Ajker Patrika

স্মৃতি উসকে দেওয়া এক বস্তু

Thumbnail image

মৃত্যুর দুই বছর আগে আমার বাবা তাঁর পাণ্ডুলিপি ও নোটবুকভর্তি একটি ছোট স্যুটকেস দিয়েছিলেন আমাকে। বলেছিলেন, তিনি চলে যাওয়ার পর যেন আমি সেগুলো পড়ি, চলে যাওয়া বলতে তিনি মৃত্যুকেই বুঝিয়েছিলেন।

কিছুটা বিব্রত ভঙ্গিতে বলেছিলেন, ‘একটু নজর বুলিয়ো। তোমার কাজে লাগে এমন কিছু ভেতরে পেলে দেখতে পারো। আর আমার মৃত্যুর পর গুরুত্বপূর্ণ অংশ নির্বাচিত করে প্রকাশ কোরো।’

আমার পড়ার ঘরে ছিলাম আমরা, চারদিকে বইয়ের স্তূপ। স্যুটকেসটা রাখার জন্য একটি জায়গা খুঁজছিলেন তিনি, অনেকটা পায়চারির ঢঙে, যেন একজন মানুষ তাঁর বোঝা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য উদগ্র। শেষমেশ কম নজরে পড়ে এক কোনায় স্যুটকেসটি রেখেছিলেন তিনি। সেই বিব্রতকর মুহূর্ত কেউ আমরা ভুলতে পারিনি, কিন্তু মুহূর্তটি অতিক্রান্তের পরপরই আমরা আমাদের স্বাভাবিক ভূমিকায় মানিয়ে নিয়েছিলাম। প্রতিদিনকার মতো নিত্যদিনের নগণ্য বিষয় ও তুরস্কের চলতে থাকা রাজনৈতিক সমস্যা এবং বাবার অধিকাংশ লোকসানের ব্যবসা নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেছিলাম আমরা।

মনে পড়ে, বাবার মৃত্যুর পর স্যুটকেসের আশপাশ দিয়ে আমি কয়েক দিন টানা পায়চারি করেছি, কিন্তু একবারের জন্যও সেটা স্পর্শ করিনি। ছোট্ট কালো চামড়ার স্যুটকেস, এর তালা ও গোলাকার কোণগুলো দেখতে দেখতে আমি অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম। কাছাকাছি কোথাও গেলে বাবা এটা ব্যবহার করতেন, মাঝেমধ্যে কাগজপত্র আনা-নেওয়ার কাজেও এই স্যুটকেস ব্যবহৃত হতো। বেশ ছোটবেলায় মনে পড়ে স্বল্প দূরত্বের ভ্রমণ শেষে বাড়ি ফিরে এলে আমি তাঁর স্যুটকেস খুলে জিনিসপত্র ওলট-পালট করতাম, বিদেশবিভুঁইয়ের গন্ধ শুঁকতে। আসলে বাবার এই স্যুটকেস ছিল আমার কাছে আমার পরিচিত এক বন্ধুর মতো, আমার ছোটবেলা, আমার অতীতের স্মৃতি উসকে দেওয়া এক বস্তু। কিন্তু এখন আমি আর এটা স্পর্শ করতে পারছি না। কেন? কোনো সন্দেহ নেই, কারণ স্যুটকেসের ভেতরের রহস্যময় বিষয়বস্তুর ওজন।

তুরস্কের লেখক ওরহান পামুক ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত