Ajker Patrika

দখলে-দূষণে মৃতপ্রায় চন্দনা

অনিক সিকদার, বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী)
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮: ১৬
দখলে-দূষণে মৃতপ্রায় চন্দনা

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির চন্দনা নদীর একসময় যৌবন ছিল। নদীতে ছিল উত্তাল ঢেউ। বয়ে যেত ছোট-বড় নৌকা ও লঞ্চ। এখন আর সেই দৃশ্য নেই। এখন চন্দনা নদী ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে। দেখলে মনে হবে নদী নয় যেন ভাগাড়।

অথচ ছোটবেলায় এই নদীতে অনেকেই সাঁতার কেটেছেন। মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কালের আবর্তে দখলে-দূষণে চন্দনা নদী আজ মৃতপ্রায়।

বিভিন্ন বাজারের ময়লা ফেলা হচ্ছে এই নদীতে। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বালিয়াকান্দি বাজারের ময়লা চন্দনা সেতুর পাশ দিয়ে নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে নদীদূষণের সঙ্গে সঙ্গে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা হয় চন্দনা নদী নিয়ে। তাঁরা বলেন, আগে নদীতে দলবল নিয়ে বড় বড় আইড়, বাইম মাছ ধরতেন। নদীতে নৌকায় বোঝাই করে ধান ও পাট নিয়ে হাট-বাজারে বিক্রি করতেন। আর এখন এই নদী মরার পথে।

এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তনে চন্দনা নদীর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এই নদীকে কেন্দ্র করে এক সময় এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল ব্যবসা-বাণিজ্য। কিন্তু নদীটি মরে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে সব। ফলে কৃষি অর্থনীতি ও জীববৈচিত্র্যে নেমে এসেছে বিপর্যয়।

তাঁদের অভিযোগ, বর্তমানে সারা বছরই নদীটি পানিশূন্য থাকে। ফলে বিপাকে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। কারণ এই নদীর পানি দিয়েই তাঁরা জমিতে সেচ দিতেন। এখন নদীতে পানি না থাকায় বিকল্প ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষকেরা।

৭৫ বছর বয়সী বকুল খাঁ বলেন, এই চন্দনা নদীর ওপর নির্ভর করে এলাকার কৃষকেরা এক সময় ফসল ফলাতেন। উৎপাদিত ফসলও নৌকায় করে বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাওয়া হতো। আজ সেসব স্মৃতি। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এই নদীটি শুধুই ইতিহাস। তাঁরা বিশ্বাসই করতে চান না; এই নদীতে এক সময় নৌযান চলতো।

কৃষক জাহাঙ্গীর উদ্দিন বলেন, পানিশূন্যতায় নদীটি মরে যাচ্ছে। নদীটি শুকিয়ে যাওয়ায় এ এলাকার সাধারণ মানুষের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। পানির অভাবে কৃষকেরা ফসল ফলাতে পারছেন না। নদীতে পানি না থাকায় জেলেরাও বেকার।

রেজাউল হক টুকু নামে একজন আক্ষেপ করে বলেন, ভূমিদস্যু ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের অবৈধ হস্তক্ষেপের কারণে একসময়ের খরস্রোতা চন্দনা নদী আজ জীর্ণশীর্ণ মরা খালে পরিণত হয়েছে। যত্রতত্র সেতু-কালভার্ট তৈরি করে নদীর নাব্যতা মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলে নদীটির অস্তিত্ব বিলীনের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। উন্নত জীবনযাপনের নামে পরিবেশ ধ্বংসাত্মক পরিণতির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

বালিয়াকান্দি বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদরুল বলেন, বিষয়টি ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাঁদের জানিয়েছেন। বাজারের কিছু ব্যবসায়ী চন্দনা নদীতে ময়লা ফেলেন। বিষয়টি তাঁরা কঠোরভাবে দমন করবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হাসিবুল হাসান বলেন, তাঁরা খুব শিগগিরই এই দখল ও দূষণ রোধে ব্যবস্থা নেবেন। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো ধরনের নদী দূষণ করা ও দখল নেওয়া যাবে না। পাশাপাশি হাটের ইজারাদার ও বাজার বণিক সমিতির সঙ্গে কথা বলে কড়া সতর্কতা দেওয়া হবে, যাতে বাজারের কোনো ময়লা-আবর্জনা নদীতে না ফেলে। সেই বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যেই কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত