Ajker Patrika

তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে

রেজোয়ান হক
Thumbnail image

আলোচিত এবং ডিজিটাল দুনিয়ায় ভাইরাল মুশতাক-তিশা দম্পতির পর আলোচিত আরেক দম্পতি আয়মান-মুনজেরিন দম্পতিকেও বইমেলায় একদল মানুষের কাছ থেকে ভুয়া ভুয়া বলে গালি শুনতে হলো।

মুশতাক-তিশা দম্পতি শুধু আলোচিত নয়, সমালোচিতও বটে। তাঁরা যখন তাঁদের অসম প্রেম-পরিণয়কে বিরাট সাফল্য ভেবে ঘন ঘন মিডিয়ায় আসছেন, সমাজে অনেকের অপছন্দ এ ধরনের সম্পর্ক নিয়ে বই লিখে তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাইছেন, তখন বইমেলায় তাঁদের বিরুদ্ধে এমন প্রতিক্রিয়া পছন্দ না হলেও অবাক হইনি।

কিন্তু দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই অনলাইন শিক্ষক, অনেক প্রশংসিত টেন মিনিটস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক এবং সেখানকারই সুপরিচিত শিক্ষক মুনজেরিন শহিদ তো অসংখ্য তরুণ-তরুণীর আইডল, তাঁদের বিশাল ফলোয়ার গোষ্ঠী আছে, তাঁদের কাজ সমাজের উপকারেই লাগছে, তাঁদের সম্পর্ক নিয়েও কোনো প্রশ্ন নেই, তাহলে তাঁদেরও কেন একইভাবে গালি দেওয়া হলো ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল বিপিএলের কয়েকটি ম্যাচে সাকিব আল হাসানকেও গ্যালারি থেকে এমন গালি 
শুনতে হয়েছে।

আমার মনে হচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের মতো এমন একটা তরুণ জনগোষ্ঠী দেশে বেড়ে উঠেছে, যাদের ‘ভুয়া গ্যাং’ বলা যেতে পারে—এসব তাদেরই কাজ। ভালো-মন্দ চরিত্র বিচার্য নয়, কাউকে টার্গেট করে অপদস্থ করার মাধ্যমে ব্যাটাগিরি দেখায় তারা। আর এ কাজে আশপাশে থাকা বেকার-ভবঘুরে কিছু লোকের সমর্থন এবং অংশগ্রহণও জুটে যায়।

মুনজেরিন নন, ওই দিন শুধু আয়মান গিয়েছিলেন বইমেলায়। তাঁকে ঘিরে ভিড় জমে যায়। একপর্যায়ে পেছন থেকে ‘ভুয়া ভুয়া’ রব ওঠে। একটি ভিডিও ক্লিপে দেখলাম কেন তাঁরা এটা করছেন—এই প্রশ্নের জবাবে কেউ বলছেন, মুনজেরিনকে কেন সঙ্গে আনেনি। কেউ বলছেন, ভেবেছেন মুশতাক, আরেকজন বললেন, ‘ভুয়া’ বলতে ভালো লাগে, তাই। এসব অপকর্ম ভালো কভারেজ পাচ্ছে এবং বখাটেরা উৎসাহিত হচ্ছে অভিযোগ করে, এসবের জন্য মিডিয়াকেও দুষছেন অনেকে। এ দায় নিতেই হচ্ছে। মিডিয়ার আগের আয় ছিল টাকায়, এখন মাথায় শুধু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ভিউ বাড়ানোর চিন্তা আর ডলারের পেছনে দৌড়ানো।

দুই সপ্তাহ আগের এক শুক্রবারে বইমেলায় গিয়েছিলাম। বহু বছর ধরে মেলায় যাই কিন্তু এমন অগোছালো দায়সারা টাইপের মেলা আর দেখিনি। ভালো আয়োজন করেই বা কী হবে? এই মেলা এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে বখাটে পোলাপানের ‘টাংকি’ মারার জায়গা, অনেকের জন্য বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার মতোই আরেকটি মেলায় ঘুরতে যাওয়ার জায়গা। যাদের কোনো কাজ নেই, তাদের সময় কাটানোর জায়গা। ওই দিন এত মানুষ এসেছিল যে সন্ধ্যায় মেলা থেকে বের হওয়ার সময় বিশাল লাইনে দাঁড়াতে হয়। লাইনে থাকা বাড়িমুখী লোকগুলোর বেশির ভাগের হাতেই কোনো বই দেখিনি।

একটি ভিডিও ক্লিপ এখন ডিজিটাল দুনিয়ায় ঘুরছে। বইমেলায় ঢোকার মুখে জনা দশেক তরুণ-তরুণীর সাক্ষাৎকার নিলেন এক সাংবাদিক। প্রশ্ন ছিল, একুশে ফেব্রুয়ারি কী, ভাষাশহীদ কারা, স্বাধীনতা দিবস কবে ইত্যাদি। একজনও সঠিক জবাব দিতে পারেনি।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত