Ajker Patrika

দুই বন্ধুর কাব্যিক এক জুটি

রানা আব্বাস, ক্যান্ডি থেকে
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১: ০৭
দুই বন্ধুর কাব্যিক এক জুটি

তাঁদের দুজনের পরিচয় কত দিনের? এক যুগ তো হবেই। সেই বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে এক সঙ্গে খেলছেন মেহেদী হাসান মিরাজ আর নাজমুল হোসেন শান্ত। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে দুজনই ছিলেন লিডারশিপ গ্রুপে।

বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের সিঁড়ি পেরিয়ে গত ছয়-সাত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও তাঁরা এক সঙ্গেই খেলছেন। মিরাজ-শান্তর বন্ধুত্ব, বোঝাপড়া অনেক আগে থেকেই। দুজনের বোঝাপড়ার এ নির্যাসটাই দেখা গেল গতকাল লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে।

দুজনের ১৯০ বল খেলে যে ১৯৪ রানের এক কাব্যিক জুটি হলো তৃতীয় উইকেটে। টপঅর্ডার ব্যাটার শান্তর সঙ্গে মিরাজের এই জুটি তৈরি করতে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট একটা ফাটকাই খেলেছে।

ফাটকা খেলতে হাতে মোক্ষম ট্রাম্পকার্ড থাকা চাই। বাংলাদেশ দলে এই ট্রাম্পকার্ড যে মিরাজ, সেটি তিনি ওপেনিংয়ে নেমে আগেও প্রমাণ করেছেন। দুবাইয়ে ২০১৮ এশিয়া কাপের ফাইনালে মিরাজকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল লিটন দাসের সঙ্গে ওপেন করতে। গত বছর টি-টোয়েন্টি সংস্করণে এই পজিশনেই মিরাজ পাঁচবার ওপেন করেছেন।

 ২৫ বছর বয়সী অলরাউন্ডার আসলে বিশেষজ্ঞ ওপেনার নন। তবু এই পজিশনে তিনি নির্দ্বিধায় নেমে যান কেন? একাধিকবার তিনি এই প্রতিবেদককে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাঁর সারমর্ম: বোলার হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছেন।

এখন তাঁকে ব্যাটিংয়ে আরও উন্নতি করতে হবে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ দলের যে ব্যাটিং অর্ডার, তাতে নিয়মিত লোয়ার অর্ডার ছাড়া মিরাজের জন্য খুব বেশি অপশন নেই।

লোয়ার অর্ডারে মিরাজের লম্বা ব্যাটিংয়ের সুযোগ মানে বুঝতে হবে, সেদিন বাংলাদেশ দল ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে। কোনো বিপদ-টিপদ ছাড়াই মিরাজের সামনে লম্বা সময় ব্যাটিংয়ের সুযোগ আরেক উপায়ে হতে পারে, যদি তিনি টপঅর্ডার বা ওপেনিংয়ে সুযোগ পান।

ক্যান্ডিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের অনভিজ্ঞ ওপেনিং জুটি ব্যর্থ হওয়ার পর লাহোরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টপঅর্ডারে পরিবর্তন আসার একটা ইঙ্গিত মিলছিল। সেই পরিবর্তন যে মিরাজকে ‘মেকশিফট’ ওপেনার বানিয়ে হবে, প্রতিপক্ষের গেম প্ল্যানারদের পক্ষেও ইঙ্গিত পাওয়া কঠিন ছিল। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের এই কৌশল ‘ক্লিক’ করে গেছে মিরাজ আর শান্তর অসাধারণ জোড়া সেঞ্চুরিতে।

লাহোরের গরমে আরেকটি লম্বা জুটি গড়া মিরাজ-শান্তর জন্য মোটেও সহজ ছিল না। গরমে ‘ক্র্যাম্প’ করার পরও অবিচল থেকেছেন এগিয়ে যেতে। স্টাম্প মাইকের মাধ্যমে ভেসে আসা মিরাজের কথাটা নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণাদায়ক। শান্তকে তিনি বলছেন, ‘আমার কষ্ট হচ্ছে, তবু আমি খেলতেছি সময় নিয়ে।’

ওয়ানডেতে ওপেনিংয়ে দ্বিতীয়বার সুযোগ পেয়ে নিজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৬৫ বলে, হাফ সেঞ্চুরিকে তিন অঙ্কে রূপ দিয়েছেন আর ৫০ বল খেলে। দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি প্রাপ্তির উচ্ছ্বাসটা অবশ্য মিরাজ সেভাবে প্রকাশ করেননি বা করতে পারেননি। শারীরিক অস্বস্তি একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ১১২ রানে তাঁকে ফিরতে হয়েছে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে, শুরুর দিকে ফিল্ডিংও করতে পারেননি।

শুরু থেকে মিরাজ বাংলাদেশকে ম্যাচে রেখেছেন তাঁর সতর্ক আর আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে। তবে খেলাটা মন্থর হতে দেয়নি শান্তর ব্যাটিং। দুর্দান্ত ছন্দে থাকা বাঁহাতি টপঅর্ডার ব্যাটার ক্যান্ডিতে আগের ম্যাচে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফিফটি ছাড়িয়ে সেঞ্চুরির দিকেও এগিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেদিন ফেরেন ৮৯ রানে।

ওই ম্যাচে সেঞ্চুরি করলে হয়তো ‘ছেলে দোলানো’ উদ্‌যাপনটা দেখা যেত পাল্লেকেলেতেই। গতকাল আফগান বোলার মুজিব উর রহমানের বলে সিঙ্গেল নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর চিরাচরিত শূন্য মুষ্টি ছুড়ে লাফিয়ে ওঠা উদ্‌যাপনে দেখা যায়নি তাঁকে। তবে করেছেন ‘ছেলে দোলানো’ উদ্‌যাপন। আর শূন্যে চুমু দিয়েছেন। ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটা পেতে শান্তর লেগেছে ১০১ বল।

শান্তর সঙ্গে মিরাজের ১৯৪ রানের জুটি দেখে যে প্রশ্নটা বেশ শোনা যাচ্ছে, ওয়ানডেতে মিরাজকে কেন নিয়মিত ওপেনিংয়ে খেলানো হবে না? তামিম-লিটন ফিরলে আর কোনো ‘ইমার্জেন্সি কল’ না থাকলে হাথুরুর অবশ্য এই ফাটকা নিয়মিত খেলার কথা নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত