ফারহা তানজীম তিতিল

অনেক দিন আগে রবিন্স বার্লিং নামের একজন আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী ‘স্ট্রং উইমেন অব মধুপুর’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। যেসব অজানা কারণে মান্দি বা গারোদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল তার একটা কারণ হলো, মান্দি নারীদের জীবনযাপন অনেক বলিষ্ঠ। এই বলিষ্ঠতা আমার ভালো লাগে।
প্রথম যেদিন টাঙ্গাইলের মধুপুরের চুনিয়া গ্রামে যাই, সেদিন আমাকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল নারীদের সঙ্গে। অনেকের কথাই বলতে পারি। কয়ন মৃর কথাই বলি আগে। তিনি গান করেন, যে গান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মান্দি সমাজে প্রচলিত আছে। ধর্মান্তরে ঐতিহ্যগত যে বিদ্যা হারাতে চলেছে, তা কয়ন মৃর মতো কিছু মানুষ এখনো সংরক্ষণে রেখেছেন। মান্দিদের আদি ধর্ম সাংসারেক অনুসারীদের শেষ কয়েকজনের অন্যতম জনিক নকরেকের বাড়িতে কয়ন মৃর সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তা এখনো অটুট আছে।
আচ্চু জনিক নেই, কয়ন মৃ আছেন জ্ঞানকাণ্ড হয়ে। প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে। একবার মধুপুরের বনে একটা পূজার আয়োজন হয়েছিল। সেদিন কয়ন মৃ বন রক্ষার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, তা কোনো দিনই ভুলতে পারব না।
জঙ্গল বিনাশী উন্নয়ন-দর্শনের বিপরীতে জঙ্গলে বসবাসকারী মানুষের প্রতিবাদ জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র যতই স্বীকৃতি দিক না কেন, মধুপুর উপজেলার পেগামারি গ্রামের কয়ন মৃর তা জানার কথা নয়। তিনি কথা বলেন তাঁর প্রাকৃত জ্ঞান দিয়ে। তাঁর আছে কাণ্ডজ্ঞান, যে জ্ঞান দিয়ে নিজের অধিকার বুঝতে পারেন এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার অপরিসীম সাহসও তাঁর সহজাত। তাই অবলীলায় বলতে পারেন, ‘আমা, আম্বির জমির জন্য আমরা জান দেব, তবু জমি দেব না।’
‘আমা’ শব্দের অর্থ মা। ‘আম্বি’ দাদি ও নানি দুই অর্থেই ব্যবহৃত হয়। কয়ন মৃর এ বাক্যে আম্বি শুধু নানি অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। নানির জমি মা পান।
মান্দি সমাজে মায়ের পরিচয়ে সন্তান পরিচিত হয়। কয়ন তাঁর মৃ পদবি পেয়েছেন মায়ের কাছ থেকে। মায়ের সম্পত্তিও পেয়েছেন তিনি। মায়ের পদবি ব্যবহার করে সন্তান। তাতে সুবিধা হলো যে বংশগতির হিসাবটা মোটামুটি পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। খুব সহজেই চেনা যায় কে কোন মাহারির। আচিক ভাষার ‘মাহারি’ শব্দটির বাংলা অর্থ গোত্র। সন্তান যেহেতু মায়ের শরীর থেকে বের হয়, সে মায়ের পদবি নিলে আর বংশগতির হিসাব সহজে গুলিয়ে যাবে না। কারণ বিপরীত মাহারি ছাড়া বিয়ে করার নিয়ম নেই। দুটি প্রধান গোত্র বা মাহারি আছে মান্দি সমাজে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, সন্তানের প্রথম পরিচয় মায়ের পরিচয়ে হওয়াই ভালো। তাই মান্দি সমাজের নিয়ম আমার পছন্দ।
মায়ের সম্পত্তি মেয়েরা পায়, সেটা তো আগেই বলেছি। পুরুষেরা বিয়ে করে স্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সম্পত্তির দেখাশোনা করেন। বাঙালি সমাজে পুত্রবধূ যেমন খুব গুরুত্বপূর্ণ পদের অধিকারী হন, সংসারে সবার দেখভাল করার দায়িত্ব তাঁদের ওপর বর্তায়। মান্দি সমাজেও বিয়ে করে ঘরে আসা জামাই পরিবারের সবার দেখভাল করেন। জামাইকে ঘরে আনা এবং সম্পত্তির মালিক হওয়ার কারণে সে সমাজে নারীরা বেশ খানিকটা ক্ষমতাধর হয়ে থাকেন। অনেক বেশি সাবলীল তাঁদের চলাফেরা। বৃদ্ধ বয়সী মান্দি নারীকেও চমৎকারভাবে ক্যাটওয়াকে অংশ নিতে দেখেছি আমি। খুব দৃঢ় পদক্ষেপে হাঁটেন, বাজার করেন এবং বনের কাঠ সংগ্রহ করেন এই নারীরা। এখন অবশ্য আধুনিকায়নের বিবেচনা থেকে এবং পুরুষের বিপন্নতা কমাতে মান্দি পুরুষদেরও সম্পত্তির অধিকারী করা হচ্ছে।
যে সমাজের নারীরা নিত্য আড্ডায় অংশ নেন, পরিবারের প্রধান হন, সেখানেও নারী সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নন কিন্তু। নারীরা কখনো খামাল বা পুরোহিত হতে পারেন না। গ্রামপ্রধান বা নকমাও হতে পারেন না। তবুও সেখানে নারী পরিবারপ্রধান তো বটে। সে সমাজেও নারী কখনো কখনো স্বামীর হাতে মার খান। কখনো আবার তরুণী মেয়েরা সমাজের প্রবল প্রতাপে ঘর, পরিবার, সমাজ, সম্পত্তির অধিকার ছেড়ে পালিয়ে আসেন নাগরিক ভিড়ে। কখনো জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসেন তাঁরা।
শহরের বিউটি পারলারগুলোতে মান্দি মেয়েদের একাধিপত্য রয়েছে। এর প্রথম কারণ হলো, মান্দি মেয়েরা বুঝে নেন, পরিবার প্রতিপালনের দায়িত্ব তাঁরই। বন যদি না থাকে, খাবার সংগ্রহ হবে কেমন করে? পড়াশোনা তো সচরাচর অষ্টম শ্রেণি থেকে উচ্চমাধ্যমিকের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। তখন বাকি থাকে মান্দি জীবনের গভীর জ্ঞান, মনোযোগ আর পরিশ্রমের হাত দুটো। আর থাকে পরিবার পালনের দায়িত্ববোধ এবং আত্মবিশ্বাসী নারীহৃদয়। যে আত্মবিশ্বাস অধিকাংশ বাঙালি মেয়েদের ছোটবেলাতেই ভেঙে দেওয়া হয়। মগ্ন হাতগুলো খুব ভালোভাবে জানে, কোন মাত্রার প্রেষণ তার গ্রাহককে নিবিড় প্রশান্তি দেয়। বাংলাদেশে ম্যাসাজের জগতে মান্দি হাতের চেয়ে ভালো কিছু বোধ হয় নেই। মঙ্গোলীয় এই হাত ধ্যানের গভীরতা নিয়ে মানব শরীর স্পর্শ করে।
খাসি সমাজেও মান্দিদের মতো পুরুষেরা বিয়ে করে মেয়ের ঘরে আসেন। তবে সেখানে গৃহিণীর মামা আর ভাইয়েরা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে ভূমিকা রাখেন। খাসি নারীরা কিন্তু শহরে কাজ করতে এসেছেন কেবল অফিসে। সংখ্যায় তাঁরা বেশি নন। তাঁদের পড়াশোনা প্রীতি, আভিজাত্য এবং সচ্ছলতা কিছুটা বেশি ছিল এত দিন। কিন্তু পান চাষ ক্ষুদ্রঋণের হাতে বন্দী হয়েছে। চা-বাগানমালিকেরাও এখন পানপুঞ্জির জমি দখলে নেমেছেন। নুডলি লামিনরা তাই নীরব দারিদ্র্যে ভেতরে-ভেতরে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। অগ্রসর চাকমা, ত্রিপুরা, লুসাই সমাজের নারীরা অনেকেই পৌঁছেছেন বহুদূরে। তবু ম্রো নারীর কান ঝুলে আছে দুশ্চিন্তা আর ভারী মাকড়তে। ম্রো সমাজে অল্প বয়সী ছেলেকে যুবতী নারীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় ঘরের কাজ সামলানোর জন্য।
বাংলাদেশে অবস্থানকারী কড়া জাতির লোক আছে শখানেক। সোনিয়া কড়া তাঁর যোগ্যতা বলে সে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সাঁওতাল সমাজ পুরুষপ্রধান হলেও একজন বাসন্তী মুর্মু তাঁর সংসারে এবং সমাজে সমান গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে।
কিন্তু তবুও মোটের ওপর দারিদ্র্যের চাপ যখন আসে, তা নারীকেই সবচেয়ে বেশি পিষ্ট করে। অভাবের দিনে কত নারীই তো বনের লতা কুড়ান, তিনি তো সন্তানদের অভুক্ত দেখতে পারেন না। চাষাবাদে সবখানেই নারীর ভূমিকা রয়েছে; বরং যেকোনো সমাজ যত বেশি সুশীল হয়ে ওঠে, সেই সমাজের নারীরা তত বেশি পরাধীন হতে থাকেন। অনেকে মনে করে, পাহাড়ের অধিবাসী পুরুষেরা তো সহজেই নেংটি ছেড়েছেন, তবে নারীকে কেন ঐতিহ্যবাহী পোশাক ধরে রাখতে হবে? সব সমাজেই ধরে রাখার দায় যেন নারীরই বেশি।
চাকমা, মারমা, ম্রো ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর নারীদের বিষয়ে ক্ষমতাধর স্থানীয় পুরুষদের আগ্রহ বেশি থাকে। তাই তাঁরা নিয়মিতই শারীরিক নিপীড়নের শিকার হন। অন্যদিকে, প্রেমে জড়ালে সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পড়েন। সব সমাজেই পুরুষ নিজেকে রাখেন মুক্ত আর নারীকে দেখতে চান শিকড় ছড়ানো শিকল পরারূপে। নারীর শরীর, তাঁর মমতা, আগলে রাখার গুণ তাঁর শক্তি না হয়ে শিকল হয়ে দাঁড়ায়। দারিদ্র্য এবং সমাজে ‘আদার’ হওয়ার বিড়ম্বনার সঙ্গে রয়েছে নারী হওয়ার বিড়ম্বনা। তাই সাঁওতাল, কড়া, গারোসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের অল্প কিছু নারীকে যেমন শক্তি নিয়ে বেরিয়ে পড়তে দেখি, বেশির ভাগকে দেখি সংসার এবং সমাজের দায় বহন করতে। সব মিলিয়ে তাদের দেখি ক্ষমতা এবং সুবিধা থেকে বহু বহু দূরে কোথাও!
লেখক: গবেষক ও শিক্ষক

অনেক দিন আগে রবিন্স বার্লিং নামের একজন আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী ‘স্ট্রং উইমেন অব মধুপুর’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। যেসব অজানা কারণে মান্দি বা গারোদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল তার একটা কারণ হলো, মান্দি নারীদের জীবনযাপন অনেক বলিষ্ঠ। এই বলিষ্ঠতা আমার ভালো লাগে।
প্রথম যেদিন টাঙ্গাইলের মধুপুরের চুনিয়া গ্রামে যাই, সেদিন আমাকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল নারীদের সঙ্গে। অনেকের কথাই বলতে পারি। কয়ন মৃর কথাই বলি আগে। তিনি গান করেন, যে গান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মান্দি সমাজে প্রচলিত আছে। ধর্মান্তরে ঐতিহ্যগত যে বিদ্যা হারাতে চলেছে, তা কয়ন মৃর মতো কিছু মানুষ এখনো সংরক্ষণে রেখেছেন। মান্দিদের আদি ধর্ম সাংসারেক অনুসারীদের শেষ কয়েকজনের অন্যতম জনিক নকরেকের বাড়িতে কয়ন মৃর সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তা এখনো অটুট আছে।
আচ্চু জনিক নেই, কয়ন মৃ আছেন জ্ঞানকাণ্ড হয়ে। প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে। একবার মধুপুরের বনে একটা পূজার আয়োজন হয়েছিল। সেদিন কয়ন মৃ বন রক্ষার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, তা কোনো দিনই ভুলতে পারব না।
জঙ্গল বিনাশী উন্নয়ন-দর্শনের বিপরীতে জঙ্গলে বসবাসকারী মানুষের প্রতিবাদ জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র যতই স্বীকৃতি দিক না কেন, মধুপুর উপজেলার পেগামারি গ্রামের কয়ন মৃর তা জানার কথা নয়। তিনি কথা বলেন তাঁর প্রাকৃত জ্ঞান দিয়ে। তাঁর আছে কাণ্ডজ্ঞান, যে জ্ঞান দিয়ে নিজের অধিকার বুঝতে পারেন এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার অপরিসীম সাহসও তাঁর সহজাত। তাই অবলীলায় বলতে পারেন, ‘আমা, আম্বির জমির জন্য আমরা জান দেব, তবু জমি দেব না।’
‘আমা’ শব্দের অর্থ মা। ‘আম্বি’ দাদি ও নানি দুই অর্থেই ব্যবহৃত হয়। কয়ন মৃর এ বাক্যে আম্বি শুধু নানি অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। নানির জমি মা পান।
মান্দি সমাজে মায়ের পরিচয়ে সন্তান পরিচিত হয়। কয়ন তাঁর মৃ পদবি পেয়েছেন মায়ের কাছ থেকে। মায়ের সম্পত্তিও পেয়েছেন তিনি। মায়ের পদবি ব্যবহার করে সন্তান। তাতে সুবিধা হলো যে বংশগতির হিসাবটা মোটামুটি পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। খুব সহজেই চেনা যায় কে কোন মাহারির। আচিক ভাষার ‘মাহারি’ শব্দটির বাংলা অর্থ গোত্র। সন্তান যেহেতু মায়ের শরীর থেকে বের হয়, সে মায়ের পদবি নিলে আর বংশগতির হিসাব সহজে গুলিয়ে যাবে না। কারণ বিপরীত মাহারি ছাড়া বিয়ে করার নিয়ম নেই। দুটি প্রধান গোত্র বা মাহারি আছে মান্দি সমাজে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, সন্তানের প্রথম পরিচয় মায়ের পরিচয়ে হওয়াই ভালো। তাই মান্দি সমাজের নিয়ম আমার পছন্দ।
মায়ের সম্পত্তি মেয়েরা পায়, সেটা তো আগেই বলেছি। পুরুষেরা বিয়ে করে স্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সম্পত্তির দেখাশোনা করেন। বাঙালি সমাজে পুত্রবধূ যেমন খুব গুরুত্বপূর্ণ পদের অধিকারী হন, সংসারে সবার দেখভাল করার দায়িত্ব তাঁদের ওপর বর্তায়। মান্দি সমাজেও বিয়ে করে ঘরে আসা জামাই পরিবারের সবার দেখভাল করেন। জামাইকে ঘরে আনা এবং সম্পত্তির মালিক হওয়ার কারণে সে সমাজে নারীরা বেশ খানিকটা ক্ষমতাধর হয়ে থাকেন। অনেক বেশি সাবলীল তাঁদের চলাফেরা। বৃদ্ধ বয়সী মান্দি নারীকেও চমৎকারভাবে ক্যাটওয়াকে অংশ নিতে দেখেছি আমি। খুব দৃঢ় পদক্ষেপে হাঁটেন, বাজার করেন এবং বনের কাঠ সংগ্রহ করেন এই নারীরা। এখন অবশ্য আধুনিকায়নের বিবেচনা থেকে এবং পুরুষের বিপন্নতা কমাতে মান্দি পুরুষদেরও সম্পত্তির অধিকারী করা হচ্ছে।
যে সমাজের নারীরা নিত্য আড্ডায় অংশ নেন, পরিবারের প্রধান হন, সেখানেও নারী সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নন কিন্তু। নারীরা কখনো খামাল বা পুরোহিত হতে পারেন না। গ্রামপ্রধান বা নকমাও হতে পারেন না। তবুও সেখানে নারী পরিবারপ্রধান তো বটে। সে সমাজেও নারী কখনো কখনো স্বামীর হাতে মার খান। কখনো আবার তরুণী মেয়েরা সমাজের প্রবল প্রতাপে ঘর, পরিবার, সমাজ, সম্পত্তির অধিকার ছেড়ে পালিয়ে আসেন নাগরিক ভিড়ে। কখনো জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসেন তাঁরা।
শহরের বিউটি পারলারগুলোতে মান্দি মেয়েদের একাধিপত্য রয়েছে। এর প্রথম কারণ হলো, মান্দি মেয়েরা বুঝে নেন, পরিবার প্রতিপালনের দায়িত্ব তাঁরই। বন যদি না থাকে, খাবার সংগ্রহ হবে কেমন করে? পড়াশোনা তো সচরাচর অষ্টম শ্রেণি থেকে উচ্চমাধ্যমিকের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। তখন বাকি থাকে মান্দি জীবনের গভীর জ্ঞান, মনোযোগ আর পরিশ্রমের হাত দুটো। আর থাকে পরিবার পালনের দায়িত্ববোধ এবং আত্মবিশ্বাসী নারীহৃদয়। যে আত্মবিশ্বাস অধিকাংশ বাঙালি মেয়েদের ছোটবেলাতেই ভেঙে দেওয়া হয়। মগ্ন হাতগুলো খুব ভালোভাবে জানে, কোন মাত্রার প্রেষণ তার গ্রাহককে নিবিড় প্রশান্তি দেয়। বাংলাদেশে ম্যাসাজের জগতে মান্দি হাতের চেয়ে ভালো কিছু বোধ হয় নেই। মঙ্গোলীয় এই হাত ধ্যানের গভীরতা নিয়ে মানব শরীর স্পর্শ করে।
খাসি সমাজেও মান্দিদের মতো পুরুষেরা বিয়ে করে মেয়ের ঘরে আসেন। তবে সেখানে গৃহিণীর মামা আর ভাইয়েরা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে ভূমিকা রাখেন। খাসি নারীরা কিন্তু শহরে কাজ করতে এসেছেন কেবল অফিসে। সংখ্যায় তাঁরা বেশি নন। তাঁদের পড়াশোনা প্রীতি, আভিজাত্য এবং সচ্ছলতা কিছুটা বেশি ছিল এত দিন। কিন্তু পান চাষ ক্ষুদ্রঋণের হাতে বন্দী হয়েছে। চা-বাগানমালিকেরাও এখন পানপুঞ্জির জমি দখলে নেমেছেন। নুডলি লামিনরা তাই নীরব দারিদ্র্যে ভেতরে-ভেতরে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। অগ্রসর চাকমা, ত্রিপুরা, লুসাই সমাজের নারীরা অনেকেই পৌঁছেছেন বহুদূরে। তবু ম্রো নারীর কান ঝুলে আছে দুশ্চিন্তা আর ভারী মাকড়তে। ম্রো সমাজে অল্প বয়সী ছেলেকে যুবতী নারীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় ঘরের কাজ সামলানোর জন্য।
বাংলাদেশে অবস্থানকারী কড়া জাতির লোক আছে শখানেক। সোনিয়া কড়া তাঁর যোগ্যতা বলে সে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সাঁওতাল সমাজ পুরুষপ্রধান হলেও একজন বাসন্তী মুর্মু তাঁর সংসারে এবং সমাজে সমান গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে।
কিন্তু তবুও মোটের ওপর দারিদ্র্যের চাপ যখন আসে, তা নারীকেই সবচেয়ে বেশি পিষ্ট করে। অভাবের দিনে কত নারীই তো বনের লতা কুড়ান, তিনি তো সন্তানদের অভুক্ত দেখতে পারেন না। চাষাবাদে সবখানেই নারীর ভূমিকা রয়েছে; বরং যেকোনো সমাজ যত বেশি সুশীল হয়ে ওঠে, সেই সমাজের নারীরা তত বেশি পরাধীন হতে থাকেন। অনেকে মনে করে, পাহাড়ের অধিবাসী পুরুষেরা তো সহজেই নেংটি ছেড়েছেন, তবে নারীকে কেন ঐতিহ্যবাহী পোশাক ধরে রাখতে হবে? সব সমাজেই ধরে রাখার দায় যেন নারীরই বেশি।
চাকমা, মারমা, ম্রো ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর নারীদের বিষয়ে ক্ষমতাধর স্থানীয় পুরুষদের আগ্রহ বেশি থাকে। তাই তাঁরা নিয়মিতই শারীরিক নিপীড়নের শিকার হন। অন্যদিকে, প্রেমে জড়ালে সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পড়েন। সব সমাজেই পুরুষ নিজেকে রাখেন মুক্ত আর নারীকে দেখতে চান শিকড় ছড়ানো শিকল পরারূপে। নারীর শরীর, তাঁর মমতা, আগলে রাখার গুণ তাঁর শক্তি না হয়ে শিকল হয়ে দাঁড়ায়। দারিদ্র্য এবং সমাজে ‘আদার’ হওয়ার বিড়ম্বনার সঙ্গে রয়েছে নারী হওয়ার বিড়ম্বনা। তাই সাঁওতাল, কড়া, গারোসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের অল্প কিছু নারীকে যেমন শক্তি নিয়ে বেরিয়ে পড়তে দেখি, বেশির ভাগকে দেখি সংসার এবং সমাজের দায় বহন করতে। সব মিলিয়ে তাদের দেখি ক্ষমতা এবং সুবিধা থেকে বহু বহু দূরে কোথাও!
লেখক: গবেষক ও শিক্ষক
ফারহা তানজীম তিতিল

অনেক দিন আগে রবিন্স বার্লিং নামের একজন আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী ‘স্ট্রং উইমেন অব মধুপুর’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। যেসব অজানা কারণে মান্দি বা গারোদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল তার একটা কারণ হলো, মান্দি নারীদের জীবনযাপন অনেক বলিষ্ঠ। এই বলিষ্ঠতা আমার ভালো লাগে।
প্রথম যেদিন টাঙ্গাইলের মধুপুরের চুনিয়া গ্রামে যাই, সেদিন আমাকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল নারীদের সঙ্গে। অনেকের কথাই বলতে পারি। কয়ন মৃর কথাই বলি আগে। তিনি গান করেন, যে গান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মান্দি সমাজে প্রচলিত আছে। ধর্মান্তরে ঐতিহ্যগত যে বিদ্যা হারাতে চলেছে, তা কয়ন মৃর মতো কিছু মানুষ এখনো সংরক্ষণে রেখেছেন। মান্দিদের আদি ধর্ম সাংসারেক অনুসারীদের শেষ কয়েকজনের অন্যতম জনিক নকরেকের বাড়িতে কয়ন মৃর সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তা এখনো অটুট আছে।
আচ্চু জনিক নেই, কয়ন মৃ আছেন জ্ঞানকাণ্ড হয়ে। প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে। একবার মধুপুরের বনে একটা পূজার আয়োজন হয়েছিল। সেদিন কয়ন মৃ বন রক্ষার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, তা কোনো দিনই ভুলতে পারব না।
জঙ্গল বিনাশী উন্নয়ন-দর্শনের বিপরীতে জঙ্গলে বসবাসকারী মানুষের প্রতিবাদ জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র যতই স্বীকৃতি দিক না কেন, মধুপুর উপজেলার পেগামারি গ্রামের কয়ন মৃর তা জানার কথা নয়। তিনি কথা বলেন তাঁর প্রাকৃত জ্ঞান দিয়ে। তাঁর আছে কাণ্ডজ্ঞান, যে জ্ঞান দিয়ে নিজের অধিকার বুঝতে পারেন এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার অপরিসীম সাহসও তাঁর সহজাত। তাই অবলীলায় বলতে পারেন, ‘আমা, আম্বির জমির জন্য আমরা জান দেব, তবু জমি দেব না।’
‘আমা’ শব্দের অর্থ মা। ‘আম্বি’ দাদি ও নানি দুই অর্থেই ব্যবহৃত হয়। কয়ন মৃর এ বাক্যে আম্বি শুধু নানি অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। নানির জমি মা পান।
মান্দি সমাজে মায়ের পরিচয়ে সন্তান পরিচিত হয়। কয়ন তাঁর মৃ পদবি পেয়েছেন মায়ের কাছ থেকে। মায়ের সম্পত্তিও পেয়েছেন তিনি। মায়ের পদবি ব্যবহার করে সন্তান। তাতে সুবিধা হলো যে বংশগতির হিসাবটা মোটামুটি পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। খুব সহজেই চেনা যায় কে কোন মাহারির। আচিক ভাষার ‘মাহারি’ শব্দটির বাংলা অর্থ গোত্র। সন্তান যেহেতু মায়ের শরীর থেকে বের হয়, সে মায়ের পদবি নিলে আর বংশগতির হিসাব সহজে গুলিয়ে যাবে না। কারণ বিপরীত মাহারি ছাড়া বিয়ে করার নিয়ম নেই। দুটি প্রধান গোত্র বা মাহারি আছে মান্দি সমাজে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, সন্তানের প্রথম পরিচয় মায়ের পরিচয়ে হওয়াই ভালো। তাই মান্দি সমাজের নিয়ম আমার পছন্দ।
মায়ের সম্পত্তি মেয়েরা পায়, সেটা তো আগেই বলেছি। পুরুষেরা বিয়ে করে স্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সম্পত্তির দেখাশোনা করেন। বাঙালি সমাজে পুত্রবধূ যেমন খুব গুরুত্বপূর্ণ পদের অধিকারী হন, সংসারে সবার দেখভাল করার দায়িত্ব তাঁদের ওপর বর্তায়। মান্দি সমাজেও বিয়ে করে ঘরে আসা জামাই পরিবারের সবার দেখভাল করেন। জামাইকে ঘরে আনা এবং সম্পত্তির মালিক হওয়ার কারণে সে সমাজে নারীরা বেশ খানিকটা ক্ষমতাধর হয়ে থাকেন। অনেক বেশি সাবলীল তাঁদের চলাফেরা। বৃদ্ধ বয়সী মান্দি নারীকেও চমৎকারভাবে ক্যাটওয়াকে অংশ নিতে দেখেছি আমি। খুব দৃঢ় পদক্ষেপে হাঁটেন, বাজার করেন এবং বনের কাঠ সংগ্রহ করেন এই নারীরা। এখন অবশ্য আধুনিকায়নের বিবেচনা থেকে এবং পুরুষের বিপন্নতা কমাতে মান্দি পুরুষদেরও সম্পত্তির অধিকারী করা হচ্ছে।
যে সমাজের নারীরা নিত্য আড্ডায় অংশ নেন, পরিবারের প্রধান হন, সেখানেও নারী সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নন কিন্তু। নারীরা কখনো খামাল বা পুরোহিত হতে পারেন না। গ্রামপ্রধান বা নকমাও হতে পারেন না। তবুও সেখানে নারী পরিবারপ্রধান তো বটে। সে সমাজেও নারী কখনো কখনো স্বামীর হাতে মার খান। কখনো আবার তরুণী মেয়েরা সমাজের প্রবল প্রতাপে ঘর, পরিবার, সমাজ, সম্পত্তির অধিকার ছেড়ে পালিয়ে আসেন নাগরিক ভিড়ে। কখনো জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসেন তাঁরা।
শহরের বিউটি পারলারগুলোতে মান্দি মেয়েদের একাধিপত্য রয়েছে। এর প্রথম কারণ হলো, মান্দি মেয়েরা বুঝে নেন, পরিবার প্রতিপালনের দায়িত্ব তাঁরই। বন যদি না থাকে, খাবার সংগ্রহ হবে কেমন করে? পড়াশোনা তো সচরাচর অষ্টম শ্রেণি থেকে উচ্চমাধ্যমিকের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। তখন বাকি থাকে মান্দি জীবনের গভীর জ্ঞান, মনোযোগ আর পরিশ্রমের হাত দুটো। আর থাকে পরিবার পালনের দায়িত্ববোধ এবং আত্মবিশ্বাসী নারীহৃদয়। যে আত্মবিশ্বাস অধিকাংশ বাঙালি মেয়েদের ছোটবেলাতেই ভেঙে দেওয়া হয়। মগ্ন হাতগুলো খুব ভালোভাবে জানে, কোন মাত্রার প্রেষণ তার গ্রাহককে নিবিড় প্রশান্তি দেয়। বাংলাদেশে ম্যাসাজের জগতে মান্দি হাতের চেয়ে ভালো কিছু বোধ হয় নেই। মঙ্গোলীয় এই হাত ধ্যানের গভীরতা নিয়ে মানব শরীর স্পর্শ করে।
খাসি সমাজেও মান্দিদের মতো পুরুষেরা বিয়ে করে মেয়ের ঘরে আসেন। তবে সেখানে গৃহিণীর মামা আর ভাইয়েরা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে ভূমিকা রাখেন। খাসি নারীরা কিন্তু শহরে কাজ করতে এসেছেন কেবল অফিসে। সংখ্যায় তাঁরা বেশি নন। তাঁদের পড়াশোনা প্রীতি, আভিজাত্য এবং সচ্ছলতা কিছুটা বেশি ছিল এত দিন। কিন্তু পান চাষ ক্ষুদ্রঋণের হাতে বন্দী হয়েছে। চা-বাগানমালিকেরাও এখন পানপুঞ্জির জমি দখলে নেমেছেন। নুডলি লামিনরা তাই নীরব দারিদ্র্যে ভেতরে-ভেতরে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। অগ্রসর চাকমা, ত্রিপুরা, লুসাই সমাজের নারীরা অনেকেই পৌঁছেছেন বহুদূরে। তবু ম্রো নারীর কান ঝুলে আছে দুশ্চিন্তা আর ভারী মাকড়তে। ম্রো সমাজে অল্প বয়সী ছেলেকে যুবতী নারীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় ঘরের কাজ সামলানোর জন্য।
বাংলাদেশে অবস্থানকারী কড়া জাতির লোক আছে শখানেক। সোনিয়া কড়া তাঁর যোগ্যতা বলে সে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সাঁওতাল সমাজ পুরুষপ্রধান হলেও একজন বাসন্তী মুর্মু তাঁর সংসারে এবং সমাজে সমান গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে।
কিন্তু তবুও মোটের ওপর দারিদ্র্যের চাপ যখন আসে, তা নারীকেই সবচেয়ে বেশি পিষ্ট করে। অভাবের দিনে কত নারীই তো বনের লতা কুড়ান, তিনি তো সন্তানদের অভুক্ত দেখতে পারেন না। চাষাবাদে সবখানেই নারীর ভূমিকা রয়েছে; বরং যেকোনো সমাজ যত বেশি সুশীল হয়ে ওঠে, সেই সমাজের নারীরা তত বেশি পরাধীন হতে থাকেন। অনেকে মনে করে, পাহাড়ের অধিবাসী পুরুষেরা তো সহজেই নেংটি ছেড়েছেন, তবে নারীকে কেন ঐতিহ্যবাহী পোশাক ধরে রাখতে হবে? সব সমাজেই ধরে রাখার দায় যেন নারীরই বেশি।
চাকমা, মারমা, ম্রো ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর নারীদের বিষয়ে ক্ষমতাধর স্থানীয় পুরুষদের আগ্রহ বেশি থাকে। তাই তাঁরা নিয়মিতই শারীরিক নিপীড়নের শিকার হন। অন্যদিকে, প্রেমে জড়ালে সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পড়েন। সব সমাজেই পুরুষ নিজেকে রাখেন মুক্ত আর নারীকে দেখতে চান শিকড় ছড়ানো শিকল পরারূপে। নারীর শরীর, তাঁর মমতা, আগলে রাখার গুণ তাঁর শক্তি না হয়ে শিকল হয়ে দাঁড়ায়। দারিদ্র্য এবং সমাজে ‘আদার’ হওয়ার বিড়ম্বনার সঙ্গে রয়েছে নারী হওয়ার বিড়ম্বনা। তাই সাঁওতাল, কড়া, গারোসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের অল্প কিছু নারীকে যেমন শক্তি নিয়ে বেরিয়ে পড়তে দেখি, বেশির ভাগকে দেখি সংসার এবং সমাজের দায় বহন করতে। সব মিলিয়ে তাদের দেখি ক্ষমতা এবং সুবিধা থেকে বহু বহু দূরে কোথাও!
লেখক: গবেষক ও শিক্ষক

অনেক দিন আগে রবিন্স বার্লিং নামের একজন আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী ‘স্ট্রং উইমেন অব মধুপুর’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। যেসব অজানা কারণে মান্দি বা গারোদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল তার একটা কারণ হলো, মান্দি নারীদের জীবনযাপন অনেক বলিষ্ঠ। এই বলিষ্ঠতা আমার ভালো লাগে।
প্রথম যেদিন টাঙ্গাইলের মধুপুরের চুনিয়া গ্রামে যাই, সেদিন আমাকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল নারীদের সঙ্গে। অনেকের কথাই বলতে পারি। কয়ন মৃর কথাই বলি আগে। তিনি গান করেন, যে গান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মান্দি সমাজে প্রচলিত আছে। ধর্মান্তরে ঐতিহ্যগত যে বিদ্যা হারাতে চলেছে, তা কয়ন মৃর মতো কিছু মানুষ এখনো সংরক্ষণে রেখেছেন। মান্দিদের আদি ধর্ম সাংসারেক অনুসারীদের শেষ কয়েকজনের অন্যতম জনিক নকরেকের বাড়িতে কয়ন মৃর সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তা এখনো অটুট আছে।
আচ্চু জনিক নেই, কয়ন মৃ আছেন জ্ঞানকাণ্ড হয়ে। প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে। একবার মধুপুরের বনে একটা পূজার আয়োজন হয়েছিল। সেদিন কয়ন মৃ বন রক্ষার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, তা কোনো দিনই ভুলতে পারব না।
জঙ্গল বিনাশী উন্নয়ন-দর্শনের বিপরীতে জঙ্গলে বসবাসকারী মানুষের প্রতিবাদ জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র যতই স্বীকৃতি দিক না কেন, মধুপুর উপজেলার পেগামারি গ্রামের কয়ন মৃর তা জানার কথা নয়। তিনি কথা বলেন তাঁর প্রাকৃত জ্ঞান দিয়ে। তাঁর আছে কাণ্ডজ্ঞান, যে জ্ঞান দিয়ে নিজের অধিকার বুঝতে পারেন এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার অপরিসীম সাহসও তাঁর সহজাত। তাই অবলীলায় বলতে পারেন, ‘আমা, আম্বির জমির জন্য আমরা জান দেব, তবু জমি দেব না।’
‘আমা’ শব্দের অর্থ মা। ‘আম্বি’ দাদি ও নানি দুই অর্থেই ব্যবহৃত হয়। কয়ন মৃর এ বাক্যে আম্বি শুধু নানি অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। নানির জমি মা পান।
মান্দি সমাজে মায়ের পরিচয়ে সন্তান পরিচিত হয়। কয়ন তাঁর মৃ পদবি পেয়েছেন মায়ের কাছ থেকে। মায়ের সম্পত্তিও পেয়েছেন তিনি। মায়ের পদবি ব্যবহার করে সন্তান। তাতে সুবিধা হলো যে বংশগতির হিসাবটা মোটামুটি পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। খুব সহজেই চেনা যায় কে কোন মাহারির। আচিক ভাষার ‘মাহারি’ শব্দটির বাংলা অর্থ গোত্র। সন্তান যেহেতু মায়ের শরীর থেকে বের হয়, সে মায়ের পদবি নিলে আর বংশগতির হিসাব সহজে গুলিয়ে যাবে না। কারণ বিপরীত মাহারি ছাড়া বিয়ে করার নিয়ম নেই। দুটি প্রধান গোত্র বা মাহারি আছে মান্দি সমাজে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, সন্তানের প্রথম পরিচয় মায়ের পরিচয়ে হওয়াই ভালো। তাই মান্দি সমাজের নিয়ম আমার পছন্দ।
মায়ের সম্পত্তি মেয়েরা পায়, সেটা তো আগেই বলেছি। পুরুষেরা বিয়ে করে স্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সম্পত্তির দেখাশোনা করেন। বাঙালি সমাজে পুত্রবধূ যেমন খুব গুরুত্বপূর্ণ পদের অধিকারী হন, সংসারে সবার দেখভাল করার দায়িত্ব তাঁদের ওপর বর্তায়। মান্দি সমাজেও বিয়ে করে ঘরে আসা জামাই পরিবারের সবার দেখভাল করেন। জামাইকে ঘরে আনা এবং সম্পত্তির মালিক হওয়ার কারণে সে সমাজে নারীরা বেশ খানিকটা ক্ষমতাধর হয়ে থাকেন। অনেক বেশি সাবলীল তাঁদের চলাফেরা। বৃদ্ধ বয়সী মান্দি নারীকেও চমৎকারভাবে ক্যাটওয়াকে অংশ নিতে দেখেছি আমি। খুব দৃঢ় পদক্ষেপে হাঁটেন, বাজার করেন এবং বনের কাঠ সংগ্রহ করেন এই নারীরা। এখন অবশ্য আধুনিকায়নের বিবেচনা থেকে এবং পুরুষের বিপন্নতা কমাতে মান্দি পুরুষদেরও সম্পত্তির অধিকারী করা হচ্ছে।
যে সমাজের নারীরা নিত্য আড্ডায় অংশ নেন, পরিবারের প্রধান হন, সেখানেও নারী সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নন কিন্তু। নারীরা কখনো খামাল বা পুরোহিত হতে পারেন না। গ্রামপ্রধান বা নকমাও হতে পারেন না। তবুও সেখানে নারী পরিবারপ্রধান তো বটে। সে সমাজেও নারী কখনো কখনো স্বামীর হাতে মার খান। কখনো আবার তরুণী মেয়েরা সমাজের প্রবল প্রতাপে ঘর, পরিবার, সমাজ, সম্পত্তির অধিকার ছেড়ে পালিয়ে আসেন নাগরিক ভিড়ে। কখনো জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসেন তাঁরা।
শহরের বিউটি পারলারগুলোতে মান্দি মেয়েদের একাধিপত্য রয়েছে। এর প্রথম কারণ হলো, মান্দি মেয়েরা বুঝে নেন, পরিবার প্রতিপালনের দায়িত্ব তাঁরই। বন যদি না থাকে, খাবার সংগ্রহ হবে কেমন করে? পড়াশোনা তো সচরাচর অষ্টম শ্রেণি থেকে উচ্চমাধ্যমিকের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। তখন বাকি থাকে মান্দি জীবনের গভীর জ্ঞান, মনোযোগ আর পরিশ্রমের হাত দুটো। আর থাকে পরিবার পালনের দায়িত্ববোধ এবং আত্মবিশ্বাসী নারীহৃদয়। যে আত্মবিশ্বাস অধিকাংশ বাঙালি মেয়েদের ছোটবেলাতেই ভেঙে দেওয়া হয়। মগ্ন হাতগুলো খুব ভালোভাবে জানে, কোন মাত্রার প্রেষণ তার গ্রাহককে নিবিড় প্রশান্তি দেয়। বাংলাদেশে ম্যাসাজের জগতে মান্দি হাতের চেয়ে ভালো কিছু বোধ হয় নেই। মঙ্গোলীয় এই হাত ধ্যানের গভীরতা নিয়ে মানব শরীর স্পর্শ করে।
খাসি সমাজেও মান্দিদের মতো পুরুষেরা বিয়ে করে মেয়ের ঘরে আসেন। তবে সেখানে গৃহিণীর মামা আর ভাইয়েরা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে ভূমিকা রাখেন। খাসি নারীরা কিন্তু শহরে কাজ করতে এসেছেন কেবল অফিসে। সংখ্যায় তাঁরা বেশি নন। তাঁদের পড়াশোনা প্রীতি, আভিজাত্য এবং সচ্ছলতা কিছুটা বেশি ছিল এত দিন। কিন্তু পান চাষ ক্ষুদ্রঋণের হাতে বন্দী হয়েছে। চা-বাগানমালিকেরাও এখন পানপুঞ্জির জমি দখলে নেমেছেন। নুডলি লামিনরা তাই নীরব দারিদ্র্যে ভেতরে-ভেতরে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। অগ্রসর চাকমা, ত্রিপুরা, লুসাই সমাজের নারীরা অনেকেই পৌঁছেছেন বহুদূরে। তবু ম্রো নারীর কান ঝুলে আছে দুশ্চিন্তা আর ভারী মাকড়তে। ম্রো সমাজে অল্প বয়সী ছেলেকে যুবতী নারীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় ঘরের কাজ সামলানোর জন্য।
বাংলাদেশে অবস্থানকারী কড়া জাতির লোক আছে শখানেক। সোনিয়া কড়া তাঁর যোগ্যতা বলে সে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সাঁওতাল সমাজ পুরুষপ্রধান হলেও একজন বাসন্তী মুর্মু তাঁর সংসারে এবং সমাজে সমান গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে।
কিন্তু তবুও মোটের ওপর দারিদ্র্যের চাপ যখন আসে, তা নারীকেই সবচেয়ে বেশি পিষ্ট করে। অভাবের দিনে কত নারীই তো বনের লতা কুড়ান, তিনি তো সন্তানদের অভুক্ত দেখতে পারেন না। চাষাবাদে সবখানেই নারীর ভূমিকা রয়েছে; বরং যেকোনো সমাজ যত বেশি সুশীল হয়ে ওঠে, সেই সমাজের নারীরা তত বেশি পরাধীন হতে থাকেন। অনেকে মনে করে, পাহাড়ের অধিবাসী পুরুষেরা তো সহজেই নেংটি ছেড়েছেন, তবে নারীকে কেন ঐতিহ্যবাহী পোশাক ধরে রাখতে হবে? সব সমাজেই ধরে রাখার দায় যেন নারীরই বেশি।
চাকমা, মারমা, ম্রো ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর নারীদের বিষয়ে ক্ষমতাধর স্থানীয় পুরুষদের আগ্রহ বেশি থাকে। তাই তাঁরা নিয়মিতই শারীরিক নিপীড়নের শিকার হন। অন্যদিকে, প্রেমে জড়ালে সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পড়েন। সব সমাজেই পুরুষ নিজেকে রাখেন মুক্ত আর নারীকে দেখতে চান শিকড় ছড়ানো শিকল পরারূপে। নারীর শরীর, তাঁর মমতা, আগলে রাখার গুণ তাঁর শক্তি না হয়ে শিকল হয়ে দাঁড়ায়। দারিদ্র্য এবং সমাজে ‘আদার’ হওয়ার বিড়ম্বনার সঙ্গে রয়েছে নারী হওয়ার বিড়ম্বনা। তাই সাঁওতাল, কড়া, গারোসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের অল্প কিছু নারীকে যেমন শক্তি নিয়ে বেরিয়ে পড়তে দেখি, বেশির ভাগকে দেখি সংসার এবং সমাজের দায় বহন করতে। সব মিলিয়ে তাদের দেখি ক্ষমতা এবং সুবিধা থেকে বহু বহু দূরে কোথাও!
লেখক: গবেষক ও শিক্ষক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

অনেক দিন আগে রবিন্স বার্লিং নামের একজন আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী ‘স্ট্রং উইমেন অব মধুপুর’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। যেসব অজানা কারণে মান্দি বা গারোদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল তার একটা কারণ হলো, মান্দি নারীদের জীবনযাপন অনেক বলিষ্ঠ। এই বলিষ্ঠতা আমার ভালো লাগে।
০৩ আগস্ট ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

অনেক দিন আগে রবিন্স বার্লিং নামের একজন আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী ‘স্ট্রং উইমেন অব মধুপুর’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। যেসব অজানা কারণে মান্দি বা গারোদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল তার একটা কারণ হলো, মান্দি নারীদের জীবনযাপন অনেক বলিষ্ঠ। এই বলিষ্ঠতা আমার ভালো লাগে।
০৩ আগস্ট ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

অনেক দিন আগে রবিন্স বার্লিং নামের একজন আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী ‘স্ট্রং উইমেন অব মধুপুর’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। যেসব অজানা কারণে মান্দি বা গারোদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল তার একটা কারণ হলো, মান্দি নারীদের জীবনযাপন অনেক বলিষ্ঠ। এই বলিষ্ঠতা আমার ভালো লাগে।
০৩ আগস্ট ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

অনেক দিন আগে রবিন্স বার্লিং নামের একজন আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী ‘স্ট্রং উইমেন অব মধুপুর’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। যেসব অজানা কারণে মান্দি বা গারোদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল তার একটা কারণ হলো, মান্দি নারীদের জীবনযাপন অনেক বলিষ্ঠ। এই বলিষ্ঠতা আমার ভালো লাগে।
০৩ আগস্ট ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫