Ajker Patrika

ইউনিয়নে শতভাগ বিদ্যুতায়ন অন্ধকারে কেবল স্বাস্থ্যকেন্দ্র

আশিস রহমান, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ)
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২২, ১০: ১৬
ইউনিয়নে শতভাগ বিদ্যুতায়ন  অন্ধকারে কেবল স্বাস্থ্যকেন্দ্র

দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটি স্বাধীনতার আগে নির্মিত হলেও আজও বিদ্যুতের ছোঁয়া লাগেনি। অথচ ২০১৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে একে শতভাগ বিদ্যুতায়ন ইউনিয়ন ঘোষণা করা হয়। এদিকে চিকিৎসকসহ অফিস সহায়কের পদ খালি থাকায় সেবা নিতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের।

স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়নের ২৪টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার ছাড়াও, পাশের সুরমা ও বোগলা ইউনিয়ন থেকেও এখানে সেবা নিতে আসেন মানুষ। সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন হওয়ায় দুর্গম এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে এখানকার মানুষ উপজেলা সদর, জেলা সদর ও বিভাগীয় শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন না। এসব প্রান্তিক মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি।

চিকিৎসা নিতে আসা লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের জিরারগাঁও গ্রামের সখিনা বিবি বলেন, ‘গরমের মধ্যে এখানে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীর সঙ্গে আসা সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাসপাতালে বিদ্যুৎ নেই, চিকিৎসক নেই। আমাদের এই দুর্দশা কেউ দেখে না।’

উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের এমবিবিএস চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট, অফিস সহায়ক ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি। বিদ্যুৎ ও ডাক্তার ছাড়াই শুধু একজন উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসক (সেকমো) সেবা দিয়ে চলেছেন এ হাসপাতালে।

স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতার আগে সিলেট জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে চলত এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। স্বাধীনতার আগেও এখানে চিকিৎসক ছিল, কিন্তু বর্তমানে শুধু সেকমো মনিরুল ইসলামকে দিয়ে চলছে পুরো হাসপাতালের কার্যক্রম। হাসপাতাল ঝাড়ু দেওয়া থেকে শুরু করে রোগী দেখাসহ সার্বিক দেখভাল তিনি করেন। তিনি সরকারি কোনো কাজে, প্রশিক্ষণ কিংবা ছুটিতে গেলে হাসপাতাল বন্ধ থাকে।

সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালটিতে কোনো সীমানাপ্রাচীর নেই। গবাদিপশু, কুকুর-বিড়াল অবাধে বিচরণ করছে হাসপাতালের আঙিনায়। হাসপাতালের সামনে মাত্র কয়েক গজ দূর দিয়ে গেছে ইউনিয়নের পল্লী বিদ্যুতের লাইন। অথচ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। খাবার পানি সরবরাহের টিউবওয়েলের মাথা নেই। এটিও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. এমদাদুল হক চৌধুরী মামুন বলেন, ‘হাসপাতালে বিদ্যুৎ সংযোগ, চিকিৎসক নিয়োগ ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ প্রয়োজন। সীমানাপ্রাচীর না থাকায় রাতে বখাটেদের আড্ডা বসে এখানে। হাসপাতালের টিউবওয়েলের মাথা পর্যন্ত চুরি হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় জানালা ভেঙে ফেলেছে। হাসপাতালটির উন্নয়নের বিষয়ে আগেও দাবি জানিয়েছি। এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদের সঙ্গে কথা বলব।’

উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেকমো মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৬ সালে হাসপাতালটিতে যোগদান করি। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী আসে এখানে। জনবলসংকটে একাই সবকিছু সামলাতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় রাতে জরুরি রোগী এলে মোমবাতি জ্বালিয়ে সেবা দিতে হয়।’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে তাঁরা আশ্বস্ত করেছেন। তবে এখনো কাজ শুরু হয়নি।

পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির দোয়ারাবাজার উপ আঞ্চলিক কার্যালয়ের এজিএম এ বি এম জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে লিখিতভাবে কোনো আবেদন জানানো হয়নি। লিখিতভাবে আবেদন জানালে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিতাম। দোয়ারাবাজারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমাদের এ বিষয়ে জানিয়েছেন। উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আমরা লোক পাঠাব। দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।’

সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ড. আহম্মদ হোসেন বলেন, ‘উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অবকাঠামোগত রিপেয়ারিং কাজ ও বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করেছি। শিগগির তাঁরা কাজ ধরবে। আশা করি, এ সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। অন্য সমস্যাগুলো আমরা পর্যায়ক্রমে সমাধান করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত