Ajker Patrika

চুক্তি ভঙ্গকারী চালকল মালিকদের তালিকা হচ্ছে

মো. শফিকুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
চুক্তি ভঙ্গকারী চালকল মালিকদের তালিকা হচ্ছে

চলতি বোরো মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১০টি খাদ্যগুদামে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ৩১ আগস্ট শেষ হয়েছে। তবে এবার অর্জিত হয়নি খাদ্য অধিদপ্তরের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা। এর কারণ হিসেবে ধানের বাজারের সঙ্গে চালের বাজারের মিল নেই বলে দাবি করছেন স্থানীয় মিলমালিকেরা। তবে চালকল মালিকেরা চুক্তি ভঙ্গ করেছে দাবি করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তালিকা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিভাগ।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিভাগ জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১৫১টি সেদ্ধ ও ৮৮টি আতপ হাসকিং চালকল এবং অটোমেটিকে ২৫টি সেদ্ধ ও চারটি আতপ চালকল খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তি করে। এবার জেলা খাদ্য অধিদপ্তর থেকে সরকারি খাদ্যগুদামে ১৪ হাজার ৬৩০ মেট্রিকটন ধান, ৪৩ হাজার ২৮৫ মেট্রিকটন সেদ্ধ চাল ও ৯ হাজার ৮৮৭ মেট্রিকটন আতপ চাল সংগ্রহ করার জন্য বরাদ্দ দেয়।

গত ২৮ এপ্রিল থেকে ধান এবং ৭ মে থেকে চাল সংগ্রহের অভিযান শুরু হয়, যা ৩১ আগস্ট শেষ হয়। তবে এবারও ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এবার ১১ হাজার ৯৭৮ মেট্রিকটন ধান, ৩৮ হাজার ৩১০ মেট্রিকটন সেদ্ধ চাল ও ৯ হাজার ৮৫০ মেট্রিকটন আতপ চাল সংগ্রহ হয়েছে। চালকল মালিকদের কাছ থেকে ২৭ টাকা দরে ধান এবং ৪০ টাকা দরে সেদ্ধ ও ৩৯ টাকা দরে আতপ চাল কেনা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার বিষয়ে সরকারনির্ধারিত দামকে দুষছেন কৃষক ও চালকল মালিকেরা। কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, গুদামে ধানের দাম মাত্র ২৭ টাকা ধরা হয়েছিল; কিন্তু তাঁরা বাইরে প্রতি কেজি ৩০ টাকার বেশি দরে বিক্রি করতে পেরেছেন।

সরাইলে কৃষক মহসিন মিয়া বলেন, ধানের বাজার প্রথমে ভালো থাকলেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় যানবাহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। 
মিলমালিকেরা জানান, খোলাবাজারে মোটা সেদ্ধ চাল প্রতি কেজি ৪২ থেকে ৪৩, আতপ ৪০, আর ধান ৩০ টাকায় বিক্রি হয়। ফলে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে গুদামে ধান-চাল দেওয়া খুবই কঠিন ছিল। তারপরও তাঁরা এবার লোকসানে গুদামে চাল সরবরাহ করেছেন। এদিকে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রাও এবার অর্জিত হয়নি। কারণ বাজারে মোটা ধান প্রতি কেজি ৩০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। ফলে কৃষকও তেমন আগ্রহী ছিলেন না।

এ ছাড়া এবার ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের সময় হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও স্থানীয় চালের বাজারে ভারতীয় আমদানি করা চালের প্রভাব পড়েছিল। ফলে সরকার প্রতি কেজি ধান-চালের যে মূল্যনির্ধারণ করেছিল তার চেয়ে ২-১ টাকা বেশি দামে বাজারে ধান-চাল বিক্রি হয়েছে। তাই মিলমালিকেরা লোকসান দিয়ে খাদ্যগুদামে ধান-চাল দিতে আগ্রহী ছিলেন না। ফলে এবার বরাদ্দ করা শতভাগ চাল মিলে দিতে পারেননি চালকল মালিকেরা।

চালকল ব্যবসায়ী শরিফ উদ্দিন জানান, এবার তাঁরা গুদামে লোকসানে চাল দিয়েছেন। বাজারে ধান ও চালের মূল্যের পার্থক্য ছিল।

চালকল ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও আমদানি চালের প্রভাবে  দর বেড়েছে।

জেলা চাতালকল মালিক সমিতির সভাপতি মো. বাবুল আহম্মেদ বলেন, যেহেতু খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তি করেছেন; তাই তাঁরা এবার লোকসানে গুদামে চাল দিয়েছেন, শুধু লাইসেন্স রক্ষার জন্য।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাকারিয়া মুস্তফা বলেন, যেসব চালকল চুক্তি ভঙ্গ করেছে তাদের তালিকা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত