Ajker Patrika

মাছের খাদ্যের দামও দ্বিগুণ

পাটকেলঘাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ জুন ২০২২, ১৬: ৫৫
Thumbnail image

সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটায় হু-হু করে বাড়ছে মাছের খাবারের দাম। চড়া দামে বিপাকে পড়েছেন মৎস্যচাষিরা। তাঁদের অভিযোগ, ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্ববাজারের ‘অজুহাতে’ গত এক বছরের মধ্যে ফিশ ফিডের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

বেড়েছে মাছের ওষুধসহ অন্যান্য উপকরণের দামও। কিন্তু মাছের দাম বাড়েনি। এই পরিস্থিতি মৎস্য খাতের জন্য অশনি সংকেত বলে উল্লেখ করছেন মৎস্যচাষি সমিতির নেতৃবৃন্দ। মাছের খাবারের দাম কমানোসহ সংকট নিরসনে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তাঁরা।

পাটকেলঘাটায় মৎস্য ও প্রাণিখাদ্যের দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে কোয়ালিটি, এসিআই, চায়না বাংলা, নারিশ, আরাফাত, তিতাস, আলো, ভিক্টর, প্যারাগনসহ নানান কোম্পানির ফিশ ফিড প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। ৬ মাস আগেও এই ফিডের মূল্য ছিল বস্তাপ্রতি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। এক বছর আগে আরও কম ছিল। মাছচাষিরা সাধারণত ৯০ ভাগ এই ফিশ ফিড ব্যবহার করেন।

এর বাইরে মাছের খাবার রাইস পালিশ প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) ৭০০-৮০০ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৭০০-১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১৬-১৭ টাকা কেজি ভুট্টা এখন বিক্রি হচ্ছে ২৮-২৯ টাকায়। ৩৮ টাকা কেজির ফিশ মিলের দাম এখন ৬০ টাকা। আর ৪০ টাকা কেজির সয়াবিন খৈল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।

মাছ চাষিদের অভিযোগ, প্রতিনিয়ত দফায় দফায় বাড়ছে মাছের খাবারের দাম। খাদ্যের মাননিয়ন্ত্রনে নেই কোনো তদারকি। নিন্মমানের খাবারে বাজার সয়লাব। গত এক বছরে খাবারের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আর গত ৬ মাসে বেড়েছে তার দেড়গুণ। দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে কোম্পানির প্রতিনিধিরা বিশ্ববাজারের কথা বলছেন।

কয়েকজন মাছচাষি অভিযোগ করে বলেন, ফিশ ফিড কোম্পানিগুলো ব্যবসার নামে গলা কাটছে। কারণ যেসব উপকরণ দিয়ে ফিশফিড তৈরি করা হয়; সেগুলো মিলিয়ে এককেজির খরচ ৪০ থেকে ৫০ টাকার বেশি নয়। অথচ কোম্পানি থেকে বস্তাবন্দি হয়ে বেরিয়ে আসার পর তাঁর দাম দাঁড়াচ্ছে ৭৫ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত। মাছের খাবারে গড়ে কেজি প্রতি ৩০ টাকা শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। কোম্পানি এবং ডিস্ট্রিবিউটর পর্যায়ে এই টাকা বাড়তি মুনাফা হিসেবে চলে যাচ্ছে।

পাটকেলঘাটার মাছ চাষি আবু হোসেন রোস্তম আলী বলেন, ফিশফিড কোম্পানিগুলো কখনো বিশ্ববাজার, কখনো ইউক্রেন যুদ্ধ, কখনো জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি- এসব কথা বলে মাছের খাবারের দাম বাড়িয়েই যাচ্ছে। ফিশফিডের দাম মনিটরিং করার জন্য যেন কেউ নেই। প্রতিদিনই বাড়ছে মাছের খাবারের দাম। বিপরীতে মাছের দাম বাড়ছে না। ফলে মাছ চাষিরা বিপদে আছেন। আর শিল্পপতিরা মৎস্য সেক্টরে ঢুকে পড়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের মাছ চাষিদের টিকে থাকাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ফিডের দাম কমানোসহ মৎস খাতের সংকট নিরসনে আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’

পাটকেলঘাটা বাজারের ফিশ ফিডের ব্যবসায়ী সুভাষ ঘোষ বলেন, ‘কোম্পানি সব প্রোডাক্টের দাম বাড়িয়েছে। যে কারণে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা যেমন কিনব তেমনি বিক্রি করব।’

তালা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্নিগ্ধা খাঁ বাবলি বলেন, ‘মাছের ফিডের দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকেই প্রাকৃতিক খাবারের প্রতি নির্ভরশীল হচ্ছেন। তবে প্রাকৃতিক খাবার পর্যাপ্ত না বিধায় মাছের বৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। তার ওপর অধিক মূল্যে খাবার কিনে চাষিরা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না। যে কারণে বাণিজ্যিকভাবে জানা মাছ চাষ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মৎস্য সেক্টরের প্রতি সরকারের আন্তরিক দৃষ্টি রয়েছে। কিন্তু ফিশফিড তৈরির উপকরণ আমদানিনির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারের কারণেই দাম বাড়ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত