Ajker Patrika

জ্যানতলেজমা: রোগ ত্বকের, বিপদ পুরো শরীরের

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল হাই
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২: ১৪
জ্যানতলেজমা: রোগ ত্বকের, বিপদ পুরো শরীরের

অনেকেরই চোখের পাতার ভেতরের কোণের দিকে ত্বকের ওপর হলুদ পিণ্ড দেখা যায়। এটি যেকোনো বয়সেই হতে পারে। তবে মধ্য বয়সে, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকে জ্বালাপোড়া বা চুলকানিজাতীয় কোনো সমস্যা না থাকলেও মুখের সৌন্দর্যের জন্য এটি যথেষ্ট নেতিবাচক বিষয়।

রোগের কারণ
জ্যানতলেজমা রোগের সঠিক কারণ জানা না গেলেও এটা জানা যায়, অর্ধেকের বেশি রোগী রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল বহন করে। কারও কারও পরিবারে জেনেটিকভাবেই রক্তে উচ্চমাত্রার ট্রাইগ্লিসারাইড থাকে অথবা লাইপেজ নামের একটি এনজাইমের অভাব থাকে। এসব পরিবারে সচরাচর এ রকম রোগী দেখা যায়। কিছু ওষুধ, যেমন স্টেরয়েড সেবনের পর এ রোগের উপস্থিতি চোখে পড়ে। থাইরয়েড রোগ বা ডায়াবেটিসের রোগীদের মধ্যেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।

অন্য রোগের আশঙ্কা
জ্যানতলেজমা রোগীদের হৃদ্‌রোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেশি। কিছু রোগ যেমন—গ্যাস্ট্রিক এডিনোকারসিনোমাতে প্রাথমিক অবস্থায় ত্বকের এ রোগ দেখা দিতে পারে। তাই এ রোগ শুধু সৌন্দর্যের জন্য বিপৎসংকেত নয়; বরং জীবননাশী কিছু রোগেরও বিপৎসংকেত।

জ্যানতলেজমায় আক্রান্ত ত্বক আঙুল দিয়ে স্পর্শ করলে নরম রাবারের মতো বস্তু অনুভূত হয়। মূলত এই পিণ্ড বা চাকাটি কোলেস্টেরল দিয়ে তৈরি হয়। এর আশপাশের রক্তনালিগুলো পরীক্ষা করলে নালির গায়ে কোলেস্টেরল জমা হয়ে প্লাক তৈরি হওয়ার চিহ্ন দেখা যায়। তাই বলা যায়, যাদের এ রোগ রয়েছে, তাদের শরীরের অন্য অংশের রক্তনালিগুলোও একইভাবে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জ্যানতলেজমার চিকিৎসা
জ্যানতলেজমা রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজন সতর্কতা। এর জন্য প্রথমেই রক্তে লিপিডের মাত্রা পরিমাপ করা প্রয়োজন। আক্রান্ত ত্বকের চিকিৎসা সাধারণত সৌন্দর্যবর্ধনের কারণেই করা হয়। হলুদ পিণ্ডটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পায় ধীরে ধীরে। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে ত্বকের অন্যান্য অংশেও এর বিস্তৃতি লক্ষ করা যায়।

অনেকভাবেই চিকিৎসা করা যায় এ রোগের। কেমিক্যাল পিলিং একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। ক্রায়োথেরাপির মাধ্যমে আক্রান্ত অংশের বেশির ভাগ দূর করা যায়। ইদানীং লেজার থেরাপিও ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে মনে রাখতে হবে, সব ধরনের চিকিৎসায় বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। চিকিৎসার পর অনেকেরই ত্বকে দৃষ্টিকটুভাবে স্কার তৈরি হয়। আবার অনেকের আক্রান্ত ত্বক সাদা বা কালো রং ধারণ করে। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসার পরও এই রোগ ফিরে আসে।

যা হোক, এই রোগের চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সার্বিক সচেতনতা। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে হবে, খেতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এবং পরিমিত ব্যায়াম করতে হবে। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।

লেখক: অধ্যাপক, চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগবিশেষজ্ঞ, জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত