Ajker Patrika

কাঁচামাল সংকটে বন্ধের পথে ছয় পাটকল

জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২২, ১২: ২০
কাঁচামাল সংকটে বন্ধের পথে ছয় পাটকল

কাঁচামালের সংকটের কারণে বন্ধের পথে নীলফামারীর ৬টি পাটকল। ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ উৎপাদন কমে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে হাজারো শ্রমিক। পাটকল মালিকদের অভিযোগ, বিদেশে কাঁচা পাট রপ্তানির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাই লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে মালিকেরা বাধ্য হয়ে উৎপাদন আংশিকে নামিয়ে আনেন।

জেলার মেসার্স এনডি জুট মিলের মালিক রাজ কুমার পোদ্দার আজকের পত্রিকাকে জানান, বাজারে কাঁচাপাট আসতে এখনো ৬ মাস বাকি। কৃষকদের ঘরেও নেই পাট। আর এ সুযোগে পাটের মজুতদারেরা প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন। পাটকল মালিকেরা এ দামে পাট কিনে পণ্য উৎপাদন করে লোকসানে পড়েন। এতে বাড়াতে হচ্ছে পাটজাত পণ্যের দাম, হারাতে বসেছে বিদেশে এসব পণ্যের বাজার। এসব কারণেই মালিকেরা পাটের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন।

জানা যায়, সরকার বিভিন্ন পণ্যের মোড়ক বা বস্তায় প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করায় লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছিল পাটকলগুলো। জেলার মিলগুলোতে পাটের তৈরি পণ্যের গুণগত মান উন্নত হওয়ায় দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হয়। কিন্তু সরকার আন-কাট পাট রপ্তানিতে অনুমতি দেওয়ায় দেশের বাইরে পাঠানো হচ্ছে কাঁচা পাট। এতে কাঁচামাল সংকটে পড়েছে নীলফামারীসহ দেশের পাটকলগুলো।

মেসার্স পোদ্দার অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের শ্রমিক আয়নাল হক জানান, ‘উৎপাদন কম হওয়ায় অনেকে কাজ ছেড়ে দিয়ে দৈনিক চুক্তিতে ইজিবাইক চালানো কিংবা নির্মাণশ্রমিকের কাজ করছেন। পরবর্তী সময়ে মিল চালু হলে এসব দক্ষ শ্রমিককে মিলে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। গত কয়েক বছরে এ অবস্থার ফলে পাটকলগুলোতে দক্ষ শ্রমিকের সংকট বিরাজ করছে।’

পাটপণ্যের নারী উদ্যোক্তা রাজিয়া সুলতানা জানান, ‘পাটের তৈরি পণ্যের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। কিন্তু কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির ফলে পণ্যের দামও বৃদ্ধি পায়। এতে ক্রেতারা পাটপণ্য থেকে বিমুখ হয়।’

তিনি আরও জানান, ‘যেখানে একটি পাটের ব্যাগ ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করতে হয়, সেখানে বাজারে প্লাস্টিকের ব্যাগ ৫ থেকে ১০ টাকায় পাওয়া যায়। স্বভাবতই ইচ্ছা থাকলেও ক্রেতারা অর্থের সাশ্রয়ে প্লাস্টিক পণ্যের দিকে ঝুঁকে যান।’ তিনি পণ্যের সরবরাহ ও বিতরণে কৃত্রিম মোড়কের ব্যবহারে পরিবেশ দূষণরোধে বাধ্যতামূলকভাবে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আইনের যথাযথ প্রয়োগের দাবি জানান।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সদস্য ও জুট মিলের মালিক সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক আজকের পত্রিকাকে জানান, ‘আন-কাট পাট রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার ফলে রপ্তানিকারকেরা জমি থেকে পাট সংগ্রহ করে দেশের বাইরে পাঠাচ্ছে। যেটুকু থাকে তা আবার মজুতদারেরা গুদামজাত করছেন। চাষিদের পাট ফুরিয়ে গেলে মজুতদারেরা ইচ্ছেমতো দাম বাগিয়ে নিচ্ছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত