Ajker Patrika

আত্মসমর্পণে নিয়াজির টালবাহানা

এ আর চন্দন, ঢাকা
আত্মসমর্পণে নিয়াজির টালবাহানা

মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী আগেই চারদিক দিয়ে ঢাকাকে ঘিরে ফেলেছিল। পালানোর কোনো পথ নেই। ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিভিন্ন সামরিক স্থাপনার ওপর মিত্রবাহিনীর বিমান হামলায় পাকিস্তানিরা বিপর্যস্ত। যদিও অবরুদ্ধ ঢাকাবাসীর মনে তখনো নানা প্রশ্ন—মার্কিন সপ্তম নৌবহর কি আসবে? এলে কী হবে? নিয়াজি কি সত্যিই আত্মসমর্পণ করবেন, নাকি সপ্তম নৌবহরের অপেক্ষায় সারেন্ডারের কথা বলে কালক্ষেপণ করছেন?

যুক্তরাষ্ট্রের আটটি যুদ্ধজাহাজের সপ্তম নৌবহর দুই ভাগে এগিয়ে আসছিল বাংলাদেশের দিকে। তবে ১৫ ডিসেম্বর বিবিসির খবরে বলা হয়, ভারত মহাসাগরের দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বাধুনিক পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত নৌবহরের দুটি ক্ষেপণাস্ত্রবাহী জাহাজ জাপান সাগর অতিক্রম করে দ্রুতগতিতে ভারত মহাসাগরের দিকে ছুটে আসছে। মার্কিন সপ্তম নৌবহর যখন বঙ্গোপসাগর থেকে মাত্র ২৪ ঘণ্টার দূরত্বে গভীর সমুদ্রে অবস্থান করছিল, তখন অর্থাৎ ১৫ ডিসেম্বর ভারতীয় নৌবাহিনীর সহায়তায় সোভিয়েত রণতরির ২০টি জাহাজ ভারত মহাসাগরে অবস্থান নেয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহর দিক বদল করে।

এদিন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো পোল্যান্ডের দেওয়া আত্মসমর্পণের প্রস্তাবে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখান। এর আগে পোল্যান্ড বাংলাদেশের অবস্থা বিবেচনা করে পাকিস্তানি বাহিনীকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণ করার প্রস্তাব দেয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বলে। ভুট্টো তাঁর বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে প্রস্তাবের কাগজ ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব।’ ওই সময় তিনি এবং পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্যরা নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করে চলে যান। (সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র) 
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ নিয়াজি ভারতের কাছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন। বিকেলে সেই বার্তা দিল্লিতে পৌঁছালে দেখা যায়, তাতে পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের কথা নেই। ভারতীয় বাহিনীর পক্ষ থেকে নিয়াজিকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, পাকিস্তানি বাহিনী নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করবে কি না, তা জানানোর জন্য বিশেষ বেতার কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং কোড নম্বর দেওয়া হয়েছে। এদিকে ঢাকায় সেনানিবাস থেকে অফিসাররা দপ্তর সরিয়ে নিয়েছিল বেসামরিক এলাকার বিভিন্ন অংশে। কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের বিপক্ষে থাকায় সরে গিয়েও পরিত্রাণ মেলেনি।

পাকিস্তানি সেনাদের নতুন আশ্রয়স্থলের খবর আশপাশের মানুষ সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেয় মুক্তিযোদ্ধাদের। তারা খবর পাঠায় নগরের উপকণ্ঠে ভারতীয় সিগন্যালকে। আর তার কিছু পরই ভারতের যুদ্ধবিমান তৎপর হয় নতুন টার্গেটের বিরুদ্ধে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর লক্ষ্যভেদী উপর্যুপরি আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষায় ব্যতিব্যস্ত, পরিশ্রান্ত ও সন্ত্রস্ত পাকিস্তানি ইস্টার্ন কমান্ড এমনিভাবে শর্তহীন আত্মসমর্পণের দিকে তাড়িত হয়। অবশেষে নিয়াজির অনুরোধে এদিন বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে পরদিন সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ঢাকায় বিমান হামলা স্থগিত রাখা হয়।

(সূত্র: মঈদুল হাসান, মূলধারা ’৭১)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত