স্বরোচিষ সরকার

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এসব বই থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখতে পারবে আর কী শিখতে পারবে না, তা নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকেরা চিন্তিত। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের নেতিবাচক কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে তাঁদের চিন্তার মাত্রাও বেড়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যপুস্তক থেকে শিক্ষার্থীরা আসলে কী শিখবে আর কী শিখতে পারবে না, তা কেউ ভালোভাবে যাচাই করে দেখছেন না।
মাঝে মাঝে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আসাটা জরুরি। কারণ সময়ের ব্যবধানে জ্ঞানবিজ্ঞানের অগ্রগতি হয়, নতুন নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটে, এমনকি মূল্যবোধেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে। এগুলোর সঙ্গে শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যপুস্তককে মানিয়ে নিতে গিয়ে পাঠপদ্ধতিতে ও পাঠ্য বিষয়ে পরিবর্তন না এনে পারা যায় না। ফলে পাঠ্যপুস্তকে নতুন বিষয় যুক্ত হয়, আবার বহু পুরোনো বিষয় বাদ পড়ে। এটাই স্বাভাবিক। মাধ্যমিকের নতুন বাংলা বইগুলোর দিকে তাকিয়ে এই পরিবর্তনের প্রকৃতি উপলব্ধি করা যাক।
প্রযুক্তির পরিবর্তনের ফলে পাঠ্য বিষয়ের পরিবর্তন কতটা অপরিহার্য, বাংলা রচনা শেখানোর ছোট একটা উদাহরণ দিয়ে তা বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে। যেমন আগেকার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ে পিতার কাছে টাকা চেয়ে পুত্রের চিঠি লেখা শেখানো হতো, তাই সেখানে খামের ছবি থাকত, থাকত ঠিকানা লেখার জায়গা। কিন্তু প্রযুক্তির পরিবর্তনে ডাকঘরের প্রয়োজনীয়তা কমে যাওয়ায় এখনকার পুত্ররা তার প্রয়োজনের কথা মোবাইলের মাধ্যমে জানায়। আর্থসামাজিক বাস্তবতার পরিবর্তন ঘটায় কন্যারও টাকার দরকার হয়, মাতার কাছেও টাকা চাইতে হয়। তাই পুত্র বা কন্যাকে এখন পিতা বা মাতা টাকা পাঠান বিকাশ-নগদের মাধ্যমে। নতুন এই প্রজন্মের কাছে তাই পিতার কাছে টাকা চেয়ে পুত্রের চিঠি লেখা শেখানোর কোনো মানে হয় না।
নতুন পাঠ্যপুস্তক রচনার সময়ে এই সমকালীনতার পাশাপাশি আরও অনেক কিছুই হয়তো খেয়াল রাখতে হয়। যেমন অন্তর্ভুক্তি; অর্থাৎ পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব শিশু যেন সমানভাবে একাত্মতা অনুভব করতে পারে। আবার ছেলে বা মেয়ে কেউ যেন মনে না করে তাকে কম গুরুত্ব দেওয়া হলো। নানাভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীও যেন এই শিক্ষাক্রমে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, সেদিকে খেয়াল রাখাও অন্তর্ভুক্তির কাজ। বাংলা বইগুলো রচনার সময়ে এই অন্তর্ভুক্তিকে দেখতে গিয়ে অনেক বিষয়কে নতুনভাবে যোগ করতে হয় এবং অনেক বিষয়কে বাদ দিতে হয়, সেটাই স্বাভাবিক।
পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের সময়ে এসব কথা আগে কখনো ভেবে দেখা হয়েছে, তা মনে হয় না। শুধু এই অন্তর্ভুক্তিই নয়, এবারের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের আগে দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, কোন শ্রেণিতে কী পড়ানো হবে, একেক শ্রেণিতে শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হওয়ার পরে পাঠ্য বিষয়ে কী কী পরিবর্তন আসবে এবং প্রতিটি শ্রেণি সমাপ্ত করার পরে শিক্ষার্থী ঠিক কী কী যোগ্যতা অর্জন করবে। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত এমন সাতটি যোগ্যতার উল্লেখ বইগুলোর ভূমিকায় করা হয়েছে। এসব যোগ্যতা পূরণ করা সম্ভব হলে দশম শ্রেণির মধ্যেই শিক্ষার্থীর ভাষাদক্ষতা এমন অবস্থায় পৌঁছাবে, যাতে মাতৃভাষা বাংলায় সব ধরনের যোগাযোগ করতে শিক্ষার্থীরা সক্ষম হবে। সাহিত্যও যে যোগাযোগের একটা মাধ্যম, এই মাধ্যম লেখকের সঙ্গে পাঠককে যুক্ত করে, এবারের পাঠ্যপুস্তক থেকে সেটাও ভালো বোঝা যাচ্ছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, এতগুলো যোগ্যতা পূরণের জন্য প্রতিটি শ্রেণিতে মাত্র একটা বাংলা বই কি যথেষ্ট; যেখানে পূর্ববর্তী শিক্ষাক্রমে প্রতিটি শ্রেণিতে তিন-তিনটি বাংলা বই ছিল? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আগেকার কোনো একটি শ্রেণির তিনটি বইয়ের সঙ্গে বর্তমান শিক্ষাক্রমের ওই শ্রেণির বাংলা বইটির তুলনা করে দেখা যেতে পারে।
আগের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রতিটি শ্রেণিতে একটি ব্যাকরণ, একটি সাহিত্য পাঠ এবং একটি আনন্দ পাঠ পড়ানো হতো। মনে হতে পারে, বাংলা ভাষাদক্ষতাকে ভালোভাবে শেখাতে ব্যাকরণের কোনো বিকল্প নেই। ব্যাকরণের একটা সংজ্ঞাও ছিল এমন: যে বই পাঠ করলে শুদ্ধভাবে লিখতে পড়তে বলতে পারা যায়। কিন্তু ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত যেসব ব্যাকরণ পাঠ্য হিসেবে চালু ছিল, তা থেকে ওই উদ্দেশ্য পূরণ হতো না। সেখানে ভাষাতত্ত্বের বিভিন্ন জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা ছিল। ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব, অর্থতত্ত্বের বহু ধারণা সেখানে দেওয়া হতো।
এসব জ্ঞান শিক্ষার্থীর ভাষাদক্ষতা কীভাবে বাড়াতে পারে, তা নিয়ে কেউ ভাবেননি। এমনকি পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ভাষা শেখানোর জন্য কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হয়, তার সঙ্গে তুলনা করে দেখার চেষ্টাও কেউ করেননি। তাই এই ব্যাকরণ থেকে শিক্ষার্থীকে বহু ধরনের সূত্র মুখস্থ করতে হতো। এগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই আবার বাংলা ভাষার সূত্রও নয়। ধরা যাক ণ-ত্ব, ষ-ত্ব, সন্ধি—এর কোনোটাই বাংলা ভাষার নিয়ম নয়, সংস্কৃত ভাষার নিয়ম। বাংলা ভাষা শেখাতে কেন সংস্কৃত ভাষার নিয়ম শেখাতে হবে, তা নিয়ে আগেকার শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক ভাবিত ছিল না। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ব্যাকরণের একঘেয়ে পুনরুক্তির বিষয়টিও বিরক্তি সৃষ্টি করত। সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণিতেও যেসব বিষয় থাকত, অষ্টম শ্রেণিতেও তা থাকত, আবার নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণও এর চেয়ে আলাদা কিছু ছিল না।
এ ছাড়া আগেকার শিক্ষাক্রমে সাহিত্যবিষয়ক পাঠ্যপুস্তকে সংকলিত হতো বাংলা সাহিত্যের কিছু ধ্রুপদি নমুনা। মধ্যযুগের সাহিত্য থেকে হাল আমলের সাহিত্যিকের প্রধান প্রধান রচনা সেখানে স্থান পেত। এসব সাহিত্যে ব্যবহৃত শব্দরূপ বিচিত্র, এগুলোর বাক্যগঠন বহুমাত্রিক, উপস্থাপনশৈলীও আলাদা। যে ভাষা দিয়ে এই সব সাহিত্য রচিত, তা সমীহ করার মতো হলেও অনুসরণীয় নয়। তাই সেই ভাষাকে সবাই শ্রদ্ধা করত, ভয় করত, কিন্তু ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগের কথা কেউ ভাবত না। ভুল করে কেউ যদি তা অনুসরণের চেষ্টা করত, তা হয়ে উঠত হাস্যরসের উপাদান।
পূর্ববর্তী শিক্ষাক্রমের তৃতীয় বাংলা বইটি হলো আনন্দপাঠ। এটিকে বলা যেতে পারে সাহিত্য সংকলনেরই একটি প্রলম্বিত অংশ। দুটি বইয়ের মধ্যে বিশেষ কোনো তফাত নেই। বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটানোই দুটি বইয়ের মূল উদ্দেশ্য, সেটি হয়তো খানিকটা সফল হয়। কিন্তু সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার গঠন নিয়ে কোনো আলোচনা না থাকায়, এসব রচনা শিক্ষার্থীর মনে বিশেষ কোনো ছাপ ফেলে না।
এ তিনটি বইয়ের বিপরীতে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত নতুন বাংলা বইটির তুলনা করা যাক। নতুন বইটির অভিনবত্ব এর উপস্থাপন কৌশলে এবং পাঠ নির্বাচনে। এখানে সুপরিকল্পিতভাবে অধ্যায়গুলো বিন্যস্ত, এখানে একেকটি যোগ্যতা পূরণের লক্ষ্যে একেকটি অধ্যায়। প্রয়োজনে অধ্যায়ের মধ্যে আলাদা আলাদা পরিচ্ছেদ। ধরা যাক একটি যোগ্যতা হলো: প্রমিত ভাষায় যোগাযোগদক্ষতার উন্নয়ন। নতুন বইয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ের একাধিক পরিচ্ছেদে ধাপে ধাপে এই যোগ্যতা অর্জনের কৌশল ও পাঠ ঠিক করা হয়েছে। যেমন ষষ্ঠ শ্রেণিতে দেওয়া হয়েছে প্রমিত ভাষায় কথা বলার জন্য উচ্চারণের ব্যাকরণিক কিছু দিক, যার মধ্যে রয়েছে কাছাকাছি উচ্চারণের শব্দ এবং শব্দগুলোর মধ্যে ধ্বনির তফাত নির্ধারণ, আবার শিক্ষার্থীকে ধ্বনিসচেতন করার জন্য রাখা হয়েছে একটি কবিতা ও একটি নাটিকা।
কবিতা ও নাটিকার অনুশীলনীর মধ্যেও মূল যোগ্যতার বিষয়টি মনে রাখা হয়েছে। একই যোগ্যতার জন্য সপ্তম শ্রেণিতে রাখা হয়েছে ধ্বনির ঘোষ-অঘোষ পার্থক্য এবং আঞ্চলিকতার বিষয়। সেখানেও একটি কবিতা এবং একটি গল্পকে সহায়ক পাঠ হিসেবে রাখা হয়েছে। অভিন্ন যোগ্যতা নিয়ে প্রণীত অষ্টম শ্রেণির সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে ধ্বনির অল্পপ্রাণতা-মহাপ্রাণতার পাশাপাশি ধ্বনির সঙ্গে বাক্প্রত্যঙ্গের সম্পর্ক এবং লেখ্য প্রমিত রীতির পাঠ। এ জন্য এই শ্রেণিতে প্রয়োজন হয়েছে তিনটি সাহিত্যিক নমুনা: একটি কবিতা এবং দুটি গল্প। প্রমিত ভাষায় দক্ষ করে তুলতে নবম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের এই অংশে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে স্বরধ্বনি উচ্চারণ এবং প্রমিত ভাষার একাধিক স্তর ও সাধুভাষারীতির সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি। এ জন্য এই শ্রেণিতে প্রয়োজন হয়েছে একটি কবিতা, একটি আঞ্চলিক ভাষাসমৃদ্ধ গল্পের পাঠ এবং একটি সাধুভাষারীতিতে লিখিত সাহিত্যের পাঠ।
নতুন পাঠ্যপুস্তকে এভাবে প্রতিটি যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে শ্রেণি অনুযায়ী ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সবকিছুই এখানে পরিকল্পিত, কোনো রচনাই এখানে অপ্রয়োজনে আনা হয়নি, আবার বাংলাদেশের বা বাংলা সাহিত্যের প্রতিনিধিত্বশীল প্রায় সব লেখকের লেখার সঙ্গে যাতে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটে, সে চেষ্টাও করা হয়েছে।
এভাবে মাধ্যমিকের নতুন বাংলা পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সেই সব বিষয় শেখানোর চেষ্টা আছে, যেগুলো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনে সব ধরনের যোগাযোগের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে, আবার শেখানোর বিষয় থেকে সেগুলোকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যেগুলো তার ভবিষ্যৎ জীবনের প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কাজে আসবে না। নতুন এই পাঠ্যপুস্তকে সাহিত্যকে আনা হয়েছে দুইভাবে: সাহিত্য নিজেই একটা যোগাযোগমাধ্যম, সেই যুক্তিতে; আবার ভাষাদক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রায়োগিক উদাহরণ হিসেবে।
এবারের অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইয়ে শামসুর রাহমানের ‘পণ্ডশ্রম’ নামের একটি কবিতা পাঠ্য করা হয়েছে। কবিতাটির মূল কথা: কোনো কিছু ঠিকমতো যাচাই না করে সিদ্ধান্ত নিতে নেই; চোখ দিয়ে দেখে, কান দিয়ে শুনে, বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্তে আসতে হয়। নতুন পাঠ্যপুস্তক নিয়ে যাঁরা নেতিবাচক প্রচারণা করছেন, তাঁদের হয়তো কোনো মিশন আছে, কিন্তু যাঁরা এগুলো শুনছেন বা শুনতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁদের কাছে বিশেষ অনুরোধ: নতুন পাঠ্যপুস্তককে আগেকার পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে একটু তুলনা করে দেখুন। নতুন বইয়ে কী কী শেখানো হচ্ছে, তা যুক্তিযুক্ত এবং সমকালের প্রয়োজনে হচ্ছে কি না, ভাবুন। আবার যেগুলো শেখানো হচ্ছে না, সেগুলোর পরিহার যৌক্তিক কি না, তা নিয়েও চিন্তা করুন। এই বিবেচনায় নতুন পাঠ্যপুস্তকের মধ্যেও যদি কোনো ঘাটতি থাকে, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে তা অবগত করিয়ে বর্তমান প্রক্রিয়ার সহযোগী হয়ে উঠুন। নতুন বইগুলোর সূচনা বক্তব্যে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডও এমন আহ্বান জানিয়েছে।
লেখক: স্বরোচিষ সরকার, অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এসব বই থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখতে পারবে আর কী শিখতে পারবে না, তা নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকেরা চিন্তিত। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের নেতিবাচক কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে তাঁদের চিন্তার মাত্রাও বেড়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যপুস্তক থেকে শিক্ষার্থীরা আসলে কী শিখবে আর কী শিখতে পারবে না, তা কেউ ভালোভাবে যাচাই করে দেখছেন না।
মাঝে মাঝে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আসাটা জরুরি। কারণ সময়ের ব্যবধানে জ্ঞানবিজ্ঞানের অগ্রগতি হয়, নতুন নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটে, এমনকি মূল্যবোধেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে। এগুলোর সঙ্গে শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যপুস্তককে মানিয়ে নিতে গিয়ে পাঠপদ্ধতিতে ও পাঠ্য বিষয়ে পরিবর্তন না এনে পারা যায় না। ফলে পাঠ্যপুস্তকে নতুন বিষয় যুক্ত হয়, আবার বহু পুরোনো বিষয় বাদ পড়ে। এটাই স্বাভাবিক। মাধ্যমিকের নতুন বাংলা বইগুলোর দিকে তাকিয়ে এই পরিবর্তনের প্রকৃতি উপলব্ধি করা যাক।
প্রযুক্তির পরিবর্তনের ফলে পাঠ্য বিষয়ের পরিবর্তন কতটা অপরিহার্য, বাংলা রচনা শেখানোর ছোট একটা উদাহরণ দিয়ে তা বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে। যেমন আগেকার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ে পিতার কাছে টাকা চেয়ে পুত্রের চিঠি লেখা শেখানো হতো, তাই সেখানে খামের ছবি থাকত, থাকত ঠিকানা লেখার জায়গা। কিন্তু প্রযুক্তির পরিবর্তনে ডাকঘরের প্রয়োজনীয়তা কমে যাওয়ায় এখনকার পুত্ররা তার প্রয়োজনের কথা মোবাইলের মাধ্যমে জানায়। আর্থসামাজিক বাস্তবতার পরিবর্তন ঘটায় কন্যারও টাকার দরকার হয়, মাতার কাছেও টাকা চাইতে হয়। তাই পুত্র বা কন্যাকে এখন পিতা বা মাতা টাকা পাঠান বিকাশ-নগদের মাধ্যমে। নতুন এই প্রজন্মের কাছে তাই পিতার কাছে টাকা চেয়ে পুত্রের চিঠি লেখা শেখানোর কোনো মানে হয় না।
নতুন পাঠ্যপুস্তক রচনার সময়ে এই সমকালীনতার পাশাপাশি আরও অনেক কিছুই হয়তো খেয়াল রাখতে হয়। যেমন অন্তর্ভুক্তি; অর্থাৎ পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব শিশু যেন সমানভাবে একাত্মতা অনুভব করতে পারে। আবার ছেলে বা মেয়ে কেউ যেন মনে না করে তাকে কম গুরুত্ব দেওয়া হলো। নানাভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীও যেন এই শিক্ষাক্রমে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, সেদিকে খেয়াল রাখাও অন্তর্ভুক্তির কাজ। বাংলা বইগুলো রচনার সময়ে এই অন্তর্ভুক্তিকে দেখতে গিয়ে অনেক বিষয়কে নতুনভাবে যোগ করতে হয় এবং অনেক বিষয়কে বাদ দিতে হয়, সেটাই স্বাভাবিক।
পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের সময়ে এসব কথা আগে কখনো ভেবে দেখা হয়েছে, তা মনে হয় না। শুধু এই অন্তর্ভুক্তিই নয়, এবারের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের আগে দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, কোন শ্রেণিতে কী পড়ানো হবে, একেক শ্রেণিতে শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হওয়ার পরে পাঠ্য বিষয়ে কী কী পরিবর্তন আসবে এবং প্রতিটি শ্রেণি সমাপ্ত করার পরে শিক্ষার্থী ঠিক কী কী যোগ্যতা অর্জন করবে। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত এমন সাতটি যোগ্যতার উল্লেখ বইগুলোর ভূমিকায় করা হয়েছে। এসব যোগ্যতা পূরণ করা সম্ভব হলে দশম শ্রেণির মধ্যেই শিক্ষার্থীর ভাষাদক্ষতা এমন অবস্থায় পৌঁছাবে, যাতে মাতৃভাষা বাংলায় সব ধরনের যোগাযোগ করতে শিক্ষার্থীরা সক্ষম হবে। সাহিত্যও যে যোগাযোগের একটা মাধ্যম, এই মাধ্যম লেখকের সঙ্গে পাঠককে যুক্ত করে, এবারের পাঠ্যপুস্তক থেকে সেটাও ভালো বোঝা যাচ্ছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, এতগুলো যোগ্যতা পূরণের জন্য প্রতিটি শ্রেণিতে মাত্র একটা বাংলা বই কি যথেষ্ট; যেখানে পূর্ববর্তী শিক্ষাক্রমে প্রতিটি শ্রেণিতে তিন-তিনটি বাংলা বই ছিল? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আগেকার কোনো একটি শ্রেণির তিনটি বইয়ের সঙ্গে বর্তমান শিক্ষাক্রমের ওই শ্রেণির বাংলা বইটির তুলনা করে দেখা যেতে পারে।
আগের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রতিটি শ্রেণিতে একটি ব্যাকরণ, একটি সাহিত্য পাঠ এবং একটি আনন্দ পাঠ পড়ানো হতো। মনে হতে পারে, বাংলা ভাষাদক্ষতাকে ভালোভাবে শেখাতে ব্যাকরণের কোনো বিকল্প নেই। ব্যাকরণের একটা সংজ্ঞাও ছিল এমন: যে বই পাঠ করলে শুদ্ধভাবে লিখতে পড়তে বলতে পারা যায়। কিন্তু ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত যেসব ব্যাকরণ পাঠ্য হিসেবে চালু ছিল, তা থেকে ওই উদ্দেশ্য পূরণ হতো না। সেখানে ভাষাতত্ত্বের বিভিন্ন জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা ছিল। ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব, অর্থতত্ত্বের বহু ধারণা সেখানে দেওয়া হতো।
এসব জ্ঞান শিক্ষার্থীর ভাষাদক্ষতা কীভাবে বাড়াতে পারে, তা নিয়ে কেউ ভাবেননি। এমনকি পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ভাষা শেখানোর জন্য কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হয়, তার সঙ্গে তুলনা করে দেখার চেষ্টাও কেউ করেননি। তাই এই ব্যাকরণ থেকে শিক্ষার্থীকে বহু ধরনের সূত্র মুখস্থ করতে হতো। এগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই আবার বাংলা ভাষার সূত্রও নয়। ধরা যাক ণ-ত্ব, ষ-ত্ব, সন্ধি—এর কোনোটাই বাংলা ভাষার নিয়ম নয়, সংস্কৃত ভাষার নিয়ম। বাংলা ভাষা শেখাতে কেন সংস্কৃত ভাষার নিয়ম শেখাতে হবে, তা নিয়ে আগেকার শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক ভাবিত ছিল না। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ব্যাকরণের একঘেয়ে পুনরুক্তির বিষয়টিও বিরক্তি সৃষ্টি করত। সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণিতেও যেসব বিষয় থাকত, অষ্টম শ্রেণিতেও তা থাকত, আবার নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণও এর চেয়ে আলাদা কিছু ছিল না।
এ ছাড়া আগেকার শিক্ষাক্রমে সাহিত্যবিষয়ক পাঠ্যপুস্তকে সংকলিত হতো বাংলা সাহিত্যের কিছু ধ্রুপদি নমুনা। মধ্যযুগের সাহিত্য থেকে হাল আমলের সাহিত্যিকের প্রধান প্রধান রচনা সেখানে স্থান পেত। এসব সাহিত্যে ব্যবহৃত শব্দরূপ বিচিত্র, এগুলোর বাক্যগঠন বহুমাত্রিক, উপস্থাপনশৈলীও আলাদা। যে ভাষা দিয়ে এই সব সাহিত্য রচিত, তা সমীহ করার মতো হলেও অনুসরণীয় নয়। তাই সেই ভাষাকে সবাই শ্রদ্ধা করত, ভয় করত, কিন্তু ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগের কথা কেউ ভাবত না। ভুল করে কেউ যদি তা অনুসরণের চেষ্টা করত, তা হয়ে উঠত হাস্যরসের উপাদান।
পূর্ববর্তী শিক্ষাক্রমের তৃতীয় বাংলা বইটি হলো আনন্দপাঠ। এটিকে বলা যেতে পারে সাহিত্য সংকলনেরই একটি প্রলম্বিত অংশ। দুটি বইয়ের মধ্যে বিশেষ কোনো তফাত নেই। বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটানোই দুটি বইয়ের মূল উদ্দেশ্য, সেটি হয়তো খানিকটা সফল হয়। কিন্তু সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার গঠন নিয়ে কোনো আলোচনা না থাকায়, এসব রচনা শিক্ষার্থীর মনে বিশেষ কোনো ছাপ ফেলে না।
এ তিনটি বইয়ের বিপরীতে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত নতুন বাংলা বইটির তুলনা করা যাক। নতুন বইটির অভিনবত্ব এর উপস্থাপন কৌশলে এবং পাঠ নির্বাচনে। এখানে সুপরিকল্পিতভাবে অধ্যায়গুলো বিন্যস্ত, এখানে একেকটি যোগ্যতা পূরণের লক্ষ্যে একেকটি অধ্যায়। প্রয়োজনে অধ্যায়ের মধ্যে আলাদা আলাদা পরিচ্ছেদ। ধরা যাক একটি যোগ্যতা হলো: প্রমিত ভাষায় যোগাযোগদক্ষতার উন্নয়ন। নতুন বইয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ের একাধিক পরিচ্ছেদে ধাপে ধাপে এই যোগ্যতা অর্জনের কৌশল ও পাঠ ঠিক করা হয়েছে। যেমন ষষ্ঠ শ্রেণিতে দেওয়া হয়েছে প্রমিত ভাষায় কথা বলার জন্য উচ্চারণের ব্যাকরণিক কিছু দিক, যার মধ্যে রয়েছে কাছাকাছি উচ্চারণের শব্দ এবং শব্দগুলোর মধ্যে ধ্বনির তফাত নির্ধারণ, আবার শিক্ষার্থীকে ধ্বনিসচেতন করার জন্য রাখা হয়েছে একটি কবিতা ও একটি নাটিকা।
কবিতা ও নাটিকার অনুশীলনীর মধ্যেও মূল যোগ্যতার বিষয়টি মনে রাখা হয়েছে। একই যোগ্যতার জন্য সপ্তম শ্রেণিতে রাখা হয়েছে ধ্বনির ঘোষ-অঘোষ পার্থক্য এবং আঞ্চলিকতার বিষয়। সেখানেও একটি কবিতা এবং একটি গল্পকে সহায়ক পাঠ হিসেবে রাখা হয়েছে। অভিন্ন যোগ্যতা নিয়ে প্রণীত অষ্টম শ্রেণির সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে ধ্বনির অল্পপ্রাণতা-মহাপ্রাণতার পাশাপাশি ধ্বনির সঙ্গে বাক্প্রত্যঙ্গের সম্পর্ক এবং লেখ্য প্রমিত রীতির পাঠ। এ জন্য এই শ্রেণিতে প্রয়োজন হয়েছে তিনটি সাহিত্যিক নমুনা: একটি কবিতা এবং দুটি গল্প। প্রমিত ভাষায় দক্ষ করে তুলতে নবম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের এই অংশে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে স্বরধ্বনি উচ্চারণ এবং প্রমিত ভাষার একাধিক স্তর ও সাধুভাষারীতির সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি। এ জন্য এই শ্রেণিতে প্রয়োজন হয়েছে একটি কবিতা, একটি আঞ্চলিক ভাষাসমৃদ্ধ গল্পের পাঠ এবং একটি সাধুভাষারীতিতে লিখিত সাহিত্যের পাঠ।
নতুন পাঠ্যপুস্তকে এভাবে প্রতিটি যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে শ্রেণি অনুযায়ী ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সবকিছুই এখানে পরিকল্পিত, কোনো রচনাই এখানে অপ্রয়োজনে আনা হয়নি, আবার বাংলাদেশের বা বাংলা সাহিত্যের প্রতিনিধিত্বশীল প্রায় সব লেখকের লেখার সঙ্গে যাতে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটে, সে চেষ্টাও করা হয়েছে।
এভাবে মাধ্যমিকের নতুন বাংলা পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সেই সব বিষয় শেখানোর চেষ্টা আছে, যেগুলো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনে সব ধরনের যোগাযোগের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে, আবার শেখানোর বিষয় থেকে সেগুলোকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যেগুলো তার ভবিষ্যৎ জীবনের প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কাজে আসবে না। নতুন এই পাঠ্যপুস্তকে সাহিত্যকে আনা হয়েছে দুইভাবে: সাহিত্য নিজেই একটা যোগাযোগমাধ্যম, সেই যুক্তিতে; আবার ভাষাদক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রায়োগিক উদাহরণ হিসেবে।
এবারের অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইয়ে শামসুর রাহমানের ‘পণ্ডশ্রম’ নামের একটি কবিতা পাঠ্য করা হয়েছে। কবিতাটির মূল কথা: কোনো কিছু ঠিকমতো যাচাই না করে সিদ্ধান্ত নিতে নেই; চোখ দিয়ে দেখে, কান দিয়ে শুনে, বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্তে আসতে হয়। নতুন পাঠ্যপুস্তক নিয়ে যাঁরা নেতিবাচক প্রচারণা করছেন, তাঁদের হয়তো কোনো মিশন আছে, কিন্তু যাঁরা এগুলো শুনছেন বা শুনতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁদের কাছে বিশেষ অনুরোধ: নতুন পাঠ্যপুস্তককে আগেকার পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে একটু তুলনা করে দেখুন। নতুন বইয়ে কী কী শেখানো হচ্ছে, তা যুক্তিযুক্ত এবং সমকালের প্রয়োজনে হচ্ছে কি না, ভাবুন। আবার যেগুলো শেখানো হচ্ছে না, সেগুলোর পরিহার যৌক্তিক কি না, তা নিয়েও চিন্তা করুন। এই বিবেচনায় নতুন পাঠ্যপুস্তকের মধ্যেও যদি কোনো ঘাটতি থাকে, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে তা অবগত করিয়ে বর্তমান প্রক্রিয়ার সহযোগী হয়ে উঠুন। নতুন বইগুলোর সূচনা বক্তব্যে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডও এমন আহ্বান জানিয়েছে।
লেখক: স্বরোচিষ সরকার, অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
স্বরোচিষ সরকার

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এসব বই থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখতে পারবে আর কী শিখতে পারবে না, তা নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকেরা চিন্তিত। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের নেতিবাচক কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে তাঁদের চিন্তার মাত্রাও বেড়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যপুস্তক থেকে শিক্ষার্থীরা আসলে কী শিখবে আর কী শিখতে পারবে না, তা কেউ ভালোভাবে যাচাই করে দেখছেন না।
মাঝে মাঝে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আসাটা জরুরি। কারণ সময়ের ব্যবধানে জ্ঞানবিজ্ঞানের অগ্রগতি হয়, নতুন নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটে, এমনকি মূল্যবোধেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে। এগুলোর সঙ্গে শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যপুস্তককে মানিয়ে নিতে গিয়ে পাঠপদ্ধতিতে ও পাঠ্য বিষয়ে পরিবর্তন না এনে পারা যায় না। ফলে পাঠ্যপুস্তকে নতুন বিষয় যুক্ত হয়, আবার বহু পুরোনো বিষয় বাদ পড়ে। এটাই স্বাভাবিক। মাধ্যমিকের নতুন বাংলা বইগুলোর দিকে তাকিয়ে এই পরিবর্তনের প্রকৃতি উপলব্ধি করা যাক।
প্রযুক্তির পরিবর্তনের ফলে পাঠ্য বিষয়ের পরিবর্তন কতটা অপরিহার্য, বাংলা রচনা শেখানোর ছোট একটা উদাহরণ দিয়ে তা বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে। যেমন আগেকার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ে পিতার কাছে টাকা চেয়ে পুত্রের চিঠি লেখা শেখানো হতো, তাই সেখানে খামের ছবি থাকত, থাকত ঠিকানা লেখার জায়গা। কিন্তু প্রযুক্তির পরিবর্তনে ডাকঘরের প্রয়োজনীয়তা কমে যাওয়ায় এখনকার পুত্ররা তার প্রয়োজনের কথা মোবাইলের মাধ্যমে জানায়। আর্থসামাজিক বাস্তবতার পরিবর্তন ঘটায় কন্যারও টাকার দরকার হয়, মাতার কাছেও টাকা চাইতে হয়। তাই পুত্র বা কন্যাকে এখন পিতা বা মাতা টাকা পাঠান বিকাশ-নগদের মাধ্যমে। নতুন এই প্রজন্মের কাছে তাই পিতার কাছে টাকা চেয়ে পুত্রের চিঠি লেখা শেখানোর কোনো মানে হয় না।
নতুন পাঠ্যপুস্তক রচনার সময়ে এই সমকালীনতার পাশাপাশি আরও অনেক কিছুই হয়তো খেয়াল রাখতে হয়। যেমন অন্তর্ভুক্তি; অর্থাৎ পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব শিশু যেন সমানভাবে একাত্মতা অনুভব করতে পারে। আবার ছেলে বা মেয়ে কেউ যেন মনে না করে তাকে কম গুরুত্ব দেওয়া হলো। নানাভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীও যেন এই শিক্ষাক্রমে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, সেদিকে খেয়াল রাখাও অন্তর্ভুক্তির কাজ। বাংলা বইগুলো রচনার সময়ে এই অন্তর্ভুক্তিকে দেখতে গিয়ে অনেক বিষয়কে নতুনভাবে যোগ করতে হয় এবং অনেক বিষয়কে বাদ দিতে হয়, সেটাই স্বাভাবিক।
পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের সময়ে এসব কথা আগে কখনো ভেবে দেখা হয়েছে, তা মনে হয় না। শুধু এই অন্তর্ভুক্তিই নয়, এবারের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের আগে দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, কোন শ্রেণিতে কী পড়ানো হবে, একেক শ্রেণিতে শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হওয়ার পরে পাঠ্য বিষয়ে কী কী পরিবর্তন আসবে এবং প্রতিটি শ্রেণি সমাপ্ত করার পরে শিক্ষার্থী ঠিক কী কী যোগ্যতা অর্জন করবে। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত এমন সাতটি যোগ্যতার উল্লেখ বইগুলোর ভূমিকায় করা হয়েছে। এসব যোগ্যতা পূরণ করা সম্ভব হলে দশম শ্রেণির মধ্যেই শিক্ষার্থীর ভাষাদক্ষতা এমন অবস্থায় পৌঁছাবে, যাতে মাতৃভাষা বাংলায় সব ধরনের যোগাযোগ করতে শিক্ষার্থীরা সক্ষম হবে। সাহিত্যও যে যোগাযোগের একটা মাধ্যম, এই মাধ্যম লেখকের সঙ্গে পাঠককে যুক্ত করে, এবারের পাঠ্যপুস্তক থেকে সেটাও ভালো বোঝা যাচ্ছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, এতগুলো যোগ্যতা পূরণের জন্য প্রতিটি শ্রেণিতে মাত্র একটা বাংলা বই কি যথেষ্ট; যেখানে পূর্ববর্তী শিক্ষাক্রমে প্রতিটি শ্রেণিতে তিন-তিনটি বাংলা বই ছিল? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আগেকার কোনো একটি শ্রেণির তিনটি বইয়ের সঙ্গে বর্তমান শিক্ষাক্রমের ওই শ্রেণির বাংলা বইটির তুলনা করে দেখা যেতে পারে।
আগের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রতিটি শ্রেণিতে একটি ব্যাকরণ, একটি সাহিত্য পাঠ এবং একটি আনন্দ পাঠ পড়ানো হতো। মনে হতে পারে, বাংলা ভাষাদক্ষতাকে ভালোভাবে শেখাতে ব্যাকরণের কোনো বিকল্প নেই। ব্যাকরণের একটা সংজ্ঞাও ছিল এমন: যে বই পাঠ করলে শুদ্ধভাবে লিখতে পড়তে বলতে পারা যায়। কিন্তু ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত যেসব ব্যাকরণ পাঠ্য হিসেবে চালু ছিল, তা থেকে ওই উদ্দেশ্য পূরণ হতো না। সেখানে ভাষাতত্ত্বের বিভিন্ন জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা ছিল। ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব, অর্থতত্ত্বের বহু ধারণা সেখানে দেওয়া হতো।
এসব জ্ঞান শিক্ষার্থীর ভাষাদক্ষতা কীভাবে বাড়াতে পারে, তা নিয়ে কেউ ভাবেননি। এমনকি পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ভাষা শেখানোর জন্য কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হয়, তার সঙ্গে তুলনা করে দেখার চেষ্টাও কেউ করেননি। তাই এই ব্যাকরণ থেকে শিক্ষার্থীকে বহু ধরনের সূত্র মুখস্থ করতে হতো। এগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই আবার বাংলা ভাষার সূত্রও নয়। ধরা যাক ণ-ত্ব, ষ-ত্ব, সন্ধি—এর কোনোটাই বাংলা ভাষার নিয়ম নয়, সংস্কৃত ভাষার নিয়ম। বাংলা ভাষা শেখাতে কেন সংস্কৃত ভাষার নিয়ম শেখাতে হবে, তা নিয়ে আগেকার শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক ভাবিত ছিল না। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ব্যাকরণের একঘেয়ে পুনরুক্তির বিষয়টিও বিরক্তি সৃষ্টি করত। সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণিতেও যেসব বিষয় থাকত, অষ্টম শ্রেণিতেও তা থাকত, আবার নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণও এর চেয়ে আলাদা কিছু ছিল না।
এ ছাড়া আগেকার শিক্ষাক্রমে সাহিত্যবিষয়ক পাঠ্যপুস্তকে সংকলিত হতো বাংলা সাহিত্যের কিছু ধ্রুপদি নমুনা। মধ্যযুগের সাহিত্য থেকে হাল আমলের সাহিত্যিকের প্রধান প্রধান রচনা সেখানে স্থান পেত। এসব সাহিত্যে ব্যবহৃত শব্দরূপ বিচিত্র, এগুলোর বাক্যগঠন বহুমাত্রিক, উপস্থাপনশৈলীও আলাদা। যে ভাষা দিয়ে এই সব সাহিত্য রচিত, তা সমীহ করার মতো হলেও অনুসরণীয় নয়। তাই সেই ভাষাকে সবাই শ্রদ্ধা করত, ভয় করত, কিন্তু ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগের কথা কেউ ভাবত না। ভুল করে কেউ যদি তা অনুসরণের চেষ্টা করত, তা হয়ে উঠত হাস্যরসের উপাদান।
পূর্ববর্তী শিক্ষাক্রমের তৃতীয় বাংলা বইটি হলো আনন্দপাঠ। এটিকে বলা যেতে পারে সাহিত্য সংকলনেরই একটি প্রলম্বিত অংশ। দুটি বইয়ের মধ্যে বিশেষ কোনো তফাত নেই। বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটানোই দুটি বইয়ের মূল উদ্দেশ্য, সেটি হয়তো খানিকটা সফল হয়। কিন্তু সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার গঠন নিয়ে কোনো আলোচনা না থাকায়, এসব রচনা শিক্ষার্থীর মনে বিশেষ কোনো ছাপ ফেলে না।
এ তিনটি বইয়ের বিপরীতে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত নতুন বাংলা বইটির তুলনা করা যাক। নতুন বইটির অভিনবত্ব এর উপস্থাপন কৌশলে এবং পাঠ নির্বাচনে। এখানে সুপরিকল্পিতভাবে অধ্যায়গুলো বিন্যস্ত, এখানে একেকটি যোগ্যতা পূরণের লক্ষ্যে একেকটি অধ্যায়। প্রয়োজনে অধ্যায়ের মধ্যে আলাদা আলাদা পরিচ্ছেদ। ধরা যাক একটি যোগ্যতা হলো: প্রমিত ভাষায় যোগাযোগদক্ষতার উন্নয়ন। নতুন বইয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ের একাধিক পরিচ্ছেদে ধাপে ধাপে এই যোগ্যতা অর্জনের কৌশল ও পাঠ ঠিক করা হয়েছে। যেমন ষষ্ঠ শ্রেণিতে দেওয়া হয়েছে প্রমিত ভাষায় কথা বলার জন্য উচ্চারণের ব্যাকরণিক কিছু দিক, যার মধ্যে রয়েছে কাছাকাছি উচ্চারণের শব্দ এবং শব্দগুলোর মধ্যে ধ্বনির তফাত নির্ধারণ, আবার শিক্ষার্থীকে ধ্বনিসচেতন করার জন্য রাখা হয়েছে একটি কবিতা ও একটি নাটিকা।
কবিতা ও নাটিকার অনুশীলনীর মধ্যেও মূল যোগ্যতার বিষয়টি মনে রাখা হয়েছে। একই যোগ্যতার জন্য সপ্তম শ্রেণিতে রাখা হয়েছে ধ্বনির ঘোষ-অঘোষ পার্থক্য এবং আঞ্চলিকতার বিষয়। সেখানেও একটি কবিতা এবং একটি গল্পকে সহায়ক পাঠ হিসেবে রাখা হয়েছে। অভিন্ন যোগ্যতা নিয়ে প্রণীত অষ্টম শ্রেণির সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে ধ্বনির অল্পপ্রাণতা-মহাপ্রাণতার পাশাপাশি ধ্বনির সঙ্গে বাক্প্রত্যঙ্গের সম্পর্ক এবং লেখ্য প্রমিত রীতির পাঠ। এ জন্য এই শ্রেণিতে প্রয়োজন হয়েছে তিনটি সাহিত্যিক নমুনা: একটি কবিতা এবং দুটি গল্প। প্রমিত ভাষায় দক্ষ করে তুলতে নবম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের এই অংশে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে স্বরধ্বনি উচ্চারণ এবং প্রমিত ভাষার একাধিক স্তর ও সাধুভাষারীতির সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি। এ জন্য এই শ্রেণিতে প্রয়োজন হয়েছে একটি কবিতা, একটি আঞ্চলিক ভাষাসমৃদ্ধ গল্পের পাঠ এবং একটি সাধুভাষারীতিতে লিখিত সাহিত্যের পাঠ।
নতুন পাঠ্যপুস্তকে এভাবে প্রতিটি যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে শ্রেণি অনুযায়ী ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সবকিছুই এখানে পরিকল্পিত, কোনো রচনাই এখানে অপ্রয়োজনে আনা হয়নি, আবার বাংলাদেশের বা বাংলা সাহিত্যের প্রতিনিধিত্বশীল প্রায় সব লেখকের লেখার সঙ্গে যাতে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটে, সে চেষ্টাও করা হয়েছে।
এভাবে মাধ্যমিকের নতুন বাংলা পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সেই সব বিষয় শেখানোর চেষ্টা আছে, যেগুলো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনে সব ধরনের যোগাযোগের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে, আবার শেখানোর বিষয় থেকে সেগুলোকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যেগুলো তার ভবিষ্যৎ জীবনের প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কাজে আসবে না। নতুন এই পাঠ্যপুস্তকে সাহিত্যকে আনা হয়েছে দুইভাবে: সাহিত্য নিজেই একটা যোগাযোগমাধ্যম, সেই যুক্তিতে; আবার ভাষাদক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রায়োগিক উদাহরণ হিসেবে।
এবারের অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইয়ে শামসুর রাহমানের ‘পণ্ডশ্রম’ নামের একটি কবিতা পাঠ্য করা হয়েছে। কবিতাটির মূল কথা: কোনো কিছু ঠিকমতো যাচাই না করে সিদ্ধান্ত নিতে নেই; চোখ দিয়ে দেখে, কান দিয়ে শুনে, বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্তে আসতে হয়। নতুন পাঠ্যপুস্তক নিয়ে যাঁরা নেতিবাচক প্রচারণা করছেন, তাঁদের হয়তো কোনো মিশন আছে, কিন্তু যাঁরা এগুলো শুনছেন বা শুনতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁদের কাছে বিশেষ অনুরোধ: নতুন পাঠ্যপুস্তককে আগেকার পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে একটু তুলনা করে দেখুন। নতুন বইয়ে কী কী শেখানো হচ্ছে, তা যুক্তিযুক্ত এবং সমকালের প্রয়োজনে হচ্ছে কি না, ভাবুন। আবার যেগুলো শেখানো হচ্ছে না, সেগুলোর পরিহার যৌক্তিক কি না, তা নিয়েও চিন্তা করুন। এই বিবেচনায় নতুন পাঠ্যপুস্তকের মধ্যেও যদি কোনো ঘাটতি থাকে, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে তা অবগত করিয়ে বর্তমান প্রক্রিয়ার সহযোগী হয়ে উঠুন। নতুন বইগুলোর সূচনা বক্তব্যে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডও এমন আহ্বান জানিয়েছে।
লেখক: স্বরোচিষ সরকার, অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এসব বই থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখতে পারবে আর কী শিখতে পারবে না, তা নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকেরা চিন্তিত। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের নেতিবাচক কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে তাঁদের চিন্তার মাত্রাও বেড়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যপুস্তক থেকে শিক্ষার্থীরা আসলে কী শিখবে আর কী শিখতে পারবে না, তা কেউ ভালোভাবে যাচাই করে দেখছেন না।
মাঝে মাঝে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আসাটা জরুরি। কারণ সময়ের ব্যবধানে জ্ঞানবিজ্ঞানের অগ্রগতি হয়, নতুন নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটে, এমনকি মূল্যবোধেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে। এগুলোর সঙ্গে শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যপুস্তককে মানিয়ে নিতে গিয়ে পাঠপদ্ধতিতে ও পাঠ্য বিষয়ে পরিবর্তন না এনে পারা যায় না। ফলে পাঠ্যপুস্তকে নতুন বিষয় যুক্ত হয়, আবার বহু পুরোনো বিষয় বাদ পড়ে। এটাই স্বাভাবিক। মাধ্যমিকের নতুন বাংলা বইগুলোর দিকে তাকিয়ে এই পরিবর্তনের প্রকৃতি উপলব্ধি করা যাক।
প্রযুক্তির পরিবর্তনের ফলে পাঠ্য বিষয়ের পরিবর্তন কতটা অপরিহার্য, বাংলা রচনা শেখানোর ছোট একটা উদাহরণ দিয়ে তা বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে। যেমন আগেকার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ে পিতার কাছে টাকা চেয়ে পুত্রের চিঠি লেখা শেখানো হতো, তাই সেখানে খামের ছবি থাকত, থাকত ঠিকানা লেখার জায়গা। কিন্তু প্রযুক্তির পরিবর্তনে ডাকঘরের প্রয়োজনীয়তা কমে যাওয়ায় এখনকার পুত্ররা তার প্রয়োজনের কথা মোবাইলের মাধ্যমে জানায়। আর্থসামাজিক বাস্তবতার পরিবর্তন ঘটায় কন্যারও টাকার দরকার হয়, মাতার কাছেও টাকা চাইতে হয়। তাই পুত্র বা কন্যাকে এখন পিতা বা মাতা টাকা পাঠান বিকাশ-নগদের মাধ্যমে। নতুন এই প্রজন্মের কাছে তাই পিতার কাছে টাকা চেয়ে পুত্রের চিঠি লেখা শেখানোর কোনো মানে হয় না।
নতুন পাঠ্যপুস্তক রচনার সময়ে এই সমকালীনতার পাশাপাশি আরও অনেক কিছুই হয়তো খেয়াল রাখতে হয়। যেমন অন্তর্ভুক্তি; অর্থাৎ পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব শিশু যেন সমানভাবে একাত্মতা অনুভব করতে পারে। আবার ছেলে বা মেয়ে কেউ যেন মনে না করে তাকে কম গুরুত্ব দেওয়া হলো। নানাভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীও যেন এই শিক্ষাক্রমে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, সেদিকে খেয়াল রাখাও অন্তর্ভুক্তির কাজ। বাংলা বইগুলো রচনার সময়ে এই অন্তর্ভুক্তিকে দেখতে গিয়ে অনেক বিষয়কে নতুনভাবে যোগ করতে হয় এবং অনেক বিষয়কে বাদ দিতে হয়, সেটাই স্বাভাবিক।
পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের সময়ে এসব কথা আগে কখনো ভেবে দেখা হয়েছে, তা মনে হয় না। শুধু এই অন্তর্ভুক্তিই নয়, এবারের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের আগে দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, কোন শ্রেণিতে কী পড়ানো হবে, একেক শ্রেণিতে শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হওয়ার পরে পাঠ্য বিষয়ে কী কী পরিবর্তন আসবে এবং প্রতিটি শ্রেণি সমাপ্ত করার পরে শিক্ষার্থী ঠিক কী কী যোগ্যতা অর্জন করবে। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত এমন সাতটি যোগ্যতার উল্লেখ বইগুলোর ভূমিকায় করা হয়েছে। এসব যোগ্যতা পূরণ করা সম্ভব হলে দশম শ্রেণির মধ্যেই শিক্ষার্থীর ভাষাদক্ষতা এমন অবস্থায় পৌঁছাবে, যাতে মাতৃভাষা বাংলায় সব ধরনের যোগাযোগ করতে শিক্ষার্থীরা সক্ষম হবে। সাহিত্যও যে যোগাযোগের একটা মাধ্যম, এই মাধ্যম লেখকের সঙ্গে পাঠককে যুক্ত করে, এবারের পাঠ্যপুস্তক থেকে সেটাও ভালো বোঝা যাচ্ছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, এতগুলো যোগ্যতা পূরণের জন্য প্রতিটি শ্রেণিতে মাত্র একটা বাংলা বই কি যথেষ্ট; যেখানে পূর্ববর্তী শিক্ষাক্রমে প্রতিটি শ্রেণিতে তিন-তিনটি বাংলা বই ছিল? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আগেকার কোনো একটি শ্রেণির তিনটি বইয়ের সঙ্গে বর্তমান শিক্ষাক্রমের ওই শ্রেণির বাংলা বইটির তুলনা করে দেখা যেতে পারে।
আগের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রতিটি শ্রেণিতে একটি ব্যাকরণ, একটি সাহিত্য পাঠ এবং একটি আনন্দ পাঠ পড়ানো হতো। মনে হতে পারে, বাংলা ভাষাদক্ষতাকে ভালোভাবে শেখাতে ব্যাকরণের কোনো বিকল্প নেই। ব্যাকরণের একটা সংজ্ঞাও ছিল এমন: যে বই পাঠ করলে শুদ্ধভাবে লিখতে পড়তে বলতে পারা যায়। কিন্তু ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত যেসব ব্যাকরণ পাঠ্য হিসেবে চালু ছিল, তা থেকে ওই উদ্দেশ্য পূরণ হতো না। সেখানে ভাষাতত্ত্বের বিভিন্ন জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা ছিল। ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব, অর্থতত্ত্বের বহু ধারণা সেখানে দেওয়া হতো।
এসব জ্ঞান শিক্ষার্থীর ভাষাদক্ষতা কীভাবে বাড়াতে পারে, তা নিয়ে কেউ ভাবেননি। এমনকি পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ভাষা শেখানোর জন্য কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হয়, তার সঙ্গে তুলনা করে দেখার চেষ্টাও কেউ করেননি। তাই এই ব্যাকরণ থেকে শিক্ষার্থীকে বহু ধরনের সূত্র মুখস্থ করতে হতো। এগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই আবার বাংলা ভাষার সূত্রও নয়। ধরা যাক ণ-ত্ব, ষ-ত্ব, সন্ধি—এর কোনোটাই বাংলা ভাষার নিয়ম নয়, সংস্কৃত ভাষার নিয়ম। বাংলা ভাষা শেখাতে কেন সংস্কৃত ভাষার নিয়ম শেখাতে হবে, তা নিয়ে আগেকার শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক ভাবিত ছিল না। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ব্যাকরণের একঘেয়ে পুনরুক্তির বিষয়টিও বিরক্তি সৃষ্টি করত। সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণিতেও যেসব বিষয় থাকত, অষ্টম শ্রেণিতেও তা থাকত, আবার নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণও এর চেয়ে আলাদা কিছু ছিল না।
এ ছাড়া আগেকার শিক্ষাক্রমে সাহিত্যবিষয়ক পাঠ্যপুস্তকে সংকলিত হতো বাংলা সাহিত্যের কিছু ধ্রুপদি নমুনা। মধ্যযুগের সাহিত্য থেকে হাল আমলের সাহিত্যিকের প্রধান প্রধান রচনা সেখানে স্থান পেত। এসব সাহিত্যে ব্যবহৃত শব্দরূপ বিচিত্র, এগুলোর বাক্যগঠন বহুমাত্রিক, উপস্থাপনশৈলীও আলাদা। যে ভাষা দিয়ে এই সব সাহিত্য রচিত, তা সমীহ করার মতো হলেও অনুসরণীয় নয়। তাই সেই ভাষাকে সবাই শ্রদ্ধা করত, ভয় করত, কিন্তু ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগের কথা কেউ ভাবত না। ভুল করে কেউ যদি তা অনুসরণের চেষ্টা করত, তা হয়ে উঠত হাস্যরসের উপাদান।
পূর্ববর্তী শিক্ষাক্রমের তৃতীয় বাংলা বইটি হলো আনন্দপাঠ। এটিকে বলা যেতে পারে সাহিত্য সংকলনেরই একটি প্রলম্বিত অংশ। দুটি বইয়ের মধ্যে বিশেষ কোনো তফাত নেই। বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটানোই দুটি বইয়ের মূল উদ্দেশ্য, সেটি হয়তো খানিকটা সফল হয়। কিন্তু সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার গঠন নিয়ে কোনো আলোচনা না থাকায়, এসব রচনা শিক্ষার্থীর মনে বিশেষ কোনো ছাপ ফেলে না।
এ তিনটি বইয়ের বিপরীতে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত নতুন বাংলা বইটির তুলনা করা যাক। নতুন বইটির অভিনবত্ব এর উপস্থাপন কৌশলে এবং পাঠ নির্বাচনে। এখানে সুপরিকল্পিতভাবে অধ্যায়গুলো বিন্যস্ত, এখানে একেকটি যোগ্যতা পূরণের লক্ষ্যে একেকটি অধ্যায়। প্রয়োজনে অধ্যায়ের মধ্যে আলাদা আলাদা পরিচ্ছেদ। ধরা যাক একটি যোগ্যতা হলো: প্রমিত ভাষায় যোগাযোগদক্ষতার উন্নয়ন। নতুন বইয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ের একাধিক পরিচ্ছেদে ধাপে ধাপে এই যোগ্যতা অর্জনের কৌশল ও পাঠ ঠিক করা হয়েছে। যেমন ষষ্ঠ শ্রেণিতে দেওয়া হয়েছে প্রমিত ভাষায় কথা বলার জন্য উচ্চারণের ব্যাকরণিক কিছু দিক, যার মধ্যে রয়েছে কাছাকাছি উচ্চারণের শব্দ এবং শব্দগুলোর মধ্যে ধ্বনির তফাত নির্ধারণ, আবার শিক্ষার্থীকে ধ্বনিসচেতন করার জন্য রাখা হয়েছে একটি কবিতা ও একটি নাটিকা।
কবিতা ও নাটিকার অনুশীলনীর মধ্যেও মূল যোগ্যতার বিষয়টি মনে রাখা হয়েছে। একই যোগ্যতার জন্য সপ্তম শ্রেণিতে রাখা হয়েছে ধ্বনির ঘোষ-অঘোষ পার্থক্য এবং আঞ্চলিকতার বিষয়। সেখানেও একটি কবিতা এবং একটি গল্পকে সহায়ক পাঠ হিসেবে রাখা হয়েছে। অভিন্ন যোগ্যতা নিয়ে প্রণীত অষ্টম শ্রেণির সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে ধ্বনির অল্পপ্রাণতা-মহাপ্রাণতার পাশাপাশি ধ্বনির সঙ্গে বাক্প্রত্যঙ্গের সম্পর্ক এবং লেখ্য প্রমিত রীতির পাঠ। এ জন্য এই শ্রেণিতে প্রয়োজন হয়েছে তিনটি সাহিত্যিক নমুনা: একটি কবিতা এবং দুটি গল্প। প্রমিত ভাষায় দক্ষ করে তুলতে নবম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের এই অংশে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে স্বরধ্বনি উচ্চারণ এবং প্রমিত ভাষার একাধিক স্তর ও সাধুভাষারীতির সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি। এ জন্য এই শ্রেণিতে প্রয়োজন হয়েছে একটি কবিতা, একটি আঞ্চলিক ভাষাসমৃদ্ধ গল্পের পাঠ এবং একটি সাধুভাষারীতিতে লিখিত সাহিত্যের পাঠ।
নতুন পাঠ্যপুস্তকে এভাবে প্রতিটি যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে শ্রেণি অনুযায়ী ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সবকিছুই এখানে পরিকল্পিত, কোনো রচনাই এখানে অপ্রয়োজনে আনা হয়নি, আবার বাংলাদেশের বা বাংলা সাহিত্যের প্রতিনিধিত্বশীল প্রায় সব লেখকের লেখার সঙ্গে যাতে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটে, সে চেষ্টাও করা হয়েছে।
এভাবে মাধ্যমিকের নতুন বাংলা পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সেই সব বিষয় শেখানোর চেষ্টা আছে, যেগুলো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনে সব ধরনের যোগাযোগের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে, আবার শেখানোর বিষয় থেকে সেগুলোকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যেগুলো তার ভবিষ্যৎ জীবনের প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কাজে আসবে না। নতুন এই পাঠ্যপুস্তকে সাহিত্যকে আনা হয়েছে দুইভাবে: সাহিত্য নিজেই একটা যোগাযোগমাধ্যম, সেই যুক্তিতে; আবার ভাষাদক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রায়োগিক উদাহরণ হিসেবে।
এবারের অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইয়ে শামসুর রাহমানের ‘পণ্ডশ্রম’ নামের একটি কবিতা পাঠ্য করা হয়েছে। কবিতাটির মূল কথা: কোনো কিছু ঠিকমতো যাচাই না করে সিদ্ধান্ত নিতে নেই; চোখ দিয়ে দেখে, কান দিয়ে শুনে, বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্তে আসতে হয়। নতুন পাঠ্যপুস্তক নিয়ে যাঁরা নেতিবাচক প্রচারণা করছেন, তাঁদের হয়তো কোনো মিশন আছে, কিন্তু যাঁরা এগুলো শুনছেন বা শুনতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁদের কাছে বিশেষ অনুরোধ: নতুন পাঠ্যপুস্তককে আগেকার পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে একটু তুলনা করে দেখুন। নতুন বইয়ে কী কী শেখানো হচ্ছে, তা যুক্তিযুক্ত এবং সমকালের প্রয়োজনে হচ্ছে কি না, ভাবুন। আবার যেগুলো শেখানো হচ্ছে না, সেগুলোর পরিহার যৌক্তিক কি না, তা নিয়েও চিন্তা করুন। এই বিবেচনায় নতুন পাঠ্যপুস্তকের মধ্যেও যদি কোনো ঘাটতি থাকে, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে তা অবগত করিয়ে বর্তমান প্রক্রিয়ার সহযোগী হয়ে উঠুন। নতুন বইগুলোর সূচনা বক্তব্যে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডও এমন আহ্বান জানিয়েছে।
লেখক: স্বরোচিষ সরকার, অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এসব বই থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখতে পারবে আর কী শিখতে পারবে না, তা নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকেরা চিন্তিত। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সামাজিক
০৩ জানুয়ারি ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এসব বই থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখতে পারবে আর কী শিখতে পারবে না, তা নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকেরা চিন্তিত। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সামাজিক
০৩ জানুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এসব বই থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখতে পারবে আর কী শিখতে পারবে না, তা নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকেরা চিন্তিত। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সামাজিক
০৩ জানুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এসব বই থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখতে পারবে আর কী শিখতে পারবে না, তা নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকেরা চিন্তিত। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সামাজিক
০৩ জানুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫