Ajker Patrika

কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে ব্যবহার ছাড়াই

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২১, ১৭: ০৩
কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে ব্যবহার ছাড়াই

১০ বছরেও চালু হয়নি সাতক্ষীরার মোরগ-মুরগি পালন কেন্দ্রের হ্যাচারিটি। মরিচা পড়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে কোটি টাকার মেশিনপত্র। মোরগ-মুরগি পালন, বাচ্চা উৎপাদনসহ কোনো কার্যক্রম না চলায় ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে সেখানে। অথচ প্রথম শ্রেণির একজন কর্মকর্তাসহ ৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো কাজ না করেই বসে বসে প্রতি মাসে বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন।

সাতক্ষীরা সরকারি মোরগ-মুরগি পালন কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে রসুলপুর এলাকায় ৩ একর জমির ওপর স্থাপিত হয় মোরগ-মুরগি প্রতিপালন কেন্দ্র। নিরাপদ প্রাণী পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও জনসাধারণের কল্যাণে গড়ে ওঠে এই সরকারি হাঁস-মুরগি খামার প্রজনন কেন্দ্র। ২০১১ সালে প্রতিপালন কেন্দ্রটিকে পূর্ণাঙ্গ হ্যাচারি করার জন্য ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি ব্যারাক তৈরি করা হয়। বসানো হয় কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ।

সরেজমিনে দেখা যায়, মুরগি পালনের চারটি শেডের মধ্যে তিনটি এবং ভবনগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ১০ বছর আগে প্রতিপালন কেন্দ্রটিকে পূর্ণাঙ্গ হ্যাচারি করার জন্য ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি ব্যারাক তৈরি করা হলেও তা আজও চালু হয়নি। রয়েছে জনবল সংকট। হ্যাচারি ভবনে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো ইনকিউবেটর মেশিন থাকলেও তা দিয়ে এক দিনও বাচ্চা ফোটানো হয়নি। বছরের পর বছর পড়ে থেকে মরিচা ধরে মেশিনটি এখন অকেজো অবস্থায় আছে। কালেভদ্রে দুই এক বার বাইরে থেকে মুরগির বাচ্চা এনে এখানে খামারে পালন করা হয়।

আরও দেখা যায়, প্রশাসনিক ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে। মোরগ ও মুরগি পালনের চারটি শেডের তিনটিই পরিত্যক্ত। নেই কোনো কার্যক্রম। বাচ্চা উৎপাদনের হ্যাচারি ভবনটি রয়েছে তালাবদ্ধ। খামারের জন্য বরাদ্দ করা জনবল সাতজন। এর মধ্যে চারটি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। যশোর সরকারি মুরগি প্রজনন উন্নয়ন খামারের আওতায় পরিচালিত হয়ে আসছে সাতক্ষীরার সরকারি এই হাঁস-মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার। যশোর থেকে মুরগির বাচ্চা এনে দায়িত্বরতরা এখানে লালন-পালন করে থাকেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বছরে এখানে মাত্র দু-একবার মুরগির বাচ্চা নিয়ে এসে লালন-পালন করা হয়। এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। সরকার হয় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চালু করুক অথবা বন্ধ করে দিয়ে সরকারি অন্য কোনো কাজে লাগাক।

খামারের পোলট্রি ডেভেলপমেন্ট অফিসার কে এম সাদ্দাম হোসেন জানান, লোকবল সংকট, সংস্কার ও পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাবে কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করা যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠার এক বছরের মাথায় খামারের হ্যাচারিতে প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ করে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য ইনকিউবেটর মেশিন বসানো হয়। সেখানে একদিনের জন্যও বাচ্চা উৎপাদন করেননি আগের কর্মকর্তারা। আমি সদ্য যোগদানের পর দেখলাম খামারটির বেহাল দশা।

তিনি বলেন, কার্যক্রম না থাকায় হ্যাচারি ভবনটি পরিত্যক্ত গুদামে পরিণত হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ২০ হাজার মুরগি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৪২০টি ফাউমি ও সোনালি জাতের মুরগি উৎপাদন করে তা খামারিদের মধ্যে বিক্রি করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু জানান, মাংস ও মুরগির ডিম মানুষের সুস্বাস্থ্যের অন্যতম উপাদান। নিরাপদ প্রাণী পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত এবং দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য দ্রুত সাতক্ষীরা সরকারি মোরগ-মুরগি প্রজনন কেন্দ্রের কার্যক্রম সচল করা খুবই জরুরি। তা না হলে শুধু শুধু সরকারের অর্থ অপচয় হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...