Ajker Patrika

বাঁশের পণ্যের কদর কমায় দুর্দিন কারিগরদের

সেলিম হায়দার, তালা (সাতক্ষীরা)
বাঁশের পণ্যের কদর কমায় দুর্দিন কারিগরদের

বাঁশের পণ্য তৈরি বাঙালির পুরোনো ঐতিহ্য। কিন্তু দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশের পণ্য তৈরি। বাঁশ তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগরেরা। জীবন-জীবিকার তাগিদে তবুও বাবা-দাদার এই পেশাকে এখনো ধরে রেখেছে কিছু সংখ্যক পরিবার।
পূর্ব পুরুষের এই পেশাকে এখনো ধরে রেখেছেন সাতক্ষীরা তালা উপজেলার হাজারাকাটি, নূরুল্লাহপুর, ফতেপুর, লক্ষণপুর, আটারই গ্রামের কয়েকটি পরিবার। পূর্ব পুরুষদের এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে তাঁরা এখানো তৈরি করছেন ঝুড়ি, ডালা, কুলা, চালুনি, খলুই, হাতপাখাসহ 
নানা পণ্য।   
সরেজমিন দেখা যায়, হাজারাকাটি গ্রামের সাধন দাস (৭১) বাঁশের পণ্যসামগ্রী তৈরি করছেন। তাঁর নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হয় নানা রকমের বাঁশের তৈরি পণ্য। সাধন দাস জানান, অতীতে গ্রামে-গঞ্জে বাঁশের তৈরি পণ্য সামগ্রীর কদর ছিল অনেক। এসব পণ্য শোভা পেত প্রত্যেক বাড়িতে। এ ছাড়া গৃহস্থালির নিত্যব্যবহার দ্রব্যাদি, ডালা, চালুন, ডুলি, খরপা, চাটাইসহ অসংখ্য জিনিস আজও তৈরি করে ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। 
হাজরাকাটি গ্রামের মিলন দাস (৫৬) বাড়িতে ঝুড়ি, ডালা, বেড়া তৈরি করেন। বাঁশের তৈরি পণ্য বাজারে বিক্রি করে। মিলন দাস জানান, এসব জিনিসপত্র তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ। বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁশ সংগ্রহ করার পর তা দা-ছুরি দিয়ে তা চিরানো হয়। পরে বাঁশগুলো পণ্যের মানভেদে চিকন আকারের শলা বা বাতি তৈরি করে রোদে শুকাতে হয়। এরপর বানানো হয়ে থাকে বাঁশের তৈরি পণ্য। এ কাজটি তাঁর বাপ-দাদার আমল থেকে করে আসছেন। 
নূরুল্লাহপুর গ্রামের সাধন দাস, মিলন দাস, সোনা দাস জানান, হাতে গোনা আমরা কয়েকটি পরিবার আজও এ কাজে নিয়োজিত আছি। একটি বাঁশ থেকে ১০-১২টি ডালি তৈরি হয়। সকল খরচ বাদ দিয়ে প্রতিটি পণ্য থেকে ১০-২০ টাকা করে লাভ থাকে। তবে বর্তমানে আগের মত আর বেশি লাভ হয় না। নিজেদেরই বিভিন্ন হাটে গিয়ে ও গ্রামে গ্রামে ফেরি করে এসব পণ্য বিক্রি করতে হয়। অতি কষ্টে তাঁদের বাপ-দাদার এই পেশাকে 
টিকে রাখতে ধার দেনা ও বিভিন্ন সমিতি থেকে লোন নিয়ে কাজ করছে। শেকড় আঁকড়ে ধরে কোনো রকম জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন বলে জানান তাঁরা। 
মহান্দী গ্রামের রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক দেবাশীষ দাস জানান, মানুষ বাড়িতে, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করত। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত সবখানেই ব্যবহার করা হতো বাঁশ ও বেতের তৈরি আসবাবপত্র। বর্তমানে স্বল্প দামে হাতের নাগালে প্লাস্টিক সামগ্রী পাওয়ায় বেত ও বাঁশ শিল্পের চাহিদা আর নেই। প্রযুক্তির ব্যবহার ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন তা হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র। 
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন বলেন, বাঁশ ও বেত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে কৃষকদের সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া প্রয়োজন। 
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘এটি একটি লাভজনক পেশা। বাঁশ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এই পেশার সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত