Ajker Patrika

শিশুদের হাঁপানি হলে

অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন
শিশুদের হাঁপানি হলে

হাঁপানি শিশুদের মধ্যে সাধারণ একটি দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ। দীর্ঘদিন ধরে অতি সংবেদনশীলতা ও শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত কারণে ঘনঘন হাঁচি, কাশি এবং স্বাভাবিকভাবে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় এই রোগে।

উপসর্গ
· শিশুর ঘন ঘন কাশি বা শ্বাসকষ্ট হওয়া।
· কাশি বা শ্বাসকষ্টের জন্য রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া।
· শিশুর অ্যাটপিক একজিমা হওয়া।
· শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বাঁশির মতো সাঁ সাঁ শব্দ করা।
· ঋতু পরিবর্তনের সময় শ্বাসকষ্ট হওয়া।

কারণ
এর নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা না গেলেও চিহ্নিত করা হয়েছে প্রধানত দুটি কারণকে।
১. বংশগত ও পরিবেশগত অ্যালার্জির উপাদান
২. শ্বাসনালির অতিসংবেদনশীলতা

বাংলাদেশে হাঁপানিতে আক্রান্তের প্রায় ৪০ শতাংশই শিশু। জিনগত কারণ ছাড়াও দেশে বিভিন্ন দূষণের জন্য হাঁপানির প্রকোপ বাড়ছে।

হাঁপানির পরীক্ষা
· রক্তের ইয়সিনোফিল ও সিরাম আইজিইয়ের মাত্রা নির্ণয়
· অ্যালার্জি টেস্ট করা
· শ্বাসকষ্ট নির্ণয়ে বুকের এক্স-রে
· সাধারণত পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের স্পিরোমিট্রি পরীক্ষা

ওষুধপত্র
হাঁপানির নানা ধরনের ওষুধ আছে। চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনমতো ওষুধ ব্যবহার করে রোগী সুস্থ থাকতে পারে। তবে এই রোগে অনেক অপচিকিৎসা হয়। তা থেকে দূরে থাকবেন। এই রোগে সাধারণত দুই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়:
· শ্বাসনালির সংকোচন বন্ধ করার ওষুধ, যেমন ব্রংকোডাইলেটর, সালবিউটামল, থিউফাইলিন, ব্যামবুটারল
· প্রদাহ নিরাময়ের ওষুধ, যেমন কার্টিকোস্টেরয়েড।
এগুলো ইনহেলার, রোটাহেলার, একুহেলার ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

অ্যালার্জির ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি
অ্যালার্জি তৈরি করে এমন দ্রব্য এড়িয়ে চলার পাশাপাশি ভ্যাকসিন নেওয়া হাঁপানির রোগীদের সুস্থ থাকার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি।

সচেতনতা ও প্রতিকার
· ধুলোবালি, ঘরের ঝুল, ধোঁয়া ইত্যাদি অ্যালার্জিকারক বস্তু থেকে শিশুকে দূরে রাখুন।
· ঘরবাড়ি ধুলোবালি থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন।
· ঘরে কার্পেট রাখবেন না।
· বালিশ, তোশক, ম্যাট্রেসে তুলা ব্যবহার না করে স্পঞ্জ ব্যবহার করুন।
· শীতকালে যথাসম্ভব গরম পানিতে শিশুকে গোসল করান।
· ধোঁয়া থেকে শিশুকে দূরে রাখুন।
· যেসব খাবারে অ্যালার্জি হয় সেগুলো খাওয়াবেন না।
· ঠান্ডা খাবার, আইসক্রিম ইত্যাদি খাওয়াবেন না।
· শিশুকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখুন।
· শিশুকে ফুলের রেণু এড়িয়ে চলতে সহায়তা করুন।
· কুকুর-বিড়াল, পশু-পাখি এড়িয়ে চলতে বলুন।
· শিশুকে মাস্ক ব্যবহার করান।

মনে রাখবেন, শিশুদের হাঁপানির মতো অন্যান্য কয়েকটি রোগ আছে। যেমন মৌসুমি অ্যালার্জি, অ্যাসপিরিন সিন্ড্রম, ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণজনিত নিউমোনিয়া, ব্রংকোপালমোনারি ডিসপ্লেসিয়া, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, জন্মগত হৃদ্‌রোগ ইত্যাদি। হাঁপানি প্রথম দিকেই নির্ণয় করে চিকিৎসা করালে আক্রান্ত শিশুকে স্বাভাবিক রাখা সম্ভব। যদি মনে করেন আপনার সন্তানের হাঁপানি হতে পারে, তাহলে শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন।

লেখক: শিশুরোগ ও শিশু হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক পরিচালক, শিশু হাসপাতাল

চেম্বার: ডা. মনজুর’স চাইলড’স কেয়ার সেন্টার, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত