Ajker Patrika

সাপ মেরে ফেললে সঙ্গীটি কি প্রতিশোধ নিতে ফিরে আসে

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪: ৫৯
Thumbnail image

সাপ নিয়ে মানুষের ভীতি স্বভাবজাত। মানুষের এ ভয় আরও পাকাপোক্ত হয়েছে সমাজে বিদ্যমান নানা সংস্কার ও আচার থেকে। এমনই এক বিশ্বাস— কেউ সাপ হত্যা করলে বা মারলে অন্য সঙ্গী এসে তার প্রতিশোধ নেয়। আসলেই কি তাই? সাপ কি জোড় বেঁধে চলে, সঙ্গী হত্যার প্রতিশোধ নেয়? 

যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে ২০০৮ সালে প্রকাশিত ইলেকট্রনিক জার্নাল অব ইন্ট্রিগ্রেটিভ বায়োসায়েন্সে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়। এই ধারণার জন্ম সম্ভবত কোনো এলাকায় একাধিক সাপের উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে। তবে সত্য হলো, সাপ জোড়ায় জোড়ায় ভ্রমণ করে না এবং অবশ্যই অন্য সাপের খুন হওয়ার প্রতিশোধ নেয় না। প্রজনন ঋতুতে সঙ্গমের কারণে বা কেবল উচ্চমানের বাসস্থান ও খাদ্যের নিশ্চয়তা পাওয়া গেলেই একসঙ্গে অনেক সাপ পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিডসন কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের ওয়েবসাইটে বলা হয়, এটি একটি প্রচলিত ধারণা যে, সাপ জোড় বেঁধে চলাচল করে এবং একজনকে হত্যা করা হলে তার সঙ্গী প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে। সাপ সামাজিক প্রাণী নয়, এদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন নেই। ফলে একটিকে হত্যা করলে বাকিরা প্রতিশোধপরায়ন হয়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনাও নেই। 

মানুষের মাঝে প্রচলিত এই ধারণার সম্ভাব্য একটি ব্যাখ্যা হতে পারে: উপযুক্ত বাসস্থান পেলে ছোট একটি এলাকায় একই প্রজাতির বেশ কয়েকটি সাপের দেখা পাওয়া যায়। আরেকটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যেতে পারে সাপের সাধারণ প্রজনন আচরণের ওপর ভিত্তি করে। প্রজননের সময় একটি পুরুষ সাপ একটি স্ত্রী সাপকে ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করতে পারে।

সাপ কি জোড় বেঁধে চলাচল করে? ছবি: সংগৃহীতঅস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম সরকারি জাদুঘর মিউজিয়ামস ভিক্টোরিয়ার ওয়েবসাইটে সাপ সম্পর্কে ৮টি প্রচলিত ধারণা বা মিথের স্বরূপ উন্মোচন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে উল্লিখিত প্রচলিত ধারণাগুলোর একটি হলো— সাপ জোড় বেঁধে চলাচল করে। প্রকৃতপক্ষে কেবল প্রজননের সময়ই দুটি সাপকে একইস্থানে দেখা যায়। অন্যথায় বড় সাপ সাধারণত ছোট সাপকে মেরে খেয়ে ফেলে।  

সাপের সুরক্ষা ও সাপ সম্পর্কিত সচেতনতা নিয়ে কাজ করে আফ্রিকার একটি প্রতিষ্ঠান আফ্রিকান স্নেকবাইট ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠানটি এ ধারণাটি প্রসঙ্গে জানায়, সাপ একাকী জীবনযাপন করে। তারা জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে বেড়ায় না বা এক সঙ্গে শিকার করে না। মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রজাতির সাপকে একই স্থানে বিচরণ করতে দেখা যায়। এটি সাধারণত একটি ভালো বাসস্থানের জন্য সাপদের মধ্যে প্রতিযোগিতা। কেবল প্রজনন ঋতুতেই একাধিক সাপকে এক সঙ্গে দেখা যেতে পারে।

প্রাণিবিষয়ক ওয়েবসাইট ফৌনা ফ্যাক্ট ধারণাটি প্রসঙ্গে এক প্রতিবেদনে জানায়, সাপ স্বভাবগতভাবে একা। এরা একে অপরকে ভয় পায়। এমনকি একই প্রজাতির সাপও সহাবস্থান করে না; কারণ তারা একে অপরকে খেয়ে ফেলতে পারে। সাধারণত শুধু প্রজননের সময় তারা একত্রিত হয়। পর্যাপ্ত জায়গা এবং খাদ্যের সরবরাহ থাকলেই এক জায়গায় অনেকগুলো সাপের দেখা পাওয়া যেতে পারে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাপ দল বেঁধে শিকার ও শীতনিদ্রায় যেতে পারে। 

ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর রেডিও অ্যাস্ট্রফিজিক্স–টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ সাপ নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদনে জানায়, সাপ জোড় বেঁধে চলাচল করে এবং এর কোনো একটিকে হত্যা করা হলে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে— এই ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। সাপের মস্তিষ্ক স্মৃতি ধরে রাখতে সক্ষম নয়। কোনো সাপ যখন হত্যার শিকার হয়, তখন সেটি এক ধরনের গন্ধ নিঃসরণ করে। এটি সম্ভবত, এই গন্ধে কাছাকাছি থাকা অন্য কোনো সাপ আকৃষ্ট হয়ে সেখানে চলে আসে।

বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস প্রচলিত এই ধারণার জন্য বলিউড চলচ্চিত্রকে দায়ী করেছে। তারা বলে, সাপের মধ্যে বন্ধুত্বের অনুভূতি নেই বা সাপ সারা জীবনের জন্য জুটিবদ্ধ হয় না। এ ছাড়া সাপ প্রতিশোধপরায়ণ প্রাণীও নয়। সাপের এর জন্য প্রয়োজনীয় স্মৃতি এবং বুদ্ধিমত্তাও নেই।

সিদ্ধান্ত 
ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, সাপ মূলত একাকী জীবনযাপন করে। এরা জীবনযাপনের জন্য সঙ্গী বেছে নেয় না বা এক সঙ্গে শিকারও করে না। কেবল প্রজনন মৌসুমে অথবা খাদ্য ও উপযুক্ত বাসস্থান পেতে এক স্থানে একাধিক সাপ থাকতে পারে। সাপ জুটি বেঁধে থাকে বা একটি হত্যা করলে সঙ্গী প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে— এ ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত