Ajker Patrika

খুলনার তিন পরিবারে আহাজারি থামছে না

খুলনা প্রতিনিধি
Thumbnail image

‘সেদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে হঠাৎ একটি ফোন আসে। অন্য প্রান্ত থেকে বলা হয়, আপনার ছেলের গায়ে গুলি লেগেছে। রিকশাভাড়া না থাকায় রিকশাঅলার হাত-পায়ে ধরে কোনো রকমে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পৌঁছাই। গিয়ে দেখি, গুলিবিদ্ধ ছেলের দেহ পড়ে রয়েছে। আমাকে কাছে পেয়ে ছেলে বলে, ‘আমি তো মিছিলে যাইনি মা! গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে কাস্টমারের বাড়ি যাচ্ছিলাম। আমাকে পুলিশ গুলি করল কেন?’ কিন্তু ছেলেকে আর বাঁচাতে পারলাম না। কে আমার কোলে ছেলেকে ফিরিয়ে দেবে।’ 

কথাগুলো মনজিলা বেগমের। ২০ জুলাই রাজধানীতে কোটা সংস্কার  আন্দোলনের সময় তাঁর ছেলে ইয়াসিন শেখ গুলিবিদ্ধ হন। পেশায় দোকান কর্মচারী এই যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ জুলাই মারা যান। ইয়াসিনের বাড়ি খুলনার রূপসায়। মাকে নিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তাঁর মা মনজিলা অন্যের বাসায় কাজ করে সংসার চালান। 

রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় খুলনা নগরী ও জেলার পাইকগাছার আরও দুজন ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তাঁরা হলেন খুলনা মহানগরীর বসুপাড়ার শেখ মো. সাকিব রায়হান (২২) ও সাভারে নিহত হন পাইকগাছার যুবক নবীনুর। 

ইয়াসিনের মা মনজিলা বেগমের জীবন অনেক কষ্টের। ইয়াসিনের বয়স যখন মাত্র দুই বছর, তখনই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে তার বাবা নূর ইসলাম শেখ মারা যান। পরের বাড়িতে কাজ করে আয়ের টাকায় তিন মেয়ে ও ইয়াসিনকে বড় করেছেন মনজিলা বেগম।

মনজিলা বেগম বলেন, ‘ঘটনার দিন সকালেও ছেলে আমাকে বলেছিল, ‘মা, তুমি তো সারাজীবন ধরে কাজ করছ। এখন আমি কাজ শুরু করেছি। এখন থেকে তুমি বাসায় থাকবা।’ ইয়াসিনের সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। 

ঢাকায় নিহত খুলনার আরেকজন হলেন শেখ মো. সাকিব রায়হান (২২। তিনি ১৯ জুলাই পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে প্রাণ হারান। পরদিন তাঁর লাশ খুলনা মহানগরীর বসুপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। সাকিবের বাড়ি খুলনা মহানগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নবপল্লী এলাকায়। 

সাকিবের মা নুরুন্নাহার বেগম বলেন, ‘১৭ জুলাইও ফোন করেছিল। কত কথা বলল। এখন আমার সাকিব চলে গেছে, এখন এসব বলে কী হবে?’ 

আন্দোলনের সময় ২০ জুলাই ঢাকার সাভারে গুলিতে নিহত হন খুলনার পাইকগাছার যুবক নবীনুর। পরদিন লাশ বাড়িতে এনে দাফন করা হয়। এক সপ্তাহ ধরে শোকাহত দুই মেয়েসহ পাগলপ্রায় নবীনুরের স্ত্রী আকলিমা বেগম। সহায়-সম্বলহীন নবীনুরের স্ত্রী ও মেয়ে এখন উঠেছেন বড় জামাতার বাড়িতে। 

আকলিমা বেগম বলেন, ‘মাত্র এক মাস আগে ছোট মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ওই সময় হাতে টাকাপয়সা না থাকায় মেয়েকে স্বামীর ঘরে তুলে দিতে পারিনি। শুধু বিয়ে পড়িয়ে রাখা হয়েছিল। আমার স্বামী নবীনুরের ইচ্ছা ছিল, বেশ ঘটা করে মেয়েকে স্বামীর ঘরে তুলে দেবেন; কিন্তু তা আর হলো কই! আমার সব শেষ হয়ে গেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত