Ajker Patrika

কাফকোকে কম দামে গ্যাস দিয়ে বেশি দামে সার ক্রয়

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
কাফকোকে কম দামে গ্যাস দিয়ে বেশি দামে সার ক্রয়

গ্যাস-সংকটের কারণে দেশের সচল সার কারখানাগুলো একে একে বন্ধ হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সেখানকার মূল্যবান যন্ত্রপাতি। দেশীয় প্রায় সব কারখানা বন্ধ রেখে কম দামে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগের সার কারখানা কর্ণফুলী ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানিকে (কাফকো)। শুধু তা-ই নয়, সেখানে উৎপাদিত সার আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বেশি দামে কিনছে সরকার।

কৃষকের প্রয়োজন মেটাতে সরকারিভাবে সার আমদানির কাজটি করে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। চলতি বছর প্রতিষ্ঠানটির আমদানি করা সারের সর্বশেষ চালান এসেছে গত আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে। চালানটির প্রতি টন সারের দাম পড়েছে ২৬৮ দশমিক ৩৩ ডলার। একই সময়ে সরকারের দেওয়া গ্যাসে উৎপাদন সচল রাখা কাফকো থেকে প্রতি টন সার কেনা হচ্ছে ৩৬০ ডলার মূল্যে। সেই হিসাবে কাতার থেকে আমদানির তুলনায় টনপ্রতি ৯২ ডলার বেশি দাম নিচ্ছে কাফকো।

জানতে চাইলে বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. সাঈদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশে মোট ২৭ লাখ টন ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ১০ লাখ টন আমাদের দেশীয় কারখানাগুলো থেকে জোগান দেওয়া হয়। বাকি ১৭ লাখ টন কাফকো ও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।’ তবে বর্তমানে দেশীয় কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় আমদানি বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

জানা যায়, কাতার থেকে আসা সর্বশেষ চালানে এমভি আকিজ পাল নামের জাহাজে ৩৩ হাজার টন সার এসেছে দেশে। এর মধ্যে ৫ হাজার টন সার চট্টগ্রামে খালাস হয় এবং বাকি ২৮ হাজার টন সার খালাস হয় মোংলা বন্দরে।

যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে বন্ধ সার কারখানার
দেশে অনেক দিন ধরে গ্যাস-সংকট চলছে। এতে সার কারখানাগুলোয় গ্যাস দিতে পারছে না সরকার। এ কারণে বাধ্য হয়ে একে একে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল), আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড (এএফসিসিএল) এবং যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (জেএফসিএল)। দীর্ঘদিন কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় সেগুলোর মূল্যবান যন্ত্রাংশে মরিচা ধরেছে। কারখানা বন্ধ থাকায় মরিচা ধরে কিছু কিছু যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন বিসিআইসির চেয়ারম্যান।

গ্যাস-সংকটের কারণে গত মার্চ থেকে সার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডে (এএফসিসিএল)। কারখানাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুনীল চন্দ্র দাশ বলেন, এই কারখানায় দিনে ১ হাজার ২০০ টন সার উৎপাদিত হতো। গ্যাস সরবরাহ ঠিক থাকলে এখানে ১৬-১৭ হাজার টাকা খরচে এক টন সার উৎপাদন করা যায়। দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকায় অনেক যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কখন থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হবে, তা ঠিক বলা যাচ্ছে না।

এদিকে গত বছরের ২১ নভেম্বর বয়লারে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে (সিইউএফএল) ইউরিয়া সার ও অ্যামোনিয়া উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মেরামত করলেও গ্যাস-সংকটের কারণে ১০ মাস ধরে কারখানাটি উৎপাদনে নেই।
সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, গ্যাস-সংকটের কারণে দীর্ঘদিন সচল কারখানা বন্ধ থাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং নতুন নতুন সমস্যা দেখা দেয়। এতে সচল কারখানাই অচল হয়। তিনি অবশ্য এ-ও জানান, গত ৩০ অক্টোবর থেকে সিইউএফএলে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। সার উৎপাদনে যেতে এক মাস সময় লাগবে।

গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (জেএফসিএল) বন্ধ হয়ে যায়। এর পেছনেও গ্যাস-সংকট দায়ী। কবে কারখানাটি চালু হবে, তা স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

দেশীয় সার উৎপাদন কারখানার মধ্যে একমাত্র শাহজালাল সার কারখানা (এসএফসিএল) এখন চালু আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

মানিকগঞ্জে রাতের আঁধারে স্থানান্তর করা বিদ্যালয় ভবন পরিদর্শনে কর্মকর্তারা

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত