Ajker Patrika

যুদ্ধের বিরুদ্ধে রাশিয়ার এক নারী ফুটবলার

যুদ্ধের বিরুদ্ধে রাশিয়ার এক নারী ফুটবলার

নাদিয়া কারপোভার নামের প্রথম অংশ ‘নেদেজদা’। রাশিয়ান ভাষায় যার অর্থ ‘আশা’। নাদিয়ার গলায় আশার ইংরেজি পরিভাষা ‘হোপ’ লেখা একটা ট্যাটুও করা আছে। ২১ বছর বয়সে এই ট্যাটু করিয়েছিলেন রাশিয়ার এই নারী ফুটবলার। যদিও তখন স্পষ্টভাবে জানতেন না যে কী ‘আশা’ করছেন তিনি। তবে এখন এসে ঠিকই নামের সঙ্গে এই শব্দের প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পান নাদিয়া।

নাদিয়ার আশা হচ্ছে, একটি অন্যায় যুদ্ধের সমাপ্তি। খুব কম রাশিয়ান ক্রীড়াবিদই স্পষ্টভাবে কথাটি বলতে পেরেছেন। নাদিয়া ছাড়া মাত্র দুজন ফুটবলার এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিবাদ করেছেন। ডায়নামো মস্কোর হয়ে খেলা রাশিয়ার পুরুষ দলের সদস্য ফেদর স্মোলোভ ও স্পার্টাক মস্কোর আলেক্সান্ডার সোবোলেভ। গত ফেব্রুয়ারিতে ইনস্টাগ্রামে এক বার্তা স্মোলোভ লিখেছিলেন, ‘যুদ্ধ নয়।’ এর পর থেকে পুরোপুরি চুপ হয়ে আছেন তিনি। আর সোবোলেভ যুদ্ধ শুরুর দিন একই ধরনের একটি পোস্ট দিয়ে পরে তা মুছে ফেলেন।

একমাত্র কারপোভাই এই ইস্যুতে শুরু থেকে সরব থেকেছেন। বর্তমানে স্পেনের ক্লাব এস্পানিওলের হয়ে খেলেন কারপোভা। রাশিয়ান নারী দলের একমাত্র প্রতিবাদী এই কণ্ঠ প্রতিদিনই যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। যুদ্ধের শুরু থেকেই ইনস্টাগ্রামে নিজের অবস্থান তুলে ধরছেন তিনি।

কেন নিজ দেশের বিরুদ্ধে এই অবস্থান? বিবিসিকে নাদিয়া বলেন, ‘আমি এই অমানবিকতা সহ্য করে চুপ থাকতে পারি না। জানি না, যদি স্পেনে না থেকে রাশিয়ায় থাকলে আমার কী হতো। তবে কথা বলাটা বিশেষ দায়িত্ব বলে মনে করেছি।’

২০১৭ সালে স্পেনে পাড়ি জমান নাদিয়া। এখন পর্যন্ত রাশিয়ার হয়ে ২৪টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। পাঁচ বছর আগের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপেও খেলেছিলেন তিনি। নিষিদ্ধ থাকায় আগামী মাসে শুরু হতে যাওয়া ইউরোতে অবশ্য তাঁর দেশকে দর্শক হয়েই থাকতে হবে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে বার্সেলোনায় সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বেশ সতর্ক হয়েই কথা বলেন নাদিয়া। সতর্কতা এ জন্য নয় যে, তাঁর দেশের সরকার সামরিক বাহিনী নিয়ে ভুয়া খবর দেখলে ১৫ বছরের জন্য তাঁকে জেলে পাঠাবে। বরং এ জন্য, কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা যেন বাদ পড়ে না যায়। নাদিয়া বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রোপাগান্ডা রাশিয়ানদের বোঝানোর চেষ্টা করছে যে আমরা একটি বিশেষ জাতি। আর গোটা বিশ্ব আমাদের ও আমাদের স্বতন্ত্র মিশনটির বিরুদ্ধে। কী স্বতন্ত্র অভিযানের কথা তারা বলছে? আমি মনে করি না, রাশিয়ানরা বিশেষ কিছু। একই সঙ্গে আমি রাশিয়ান হিসেবে লজ্জিতও না। কারণ, রাশিয়া মানে সরকার বা পুতিন না।’

পুতিনের সমালোচনায় নাদিয়া আরও ঝাঁজাল মন্তব্যই করেছেন, ‘পুতিন আমাদের কাছ থেকে সব নিয়ে নিয়েছে। সে আমাদের কাছ থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ কেড়ে নিয়েছে। সে এটা করেছে আমাদের সম্মতি নেওয়ার মাধ্যমে। শক্ত কোনো প্রতিরোধও হয়নি। বেশির ভাগ মানুষ অন্যায়ের সামনে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। ভেবেছে এটা তাদের কাজ নয়।’

তবে নাদিয়া আনন্দিত যে তাঁর বর্তমান কাজ রাশিয়ান সরকারের সঙ্গে যুক্ত নয়। তবে তাঁর আশা, এই পরিস্থিতি একদিন বদলাবে, ‘আশা করি, আরও অনেক রাশিয়ান এবং রাশিয়ান অ্যাথলেট কথা বলবে। এতে যারা যুদ্ধের বিরোধিতা করে আসছে তারা জানবে যে তারা আর সংখ্যালঘু নয়। চুপ থাকার সময় শেষ হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত