Ajker Patrika

কেঁচো সার এনেছে সচ্ছলতা তানিয়ার সংসারে

ফরিদপুর সংবাদদাতা
কেঁচো সার এনেছে সচ্ছলতা তানিয়ার সংসারে

ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন ফরিদপুরের তানিয়া পারভীন। তাঁর উৎপাদিত সারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এই সার মাটি তাজা করে। কোনো ক্ষতিকর দিক নেই, দামেও বেশ সস্তা। তাই কৃষকেরও পছন্দ এই সার।

বাড়িতে বসেই কেঁচো ব্যবহার করে জৈব সার তৈরি করছেন তিনি। নিজেদের জমির চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায়। মাসে প্রায় লাখ টাকা আয় করছেন উদ্যোক্তা তানিয়া।
ফরিদপুর পৌরসভার শোভারামপুর এলাকার বাসিন্দা তানিয়া। স্বামী ইদ্রিস সিকদার। দুই সন্তান নিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল তাঁর। হঠাৎ একদিন ইউটিউবে জৈব সারের তৈরি প্রক্রিয়া দেখে আগ্রহী হন। এরপর তানিয়া স্থানীয় কৃষি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন জৈব সার তৈরি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ২০১৭ সালে তিনটি রিং স্ল্যাব দিয়ে কেঁচো সারের উৎপাদন শুরু করেন তানিয়া। এরপর ধীরে ধীরে বাড়িয়েছেন উৎপাদনের পরিধি। বাড়ির উঠানে তিনটি বিশাল টিনের শেড উঠিয়ে বসিয়েছেন ৩৬টি হাউস বা চৌবাচ্চা। প্রতিটি হাউস ৪ ফুট বাই ১০ ফুটের।

সার উৎপাদনের জন্য প্রতিটি হাউসে ৪০ মণ গোবর, শাকসবজির উচ্ছিষ্টাংশ ও কলাগাছের টুকরার মিশ্রণ রেখে তাতে ১০ কেজি কেঁচো ছেড়ে দেওয়া হয়। তারপর হাউস ঢেকে দেওয়া হয় চটের বস্তা দিয়ে। এভাবে এক মাস ঢেকে রাখার পর তৈরি হয় ভার্মি কম্পোস্ট সার। প্রতি মাসে তানিয়ার ৩৬টি হাউস থেকে সব মিলিয়ে ১২ থেকে ১৫ টন সার উৎপাদিত হয়। প্রতি কেজি সারের বিক্রয়মূল্য খুচরা ১৫ টাকা ও পাইকারি ১২ টাকা। খরচ বাদে প্রতি মাসে তানিয়ার আয় হয় প্রায় এক লাখ টাকা।

তানিয়া বলেন, স্বামীর রোজগারে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। ইউটিউবে জৈব সার তৈরি প্রক্রিয়া দেখে আগ্রহী হন। এরপর কৃষি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন জৈব সার তৈরি। প্রথমে একটি শেডে ১২টি, পরে একটি ছাপরা তৈরি করে সেখানে আরও ১২টি হাউস নির্মাণ করেন। এখন তিনটি শেডে ৩৬টি হাউস বা চৌবাচ্চা রয়েছে। ১২ থেকে ১৫ টন জৈব সার উৎপাদিত হয়।

তানিয়া আরও বলেন, ‘প্রায় এক লাখ টাকা মাসে আয় হচ্ছে। স্বামী-সন্তান নিয়ে অনেক ভালো আছি। এখন অনেক নারী আমার কাছ থেকে জৈব সার তৈরি করা শিখতে আসছে।’

অম্বিকাপুর গ্রামের বাসিন্দা চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে রাসায়নিক সারের তুলনায় জৈব সারের দাম কম, তাই আমরা জমিতে জৈব সার ব্যবহার শুরু করেছি। ভালো ফলও পাচ্ছি।’
পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাফর খান বলেন, ‘তানিয়ার এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তিনি এখন স্বাবলম্বী। তাঁর সঙ্গে কাজ করছেন পাঁচ-ছয়জন শ্রমিক। নিজের সংসার চলছে ভালোভাবে, পাশাপাশি আরও কিছু মানুষের সংসার চালাচ্ছেন তানিয়া।’

ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তানিয়ার আগ্রহের কারণেই আমরা তাঁকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। মাঝেমধ্যেই তাঁর খামারে গিয়ে পরামর্শ দিই। তানিয়ার দেখাদেখি এখন অনেকে এই জৈব সার উৎপাদন শুরু করেছে। তানিয়ার তৈরি জৈব সার এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলাতেও পাঠানো হচ্ছে। চাষিরাও এই সার ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত