Ajker Patrika

হেপাটাইটিস ছোঁয়াচে নয় চিকিৎসায় ভালো হয়

ডা. মো. ফরহাদুল ইসলাম চৌধুরী
হেপাটাইটিস ছোঁয়াচে নয় চিকিৎসায় ভালো হয়

১৯৬৯ সালে ড. বারুক স্যামুয়েল ব্লুমবার্গ ও তাঁর দল হেপাটাইটিস বি ভাইরাস শনাক্ত করে। পরে এর রোগ নির্ণয় পরীক্ষা উদ্ভাবন এবং টিকা তৈরি করে চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। এই আবিষ্কার স্মরণ করে ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছর ড. বারুক স্যামুয়েল ব্লুমবার্গের জন্মদিন, অর্থাৎ ২৮ জুলাই বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয়।

হেপাটাইটিস বি ও সির কারণে প্রতিবছর ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। এই হার এইচআইভি/ এইডস এবং ম্যালেরিয়ার চেয়ে বেশি। বাংলাদেশে প্রায় ৬ শতাংশ 
বি এবং প্রায় ১ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত; অর্থাৎ প্রায় এক কোটি মানুষ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত। প্রতিবছর অন্তত ২৫ হাজার মানুষ মারা যায় এই ভাইরাসে সংক্রমণের কারণে। বাংলাদেশে প্রায় ৮৫ শতাংশ লিভার ক্যানসার হয় হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসের যেকোনো একটির কারণে। অথচ আক্রান্ত রোগীর প্রতি ১০ জনের ৯ জনই জানে না যে তারা হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত।

এ বছর হেপাটাইটিস দিবসের প্রতিপাদ্য ‘হেপাটাইটিস, আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা নয়’। এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে হেপাটাইটিস পরীক্ষা করুন, প্রয়োজনে এর প্রতিষেধক ও চিকিৎসা নিন।

হেপাটাইটিস বলতে লিভারে প্রদাহজনিত জটিলতাকে বোঝায়। ভাইরাল হেপাটাইটিস হলো ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট লিভারের প্রদাহ। হেপাটাইটিসের ভাইরাস 
পাঁচ ধরনের—যেমন হেপাটাইটিস

এ, বি, সি, ডি এবং ই। হেপাটাইটিস বি ও সি হচ্ছে সবচেয়ে মারাত্মক। এই দুই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের বেশির ভাগই লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনো শারীরিক সমস্যা বা লক্ষণ অনুভব করে না। তবে অনেক সময় এক বা একাধিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

লক্ষণ

  • জন্ডিসের লক্ষণ প্রকাশ, অর্থাৎ চোখের সাদা অংশ এবং পুরো শরীর হলুদ হয়।
  • কখনো কখনো পেটের ডান পাশের ওপরের দিকে ব্যথা হয় এবং দুর্বলতা বা ক্লান্তিবোধ হয়। 
  • ফ্লুর মতো জ্বর বা জ্বর জ্বর ভাব হয়। 
  • বমি বা বমি ভাব কিংবা ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে।
  • শরীর ও পেশিতে ব্যথা হয়।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়।

হেপাটাইটিস কীভাবে ছড়ায়

  • হেপাটাইটিস এ ও ই মূলত দূষিত খাবার খাওয়া বা দূষিত পানি পানের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপদ পানির অভাব এবং স্যানিটেশন স্বল্পতার সঙ্গে অভাবগ্রস্ত দেশগুলোতে প্রায়ই এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
  • হেপাটাইটিস বি সংক্রামিত ব্যক্তির রক্ত বা শরীরের অন্যান্য তরলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যেমন এটি প্রসবের সময় মা থেকে সন্তানে ছড়িয়ে যেতে পারে অথবা রেজার কিংবা টুথব্রাশ ভাগাভাগির মাধ্যমে, অরক্ষিত যৌন মিলন কিংবা ইনজেকশনের সুচ ও সিরিঞ্জ ভাগাভাগির মাধ্যমেও ছড়িয়ে যায়। 
  • হেপাটাইটিস সি রক্ত থেকে রক্তের যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

হেপাটাইটিস প্রতিরোধের উপায়

  • হেপাটাইটিস এ ও ই-এর সংক্রমণ রুখতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, নিরাপদ খাবার, খাওয়ার আগে হাত ধোয়া নিশ্চিত করতে হবে।
  • রক্তদান ও গ্রহণের আগে রক্তদাতার হেপাটাইটিস বি ও সি পরীক্ষা করে নিতে হবে।
  • একই ইনজেকশনের সুচ একাধিক ব্যক্তির ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • চিকিৎসা বা সার্জারির সময় জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
  • অন্যের ব্যবহৃত ব্রাশ, শেভিং রেজার, কান বা নাক ছিদ্রকরণের সুচ ব্যবহার করা যাবে না।
  • নিরাপদ যৌন চর্চা করতে হবে। 
  • নবজাতকদের জন্মের পরপরই হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন দিতে হবে।
  • লিভারের পক্ষে ক্ষতিকারক বস্তু, যেমন অ্যালকোহল বা ধূমপান বর্জন করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, হেপাটাইটিস ছোঁয়াচে নয়। হেপাটাইটিস বি ও সি চিকিৎসাযোগ্য এবং চিকিৎসায় অনেকটাই নিরাময়যোগ্য। সাম্প্রতিক সময়ে আবিষ্কৃত কার্যকর নতুন নতুন ওষুধ বাজারে সহজলভ্য হওয়ায় চিকিৎসার মাধ্যমে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে নিরাময়যোগ্য।

লেখক: পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞ, আলোক হেলথকেয়ার লি. মিরপুর ১০, ঢাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাসের হার ৬৬.৫৭ শতাংশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৩৪
এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাসের হার ৬৬.৫৭ শতাংশ

দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজে ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস) ও ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর ৯১ দশমিক ২৫।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে এ ফলাফল স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর প্রকাশ করে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভর্তি পরীক্ষায় পাস করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৮১ হাজার ৬৪২ জন। তাঁদের মধ্যে পুরুষ পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ১২৮ জন এবং নারী পরীক্ষার্থী ৫০ হাজার ৫১৪ জন। ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এবং এসএসসি বা সমমান ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ হতে নম্বর যোগ করে অর্জিত স্কোরের ভিত্তিতে মেধা ও পছন্দক্রম অনুযায়ী ৫ হাজার ৬৪৫ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, আটটি মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটসমূহের ৫ হাজার ৬৪৫টি আসনের জন্য নির্বাচিত নারী পরীক্ষার্থী ৩ হাজার ৬০৩ জন ও পুরুষ পরীক্ষার্থী ২ হাজার ৪২ জন।

গত শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত দেশের ১৭টি কেন্দ্র ও ৪৯টি ভেন্যুতে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা ৫ হাজার ৬৪৫টি; যার মধ্যে এমবিবিএসের ৫ হাজার ১০০ ও বিডিএসের ৫৪৫টি।

বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা ৭ হাজার ৩৬১টি; যার মধ্যে এমবিসিএসের ৬ হাজার ১ ও বিডিএসের ১ হাজার ৩৬০টি। মোট ১৩ হাজার ৬টি আসনের বিপরীতে এ বছর মোট আবেদনকারী ১ লাখ ২২ হাজার ৬৩২ জন। ভর্তি পরীক্ষায় ১ লাখ ২০ হাজার ৪৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শীতে যেসব খাবার মন শান্ত রাখবে

মো. ইকবাল হোসেন
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫২
শীতে যেসব খাবার মন শান্ত রাখবে

ডিসেম্বর মানেই হাড়কাঁপানো শীত। আর শীত মানেই খাবারের উৎসব। খেজুরের রস, পিঠা পায়েসের কমতি হয় না এ ঋতুতে। কনকনে ঠান্ডার বিপক্ষে যুদ্ধে আমাদের প্রধান হাতিয়ার খাবার। তবে সঠিক খাবার বাছাই করা না গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

মানুষের শরীরের গঠন অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। পৃথিবীর বেশির ভাগ প্রাণীর চেয়ে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য আলাদা পুষ্টির প্রয়োজন হয়। যেমন চোখের যত্নে ভিটামিন এ, ত্বকের যত্নে ভিটামিন বি, হাড়ের যত্নে ভিটামিন ডি ইত্যাদি। এসব চাহিদা পূরণ করে খাবার খেলে শরীরে সুখের হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং আমাদের সুখানুভূতি হয়, মন শান্ত থাকে।

ডোপামিন হরমোনের জন্য খাবার

মন ভালো রাখার অন্যতম হরমোন ডোপামিন। এটি নিঃসরণে খাবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আমাদের অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা যত বাড়বে, ডোপামিনের নিঃসরণও তত বাড়বে। তাই অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে গুড ফ্যাট বা ভালো চর্বিসমৃদ্ধ, গাঁজানো এবং আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

সে ক্ষেত্রে চমৎকার খাবার হতে পারে শীতকালীন বিভিন্ন শাকসবজি। শিমের বিচি, মটরশুঁটি, বরবটিসহ অন্যান্য শাকসবজি ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে চমৎকার কাজ করে। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছ, মাছের তেল, অলিভ অয়েল, টক দই ইত্যাদি খাবারও পর্যাপ্ত খেতে হবে। আঁশের উৎস হিসেবে লালশাক, পালংশাক, সবুজ শাক খেতে হবে। ভাজাপোড়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং ডুবোতেলে ভাজা খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

সেরোটোনিন হরমোনের জন্য খাবার

আমাদের মন ভালো রাখার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন হচ্ছে সেরোটোনিন। ৯০ শতাংশ সেরোটোনিন উৎপন্ন হয় অন্ত্রের এন্টেরোক্রমাফিন কোষের এন্টেরিক নার্ভাস সিস্টেম থেকে। এ জন্য অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখা বেশি জরুরি। অন্ত্রের পেশি নড়াচড়ায় সেরোটোনিন সাহায্য করে। মাত্র ১ শতাংশ সেরোটোনিন মস্তিষ্কে নিঃসৃত হয়। এই ১ শতাংশ সেরোটোনিন মুড, ঘুম, স্মৃতি, ক্ষুধা, মন ভালো থাকা ইত্যাদির ওপর প্রভাব বিস্তার করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন এবং আঁশসমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন বি-১২ এবং ভিটামিন ডি সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়ায়। খাবারের পাশাপাশি রাতে ভালো ঘুম সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। সে ক্ষেত্রে পরিমিত রেডমিট, ব্রকলি, বাঁধাকপি, শিম, গাজরসহ সব ধরনের শীতকালীন সবজি এবং শীতের মিষ্টি রোদ দারুণ কাজ করে।

এ ছাড়া অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণসমৃদ্ধ খাবার, যেমন দারুচিনি, লবঙ্গ, হলুদ, ফ্ল্যাক্স সিড, চিয়া সিড খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে।

এন্ডোরফিন হরমোনের জন্য খাবার

শীতে শরীরে ব্যথার প্রকোপ কিছুটা হলেও বেড়ে যায়। তবে এন্ডোরফিন নামক হরমোন প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা উপশম করে। শারীরিক বা মানসিকভাবে আহত হলে এন্ডোরফিন সক্রিয় হয়ে আমাদের ব্যথা নিরাময় করে। অতিরিক্ত ওজন, বিষণ্নতা, উচ্চ রক্তচাপ এন্ডোরফিনের নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। তবে কিছু খাবার আছে; যেগুলো খেলে এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবারগুলো শরীরে ভিটামিন সি-এর চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এন্ডোরফিন নিঃসরণে সহযোগিতা করে। তাই শীতে মন ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পাতিলেবু, মোসাম্বি, পেয়ারা, কলা, জাম্বুরা ও কমলা খেতে হবে।

এর পাশাপাশি টমেটো, কাঁচা মরিচ, ক্যাপসিকাম ও পালংশাক শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি-এর জোগান দিতে পারে; সঙ্গে মেটায় আঁশ, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতিও।

এ ছাড়া শীতকালীন প্রায় সব শাকসবজি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর এবং ক্যানসার প্রতিরোধী গুণসমৃদ্ধ। এগুলো যদি নিয়মিত খাওয়া যায়, তাহলে শরীরে বাড়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। শীতকালীন পালংশাক, গাজর, টমেটো, বিটরুট, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি হয়ে উঠতে পারে সুস্থ থাকার অন্যতম হাতিয়ার। শীতকালীন সবজি ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দিতে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে অত্যন্ত উপযোগী। তাই শীতকালে সুস্থতার অন্যতম চাবিকাঠি হতে পারে এসব সবজি।

আমাদের শরীরের অবহেলিত অঙ্গ ক্ষুদ্রান্ত্র। আমরা বিভিন্ন রকমের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাই। সেসবের প্রভাব পড়ে ক্ষুদ্রান্ত্রের ওপর। এসব অস্বাস্থ্যকর খাবারের ফলে আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমতে থাকে।

ফলে গ্যাসের সমস্যা, ফ্যাটি লিভার, কোলেস্টেরল, কোষ্ঠকাঠিন্য বা কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। আবার বিভিন্ন ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও কমে যায় এসব ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা। তাই সুস্থ থাকতে এবং মন ভালো রাখতে শীতকাল হতে পারে আপনার জীবনের সেরা সময়।

আরও যা মনে রাখবেন

খাবার খাওয়ার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে—

  • গ্যাস্ট্রিকসহ অন্যান্য ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না।
  • লাল আটা এবং আঁশসমৃদ্ধ চালের ভাত খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
  • ফার্মেন্টেড ফুড; যেমন টক দই বা পান্তা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
  • প্রতিদিন এক বেলা ৩০-৪০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস বা ব্যায়াম করতে হবে।
  • সপ্তাহে অন্তত দুই দিন সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
  • অন্তত প্রতি ১৫ দিনে এক দিন কাছাকাছি দূরত্বে ঘুরতে যেতে হবে।
  • রাতে কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।

পুষ্টিবিদ ও জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুরুষ বন্ধ্যত্ব: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

ডা. অবন্তি ঘোষ
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চিকিৎসাবিজ্ঞানে সব বন্ধ্যত্বের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের জন্য পুরুষের সমস্যা দায়ী। এ ছাড়া পুরুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে গেলে, শুক্রাণুর গতি কম থাকলে কিংবা একেবারেই শুক্রাণু না পাওয়া গেলে এবং স্বামী-স্ত্রী নিয়মিত সহবাসের পরও যদি এক বছরের মধ্যে গর্ভধারণ না হয়, তাহলে সেটিকে বলা হয় পুরুষ বন্ধ্যত্ব।

জীবনযাপন ও অভ্যাসের কারণ

  • নিয়মিত ধূমপান
  • অ্যালকোহল ও অন্য নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ
  • দীর্ঘ সময় বসে থাকা অথবা কম নড়াচড়া করা
  • অতিরিক্ত ওজন
  • অনিয়মিত ঘুম
  • মানসিক চাপ

শরীরের ভেতরের হরমোন ও শারীরবৃত্তীয় কারণ

  • টেস্টোস্টেরন হরমোনের সমস্যা
  • থাইরয়েড হরমোনের অস্বাভাবিকতা
  • প্রোল্যাকটিন হরমোনের বৃদ্ধি
  • জিনগত সমস্যা

সংক্রমণ ও শারীরিক রোগ

  • ক্ল্যামাইডিয়া বা গনোরিয়া সংক্রমণ
  • অণ্ডকোষের টিউমার
  • ভেরিকোসিল
  • মামস-পরবর্তী অণ্ডকোষের প্রদাহ
  • শুক্রনালির ব্লকেজ

পরিবেশগত কারণ

  • যাঁদের দীর্ঘ সময় গরম পরিবেশে কাজ করতে হয়
  • যাঁরা নিয়মিত গরম পানিতে গোসল করেন

পুরুষ বন্ধ্যত্ব যেভাবে নির্ণয়

বীর্য পরীক্ষার পর শুক্রাণুর সংখ্যা, গতি, আকৃতি, পরিমাণ ইত্যাদি

দেখা হয়।

  • অন্তত তিন দিন সহবাস বন্ধ রেখে নমুনা দিতে হয়
  • প্রথম পরীক্ষার রিপোর্ট খারাপ হলে এক মাস পর আবার পরীক্ষা করা হয়
  • দ্বিতীয় পরীক্ষাও স্বাভাবিক না হলে অণ্ডকোষের আলট্রাসনোগ্রাম এবং হরমোন পরীক্ষা করা হয় এসব পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় সমস্যা কোথায়, কতটা এবং কোন ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন।

চিকিৎসা

চিকিৎসা নির্ভর করে সমস্যা কেমন এবং কোন স্তরে রয়েছে, তার ওপর। সাধারণভাবে চিকিৎসা কয়েকটি ধাপে করা হয়।

জীবনযাপনের পরিবর্তন

ওষুধ ও পুষ্টিগুণ

শুক্রাণুর সংখ্যা ও গতি উন্নত করতে কিছু পুষ্টি উপাদান এবং ভিটামিন দেওয়া হয়, যেমন:

ওষুধ শুরুর পর রোগীকে তিন মাস পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। কারণ, নতুন শুক্রাণু তৈরিতে প্রায় ৭৫ দিন লাগে।

স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণের চেষ্টা

ওষুধে উন্নতি হলে স্বামী-স্ত্রী স্বাভাবিক পদ্ধতিতে গর্ভধারণের চেষ্টা করতে পারেন। প্রয়োজনে স্ত্রীকে ডিম্বাণু উৎপাদন বাড়ানোর ওষুধ দেওয়া হয়।

বিশেষ চিকিৎসা

  • যদি শুক্রাণুর সংখ্যা বা গতি মাঝারি কম হয়, তাহলে আইইউআই (গর্ভাশয়ে শুক্রাণু প্রবেশ করানো) করা যায়।
  • সংখ্যা খুব কম হলে বা গতি খুব খারাপ হলে আইসিএসআই (শুক্রাণু সরাসরি ডিম্বাণুর মধ্যে প্রবেশ করানো) করা হয়।

অস্ত্রোপচার

ভেরিকোসিল কিংবা শুক্রনালির ব্লকেজ থাকলে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।

অ্যাজোস্পার্মিয়া হলে করণীয়

যাঁদের বীর্যে একেবারেই শুক্রাণু পাওয়া যায় না, যাকে অ্যাজোস্পার্মিয়া বলা হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে অণ্ডকোষ থেকে সরাসরি শুক্রাণু সংগ্রহ করে আইসিএসআই করাই সবচেয়ে কার্যকর।

গাইনি, প্রসূতি ও বন্ধ্যাত্ব রোগ বিশেষজ্ঞ, আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শীতকালীন নানা রোগ থেকে মুক্ত থাকবেন যেভাবে

ডা. কাকলী হালদার
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ২৪
শীতকালীন নানা রোগ থেকে মুক্ত থাকবেন যেভাবে

শীতকাল মানেই শুষ্ক, ঠান্ডা আবহাওয়া এবং তার সঙ্গে রোগজীবাণুর সহজ সংক্রমণ। এ সময় প্রধানত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত শ্বাসতন্ত্রের রোগগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কিছুটা দুর্বল হয় এবং বদ্ধ জায়গায় মানুষ কাছাকাছি থাকায় রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

ভাইরাসজনিত সংক্রমণ

সাধারণ সর্দি-কাশি: রাইনোভাইরাস দিয়ে সংক্রমণ হলে হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া এবং হালকা গলাব্যথা পর্যন্ত হতে পারে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা: ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে সাধারণ সর্দির চেয়ে গুরুতর সমস্যা দেখা যায়। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ জ্বর, শরীর ও পেশিতে প্রচণ্ড ব্যথা, ক্লান্তি এবং গাঢ় কাশি।

রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস বা আরএসভি: এটি শিশুদের মধ্যে ব্রঙ্কিওলাইটিসের মতো গুরুতর শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায়।

ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ

এ ধরনের রোগ নিউমোনিয়া অথবা স্ট্রেপটোকক্কাসজনিত গলাব্যথার মতো কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের দিকে মোড় নিতে পারে, যা অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

রোগ প্রতিরোধের উপায়

সংক্রমণ এড়াতে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে কিছু সহজ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন—

ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা: নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে খাওয়ার আগে, টয়লেট ব্যবহারের পরে, হাঁচি-কাশি দেওয়ার পরে, অপরিচ্ছন্ন কিছু স্পর্শ করার পর হাত ধোয়া জরুরি। হাঁচি-কাশির সময় রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করা এবং ব্যবহৃত টিস্যু নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা উচিত।

পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং পানি পান করা: পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘সি’সমৃদ্ধ ফল; যেমন লেবু, কমলা, আমলকী ইত্যাদি এবং শাকসবজি খেয়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে হবে। পানিশূন্যতা এড়াতে হালকা গরম পানি পান করুন।

উষ্ণতা বজায় রাখা: কান, মাথা ও গলা ঢেকে গরম জামাকাপড় পরুন। ঘর উষ্ণ রাখুন এবং সরাসরি ঠান্ডা বাতাস এড়িয়ে চলুন।

ভিড় এড়িয়ে চলা: অসুস্থতা চলাকালে যেকোনো ভিড় অথবা জনসমাগমপূর্ণ স্থানে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

টিকা নেওয়া: শিশু, বয়স্ক বা দীর্ঘমেয়াদি রোগীদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়ার টিকা নিতে পারেন।

সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত