Ajker Patrika

সরাইলের বরইছড়া কমিউনিটি ক্লিনিক

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ০৭
সরাইলের বরইছড়া কমিউনিটি ক্লিনিক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের নতুন ভবন উদ্বোধনের পর থেকে নানা ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। আট মাস আগে উপজেলার বরইছড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের নতুন ভবনের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে বৃষ্টি এলে ছাদ চুইয়ে পড়ছে পানি। এতে ৪টি কক্ষের আসবাব ভিজে নষ্ট হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ। এ ছাড়া ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। পুরোনো মোটর বসানোয় সেটিও নষ্ট হয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভবন নির্মাণে নিম্নমানের কাজের কারণেই এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিকার চেয়ে ওই ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মেহেরুন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নোমান মিয়ার কাছে লিখিত অভিযোগ করেও ৮ মাস ধরে কোনো সাড়া পাচ্ছেন না।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বরইছড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের আওতায় ওই ক্লিনিকের একতলা ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ২৯ লাখ ৭৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে হুসাইন বিল্ডার্স নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ঠিকাদার ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ভবন নির্মাণকাজ শেষ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করে। অথচ হস্তান্তরের পরদিন থেকেই ছাদ চুইয়ে বৃষ্টির পানি পড়ায় নতুন কক্ষগুলো যেন পুরোনো কক্ষে রূপ নিয়েছে। ছাদ হয়ে গেছে ফ্যাকাশে।

ওই ক্লিনিকের জমিদাতা বরইছড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন ও ক্লিনিকের সভাপতি এনামুল হক অভিযোগ করে বলেন, ভবন নির্মাণকাজে রড ও ঢালাইয়ে সিমেন্টের পরিমাণ অনেক কম দেওয়া হয়েছে। ছাদ ঢালাইয়ে ইটের গুঁড়ামিশ্রিত কংক্রিট ও নিম্নমানের বালু ব্যবহার করায় ছাদ চুইয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে। সরকারি যেকোনো ভবনের।

বরইছড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মেহেরুন বলেন, ‘কন্ট্রাক্টর আমাকে যেদিন চাবি বুঝিয়ে দেন, এরপর দিনই বৃষ্টি হয়। তখনই দেখছি ছাদ চুইয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে। কাজ এত নিম্নমানের হয়েছে, যা প্রকাশ করার মতো না। বৃষ্টি হলে ৪টি রুমে পানি পড়ে ওষুধপত্র ভিজে যাচ্ছে। পুরোনো মোটর বসানোয় সেটিও নষ্ট হয়ে গেছে। পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। রোগীরা পানির অভাবে টয়লেটে যেতে পারে না।’

মেহেরুন আরও বলেন, ‘এ অবস্থায় আমি ভবন নির্মাণে ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বরাবর কয়েক দফা লিখিত অভিযোগ দিই। তিনি বলেছেন ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু ৮ মাসে এর কোনো সুরাহা হয়নি।’

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হুসাইন বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী হুসাইন মিয়া বলেন, ‘ছোটখাটো সমস্যা থাকতেই পারে। এক সপ্তাহের মধ্যে মেরামত করে দেওয়া হবে। আর ছাদের ওপরে কিছু বালু রাখা হয়েছিল। যার কারণে ছাদটি ভিজে রয়েছে। তা ছাড়া আমার ওপর ১ বছরের দায়িত্ব রয়েছে। কোনো সমস্যা হলে আমি দেখবো।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নোমান মিয়া বলেন, ‘সরেজমিন গিয়ে দেখেছি। ছাদ দিয়ে কিছুটা পানি পড়ে। বাথরুমে সমস্যা আছে। অন্যান্য জায়গায়ও কিছু সমস্যা আছে। এ ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কাছে দুবার দরখাস্ত দিয়েছি। তাঁরা বলেছেন ব্যবস্থা নেবেন।’

জেলা স্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার শীল বলেন, ‘কাজের কিছুটা সমস্যা আছে। উপজেলা থেকেও লিখিত অভিযোগ পেয়ে আমি কন্ট্রাক্টরকে বলেছি। একটা রুমে পানি পড়ে। কন্ট্রাক্টর বলেছেন নতুন করে ঢালাই করে দেবেন। তিনটা কমিউনিটি ক্লিনিকের ১০ লাখ টাকা জামানত আছে। ঠিকাদার কাজ না করে দিলে তাঁর জামানতের টাকা তিনি পাবে না। ঠিকাদার কাজ না করলে আমরাই ক্লিনিকের মেরামত করে দেব। ওই ঠিকাদারের লাইসেন্স বাতিলের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত