুভব হলে ধীরে হাঁটুন।
  • গর্ভাবস্থায় পরিমিত সাঁতার ও সাইক্লিং খুবই নিরাপদ ও ভালো ব্যায়াম।
  • এ সময়ের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী কিছু যোগব্যায়াম রয়েছে, যা শরীরের ক্লান্তি, অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে। এ বিষয়ে ব্যায়াম প্রশিক্ষকের সাহায্য নিতে পারেন।

কোনো ব্যায়াম করতে গিয়ে যদি কষ্ট বা ব্যথা অনুভব করেন, তবে বুঝতে হবে, সেটি আপনার জন্য উপযুক্ত নয়। ব্যায়াম করার সময় যদি স্বাভাবিকভাবে একটি পূর্ণ বাক্য বলে শেষ করতে কষ্ট হয়, তবে তখনই ব্যায়াম বন্ধ করে বিশ্রাম নিন। এসব ক্ষেত্রে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম কমিয়ে হালকা ব্যায়াম করা উচিত। গর্ভাবস্থায় বেশিক্ষণ চিত হয়ে শুয়ে থাকা, ভারী জিনিস তোলা ও বহন করা এবং সান বাথ বা স্টিম বাথ নেওয়া নিষেধ।

নিয়মিত শরীরচর্চা উপকারী হলেও আপনার জন্য উপযুক্ত এবং নির্দেশিত মাত্রার বেশি শরীরচর্চা করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থার মতো  সময়ে ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এ সময়ে অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে বেশ কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন:

  • গর্ভপাত
  • গর্ভের পানি বা অ্যামনিওটিক ফ্লুইড কমে যাওয়া
  • সময়ের আগে পানি ভেঙে যাওয়া
  • অকাল প্রসব
  • পানিশূন্যতা ও ক্লান্তিবোধ
  • ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া
  • শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া
  • আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা

আগে থেকে ব্যায়াম করার অভ্যাস না থাকলে, হঠাৎ করে বেশি মাত্রার ব্যায়াম করবেন না। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের অভ্যাস করুন। একবারে ৩০ মিনিট না করে প্রথম দিকে ৫ মিনিট করে শুরু করুন। তারপর ধীরে ধীরে সময় বাড়ান।

যেসব গর্ভবতীর ব্যায়াম করা নিষেধ

  • যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে
  • যাঁরা রক্তশূন্যতা ও অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছেন
  • যাঁদের হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসে জটিলতা রয়েছে
  • গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ হয়ে থাকলে
  • গর্ভফুল নিচের দিকে বা প্লাসেন্টা প্রিভিয়া থাকলে
  • আগে গর্ভপাত হওয়ার ইতিহাস থাকলে।

মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ডা. ফরিদা ইয়াসমিন সুমি, সহকারী অধ্যাপক (গাইনি) প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

বৃদ্ধের চার বিয়ে, থানায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জেরার মুখে হাসির রোল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত