আলতাফ পারভেজ
ডিসেম্বর বাংলাদেশে ‘বিজয়ের মাস’। অনেক দেশে এটা বিদায়ী বছরের হিসাব মেলানোর মাস। কোথাও আবার নতুন পরিকল্পনার সময়। ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ।
‘বিজয়ে’র স্মৃতিচারণার পাশাপাশি চাইলে আমরাও এ ডিসেম্বরে এ বছরের একটা হিসাব-নিকাশ করতে পারি। দেশের অনেক দৈনিক এ কাজটি করে। মূল নজর থাকে তাদের রাজনীতি। এবার সেটা হয়তো বাড়তি মনোযোগ পাবে। কিন্তু রাজনীতিতে যে এক নতুন নিম্নবর্গের উত্থান ঘটছে—সেটা কি আমরা খেয়াল করছি? নিম্নবর্গের এই আবির্ভাব কিন্তু অতি বাম বা ডান পরিসরে ঘটছে না; বরং বিস্ময়কর যে সমকালীন নিম্নবর্গ ‘বুর্জোয়া রাজনীতি’র ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছে। তার পাটাতন পাল্টে দিতে চাইছে। ‘ডানে-বামে’ তাকাচ্ছে না তারা।
রাজনীতিতে কারা মরছে?
এখানে কিছু উপাত্তের দিকে সবার দৃষ্টি চাইছি। গত এক বছরের আন্দোলনকালে তাঁরা ‘মারা গেছেন’। কাগজগুলো বলছে তাঁরা ‘বিএনপির কর্মী’। তাঁদের কিছু ব্যক্তিগত তথ্য এখানে তুলে ধরা হলো। গত এক বছর নিহত রাজনৈতিক কর্মীর সংখ্যা পাঁচে সীমিত নয়। তবে লেখা ছোট রাখার জন্য এখানে দৈবচয়ন করে পাঁচটি নাম বাছাই করা হলো মাত্র।
গরিব-মেহনতি মানুষগুলো বিএনপির মিছিলে কেন?
ওপরের প্রত্যেকের প্রোফাইলে আরও বিস্তারিত তথ্য যুক্ত করা যায়। সেটা আপাতত স্থগিত রেখেই কিছু প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে পারি সবাই। তাঁরা কেন বিএনপির রাজনৈতিক কাজে যুক্ত হলেন? কোন রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা থেকে তাঁরা স্বপ্রণোদিত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিও নিলেন এবং নিচ্ছেন? এই মানুষেরা সমাজের কোন শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করছেন?
একই সঙ্গে আরও কিছু সম্পূরক প্রশ্নও করা যায়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাহিত্যের পুরোনো পাঠগুলো সমাজের এই জনগোষ্ঠীর আবেগ-অনুভূতি-পছন্দ-ইচ্ছা আগের মতো শনাক্ত করতে সক্ষম কি না?
এই সবজিচাষি, ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক, শাড়িতে নকশা বোনা শ্রমিকদের সঙ্গে আমাদের সমাজবিজ্ঞানীদের আদৌ কি কোনো জীবন্ত সংযোগ আছে?
গত এক বছর বিএনপির রাজনীতির ফোকাস ছিল নতুন জাতীয় নির্বাচন। প্রশ্ন হলো, ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি শাওন কিংবা সবজিচাষি আবদুর রহিমদের কাছে এই রাজনীতি আত্মাহুতির মতো জরুরি হলো কীভাবে? নির্বাচন হলে তাঁরা তো আর এমপি কিংবা চেয়ারম্যান হবেন না। তা ছাড়া, রাজনীতি করার জন্য এই মানুষেরা কমিউনিস্ট পার্টি বা জামায়াতে ইসলামীর মতো ‘আদর্শবাদী’ দলগুলোতে না গিয়ে বিএনপিতে আসছেন কেন?
বাংলাদেশের ডানপন্থী ও বামপন্থী রাজনীতি যে সমাজের নিচতলার মানুষকে আগের মতো আর আকর্ষণ করতে পারছে না, এর নিশ্চয়ই কিছু ব্যাখ্যা আছে। সেই ব্যাখ্যায় কি প্রগতিশীলতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতার পুরোনো সংজ্ঞাও পাল্টাবে?
শ্রমিকেরা ট্রেড ইউনিয়নে নেই, ছাত্ররা মধুর ক্যানটিনে যান না!
ওপরের পাঁচজনের প্রোফাইল থেকে আমরা দেখছি—এই মানুষেরা নিজ পরিমণ্ডলের ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনেও আকর্ষিত নন। কেন একজন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক শহীদুল ইসলাম শাওন কোনো শ্রমিক সংগঠন না করে ‘জাতীয় রাজনীতি’র মিছিলে হাঁটছেন? কেন সবজিচাষিরা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জীবন দেওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন? আবদুর রহিমের তো কৃষক বা খেতমজুর সংগঠন করলেও চলত।
এর মানে কি তবে এই, সমাজের নিম্নবর্গের পেশাগত কথা বলার জায়গাগুলো একদম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে? এর মানে কি এ-ও যে সমাজের ‘নিচতলা’ও চারপাশের ‘ক্ষমতা’র তাপে দিশেহারা? তারা কি তবে এটাই ভেবে নিয়েছে জাতীয় পর্যায়ে জবাবদিহির একটা ব্যবস্থা কায়েমের আগে আর ‘কিছু’ই সম্ভব নয়? তার মানে কি তবে সমাজে ‘রাষ্ট্রে’র সংস্কারের প্রশ্নটিই বড় হয়ে উঠেছে?
এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য বিরোধী দলের মিছিলে হাঁটা নিম্নবর্গের সঙ্গে গভীর সংলাপ দরকার আমাদের। কিন্তু দেশের সমাজবিজ্ঞানীদের কী আদৌ তেমন সময় আছে? নাকি আমরা রাজনৈতিক সাহিত্যের মুখস্থ থিসিসগুলোই আওড়িয়ে যাব? প্রগতিশীলতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতার পুরোনো সমীকরণই আঁকড়ে থাকব।
বহুকাল এ দেশে সমাজের শ্রেণিকাঠামোর সামাজিক তদন্ত করেছেন বাম বুদ্ধিজীবীরা। এ কাজে তাঁদের একচেটিয়াত্ব ছিল। তাঁদের পুরোনো থিসিস হলো ‘বিএনপি ব্যবসায়ী এবং লুটেরা বুর্জোয়াদের দল’। তোপখানা রোড কিংবা পল্টনের ফুটপাতে পুরোনো বইয়ের দোকানে এখনো এ রকম সিদ্ধান্তসূচক ‘পার্টি দলিল’গুলো পাওয়া যাবে। কিন্তু গত এক বছরের রাজনৈতিক শহীদদের তালিকা আমাদের কী বার্তা দিচ্ছে? মিছিল-মিটিংয়ে এ রকম মৃতদের তালিকায় ব্যবসায়ী তো দূরের কথা, মধ্যবিত্তও মিলছে না।
বলা হতে পারে, অন্য বড় দলের জনসভায়ও এ রকম নিম্নবিত্ত মানুষের দেখা মিলবে। কিন্তু এর উত্তর সহজ। কোথায় নিম্নবিত্ত মানুষ নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে মিছিলের মুখ হিসেবে যাচ্ছে, আর কোথায় যাচ্ছে মনের তাড়নায়—এটুকু আঁচ অনুমানের প্রজ্ঞা বাংলাদেশে প্রায় সবার আছে। ধর্মঘটের বাধা, গ্রেপ্তার ও পিটুনির তোয়াক্কা না করে বিরোধী দলের বিভিন্ন সমাবেশে গ্রামগঞ্জের মানুষদের এক-দুই দিন আগে এসে রাত্রিযাপনকে ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয় ভাবা মুশকিল। গবেষণার তথ্য-উপাত্ত হিসেবে এই মানুষেরা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সে রকম গবেষকদের এ-ও দেখতে হবে, বিগত মাসগুলোর রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে শিক্ষাঙ্গন ও শিল্পাঞ্চলের অংশগ্রহণ কম কেন? এটা তো অতীত বাংলাদেশের সঙ্গে ঠিক মেলে না!
সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদ আন্দোলনগুলোতে শিক্ষাঙ্গনের বড় মাপে অংশগ্রহণ পাওয়া যায়নি। শ্রমিক অঞ্চলও বেশ শান্ত ছিল। এর মানে কি তবে এই—এ দেশের রাজনীতিতে ছাত্র ও শ্রমিকদের পুরোনো ভূমিকা শেষ হতে চলেছে? নাকি শিক্ষাঙ্গন ও শিল্পাঙ্গনে পরিবেশ এমন আকার নিয়েছে, যেখানে কথা বলা এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে? নাকি এই দুই পরিমণ্ডলের মানুষ খুব তৃপ্ত!
নিশ্চয়ই বাড়তি অনুসন্ধানের আগে আমরা এসব বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারব না। কিন্তু এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা তো অবশ্যই জরুরি, প্রায় পাঁচ বছর উচ্চ মূল্যস্ফীতির মাঝেও চা খাত ছাড়া অন্যান্য খাতের শ্রমিকেরা মজুরিকাঠামো বদলের জন্য সংগঠিতভাবে কথা বলতে পারলেন না কেন? তবে কি তাঁরা মূল্যবৃদ্ধির ফলে প্রকৃত মজুরি কমে গেলেও কোনো সমস্যা বোধ করছেন না? নাকি তাঁরা কম খেয়ে থাকছেন? নাকি তাঁরা শিল্প পুলিশের তীব্র নজরদারিতে ন্যূনতম সংঘবদ্ধ হওয়ার আশাও ছেড়ে দিয়েছেন?
তেমনি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্ররা বিছানা না পেয়ে গণরুমের ফ্লোরে থাকছেন আমরা জানি। কিন্তু তারপরও মধুর ক্যানটিনের রাজনৈতিক আড্ডার চায়ের টেবিল বাদ দিয়ে টিএসসির ফুটবল স্ক্রিন তাঁদের বেশি টানছে। ঢাবির কলাভবনকে ঘিরে ঘামে ভেজা উত্তেজক মিল এখন খুব কম।
এটা কেন? এই বদলে যাওয়া সময়ের ব্যাখ্যা কী?কেন, সমাজের সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা নন, বরং ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক কিংবা সবজিচাষিদের গণতন্ত্রের আকুতি বেশি স্পর্শ করছে?
নিম্নবর্গ কি তবে রাজনৈতিক মধ্যপন্থাকে বেশি কাজের ভাবছে? নাকি সুশীল মধ্যবিত্ত এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের মানুষেরা রাজনৈতিক স্বার্থের দুই বিপরীত মেরুতে দাঁড়াচ্ছেন ক্রমে? এটা কী তবে রাজনৈতিক অর্থনীতির একটা মোড় বদল?
ডিসেম্বর বাংলাদেশে ‘বিজয়ের মাস’। অনেক দেশে এটা বিদায়ী বছরের হিসাব মেলানোর মাস। কোথাও আবার নতুন পরিকল্পনার সময়। ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ।
‘বিজয়ে’র স্মৃতিচারণার পাশাপাশি চাইলে আমরাও এ ডিসেম্বরে এ বছরের একটা হিসাব-নিকাশ করতে পারি। দেশের অনেক দৈনিক এ কাজটি করে। মূল নজর থাকে তাদের রাজনীতি। এবার সেটা হয়তো বাড়তি মনোযোগ পাবে। কিন্তু রাজনীতিতে যে এক নতুন নিম্নবর্গের উত্থান ঘটছে—সেটা কি আমরা খেয়াল করছি? নিম্নবর্গের এই আবির্ভাব কিন্তু অতি বাম বা ডান পরিসরে ঘটছে না; বরং বিস্ময়কর যে সমকালীন নিম্নবর্গ ‘বুর্জোয়া রাজনীতি’র ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছে। তার পাটাতন পাল্টে দিতে চাইছে। ‘ডানে-বামে’ তাকাচ্ছে না তারা।
রাজনীতিতে কারা মরছে?
এখানে কিছু উপাত্তের দিকে সবার দৃষ্টি চাইছি। গত এক বছরের আন্দোলনকালে তাঁরা ‘মারা গেছেন’। কাগজগুলো বলছে তাঁরা ‘বিএনপির কর্মী’। তাঁদের কিছু ব্যক্তিগত তথ্য এখানে তুলে ধরা হলো। গত এক বছর নিহত রাজনৈতিক কর্মীর সংখ্যা পাঁচে সীমিত নয়। তবে লেখা ছোট রাখার জন্য এখানে দৈবচয়ন করে পাঁচটি নাম বাছাই করা হলো মাত্র।
গরিব-মেহনতি মানুষগুলো বিএনপির মিছিলে কেন?
ওপরের প্রত্যেকের প্রোফাইলে আরও বিস্তারিত তথ্য যুক্ত করা যায়। সেটা আপাতত স্থগিত রেখেই কিছু প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে পারি সবাই। তাঁরা কেন বিএনপির রাজনৈতিক কাজে যুক্ত হলেন? কোন রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা থেকে তাঁরা স্বপ্রণোদিত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিও নিলেন এবং নিচ্ছেন? এই মানুষেরা সমাজের কোন শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করছেন?
একই সঙ্গে আরও কিছু সম্পূরক প্রশ্নও করা যায়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাহিত্যের পুরোনো পাঠগুলো সমাজের এই জনগোষ্ঠীর আবেগ-অনুভূতি-পছন্দ-ইচ্ছা আগের মতো শনাক্ত করতে সক্ষম কি না?
এই সবজিচাষি, ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক, শাড়িতে নকশা বোনা শ্রমিকদের সঙ্গে আমাদের সমাজবিজ্ঞানীদের আদৌ কি কোনো জীবন্ত সংযোগ আছে?
গত এক বছর বিএনপির রাজনীতির ফোকাস ছিল নতুন জাতীয় নির্বাচন। প্রশ্ন হলো, ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি শাওন কিংবা সবজিচাষি আবদুর রহিমদের কাছে এই রাজনীতি আত্মাহুতির মতো জরুরি হলো কীভাবে? নির্বাচন হলে তাঁরা তো আর এমপি কিংবা চেয়ারম্যান হবেন না। তা ছাড়া, রাজনীতি করার জন্য এই মানুষেরা কমিউনিস্ট পার্টি বা জামায়াতে ইসলামীর মতো ‘আদর্শবাদী’ দলগুলোতে না গিয়ে বিএনপিতে আসছেন কেন?
বাংলাদেশের ডানপন্থী ও বামপন্থী রাজনীতি যে সমাজের নিচতলার মানুষকে আগের মতো আর আকর্ষণ করতে পারছে না, এর নিশ্চয়ই কিছু ব্যাখ্যা আছে। সেই ব্যাখ্যায় কি প্রগতিশীলতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতার পুরোনো সংজ্ঞাও পাল্টাবে?
শ্রমিকেরা ট্রেড ইউনিয়নে নেই, ছাত্ররা মধুর ক্যানটিনে যান না!
ওপরের পাঁচজনের প্রোফাইল থেকে আমরা দেখছি—এই মানুষেরা নিজ পরিমণ্ডলের ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনেও আকর্ষিত নন। কেন একজন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক শহীদুল ইসলাম শাওন কোনো শ্রমিক সংগঠন না করে ‘জাতীয় রাজনীতি’র মিছিলে হাঁটছেন? কেন সবজিচাষিরা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জীবন দেওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন? আবদুর রহিমের তো কৃষক বা খেতমজুর সংগঠন করলেও চলত।
এর মানে কি তবে এই, সমাজের নিম্নবর্গের পেশাগত কথা বলার জায়গাগুলো একদম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে? এর মানে কি এ-ও যে সমাজের ‘নিচতলা’ও চারপাশের ‘ক্ষমতা’র তাপে দিশেহারা? তারা কি তবে এটাই ভেবে নিয়েছে জাতীয় পর্যায়ে জবাবদিহির একটা ব্যবস্থা কায়েমের আগে আর ‘কিছু’ই সম্ভব নয়? তার মানে কি তবে সমাজে ‘রাষ্ট্রে’র সংস্কারের প্রশ্নটিই বড় হয়ে উঠেছে?
এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য বিরোধী দলের মিছিলে হাঁটা নিম্নবর্গের সঙ্গে গভীর সংলাপ দরকার আমাদের। কিন্তু দেশের সমাজবিজ্ঞানীদের কী আদৌ তেমন সময় আছে? নাকি আমরা রাজনৈতিক সাহিত্যের মুখস্থ থিসিসগুলোই আওড়িয়ে যাব? প্রগতিশীলতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতার পুরোনো সমীকরণই আঁকড়ে থাকব।
বহুকাল এ দেশে সমাজের শ্রেণিকাঠামোর সামাজিক তদন্ত করেছেন বাম বুদ্ধিজীবীরা। এ কাজে তাঁদের একচেটিয়াত্ব ছিল। তাঁদের পুরোনো থিসিস হলো ‘বিএনপি ব্যবসায়ী এবং লুটেরা বুর্জোয়াদের দল’। তোপখানা রোড কিংবা পল্টনের ফুটপাতে পুরোনো বইয়ের দোকানে এখনো এ রকম সিদ্ধান্তসূচক ‘পার্টি দলিল’গুলো পাওয়া যাবে। কিন্তু গত এক বছরের রাজনৈতিক শহীদদের তালিকা আমাদের কী বার্তা দিচ্ছে? মিছিল-মিটিংয়ে এ রকম মৃতদের তালিকায় ব্যবসায়ী তো দূরের কথা, মধ্যবিত্তও মিলছে না।
বলা হতে পারে, অন্য বড় দলের জনসভায়ও এ রকম নিম্নবিত্ত মানুষের দেখা মিলবে। কিন্তু এর উত্তর সহজ। কোথায় নিম্নবিত্ত মানুষ নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে মিছিলের মুখ হিসেবে যাচ্ছে, আর কোথায় যাচ্ছে মনের তাড়নায়—এটুকু আঁচ অনুমানের প্রজ্ঞা বাংলাদেশে প্রায় সবার আছে। ধর্মঘটের বাধা, গ্রেপ্তার ও পিটুনির তোয়াক্কা না করে বিরোধী দলের বিভিন্ন সমাবেশে গ্রামগঞ্জের মানুষদের এক-দুই দিন আগে এসে রাত্রিযাপনকে ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয় ভাবা মুশকিল। গবেষণার তথ্য-উপাত্ত হিসেবে এই মানুষেরা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সে রকম গবেষকদের এ-ও দেখতে হবে, বিগত মাসগুলোর রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে শিক্ষাঙ্গন ও শিল্পাঞ্চলের অংশগ্রহণ কম কেন? এটা তো অতীত বাংলাদেশের সঙ্গে ঠিক মেলে না!
সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদ আন্দোলনগুলোতে শিক্ষাঙ্গনের বড় মাপে অংশগ্রহণ পাওয়া যায়নি। শ্রমিক অঞ্চলও বেশ শান্ত ছিল। এর মানে কি তবে এই—এ দেশের রাজনীতিতে ছাত্র ও শ্রমিকদের পুরোনো ভূমিকা শেষ হতে চলেছে? নাকি শিক্ষাঙ্গন ও শিল্পাঙ্গনে পরিবেশ এমন আকার নিয়েছে, যেখানে কথা বলা এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে? নাকি এই দুই পরিমণ্ডলের মানুষ খুব তৃপ্ত!
নিশ্চয়ই বাড়তি অনুসন্ধানের আগে আমরা এসব বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারব না। কিন্তু এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা তো অবশ্যই জরুরি, প্রায় পাঁচ বছর উচ্চ মূল্যস্ফীতির মাঝেও চা খাত ছাড়া অন্যান্য খাতের শ্রমিকেরা মজুরিকাঠামো বদলের জন্য সংগঠিতভাবে কথা বলতে পারলেন না কেন? তবে কি তাঁরা মূল্যবৃদ্ধির ফলে প্রকৃত মজুরি কমে গেলেও কোনো সমস্যা বোধ করছেন না? নাকি তাঁরা কম খেয়ে থাকছেন? নাকি তাঁরা শিল্প পুলিশের তীব্র নজরদারিতে ন্যূনতম সংঘবদ্ধ হওয়ার আশাও ছেড়ে দিয়েছেন?
তেমনি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্ররা বিছানা না পেয়ে গণরুমের ফ্লোরে থাকছেন আমরা জানি। কিন্তু তারপরও মধুর ক্যানটিনের রাজনৈতিক আড্ডার চায়ের টেবিল বাদ দিয়ে টিএসসির ফুটবল স্ক্রিন তাঁদের বেশি টানছে। ঢাবির কলাভবনকে ঘিরে ঘামে ভেজা উত্তেজক মিল এখন খুব কম।
এটা কেন? এই বদলে যাওয়া সময়ের ব্যাখ্যা কী?কেন, সমাজের সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা নন, বরং ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক কিংবা সবজিচাষিদের গণতন্ত্রের আকুতি বেশি স্পর্শ করছে?
নিম্নবর্গ কি তবে রাজনৈতিক মধ্যপন্থাকে বেশি কাজের ভাবছে? নাকি সুশীল মধ্যবিত্ত এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের মানুষেরা রাজনৈতিক স্বার্থের দুই বিপরীত মেরুতে দাঁড়াচ্ছেন ক্রমে? এটা কী তবে রাজনৈতিক অর্থনীতির একটা মোড় বদল?
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪