Ajker Patrika

গ্যাসের সঙ্গে বিদ্যুতেরও সংকট

সাবিত আল হাসান, নারায়ণগঞ্জ
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২২, ১৫: ৩৪
গ্যাসের সঙ্গে বিদ্যুতেরও সংকট

শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বাসিন্দারা। গরমের মধ্যে কয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎবিভ্রাটে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বাসিন্দারা। বিভিন্ন অফিস-আদালতের কার্যক্রমেও ঘটছে ব্যাঘাত। বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন কারখানার মালিকেরা। ঈদের আগে গ্যাস ও বিদ্যুতের এমন সংকট কারখানার উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদ সামনে রেখে পোশাক তৈরির কারখানাসহ বিভিন্ন কলকারখানা তাদের নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করে কর্মীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে কারখানায় গ্যাসের চাপ কম এবং গত কয়েক দিনের লোডশেডিংয়ে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে নির্ধারিত সময়ে শিপমেন্ট করতে না পারাসহ বিল উত্তোলন এবং কর্মীদের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মালিকদের।

সূত্র বলছে, ২৪ ঘণ্টায় নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সময়ভেদে ৭ থেকে ৮ বার লোডশেডিং হচ্ছে। এতে স্বাভাবিক উৎপাদন সম্ভব হয় না। উল্টো বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণে অনেক পণ্য মেশিনে আটকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কী করবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না শিল্পকারখানার পরিচালকেরা।

শিল্পমালিকেরা বলছেন, অধিক বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণে জেনারেটরের ওপর চাপ বাড়ছে। খরচ বাড়ছে প্রতিদিন। উৎপাদনের পরিমাণ কমে আসছে। তবে এর চেয়েও বড় সমস্যা হচ্ছে গ্যাস-সংকট। গ্যাস-সংকট শিল্পকারখানার উৎপাদনের গতি কমিয়ে দিয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

বিকেএমইএর পরিচালক শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কারখানায় বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণে বড় কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে এই প্রভাব যেন না পড়ে সে জন্য দীর্ঘ সময় জেনারেটর চালিয়ে রাখতে হচ্ছে। ফলে আমাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা যেন সেই নির্দেশনা মেনে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করি। তাহলে আশা করি এই সমস্যা কাটিয়ে উঠব আমরা।’

তবে বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম দাবি করেছেন, বিদ্যুৎ এবং গ্যাস-সংকটে বেশ বেকায়দায় রয়েছেন কারখানার মালিকেরা। তিনি বলেন, বিদ্যুতের সমস্যার কারণে জেনারেটরের ওপর চাপ পড়ছে। জেনারেটর আবার দীর্ঘ সময় চালিয়ে রাখা যায় না। সে ক্ষেত্রে জেনারেটর বন্ধ রেখে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। সেদিক থেকে উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুতের চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে গ্যাস। নারায়ণগঞ্জে অনেকেই গ্যাস পাচ্ছে না। এখানে গ্যাসের সমস্যা প্রকট এবং তা প্রায় এক মাস ধরে।

মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, ‘এসব সমস্যার কারণে শিপমেন্ট মিসিং হচ্ছে। উৎপাদন কোথাও কোথাও ৫০-৬০ শতাংশে নেমে আসছে। আমার নিজেরও শিপমেন্ট দেরি হচ্ছে। যেসব পণ্য ১০-১৫ দিন আগে শিপমেন্ট করার কথা ছিল, সেগুলো এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। অথচ আমাদের লক্ষ্য ছিল ঈদের আগে শিপমেন্ট করে ডকুমেন্ট দেখিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা নেব। সেই টাকা দিয়ে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করব, কিন্তু সেটা হয়নি। এমন সমস্যায় অনেকেই পড়েছেন।’

বিকেএমইএর পক্ষ থেকে এসব সমস্যা মোকাবিলায় কী করা হবে, জানতে চাইলে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে তিতাসের এমডি, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এবং বিদ্যুৎসচিবের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, দ্রুতই গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’

ধারাবাহিক লোডশেডিংয়ের বিষয়ে ডিপিডিসি নারায়ণগঞ্জ পূর্ব জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোরশেদ বলেন, গ্যাস-সংকটের কারণেই উৎপাদন কমেছে এবং লোডশেডিং বেড়েছে। ডিপিডিসিতে মোট ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। একেক সময় একেক নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ৪০০, ৩০০ ও ২৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং দেওয়া হয়। পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত