Ajker Patrika

উপাচার্য সিন্ডিকেট

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত শব্দ ‘সিন্ডিকেট’। শব্দটি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে আশ্চর্য হওয়ার বিষয় যে, এবার স্বয়ং একজন উপাচার্যের নামে সিন্ডিকেট তৈরি করে তিনিসহ তাঁর গ্রুপের অন্য সদস্যদের আত্মীয়স্বজনকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি)। আজকের পত্রিকায় গত বুধবার ‘নিয়োগে বড় স্বজনপ্রীতি উপাচার্য সিন্ডিকেটের’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটাও বাস্তবায়িত হয়নি। আপন ভাতিজাসহ ১০ আত্মীয়কে চাকরি দিয়েছেন তিনি। তাঁর সিন্ডিকেটে আছেন সিকৃবি ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, কর্মচারী পরিষদের নেতৃবৃন্দ, একজন প্রভোস্ট ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার।

আমাদের দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা এবারই নতুন নয়, দেশের বেশ কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত সময়ে নানা ধরনের অপকর্মের অভিযোগ উঠেছিল উপাচার্যদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সিন্ডিকেট করে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা বুঝি এবারই প্রথম। সিন্ডিকেট শব্দটির সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থার কোনো রকম আপস হতে পারে না। অথচ সেটাই হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অপকর্মের সামনে পড়েন, তাহলে তাঁরা পরবর্তী জীবনে কোন ধরনের নৈতিকতা অর্জন করবেন?

আমাদের দেশে একসময় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হতো ব্যক্তির শিক্ষা, যোগ্যতা, পাণ্ডিত্য ও সামাজিক মর্যাদার কথা বিবেচনা করে। আমাদের স্মরণে থাকার কথা যে, মুক্তিযুদ্ধের পর নতুন স্বাধীন দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী। তাঁকে বঙ্গবন্ধু নিজে রাজি করিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়েও আমরা দেশের নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ যোগ্যতায়  উপাচার্যদের নিয়োগ দেখেছি। কিন্তু সেই পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটে যায় একসময়। প্রথমে এরশাদ আমলে দলীয় উপাচার্য নিয়োগের হিড়িক পড়ে। এরপর বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একইভাবে দলীয় সমর্থকদেরই কেবল উপাচার্যের পদের জন্য মনোনীত করতে থাকে।

এখন তো পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। একাধিক প্রার্থী থেকে কে উপাচার্য নিয়োগ পাবেন, তার জন্য চলে সীমাহীন প্রতিযোগিতা। আর সেই যোগ্যতার অন্যতম মাপকাঠি হলো, দলীয় আনুগত্যে কোন ব্যক্তি কাকে ডিঙাতে পারবেন। এই যদি হয় বাস্তব পরিস্থিতি, তাহলে আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই সমস্যা যে এক মহামারি আকার ধারণ করেছে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের নানা সমস্যা নিয়ে কি শুধু আলোচনাই হবে, নাকি সমাধানের উপায় বের করা হবে? সময় অনেক পেরিয়ে গেছে। এখন আমাদের এই রোগ নির্মূলের আসল উপায় আবিষ্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছু তদারক করার দায়িত্ব ইউজিসির। তাই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করে এর সত্যতা পাওয়া গেলে তাঁকে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত