Ajker Patrika

দিঘি কবে মরে যাবে জানবে না কেউ

মাহবুব আলম আরিফমুরাদনগর (কুমিল্লা)
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪: ১১
দিঘি কবে মরে যাবে জানবে না কেউ

তার বয়স যেমন বেশি, কলেবর তেমন বিশালকায়। তাকে বাঁচিয়ে রাখতে আদালতে মামলাও হয়েছে। তাই আয়োজন করে মারতে না পেরে এবার কৌশলে একটু একটু করে তাকে মারার পাঁয়তারা চলছে। এতে কেউ বুঝবে না কী চলছে, কিন্তু দু-দশ-বিশ বছর পর একদিন সে নাই হয়ে যাবে।

কুমিল্লার মুরাদনগরের রায় দিঘির বয়স ১১০ বছর। আয়তন ছিল ১৫ একরের বেশি। দিঘিটি ভরাট করার জন্য কোনো দিন রাতের বেলা টুপ করে এক ট্রাক ভাঙা ইট অথবা মাটি ফেলা হয়। এরপর সব চুপচাপ। দু-এক দিনের বিরতি দিয়ে একই জায়গায় আবারও এক ট্রাক ইট অথবা মাটি ফেলা হচ্ছে। এভাবেই চলছে কয়েক বছর ধরে। একটু একটু করে এত দিনে ভরাট হয়ে গেছে প্রায় ৬ একর। এখন আছে ৯ একর। এ কাজ করছেন স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা, নিতাইসহ কয়েকজন।

শতাব্দীপ্রাচীন রায় দিঘিটির অবস্থান উপজেলার নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের নগরপাড় এলাকায়। এ জন্য দিঘিটি নগরপাড় দিঘি হিসেবেও পরিচিত। নবীপুর পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তথ্য বাতায়নের তথ্য অনুযায়ী, ১৯১০ সালে তৎকালীন তিন জমিদারের প্রচেষ্টায় ওই দিঘিটি খনন করা হয়। তাঁরা হলেন ঢাকার জদুলাল বসাক, বাঙ্গরার রূপক চন্দ্র ও নগরপাড়ের রামদেব রায়। নগরপাড় জমিদার বংশের নামানুসারে রায় দিঘি নামেই এটি পরিচিতি পায়।

জানা যায়, ২০১২ সালে দিঘির পরিবেশ রক্ষায় স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী আদালতে মামলা করেন। সেই মামলায় ওই বছরই পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত দিঘিতে কোনো প্রকার ভরাটের কাজ না করতে আদেশ দেন উচ্চ আদালত।

এই দিঘির এক পাশ থেকে নিয়মিত ভরাট করে যাচ্ছেন এম এস সি ব্রিকসের মালিক গোলাম মোস্তফা। দু-এক দিন পরপরই নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রাকে করে ইট, ভাঙা ইট ও ইটের গুঁড়া এনে দিঘির এক পাশে ফেলছেন। মানুষের চোখে যেন না পড়ে, সে জন্য কৌশলে সামনে টিনের বেড়া লাগিয়ে নিয়েছেন।

দিঘি ভরাটের বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম মোস্তফা দাবি করেন, ‘এই দিঘিতে আমার প্রায় দেড় একর জায়গা রয়েছে। আদালতে মামলা চলার কারণে কেউ আর ভরাট করছে না। তাই আমিও ওই দিঘিতে আমার জায়গা থাকা সত্ত্বেও কোনো প্রকার ভরাট করছি না।’ কৌশলে ইট ফেলে ভরাটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা মিথ্যা কথা। আগে থেকেই এই জায়গা ভরাট ছিল।’

নিতাই নামে অপর ব্যক্তিও দাবি করেন, তিনি দিঘি ভরাট করছেন না। তবে অভিযোগ করেন, গোলাম মোস্তফাসহ বেশ কয়েকজন আদালতের নির্দেশ অমান্য করে দিঘিটি ভরাট করছেন। দিঘিটির উত্তর পাশে একটি বিশাল সরকারি হালট (খাসজমি) ছিল, যা বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন দখল করে বাসাবাড়ি নির্মাণ করেছেন।

সরেজমিনে জানা যায়, ওই সরকারি হালট দখল করে ঘর বানিয়েছেন নবীপুর পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কাজী আবুল খায়ের এবং সিদ্দিক মিয়া চৌধুরী, ইকবাল মিয়া, কাজী সুলতান ও মোহন মিয়া। হালটের পাশে নিজেদের কিছু জমি থাকায় তাঁরা ধীরে ধীরে এ হালট দখলে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আবুল খায়ের বলেন, তিনি খাসজমি দখল করেননি। তবে রাস্তার উত্তর পাশের কয়েকটি পরিবার ১১ ফুট খাসজমি দখলে নিয়েছে। তাদের নামে ভূমি আত্মসাতের মামলা হয়েছে।

নিজের বাড়ি খাসজমিতে পড়েছে কি না, জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘মাপে যদি দেখা যায়, আমার বাড়ি খাসজমিতে পড়েছে, সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ভেঙে সরিয়ে নেব।’

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অভিষেক দাশ বলেন, ‘পুকুর বা দিঘি ভরাটের বিষয়ে কেউ আমাদের জানালে আমরা খোঁজ নিয়ে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিই। তবে রায় দিঘি ভরাটের বিষয়ে আমাকে কেউ লিখিতভাবে জানায়নি। আর দিঘির পরিবেশ রক্ষার্থে মামলার বিষয়টিও আমার জানা নেই। তারপরও আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি, যদি কেউ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে এবং দিঘি ভরাট করার চেষ্টা করে, তাহলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেঘালয়ে হানিমুনে গিয়ে বর খুন, নিখোঁজ নববধূকে উদ্ধারে নেমেছে ড্রোন

‘তাণ্ডব’ সিনেমার শো চলার সময় ছায়াবাণী হলে দর্শকদের ভাঙচুর, টাকা লুট

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান বিচার ও কিছু প্রশ্ন

ইরান-ইসরায়েলের সম্ভাব্য মুখোমুখি সংঘর্ষের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফিরোজায় বিএনপি নেতাদের ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত