Ajker Patrika

ওভারিয়ান সিস্টের কারণে সন্তানধারণে সমস্যা

ডা. ফরিদা ইয়াসমিন সুমি
ওভারিয়ান সিস্টের কারণে সন্তানধারণে সমস্যা

বর্তমানে ওভারি বা ডিম্বাশয়ে সিস্ট নারীদের সাধারণ সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। সাধারণভাবে ওভারিতে তরল বা আধা কঠিন পদার্থপূর্ণ থলেকে সিস্ট বলা হয়। ওভারিয়ান সিস্টের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। সাধারণত বয়ঃসন্ধিকাল থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে ওভারিয়ান সিস্ট হয়ে থাকে। ওভারিতে যে ছোট ছোট ফলিকল থাকে, সেগুলো পূর্ণাঙ্গ না হলে সিস্টে পরিণত হতে পারে। একে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা পিসিওএস বলে। পিসিওএসে ওভারিতে অসংখ্য অপরিণত ফলিকল সিস্টে রূপান্তরিত হয়ে সমস্যার সৃষ্টি করে। বর্তমানে এটি প্রায় মহামারির আকার ধারণ করেছে। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম একটি জটিল হরমোনজনিত রোগ। এই জটিল অবস্থায় ডিম্বাশয়ের চারপাশে সিস্ট বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। যেসব নারী তাঁদের প্রজননক্ষম সময়ে পিসিওএসে আক্রান্ত হন, তাঁদের গর্ভধারণ করতে সমস্যা হতে পারে।

পিসিওএস ও বন্ধ্যত্ব কী সম্পর্কযুক্ত
পিসিওএস ও বন্ধ্যত্ব একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তবে আশার কথা, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে পিসিওএসে আক্রান্ত নারী গর্ভধারণে সক্ষম। পিসিওএসের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো ভালোভাবে জানা যায়নি। তবে মনে করা হয় যে জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণগুলোর মিশ্রণ এই অবস্থার জন্য দায়ী হতে পারে। সাধারণত পিসিওএসে ডিম্বাশয়ে ছোট ফলিকল বা সিস্ট তৈরি হয়, যা ডিম পূর্ণাঙ্গ ও মুক্ত হতে বাধা দিতে পারে এবং সক্রিয় ডিমের উৎপাদনকেও সীমিত করতে পারে। এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসারের মতো অন্যান্য রোগ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়।

সাধারণত বয়ঃসন্ধিকাল থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে ওভারিয়ান সিস্ট হয়ে থাকে। ওভারিতে যে ছোট ছোট ফলিকল থাকে, সেগুলো পূর্ণাঙ্গ না হলে সিস্টে পরিণত হতে পারে। একে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা পিসিওএস বলে।

যেহেতু এই রোগে আক্রান্ত নারীদের ঠিকমতো ওভ্যুলেশন হয় না, তাই পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম প্রজননস্বাস্থ্য বা গর্ভধারণের যোগ্যতা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে থাকে। ফলে এ ধরনের সিস্ট নারীর জীবনের সামগ্রিক গুণমানকে প্রভাবিত করে। যেমন অনিয়মিত পিরিয়ড

পিসিওএস সৃষ্ট হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে মাসিক প্রায়ই অনিয়মিত বা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকতে পারে। এ ছাড়া অনিয়মিত ডিম্ব স্ফোটন বা ডিম্ব স্ফোটন একেবারে না-ও হতে পারে। তাই গর্ভধারণের জন্য কার্যকর সময় নির্ণয় করা কঠিন হতে পারে।

অস্বাভাবিক ডিম্ব স্ফোটন
হরমোনের অস্বাভাবিকতা, বিশেষ করে উচ্চ মাত্রার এন্ড্রোজেন বা পুরুষ হরমোন এবং ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণে স্বাভাবিক ডিম্ব স্ফোটন ব্যাহত হতে পারে। অনিয়মিত বা অনুপস্থিত ওভ্যুলেশনের কারণে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যায়।

হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
পিসিওএসে উচ্চতর লুটিনাইজিং হরমোনের স্তর ও ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ডিমের পরিপক্বতা এবং ফলিকলের বৃদ্ধি বিরূপভাবে প্রভাবিত হতে পারে।

গর্ভপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা ডিমের দুর্বল মানের কারণে পিসিওএসে আক্রান্ত নারীদের গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

গর্ভাবস্থায় জটিলতার আশঙ্কা
পিসিওএস আক্রান্ত গর্ভবতী নারীর অকাল প্রসব, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এবং প্রিক্ল্যাম্পসিয়া বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

পিসিওএস ও ওজন
শরীরের অত্যধিক ওজন পিসিওএস ক্ষণগুলোকে আরও খারাপ ও গর্ভধারণ কঠিন করে তুলতে পারে। পিসিওএসে আক্রান্ত নারীদের গর্ভধারণের জন্য ওজন কমানো অত্যাবশ্যক।

মানসিক চাপ
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ পিসিওএস-সম্পর্কিত বন্ধ্যত্ব সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

বিশেষায়িত চিকিৎসা
পিসিওএসে আক্রান্ত নারীর গর্ভধারণে প্রায়ই বিশেষায়িত চিকিৎসাপদ্ধতির প্রয়োজন হতে পারে। যেমন ওভ্যুলেশন ইনডাকশন, আইভিএফ বা টেস্টটিউব পদ্ধতি ইত্যাদি।

পিসিওএস বন্ধ্যত্ব চিকিৎসা
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম নারীর গর্ভধারণের চিকিৎসা বেশ চ্যালেঞ্জিং। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যা করতে হবে:

» জীবনযাপন প্রণালি সমন্বয় করে সুশৃঙ্খল ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা।

» স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ওজন হলে কমাতে হবে এবং কম হলে বাড়িয়ে সঠিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

» ইনসুলিনের মাত্রা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে শাকসবজি, ফল, চর্বিবিহীন প্রোটিনসমৃদ্ধ ডায়েট অনুসরণ করতে হবে।

» নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। এটি হরমোন নিয়ন্ত্রণ ও ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নয়নে সাহায্য করে।

চিকিৎসা
পিসিওএসের সফল চিকিৎসায় গাইনিকোলজিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্টের সমন্বিত নির্দেশনা প্রয়োজন।

গর্ভধারণে সহায়ক ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা
ইনসুলিন প্রতিবন্ধকতা কমাতে মেটফরমিন-জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয় এ ক্ষেত্রে। ডিম বড় করার জন্য মুখে খাওয়ার ওষুধ এবং ইনজেকশন দেওয়া হয়। ওভ্যুলেশন উদ্দীপ্ত করতে বেশ কিছু ইনজেকশন কার্যকর ভূমিকা রাখে।

কৃত্রিম উপায়ে গর্ভধারণ
ওষুধ ও ইনজেকশনের মাধ্যমে গর্ভধারণে ব্যর্থ হলে কৃত্রিম পদ্ধতিতে গর্ভধারণ করা যেতে পারে। যেমন আইইউআই, আইভিএফ, ইকসি ইত্যাদি।

প্রতিটি পিসিওএস আক্রান্ত নারীর সমস্যা, উপসর্গ ও এর প্রকাশ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসাপদ্ধতিও ভিন্ন হয়ে থাকে। অনেক সময় সন্তান ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সিস্ট নিরাময়ের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। সর্বোপরি দুশ্চিন্তামুক্ত স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা কাউন্সেলিংয়ের মতো মানসিক চাপ কমানোর পদ্ধতি যুক্ত করুন এবং সঠিক ওজন বজায় রাখুন। শুধু এর মাধ্যমেই পিসিওএস নিয়ন্ত্রণ করা অনেকাংশে সম্ভব।

ডা. ফরিদা ইয়াসমিন সুমি, সহকারী অধ্যাপক (গাইনি), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত