Ajker Patrika

বিমা দাবি পাচ্ছেন না ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১ হাজার ৭০০ গ্রাহক

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১১: ২৮
বিমা দাবি পাচ্ছেন না ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১ হাজার ৭০০ গ্রাহক

নির্ধারিত নিয়মে সঞ্চয় জমা দিয়েছেন গ্রাহকেরা। এখন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা ফেরত পাওয়ার কথা। কিন্তু সেই অর্থ আর পাচ্ছেন না তাঁরা। এমন ঘটনা ঘটেছে চুয়াডাঙ্গায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শাখা কার্যালয়ে। গ্রাহকের অনেকের অভিযোগ, তিন বছর আগে পলিসির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন অর্থ চাইতে গেলে চুয়াডাঙ্গা অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকায় প্রধান কার্যালয়ের দুর্নীতির কারণে গ্রাহকের বিমা দাবি নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না।

চুয়াডাঙ্গায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রায় ১ হাজার ৭০০ গ্রাহক এমন সংকটের মধ্যে রয়েছেন। সূত্র বলছে, এসব গ্রাহকের প্রায় ৬ কোটি টাকা বিমা দাবি রয়েছে। এমন গ্রাহকদের অনেকে চুয়াডাঙ্গায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে আসেন। তাঁদেরই একজন আলমডাঙ্গা উপজেলার যুগির হুদা গ্রামের আব্বাস আলী। তিনি বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। বারবার আলমডাঙ্গা থেকে চুয়াডাঙ্গায় অফিসে আসলে গাড়ি ভাড়া লাগে। পরের জমিতে কাজ করি, দিন হাজরেটা হয় না। অনেক কষ্টে কিছু টাকা জমানোর আশা নিয়ে সঞ্চয় খুলেছিলাম। কিন্তু সেই টাকাই তো পাচ্ছি না।’ তিনি বলেন, ‘এই অফিসের কেউ কথা কানে নেয় না, তিন বছর ধরে ঘুরাচ্ছে। ২০২০ সালে আমি মেয়াদ পূর্ণ করেছি। আমি দিনমজুর, টাকা ফেরত না পেলে মামলা করব। আমার কষ্টের টাকা।’

চুয়াডাঙ্গা শহরের পুরাতন হাসপাতালের সামনে জমিদার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সার্ভিস সেন্টার। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, টাকা ফেরত পেতে অনেকে আকুতি জানাচ্ছেন। তবে কর্মকর্তাদের সেদিকে নজর নেই। কর্মকর্তাদের কেউ বলছেন, ‘ঢাকা অফিস জানে।’ এই বলেই থেমে যাচ্ছেন তাঁরা।

এ নিয়ে কথা বলতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চুয়াডাঙ্গা ডিভিশনের ইনচার্জ আমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁকে পাওয়া যায়নি। গ্রাহকদেরও অভিযোগ, তিনি অফিসে থাকেন না।

চুয়াডাঙ্গা সার্ভিস সেন্টারের নির্বাহী অফিসার আব্দুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানান, সেখানে তিনি নতুন যোগদান করেছেন। চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিতে পারেননি তিনি। ১ হাজার ৭০০ গ্রাহকের টাকা আটকে আছে জানালেও, মোট কত টাকা সেই হিসাব তিনি দিতে পারেননি। 

আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এখানে ১ হাজার ৭০০ গ্রাহকের টাকা আটকে আছে। ঢাকায় প্রধান কার্যালয়ের কয়েকজনের দুর্নীতির কারণে এমন হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় বর্তমানে ৮ হাজার ৮১১ জন বাৎসরিক ও ৮ হাজার ১১৫ জন মাসিক গ্রাহক আছেন। তাঁদের থেকে মাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ওপরে সঞ্চয় আদায় হয়। তবে, আমরা হেড অফিসের নিয়ম অনুযায়ী টাকা জমা নিয়ে পাঠিয়ে দিই। বিমার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর হেড অফিস বাকিটা দেখে। গ্রাহকদের টাকা পরিশোধের বিষয়টি সম্পূর্ণ হেড অফিস জানে। আমরা কিছু জানি না।’

তবে এতে হতাশ গ্রাহকেরা। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ এলাকার বাসিন্দা ও শিক্ষক রাজু আহমেদ বলেন, ‘আমি কোনো রকমে পড়িয়ে সংসার চালাই। তিন বছর আগে আমার বিমার মেয়াদ শেষ হয়েছে। আমি কোম্পানির দ্বারে দ্বারে অসহায়ের মতো ঘুরছি। কোম্পানির লোকজন কোনো কিছু তোয়াক্কা করে না। আসলে ঠিকমতো কথাই বলে না। শুধু এক কথা, ঢাকা অফিস জানে। কিন্তু আমি কবে টাকা পাব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত