মাসুদ রানা
আজকের পত্রিকা: চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ জরুরি অবস্থায় পৌঁছেছে বলে আপনি মন্তব্য করেছেন। কেন এ কথা বলছেন?
ডা. মুশতাক হোসেন: একটি দেশে কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে, সেই রোগ কখন কোন অবস্থায় রয়েছে, তার একটি রোগ তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করা হয়। সেই বিবেচনায় বর্তমানে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ‘পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি’ বা জনস্বাস্থ্যের জরুরি অবস্থায় রয়েছে বলা যায়।
মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর সংক্রমণ পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমছে না। হাসপাতালগুলোতে উপচে পড়া ভিড় হলে আমরা তখন এই পরিস্থিতিকে জরুরি অবস্থা বলতে পারি। হাসপাতালগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। আগে থেকে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না নেওয়ায় এখন নিয়ন্ত্রণ করা কিছুটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি উদাহরণ হিসেবে বলি, কোভিডের সময় যখন ১০০-এর ওপর রোগী শনাক্ত হলো, তখনো আমরা বিষয়টাকে গুরুত্ব দিইনি। একই ঘটনা কিন্তু ইতালিতেও ঘটেছিল। আগে থেকে যদি ব্যবস্থা নেওয়া যেত, তাহলে ইতালির পরিস্থিতি অত ভয়াবহ না-ও হতে পারত। সেখানে শত শত মানুষ মুহূর্তের মধ্যে মারা গেছে। তারা কিন্তু মৃত্যু ঠেকাতে পারেনি।
এখন যদি আমরা ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য অপেক্ষা করি, হাত গুটিয়ে বসে থাকি, তাহলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। কোভিড থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের এখনই জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
আজকের পত্রিকা: ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা কি ব্যর্থ হচ্ছি?
ডা. মুশতাক হোসেন: আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়নি। এটা তো চলমান প্রক্রিয়া। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ, সিটি করপোরেশন কাজ করছে। কিন্তু তাদের তৎপরতা যথেষ্ট নয়। পরিকল্পিতভাবে সারা দেশে কাজ করা উচিত। ডেঙ্গু শুধু ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে সীমাবদ্ধ নেই। কাজেই সে ক্ষেত্রে চলমান কাজগুলো সমন্বিতভাবে করা দরকার। এর জন্য আরও রিসোর্স দরকার। একদিকে জনশক্তি, অর্থ এবং যন্ত্রপাতি এসব দরকার। স্বল্পমেয়াদি জরুরি পরিকল্পনা এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী পরিকল্পনা করা দরকার। এগুলো যদি আমরা সমন্বিতভাবে করি, তাহলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের কাজগুলো আরও ভালোভাবে করা সম্ভব হবে।
আজকের পত্রিকা: কয়েক বছর ধরে দুই সিটি করপোরেশন শুধু রাসায়নিক স্প্রে করে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। এতে কি মশা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে?
ডা. মুশতাক হোসেন: আমি উল্টোভাবে যদি বলি, দুই সিটি করপোরেশন রাসায়নিক ব্যবহার না করত, তাহলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াত? কাজেই এটা একটা আপেক্ষিক বিষয়। আমরা আরও ভালো করতে চাই। আর শুধু কেমিক্যাল ছিটিয়ে কিছুই করা যাবে না—এ কথাটি ঠিক নয়। কোথাও যেন পানি জমতে না পারে, তার জন্য আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব জায়গায় মশা জন্ম নেয়, সেই সব স্থান আগে চিহ্নিত করতে হবে। এটা শুধু সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ ডেঙ্গু সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যদি দুই সিটি করপোরেশন বলে, ঢাকা শহরে কোনো মশা নেই। পরের দিনই কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর থেকে মশা ঢাকা শহরে ঢুকে পড়বে। তাই সারা দেশে একসঙ্গে সমন্বিতভাবে মশা ধ্বংসের কাজটা করতে
হবে। তাহলেই সফলতা আসবে।
আজকের পত্রিকা: অধিকাংশ হাসপাতালে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দায় কার?
ডা. মুশতাক হোসেন: শুধু হাসপাতালকেন্দ্রিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। কমিউনিটিভিত্তিক ব্যবস্থা নিতে হবে। কমিউনিটিতেই রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে যেসব স্বাস্থ্য ক্লিনিক আছে, সেগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু যারা বাসায় থেকে মশারির নিচে চিকিৎসা নিতে পারবে না, তাদের সেই সব জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
এ বছর ৮০ শতাংশ রোগীর কোনো ধরনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাদের যদি মশারি ছাড়া রাখা যায়, তাহলে তারা একজন সুস্থ মানুষকে সংক্রামিত করবে। কাজেই এই ৮০ শতাংশ মানুষকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে হবে। পরীক্ষাই তো করা হচ্ছে না। ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডেই ব্যবস্থা করা দরকার। আর যেহেতু গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে, সে জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকে একইভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। বিনা পয়সায় পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ কঠিন সময়ে নিম্ন আয়ের মানুষদের বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গুর চিকিৎসা খরচ। সরকার কেন ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না?
ডা. মুশতাক হোসেন: নিশ্চয়ই সেটা করা দরকার বলে আমি মনে করি। ডেঙ্গুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে সবকিছু কোভিডের মতো করে ফ্রি করে দেওয়া দরকার। এ জন্য তো আমরা বলছি, এই পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে আরও বেশি অর্থ এবং জনবল বরাদ্দ দেওয়া দরকার। শুধু চিকিৎসক দিলে তো হবে না। এই পরিস্থিতিতে অনেক স্বেচ্ছাসেবক দরকার। রোগীদের ডেঙ্গু শনাক্ত করে হাসপাতালে নিয়ে আসা এবং মশা কোথায় জন্ম নেয়, সে বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে শেখাতে হবে। দুই-তিন দিনের প্রশিক্ষণে সেটা শেখানো সম্ভব। এসব কাজ করতে গিয়ে যে টাকা খরচ হবে তার বহুগুণ রিটার্ন আমরা পাব। কারণ রোগীর সংখ্যা যদি কমাতে পারি, তাহলে ওষুধপত্র থেকে অনেক কিছুর টাকা বেঁচে যাবে। আর একজন মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারা তো অমূল্য সম্পদ পাওয়ার মতো বিষয়। তাই এবার কমিউনিটিভিত্তিক উদ্যোগের কোনো বিকল্প দেখছি না।
আজকের পত্রিকা: ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু না হতেই ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। সরকার কি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথার্থ ব্যবস্থা নিতে পেরেছে?
ডা. মুশতাক হোসেন: সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সেই উদ্যোগ ব্যাপক, বিস্তৃত এবং সমন্বিত করা দরকার। ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া শুধু সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য আন্তমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করা দরকার। স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা, ধর্ম, কৃষি মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে সার্বিকভাবে পরিকল্পনা নিতে হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় যেহেতু সারা দেশে কাজ করে, তাদেরও দায়িত্ব দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একজন সিনিয়র মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। তিনি জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয় করবেন। এসব কাজ করার জন্য যত অর্থ লাগবে, তার জোগান দিতে হবে। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টেকনিক্যাল সাপোর্ট নিতে হবে। আমাদের দেশে অনেক অভিজ্ঞ লোক আছেন, তাঁদের সহযোগিতা নিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আপনার পরামর্শগুলো কী?
ডা. মুশতাক হোসেন: প্রথমত, আমাদের জরুরি ভিত্তিতে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য তিন ধাপ মানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও তৃতীয় পর্যায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। ডেঙ্গু রোগীদের মশারির ভেতর রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে কোনোভাবেই মশারির বাইরে রাখা যাবে না। আর কমিউনিটি থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রতিটি পাড়া, মহল্লায় হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিতে হবে। তাঁরা স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মিলে মশা জন্মানোর স্থান চিহ্নিত এবং প্রয়োজনে কীটনাশক স্প্রে করবেন। এভাবে তাঁরা মশা নিয়ন্ত্রণ করবেন। একই সঙ্গে রোগীকে খুঁজে বের করে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। এভাবে আমরা যদি সমন্বিতভাবে এগিয়ে যাই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য, তাহলে কাজটা ভালো হবে, আমরা এ ক্ষেত্রে সফল হব।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
ডা. মুশতাক হোসেন: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা: চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ জরুরি অবস্থায় পৌঁছেছে বলে আপনি মন্তব্য করেছেন। কেন এ কথা বলছেন?
ডা. মুশতাক হোসেন: একটি দেশে কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে, সেই রোগ কখন কোন অবস্থায় রয়েছে, তার একটি রোগ তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করা হয়। সেই বিবেচনায় বর্তমানে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ‘পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি’ বা জনস্বাস্থ্যের জরুরি অবস্থায় রয়েছে বলা যায়।
মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর সংক্রমণ পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমছে না। হাসপাতালগুলোতে উপচে পড়া ভিড় হলে আমরা তখন এই পরিস্থিতিকে জরুরি অবস্থা বলতে পারি। হাসপাতালগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। আগে থেকে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না নেওয়ায় এখন নিয়ন্ত্রণ করা কিছুটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি উদাহরণ হিসেবে বলি, কোভিডের সময় যখন ১০০-এর ওপর রোগী শনাক্ত হলো, তখনো আমরা বিষয়টাকে গুরুত্ব দিইনি। একই ঘটনা কিন্তু ইতালিতেও ঘটেছিল। আগে থেকে যদি ব্যবস্থা নেওয়া যেত, তাহলে ইতালির পরিস্থিতি অত ভয়াবহ না-ও হতে পারত। সেখানে শত শত মানুষ মুহূর্তের মধ্যে মারা গেছে। তারা কিন্তু মৃত্যু ঠেকাতে পারেনি।
এখন যদি আমরা ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য অপেক্ষা করি, হাত গুটিয়ে বসে থাকি, তাহলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। কোভিড থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের এখনই জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
আজকের পত্রিকা: ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা কি ব্যর্থ হচ্ছি?
ডা. মুশতাক হোসেন: আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়নি। এটা তো চলমান প্রক্রিয়া। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ, সিটি করপোরেশন কাজ করছে। কিন্তু তাদের তৎপরতা যথেষ্ট নয়। পরিকল্পিতভাবে সারা দেশে কাজ করা উচিত। ডেঙ্গু শুধু ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে সীমাবদ্ধ নেই। কাজেই সে ক্ষেত্রে চলমান কাজগুলো সমন্বিতভাবে করা দরকার। এর জন্য আরও রিসোর্স দরকার। একদিকে জনশক্তি, অর্থ এবং যন্ত্রপাতি এসব দরকার। স্বল্পমেয়াদি জরুরি পরিকল্পনা এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী পরিকল্পনা করা দরকার। এগুলো যদি আমরা সমন্বিতভাবে করি, তাহলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের কাজগুলো আরও ভালোভাবে করা সম্ভব হবে।
আজকের পত্রিকা: কয়েক বছর ধরে দুই সিটি করপোরেশন শুধু রাসায়নিক স্প্রে করে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। এতে কি মশা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে?
ডা. মুশতাক হোসেন: আমি উল্টোভাবে যদি বলি, দুই সিটি করপোরেশন রাসায়নিক ব্যবহার না করত, তাহলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াত? কাজেই এটা একটা আপেক্ষিক বিষয়। আমরা আরও ভালো করতে চাই। আর শুধু কেমিক্যাল ছিটিয়ে কিছুই করা যাবে না—এ কথাটি ঠিক নয়। কোথাও যেন পানি জমতে না পারে, তার জন্য আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব জায়গায় মশা জন্ম নেয়, সেই সব স্থান আগে চিহ্নিত করতে হবে। এটা শুধু সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ ডেঙ্গু সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যদি দুই সিটি করপোরেশন বলে, ঢাকা শহরে কোনো মশা নেই। পরের দিনই কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর থেকে মশা ঢাকা শহরে ঢুকে পড়বে। তাই সারা দেশে একসঙ্গে সমন্বিতভাবে মশা ধ্বংসের কাজটা করতে
হবে। তাহলেই সফলতা আসবে।
আজকের পত্রিকা: অধিকাংশ হাসপাতালে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দায় কার?
ডা. মুশতাক হোসেন: শুধু হাসপাতালকেন্দ্রিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। কমিউনিটিভিত্তিক ব্যবস্থা নিতে হবে। কমিউনিটিতেই রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে যেসব স্বাস্থ্য ক্লিনিক আছে, সেগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু যারা বাসায় থেকে মশারির নিচে চিকিৎসা নিতে পারবে না, তাদের সেই সব জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
এ বছর ৮০ শতাংশ রোগীর কোনো ধরনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাদের যদি মশারি ছাড়া রাখা যায়, তাহলে তারা একজন সুস্থ মানুষকে সংক্রামিত করবে। কাজেই এই ৮০ শতাংশ মানুষকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে হবে। পরীক্ষাই তো করা হচ্ছে না। ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডেই ব্যবস্থা করা দরকার। আর যেহেতু গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে, সে জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকে একইভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। বিনা পয়সায় পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ কঠিন সময়ে নিম্ন আয়ের মানুষদের বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গুর চিকিৎসা খরচ। সরকার কেন ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না?
ডা. মুশতাক হোসেন: নিশ্চয়ই সেটা করা দরকার বলে আমি মনে করি। ডেঙ্গুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে সবকিছু কোভিডের মতো করে ফ্রি করে দেওয়া দরকার। এ জন্য তো আমরা বলছি, এই পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে আরও বেশি অর্থ এবং জনবল বরাদ্দ দেওয়া দরকার। শুধু চিকিৎসক দিলে তো হবে না। এই পরিস্থিতিতে অনেক স্বেচ্ছাসেবক দরকার। রোগীদের ডেঙ্গু শনাক্ত করে হাসপাতালে নিয়ে আসা এবং মশা কোথায় জন্ম নেয়, সে বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে শেখাতে হবে। দুই-তিন দিনের প্রশিক্ষণে সেটা শেখানো সম্ভব। এসব কাজ করতে গিয়ে যে টাকা খরচ হবে তার বহুগুণ রিটার্ন আমরা পাব। কারণ রোগীর সংখ্যা যদি কমাতে পারি, তাহলে ওষুধপত্র থেকে অনেক কিছুর টাকা বেঁচে যাবে। আর একজন মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারা তো অমূল্য সম্পদ পাওয়ার মতো বিষয়। তাই এবার কমিউনিটিভিত্তিক উদ্যোগের কোনো বিকল্প দেখছি না।
আজকের পত্রিকা: ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু না হতেই ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। সরকার কি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথার্থ ব্যবস্থা নিতে পেরেছে?
ডা. মুশতাক হোসেন: সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সেই উদ্যোগ ব্যাপক, বিস্তৃত এবং সমন্বিত করা দরকার। ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া শুধু সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য আন্তমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করা দরকার। স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা, ধর্ম, কৃষি মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে সার্বিকভাবে পরিকল্পনা নিতে হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় যেহেতু সারা দেশে কাজ করে, তাদেরও দায়িত্ব দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একজন সিনিয়র মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। তিনি জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয় করবেন। এসব কাজ করার জন্য যত অর্থ লাগবে, তার জোগান দিতে হবে। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টেকনিক্যাল সাপোর্ট নিতে হবে। আমাদের দেশে অনেক অভিজ্ঞ লোক আছেন, তাঁদের সহযোগিতা নিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আপনার পরামর্শগুলো কী?
ডা. মুশতাক হোসেন: প্রথমত, আমাদের জরুরি ভিত্তিতে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য তিন ধাপ মানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও তৃতীয় পর্যায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। ডেঙ্গু রোগীদের মশারির ভেতর রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে কোনোভাবেই মশারির বাইরে রাখা যাবে না। আর কমিউনিটি থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রতিটি পাড়া, মহল্লায় হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিতে হবে। তাঁরা স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মিলে মশা জন্মানোর স্থান চিহ্নিত এবং প্রয়োজনে কীটনাশক স্প্রে করবেন। এভাবে তাঁরা মশা নিয়ন্ত্রণ করবেন। একই সঙ্গে রোগীকে খুঁজে বের করে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। এভাবে আমরা যদি সমন্বিতভাবে এগিয়ে যাই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য, তাহলে কাজটা ভালো হবে, আমরা এ ক্ষেত্রে সফল হব।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
ডা. মুশতাক হোসেন: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪