Ajker Patrika

স্নায়ু রোগের চিকিৎসায় ‘দেশে প্রথম’ জিন থেরাপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২২, ১৬: ৩৪
স্নায়ু রোগের চিকিৎসায় ‘দেশে প্রথম’ জিন থেরাপি

যে বয়সে আট-দশটা শিশু হাঁটতে পারে, সে বয়সে রায়হানকে বসিয়ে দিতে হয়। ২২ মাস বয়সী এই শিশু ওঠাবসা করতে পারে না। চিকিৎসকদের ভাষায়, স্পাইনাল মাসক্যুলার অ্যাট্রফি (এসএমএ) নামে স্নায়ুরোগে ভুগছে মানিকগঞ্জ সদরের সৌদিপ্রবাসী বাবার সন্তান রায়হান।

তারা বলছেন, বিরল এই জটিল রোগ জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। এ ধরনের রোগীদের স্বাভাবিক বুদ্ধি থাকলেও ঘাড় শক্ত হয় না, শরীর তেমন নড়াচড়া করাতে পারে না। তাঁরা বসতে বা দাঁড়াতে পারে না; ঘন ঘন শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। এতে করে শিশুর মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায়, এক পর্যায়ে রোগীর মৃত্যু হয়। 

জাতীয় নিউরো সায়েন্সেস ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও শিশু নিউরো বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ মনির হোসাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিরল এই রোগে আমাদের দেশে বহু শিশু আক্রান্ত। তবে চিকিৎসা নিয়ে নানা জটিলতা ছিল। যেহেতু এটা জিনগত রোগ, তাই চিকিৎসাটা ভিন্ন। কোনো শিশু এসএমএ রোগে আক্রান্ত কিনা তা নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা ও পর্যালোচনা করতে হয়। সে অনুযায়ী রায়হানকে আমরা সাসপেক্টেটেড হিসেবে ধরি। গতকাল সোমবার তার জিন থেরাপি দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত সে সুস্থ আছে। যেহেতু চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, তাই প্রথম রোগীকে এই চিকিৎসা দিতে পেরে আমরা গর্বিত।’

এই হাসপাতালের আরেক চিকিৎসক ডা. গালিব জানান, বিশ্বে ২ হাজার ৩০০ জন রোগীকে জিন থেরাপি দেওয়া হয়েছে। এদের অধিকাংশ আমেরিকার। বাংলাদেশে এটাই প্রথম। জন্মের পর থেকে শিশুরা ঠিকমতো নড়াচড়া করছে কিনা, ঘাড় শক্ত কিনা বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। বাবা-মায়ের মাধ্যমে না হলেও প্রথম সন্তান এ রোগের শিকার হলে পরবর্তী সন্তানেরা ঝুঁকিতে থাকে। 

সম্প্রতি বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিস এই স্নায়ুরোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য জোলগেনসমা (zolgensma) নামের এই জিন থেরাপি তৈরি করেছে। এটি কেবল দুই বছরের শিশুদের ওপর প্রয়োগ করা যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন এই ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে। একটি মাত্র ডোজের এই থেরাপির ব্যয় প্রায় ২২ কোটি টাকা। নোভার্টিস ম্যানেজড এক্সেস প্রোগ্রামের আওতায় বিনামূল্যে এই থেরাপি দিচ্ছে নোভার্টিস।

বাংলাদেশে শিশু স্নায়ু রোগীর সঠিক সংখ্যা কত তার সঠিক তথ্য নেই চিকিৎসকদের কাছে। রাজধানীর জাতীয় নিউরো সায়েন্সেস ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে বর্তমানে ৫০ জন শিশু চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিবছর নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের বহির্বিভাগে অন্তত ৩০ জন স্নায়ুরোগের শিশু আসে।

এর বাইরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালেও এই ধরনের শিশুরা চিকিৎসার জন্য আসে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত