Ajker Patrika

কাঁচা আম কখন কীভাবে কী পরিমাণে খাবেন

পুষ্টিবিদ লিনা আকতার
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গরমের এই সময়ে কাঁচা আম যদি নিয়মিত খাওয়া যায়, তাহলে শরীরের নানা উপকার হয়। কাঁচা আমে রয়েছে প্রাকৃতিক কুলিং এজেন্ট, যা গ্রীষ্মের হিট স্ট্রোক থেকে শরীর রক্ষা করে। দেহ থাকে শীতল ও সতেজ। গরমে প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে কাঁচা আম খেলে হজমজনিত কোনো ধরনের সমস্যা থাকে না। তা ছাড়া গরমের সময় শরীর ঠান্ডা রাখতে এবং শরীরে পানিশূন্যতা রোধ করতে কাঁচা আমের জুড়ি মেলা ভার। যাঁরা ওজন কমাতে চাচ্ছেন, তাঁরা খাদ্যতালিকায় কাঁচা আম রাখতে পারেন। কারণ, কাঁচা আমে রয়েছে কম ক্যালরি এবং পর্যাপ্ত ফাইবার; যা শুধু ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে না, অতিরিক্ত খাবার খাওয়া প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

গর্ভবতী নারীদের জন্যও কাঁচা আম খাওয়া নিরাপদ। এতে রয়েছে প্রচুর ফলেট, যা ১০০ গ্রামে ৪৩ মাইক্রোগ্রাম। এটি গর্ভাবস্থায় নিউরাল টিউব ক্রটি প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়া কাঁচা আমে প্রচুর ভিটামিন এ রয়েছে; যা চুল ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে। এই ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি, যা ১০০ গ্রামে ৩৬.৪ গ্রাম। এই ভিটামিন সি শরীরের ঠান্ডা লাগা, কাশির মতো বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। কাঁচা আমে থাকা ভিটামিন বি নায়াসিন হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে বিশেষভাবে সহায়ক। কাঁচা আমের রসে পটাশিয়াম থাকায় এই সময়ের প্রচণ্ড গরমে তা শরীরকে ঠান্ডা রাখে। এ ছাড়া গরমের কারণে অতিরিক্ত ঘামে শরীর থেকে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও লৌহ বের হয়ে যায়। এ সময় কাঁচা আমের শরবত খেলে এই ঘাটতি দূর হয়ে যাবে। কাঁচা আম শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে। পাকা আমের তুলনায় এর গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকে। সে কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করবে। যে কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। এ ছাড়া কাঁচা আমের পেস্ট ত্বকের মৃতকোষ দূর করতে সহায়ক এবং ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তোলে।

যেভাবে কাঁচা আম খাওয়া যায়

কাঁচা আম টুকরো করে সালাদ, চাটনি বা গ্রেট করে খেতে পারেন। এ ছাড়া স্বাদের জন্য এবং উচ্চ রক্তচাপ না থাকলে আমের ওপর হালকা লবণ এবং মরিচগুঁড়া ছিটিয়ে দিতে পারেন। টক স্বাদের জন্য আমের টুকরোগুলোর ওপর কিছু লেবুর রস দিতে পারেন। আমসত্ত্ব করে কিংবা বিভিন্ন রান্নার সঙ্গে ব্যবহার করে খেতে পারেন, যা গ্রীষ্মকালীন সতেজ একটি পানীয়। জুস করেও খাওয়া যেতে পারে।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

কাঁচা আম কাটার ফলে অনেকের ত্বক জ্বালাপোড়া শুরু করে। একে বলা হয় কন্ট্রাক্ট ডার্মাইটিস।

» বেশি পরিমাণে এটি খেলে বদহজম হতে পারে।

» কারও কারও ক্ষেত্রে কাঁচা আমে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া ঘটে যেতে পারে। এ জন্য কাঁচা আম খাওয়ার পরে খেয়াল করতে হবে, শরীরে কোনো প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না।

» কাঁচা আমে উচ্চ পরিমাণে অ্যাসিড থাকে। সে কারণে দাঁতে ক্ষয়, দাঁতের এনামেল নষ্ট হতে পারে।

» যাঁদের আইবিএস অথবা পাকস্থলীর সমস্যা আছে, তাঁরা অতিরিক্ত কাঁচা আম খেলে পেট ফাঁপা, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা হতে পারে। কারণ, এতে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার রয়েছে।

» যাঁদের অ্যাসিডিক সমস্যা, তাঁরা কাঁচা আম পরিমিত খাবেন।

প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা আমে যেসব পুষ্টিগুণ থাকে

» শক্তি: ৬০ কিলোক্যালরি

» কার্বোহাইড্রেট: ১৪.৯৮ গ্রাম

» প্রোটিন: ০.৮২ গ্রাম

» চর্বি: ০.৩৮ গ্রাম

» ফাইবার: ১.৬ গ্রাম

» ভিটামিন সি: ৩৬.৪ গ্রাম

» ভিটামিন ই: ১.১২ মিলিগ্রাম

» ভিটামিন এ: ১০৮২ আইইউ

» পটাশিয়াম: ১৬৮ মিলিগ্রাম

» ম্যাগনেশিয়াম: ১০ মিলিগ্রাম

» ভিটামিন বি৩: ৬৬৯ মাইক্রোগ্রাম

» ভিটামিন বি৬: ১১৯ মাইক্রোগ্রাম

» ক্যালসিয়াম: ১১ মিলিগ্রাম

» লোহা: ১৬০ মাইক্রোগ্রাম

» ভিটামিন কে: ৪.২ মিলিগ্রাম

» ফসফরাস: ১৪ মিলিগ্রাম

» সোডিয়াম: ১ মিলিগ্রাম

» ফলেট: ৪৩ মিলিগ্রাম

কী পরিমাণে খাওয়া যাবে

একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দৈনিক ১ থেকে ২ কাপ কাঁচা আম খেতে পারেন। যার পরিমাণ ১৫০ থেকে ৩৩০ গ্রাম হতে হবে। তবে শারীরিক অবস্থাভেদে খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে ও কমাতে হতে পারে।

কাঁচা আমার খাওয়ার সময়

দিনের বেলায় কাঁচা আম খাওয়া উপযুক্ত সময়। কারণ, রাতে এই আম খেলে বদহজম, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পরামর্শ দিয়েছেন: রাইয়ান হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, দিনাজপুর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত