Ajker Patrika

কে জিতবে?

মইনুল হাসান 
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২২, ১৫: ৫৩
কে জিতবে?

ফ্রান্সের সাধারণ মানুষের মনে এখন ঘুরেফিরে একটাই প্রশ্ন, তা হলো—কে জিতবে? সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আগামী ২৪ এপ্রিল রাত ৮টা পর্যন্ত।

সমস্যা হচ্ছে, সবকিছু ঠিকঠাক চলছে না। কেমন যেন ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে সব। অথচ মাত্র ছয় সপ্তাহও নেই, ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলছে। এ বছর এপ্রিলের ১০ তারিখে হবে নির্বাচনের প্রথম পর্ব। আর দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৪ এপ্রিল। দেশটির প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রথম পর্বে এ পর্যন্ত ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাচ্ছেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাখোঁ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করেননি। তবে আজকালের মধ্যেই তিনি তা করবেন, দ্বিতীয়বারের মতো জনগণের কাছে দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী পদের জন্য ভোট চাইবেন। বিভিন্ন সমীক্ষায় এটা পরিষ্কার যে ‘এগিয়ে চলো’ আন্দোলনের নেতা মধ্যপন্থী প্রার্থী ইমানুয়েল মাখোঁ নির্বাচনী দৌড়ে এগিয়ে থাকলেও আগামী ২৪ এপ্রিল রাত ঠিক ৮টায় জানা যাবে ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের নবম প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ীর নাম। তাই এ সময় ফরাসি জনগণের মনে বড় প্রশ্ন, নির্বাচনে জিতবে কে?

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর খুব ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন থেকেই প্রেসিডেন্ট মাখোঁ রাতে খুব কম ঘুমাচ্ছেন। কারণ, সেই ২০২০-এর শুরুতে অতিমারি হানা দেওয়ার পর বিষণ্নতার আঁধার নেমেছে পৃথিবীজুড়ে। মধ্যরাতের নীরবতা ভেঙে ভীতিকর আওয়াজ তুলে অ্যাম্বুলেন্সের ছুটে চলা আর হাসপাতালে মৃতের পাশে নিকটজনদের ডুকরে কেঁদে ওঠা যেন থামতে চাইছে না। করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি অনেকটা বিপর্যস্ত। সাধারণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের কারণে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি খুব স্বস্তিতে নেই। করোনা মোকাবিলায় দক্ষতা দেখাতে পারলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, বিশেষ করে জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে জন-অসন্তোষ বাড়ছে।

টিকার এক, দুই এবং এরপর তিন ডোজ দিয়ে ভাইরাস নামক অদৃশ্য শত্রুকে পরাস্ত করে যখনই পশ্চিমের মানুষ খানিকটা উঠে দাঁড়াতে শুরু করেছে, তখনই বিকট শব্দে ইউরোপের সদর দরজায় ভয়াবহ ত্রাস, যুদ্ধ কড়া নাড়তে শুরু করেছে। বাতাসে বারুদের গন্ধ। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে লাশের দীর্ঘ মিছিল। বেঘোরে মারা পড়ছে মানুষ। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুহারা। চিরপরিচিত পরিবেশ-পরিজন ছেড়ে শুধু জীবন বাঁচানোর তাগিদে উদ্‌ভ্রান্তের মতো দিগ্‌বিদিক ছুটে চলেছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন সমাধি বুকে ধারণ করে কবরস্থানগুলো মানবজাতির কলঙ্কময় ইতিহাসের বিষণ্ন সাক্ষী হয়ে থাকছে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর এমন মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে যুদ্ধের হাজিরা এই প্রথম।

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির সামরিক জান্তা তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ভাড়া করেছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের গুপ্ত সেনা ওয়াগনার গ্ৰুপের একটি দলকে। ফরাসিদের হটিয়ে রাশিয়ান ভাড়াটে সৈন্যদের নিয়োগ দিয়েছে মালির ক্ষমতা দখলকারী সামরিক সরকার। কারণ, ফ্রান্স এমন অভ্যুত্থানকে সমর্থন দেয়নি। সে কারণেই প্যারিস ও বামাকোর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ফলে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ইমানুয়েল মাখোঁ ৪ হাজার ৩০০ জনের ফরাসি সেনাবহর মালি থেকে প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন।

এর আগে ইউক্রেন-সংকট সমাধানের জন্য ইমানুয়েল মাখোঁ প্রথমে ৭-৮ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। তাতে কোনো ফল হয়নি। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালিয়েছে রাশিয়া। শনিবার ২৬ ফেব্রুয়ারি, প্যারিসে জাতীয় কৃষিমেলার উদ্বোধনী ভাষণে প্রেসিডেন্ট মাখোঁ সমগ্র জাতিকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হতে যাচ্ছে, আমাদের অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে।’ এদিকে তিনি সেনাবাহিনীকেও সতর্ক থাকতে একটি বার্তা দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমে সে খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ আগামী ছয় মাসের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন।

ইউরোপিয়ানরাও মনে করে যে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং পুতিন সম্পর্কে তাদের ধারণা অত্যন্ত নেতিবাচক। পুতিন গত ২২ বছর যাবৎ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থাৎ, সেই ১৯৯৯ থেকে দোর্দণ্ড প্রতাপে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মঞ্চ। তাঁর আমলের এই দীর্ঘ সময়ে ইতিমধ্যে সাবেক হয়ে গেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক, নিকোলা সারকোজি, ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। পুনরায় নির্বাচিত না হলে বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাখোঁও সাবেকের তালিকায় চলে যাবেন।

অথচ পুতিন নিজ দেশের জনগণকে জিম্মি করে রাশিয়ার ক্ষমতার মসনদ আজও নিজের দখলে রেখেছেন। পুতিনের পথে যারা কাঁটা বিছাতে চেষ্টা বা বিরুদ্ধাচরণ করেছে, তাদের তিনি বেমালুম গায়েব করে দিয়েছেন। আর যাদের প্রতি তিনি সদয় হয়েছেন, তাদের কারারুদ্ধ করে রেখেছেন। নিন্দুকেরা যা বলে বেড়াচ্ছে তা হলো, পুতিন ইতিমধ্যে ‘সাংবিধানিক ক্যু’ ঘটিয়ে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত বহালতবিয়তে মস্কোর মসনদে আসীন থাকার সব ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন। এ ছাড়া দেশে দেশে কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোকে মদদ দিচ্ছেন। অনেকেরই ধারণা, পুতিন প্যারানয়েড স্কিজোফ্রেনিয়াজনিত রোগে ভুগছেন।

প্রতিরক্ষামূলক সহায়তার আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। ইইউর ইতিহাসে এমন সহায়তা এই প্রথম। এ ছাড়া বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করে যুদ্ধের মাঠে ইউক্রেনের সঙ্গে রয়েছে। আর তাই ইউরোপের জনগণ মনে করে যে সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে না জড়ালেও যুদ্ধের মাঠে পুরো ইউরোপ ইউক্রেনের পাশেই আছে। এই ভাবনা আরও বেশি ব্যাপ্তি লাভ করেছে ১ মার্চ ইউরোপিয়ান সংসদে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির আবেগঘন, হৃদয়স্পর্শী ও সাহসী বক্তৃতার কারণে।

যুদ্ধ শুরু করা যত সহজ, তা থেকে বেরিয়ে আসা মোটেই সহজ নয়। শক্তির দম্ভে অনেক পরাশক্তি প্রায়ই তা ভুলে যায়। শক্তির অনেক ধরন আছে—সামরিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক শক্তি। সব ছাড়িয়ে নৈতিক শক্তি। সাধারণ মানুষ মনে করে, স্বৈরাচার পুতিনের রাশিয়ার সামরিক শক্তি আছে এবং তা অনেক বেশিই আছে। তবে ইউক্রেনের মানুষ নৈতিক বলে বলীয়ান।

প্রতিবেশী একটি দুর্বল দেশের ওপর কোনো উসকানি ছাড়া সর্বাত্মক হামলা চালিয়েছে বিশাল শক্তিধর রাশিয়া। রুশ সাম্রাজ্য পুনঃপত্তনের স্বপ্নে বিভোর পুতিনের রাশিয়া ইতিমধ্যে হেরে গেছে। তাই এই প্রশ্ন অর্থহীন—অসম যুদ্ধে জিতবে কে?

লেখক: ফ্রান্সপ্রবাসী 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

রেফারি হয়েও গোল দিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, অভিযোগ সালাহউদ্দিনের

১২৮ জুলাই যোদ্ধার গেজেট বাতিল

মোদি আকর্ষণীয়, পিতার মতো, কিন্তু খুব কঠিন: ট্রাম্প

জাতীয়করণের দাবিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত মাদ্রাসাশিক্ষক আহত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ