হাসান মামুন
এই নিবন্ধ লেখার সময় আইএমএফের একটি মিশন রাজধানীতে বসে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে চলেছে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে। একগুচ্ছ শর্ত বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েই সরকার এ ঋণ নিয়েছে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সরকার এটা পেতে থাকবে সাত দফায়। এরই মধ্যে দেশে জাতীয় নির্বাচন হয়ে যাওয়ার কথা। তাতে সরকার পরিবর্তন হোক না হোক, আইএমএফের এ ঋণ কার্যক্রম চলতে থাকবে। ঋণ তো জোগানো হচ্ছে বাংলাদেশকে। এ দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সহজ করতে ঋণটি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আইএমএফও যথেষ্ট জেনে-বুঝে এটা জোগাতে সম্মত হয়েছে। তবে শর্তের বাস্তবায়ন প্রত্যাশিতভাবে না হলে ঋণের কিস্তি আটকে যেতে পারে। তাতে বাংলাদেশ সংকটে পড়ে যাবে, তা-ও নয়। যে কারণে এ ঋণ নিতে হচ্ছে, তত দিনে তার অনেকখানি দূর হয়েও যেতে পারে। তবে আইএমএফের মতো সংস্থার ঋণ লাভ ও এর কিস্তি পেতে থাকাটা দেশের ভাবমূর্তির জন্য ভালো। এমন একটি ঋণ পেলে প্রয়োজনে আরেকটি ঋণ পাওয়ার পথ হয়ে যায় প্রশস্ত। অতিসম্প্রতি বিশ্বব্যাংক থেকে ১২৫ কোটি ডলারের আরেকটি ঋণ অনুমোদিত হয়েছে বাংলাদেশের জন্য। বরাবরই বিভিন্ন প্রকল্প ও শর্তের আওতায় এসব ঋণ জোগানো হয়ে থাকে। ঋণের সদ্ব্যবহারের প্রশ্নও জোরালোভাবে রয়েছে। কেননা, এটি সুদাসলে সময়মতো ফেরত দিতে হবে। বিদেশি ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের রেকর্ড অবশ্য ভালো। এটাও অব্যাহতভাবে এসব উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থার ঋণসহায়তা লাভের বড় কারণ।
যা-ই হোক, ঢাকায় অবস্থানকালে প্রতিশ্রুত ঋণের শর্ত পালন নিয়ে আইএমএফ মিশনের গভীর আগ্রহ ও অনুসন্ধানের খবর ভালোই মিলছে। এই সুবাদে ২৮ এপ্রিলের সংবাদপত্রে খবর রয়েছে, আইএমএফের প্রস্তাবে সরকার প্রথমবারের মতো রাজি হয়েছে—পেনশন বাবদ সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যয়কে এখন থেকে আর সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। সঞ্চয়পত্রের সুদ সহায়তা বাবদ দেওয়া অর্থও এ খাতের বাইরে রাখা উচিত বলে মনে করে আইএমএফ। সরকার অবশ্য এখনো এটি করতে সম্মত হয়নি।
এ ধরনের আরও কিছু ব্যয়কে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের অংশ বলে দেখানো সংগত কি না, সে প্রশ্ন কিন্তু অনেক দিন ধরেই উত্থাপিত হচ্ছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন গবেষণা সংস্থায় কর্মরত অর্থনীতিবিদেরা বেশ আগে থেকে ধরে ধরে এসব ব্যয় নিয়ে ব্যাখ্যা করে বলছেন, কী কারণে এগুলো সামাজিক নিরাপত্তার অংশ হতে পারে না। পেনশন তো বটেই; সঞ্চয়পত্রও কিনে থাকে সমাজের অনেক বিত্তবান, যাঁরা ইতিমধ্যে আর্থসামাজিকভাবে সুরক্ষিত। জানি না, সরকার ঠিক কী যুক্তিতে প্রথম প্রস্তাবে রাজি হলেও দ্বিতীয় ব্যয়টিকে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বাইরে নিতে সম্মত হয়নি। তবে আশা করা যায়, ভবিষ্যতে হবে।
ভেবে আশ্চর্য হতে হয়, কীভাবে এত দিন এসব অযৌক্তিকতা লালন করা হয়েছে। পেনশন আর সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ সরকারের ব্যয় আবার অব্যাহতভাবে বাড়ছে এবং তা প্রদর্শিত হচ্ছে বাজেটে—সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারের ব্যয় হিসেবে। তাতে এটাকে বড় করে দেখানো যাচ্ছে হয়তো; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দরিদ্র ও দুস্থদের জন্য ব্যয় তো বেশি নয়। শুধু পেনশন বাবদ সরকারের ব্যয় অন্য খাতে প্রদর্শিত হলেই সামাজিক নিরাপত্তায় ব্যয় কমে আসবে প্রায় এক-চতুর্থাংশ!
আসছে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় আরও প্রায় ২০ শতাংশ বাড়বে বলে সম্প্রতি জানানো হয়েছিল। সরকারি সংস্থা বিবিএসের করা জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্য পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। তা সত্ত্বেও দরিদ্র ও দুস্থ মানুষ তো কম নেই। তাদের সুরক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নে সরকার যদি তার বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যয় বাড়ায় এবং সুষ্ঠুভাবে এর বাস্তবায়ন করে, তার প্রশংসা কে না করবে? প্রশ্ন হলো, আইএমএফ মিশনকে দেওয়া এ প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন সরকার আগামী বাজেটেই করবে কি না। দ্বিতীয় প্রশ্ন, যদি করে তাহলে তো সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কমে যাবে। কমে গেলেও অসুবিধা নেই; এতে সরকার ব্যয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও স্বচ্ছ হবে। যৎসামান্য হলেও এটা তার সার্বিক স্বচ্ছতার অংশ বলেই হবে বিবেচিত। দুঃখ করে বলার শুধু এই যে এই সংস্কার তো আইএমএফের চাপাচাপির আগে নিজেদের বিচারবুদ্ধি থেকে করাটাই কাম্য ছিল।
আইএমএফের মতো সংস্থা অবশ্য সমালোচিত তার ঋণের ‘গণবিরোধী’ শর্তের জন্য। স্থানীয় অর্থনীতির বিশেষ চাহিদা বিবেচনায় না নিয়ে সাধারণভাবে তারা কিছু শর্ত চাপিয়ে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ-সম্পর্কে আইএমএফ অনবহিত নয়। তবে তারা নিজ কাজের ধারা বহাল রাখতে ইচ্ছুক। সরকারও ওই সব শর্ত সময়মতো বাস্তবায়ন করবে বলে অঙ্গীকার করেই ঋণ নিয়ে থাকে। এখানে কোনো অস্বচ্ছতা নেই। আইএমএফের শর্তে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা ভালো কাজের পাশাপাশি অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টির কিছু ঘটনাও ঘটবে বৈকি। যেমন তারা সুদের হার সামঞ্জস্যপূর্ণ করার পক্ষে। এতে সঞ্চয়পত্রে সুদ আরও কমবে। এ খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়াও কমাতে বলছে তারা। সুদের হার কম আকর্ষণীয় হয়ে পড়ায় সঞ্চয়পত্র কেনা ইতিমধ্যে কমেও গেছে। এটা আরও কমলে সরকারকে বেশি করে রাজস্ব আহরণে মনোনিবেশ করতে হবে। আইএমএফ সুনির্দিষ্ট করেই বলেছে কবে নাগাদ কী পরিমাণ রাজস্ব বাড়াতে হবে। অর্থনীতি মন্দার শিকার হলে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো অবশ্য কঠিন। আরও কিছু দেশের মতো আমাদের অর্থনীতিও কিছুটা মন্দাক্রান্ত হয়ে পড়েছে বৈকি। গত ঈদের কেনাকাটায় তার কিছুটা হয়েছে প্রতিফলিত। বিদেশি মুদ্রার সংকটসহ নানা কারণে আমদানি কমে আসাও মন্দার বিষয়টিই সামনে আনে।
এ অবস্থায় সরকার রাজস্ব আহরণ বাড়াতে কোন শ্রেণির মানুষের ওপর চাপ বাড়ায়, সেটাই প্রশ্ন। ইতিমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম একযোগে বিপুলভাবে বাড়িয়ে ফেলায় জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, তা মানিয়ে চলার ক্ষমতা আছে কেবল বিত্তবানদের। এটা আসলে ভর্তুকি হ্রাসেরই অংশ। আইএমএফও সাধারণভাবে ভর্তুকিবিরোধী। তবে নিজেদের সম্পর্কে বলে থাকে–তারা নির্বিচার ভর্তুকির বিরুদ্ধে। সরকার যে রাসায়নিক সারের দাম গত কয়েক মাসে দুই দফায় বাড়িয়ে কৃষিতে উৎপাদন ব্যয় বাড়াল, সেটা নাকি আইএমএফের শর্তের মধ্যে নেই। সরকার নিজেই এটা করেছে অর্থসংকটে পড়ে। বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হচ্ছে দফায় দফায়। এটা যত না আইএমএফের শর্তে, তার চেয়ে বেশি অধিক ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চাপ মোকাবিলায়। এ ক্ষেত্রে বহুল আলোচিত ক্যাপাসিটি চার্জের খপ্পরে পড়েছে সরকার। এ জন্য তো আইএমএফকে দায়ী করা যাবে না। এ খাতে সময়োচিত পদক্ষেপের অভাব এবং অস্বচ্ছ চুক্তির বিষয়ও হচ্ছে আলোচিত। এর দায় কেন জনগণ বহন করবে, সে প্রশ্নও উঠেছে।
আমাদের আমদানিনির্ভর অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে উঠেছে বিশ্ববাজারে জরুরি খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায়। দেশে বিদেশি মুদ্রার সংকট পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। দেশ ফরেন রিজার্ভ সংকটে পড়েছে আইএমএফের কারণে নয়। প্রবাসী আয়ের প্রায় অর্ধেক এখনো আসছে হুন্ডিতে এবং সে কারণে অর্থটা দেশে এলেও রিজার্ভে যুক্ত হচ্ছে না। রিজার্ভের হিসাবায়নও এত দিন ধরে সঠিকভাবে করেনি সরকার। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয়ের মতোই এটাকে বাড়িয়ে দেখানোর প্রবণতা থেকে ‘এ মুহূর্তে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ’ না দেখিয়ে এটা থেকে ইতিমধ্যে বিযুক্ত তহবিলকেও রিজার্ভের অন্তর্ভুক্ত করে দেখিয়েছে এত দিন। আইএমএফের শর্তে ‘নিট রিজার্ভ’ দেখাতে এখন বাধ্য হবে সরকার। এভাবে বাধ্য হয়ে কাজ করাটা তো অগ্রহণযোগ্য। আর্থিক খাত পরিচালনা বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা যা-ই হোক না কেন, সে জায়গাটায় স্বচ্ছ হওয়া চাই নিজে থেকে।
খেলাপি ঋণ সীমার মধ্যে আনা এবং এ ক্ষেত্রেও হিসাবের কারচুপি থেকে বেরিয়ে আসার যে শর্ত দিয়েছে আইএমএফ, সেটাও আর্থিক শৃঙ্খলার পক্ষে যায়। ব্যাংকঋণ নিয়ে নজিরবিহীন কাণ্ড হচ্ছে দেশে এবং এর সঙ্গে অবধারিতভাবে রয়েছে অর্থ পাচারের সম্পর্ক। বাণিজ্যিক ব্যাংককে পরিবার ও গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে আসতে আইন সংস্কারের শর্তও ইতিবাচক। এটা তো সরকারের উচিত ছিল নিজে থেকে করে ফেলা। সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে এ ক্ষেত্রে অতীতে কী করা হয়েছিল, তা-ও কি আমাদের অজানা? সবশেষে বলা যায়, নিজে থেকে জরুরি সংস্কারগুলো সেরে ফেলে অর্থনীতি পরিচালনা করলে বাইরে থেকে এসে কারও শর্তারোপ বা চাপাচাপির সুযোগও বোধ হয় থাকে না।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
এই নিবন্ধ লেখার সময় আইএমএফের একটি মিশন রাজধানীতে বসে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে চলেছে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে। একগুচ্ছ শর্ত বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েই সরকার এ ঋণ নিয়েছে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সরকার এটা পেতে থাকবে সাত দফায়। এরই মধ্যে দেশে জাতীয় নির্বাচন হয়ে যাওয়ার কথা। তাতে সরকার পরিবর্তন হোক না হোক, আইএমএফের এ ঋণ কার্যক্রম চলতে থাকবে। ঋণ তো জোগানো হচ্ছে বাংলাদেশকে। এ দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সহজ করতে ঋণটি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আইএমএফও যথেষ্ট জেনে-বুঝে এটা জোগাতে সম্মত হয়েছে। তবে শর্তের বাস্তবায়ন প্রত্যাশিতভাবে না হলে ঋণের কিস্তি আটকে যেতে পারে। তাতে বাংলাদেশ সংকটে পড়ে যাবে, তা-ও নয়। যে কারণে এ ঋণ নিতে হচ্ছে, তত দিনে তার অনেকখানি দূর হয়েও যেতে পারে। তবে আইএমএফের মতো সংস্থার ঋণ লাভ ও এর কিস্তি পেতে থাকাটা দেশের ভাবমূর্তির জন্য ভালো। এমন একটি ঋণ পেলে প্রয়োজনে আরেকটি ঋণ পাওয়ার পথ হয়ে যায় প্রশস্ত। অতিসম্প্রতি বিশ্বব্যাংক থেকে ১২৫ কোটি ডলারের আরেকটি ঋণ অনুমোদিত হয়েছে বাংলাদেশের জন্য। বরাবরই বিভিন্ন প্রকল্প ও শর্তের আওতায় এসব ঋণ জোগানো হয়ে থাকে। ঋণের সদ্ব্যবহারের প্রশ্নও জোরালোভাবে রয়েছে। কেননা, এটি সুদাসলে সময়মতো ফেরত দিতে হবে। বিদেশি ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের রেকর্ড অবশ্য ভালো। এটাও অব্যাহতভাবে এসব উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থার ঋণসহায়তা লাভের বড় কারণ।
যা-ই হোক, ঢাকায় অবস্থানকালে প্রতিশ্রুত ঋণের শর্ত পালন নিয়ে আইএমএফ মিশনের গভীর আগ্রহ ও অনুসন্ধানের খবর ভালোই মিলছে। এই সুবাদে ২৮ এপ্রিলের সংবাদপত্রে খবর রয়েছে, আইএমএফের প্রস্তাবে সরকার প্রথমবারের মতো রাজি হয়েছে—পেনশন বাবদ সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যয়কে এখন থেকে আর সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। সঞ্চয়পত্রের সুদ সহায়তা বাবদ দেওয়া অর্থও এ খাতের বাইরে রাখা উচিত বলে মনে করে আইএমএফ। সরকার অবশ্য এখনো এটি করতে সম্মত হয়নি।
এ ধরনের আরও কিছু ব্যয়কে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের অংশ বলে দেখানো সংগত কি না, সে প্রশ্ন কিন্তু অনেক দিন ধরেই উত্থাপিত হচ্ছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন গবেষণা সংস্থায় কর্মরত অর্থনীতিবিদেরা বেশ আগে থেকে ধরে ধরে এসব ব্যয় নিয়ে ব্যাখ্যা করে বলছেন, কী কারণে এগুলো সামাজিক নিরাপত্তার অংশ হতে পারে না। পেনশন তো বটেই; সঞ্চয়পত্রও কিনে থাকে সমাজের অনেক বিত্তবান, যাঁরা ইতিমধ্যে আর্থসামাজিকভাবে সুরক্ষিত। জানি না, সরকার ঠিক কী যুক্তিতে প্রথম প্রস্তাবে রাজি হলেও দ্বিতীয় ব্যয়টিকে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বাইরে নিতে সম্মত হয়নি। তবে আশা করা যায়, ভবিষ্যতে হবে।
ভেবে আশ্চর্য হতে হয়, কীভাবে এত দিন এসব অযৌক্তিকতা লালন করা হয়েছে। পেনশন আর সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ সরকারের ব্যয় আবার অব্যাহতভাবে বাড়ছে এবং তা প্রদর্শিত হচ্ছে বাজেটে—সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারের ব্যয় হিসেবে। তাতে এটাকে বড় করে দেখানো যাচ্ছে হয়তো; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দরিদ্র ও দুস্থদের জন্য ব্যয় তো বেশি নয়। শুধু পেনশন বাবদ সরকারের ব্যয় অন্য খাতে প্রদর্শিত হলেই সামাজিক নিরাপত্তায় ব্যয় কমে আসবে প্রায় এক-চতুর্থাংশ!
আসছে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় আরও প্রায় ২০ শতাংশ বাড়বে বলে সম্প্রতি জানানো হয়েছিল। সরকারি সংস্থা বিবিএসের করা জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্য পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। তা সত্ত্বেও দরিদ্র ও দুস্থ মানুষ তো কম নেই। তাদের সুরক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নে সরকার যদি তার বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যয় বাড়ায় এবং সুষ্ঠুভাবে এর বাস্তবায়ন করে, তার প্রশংসা কে না করবে? প্রশ্ন হলো, আইএমএফ মিশনকে দেওয়া এ প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন সরকার আগামী বাজেটেই করবে কি না। দ্বিতীয় প্রশ্ন, যদি করে তাহলে তো সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কমে যাবে। কমে গেলেও অসুবিধা নেই; এতে সরকার ব্যয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও স্বচ্ছ হবে। যৎসামান্য হলেও এটা তার সার্বিক স্বচ্ছতার অংশ বলেই হবে বিবেচিত। দুঃখ করে বলার শুধু এই যে এই সংস্কার তো আইএমএফের চাপাচাপির আগে নিজেদের বিচারবুদ্ধি থেকে করাটাই কাম্য ছিল।
আইএমএফের মতো সংস্থা অবশ্য সমালোচিত তার ঋণের ‘গণবিরোধী’ শর্তের জন্য। স্থানীয় অর্থনীতির বিশেষ চাহিদা বিবেচনায় না নিয়ে সাধারণভাবে তারা কিছু শর্ত চাপিয়ে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ-সম্পর্কে আইএমএফ অনবহিত নয়। তবে তারা নিজ কাজের ধারা বহাল রাখতে ইচ্ছুক। সরকারও ওই সব শর্ত সময়মতো বাস্তবায়ন করবে বলে অঙ্গীকার করেই ঋণ নিয়ে থাকে। এখানে কোনো অস্বচ্ছতা নেই। আইএমএফের শর্তে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা ভালো কাজের পাশাপাশি অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টির কিছু ঘটনাও ঘটবে বৈকি। যেমন তারা সুদের হার সামঞ্জস্যপূর্ণ করার পক্ষে। এতে সঞ্চয়পত্রে সুদ আরও কমবে। এ খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়াও কমাতে বলছে তারা। সুদের হার কম আকর্ষণীয় হয়ে পড়ায় সঞ্চয়পত্র কেনা ইতিমধ্যে কমেও গেছে। এটা আরও কমলে সরকারকে বেশি করে রাজস্ব আহরণে মনোনিবেশ করতে হবে। আইএমএফ সুনির্দিষ্ট করেই বলেছে কবে নাগাদ কী পরিমাণ রাজস্ব বাড়াতে হবে। অর্থনীতি মন্দার শিকার হলে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো অবশ্য কঠিন। আরও কিছু দেশের মতো আমাদের অর্থনীতিও কিছুটা মন্দাক্রান্ত হয়ে পড়েছে বৈকি। গত ঈদের কেনাকাটায় তার কিছুটা হয়েছে প্রতিফলিত। বিদেশি মুদ্রার সংকটসহ নানা কারণে আমদানি কমে আসাও মন্দার বিষয়টিই সামনে আনে।
এ অবস্থায় সরকার রাজস্ব আহরণ বাড়াতে কোন শ্রেণির মানুষের ওপর চাপ বাড়ায়, সেটাই প্রশ্ন। ইতিমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম একযোগে বিপুলভাবে বাড়িয়ে ফেলায় জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, তা মানিয়ে চলার ক্ষমতা আছে কেবল বিত্তবানদের। এটা আসলে ভর্তুকি হ্রাসেরই অংশ। আইএমএফও সাধারণভাবে ভর্তুকিবিরোধী। তবে নিজেদের সম্পর্কে বলে থাকে–তারা নির্বিচার ভর্তুকির বিরুদ্ধে। সরকার যে রাসায়নিক সারের দাম গত কয়েক মাসে দুই দফায় বাড়িয়ে কৃষিতে উৎপাদন ব্যয় বাড়াল, সেটা নাকি আইএমএফের শর্তের মধ্যে নেই। সরকার নিজেই এটা করেছে অর্থসংকটে পড়ে। বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হচ্ছে দফায় দফায়। এটা যত না আইএমএফের শর্তে, তার চেয়ে বেশি অধিক ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চাপ মোকাবিলায়। এ ক্ষেত্রে বহুল আলোচিত ক্যাপাসিটি চার্জের খপ্পরে পড়েছে সরকার। এ জন্য তো আইএমএফকে দায়ী করা যাবে না। এ খাতে সময়োচিত পদক্ষেপের অভাব এবং অস্বচ্ছ চুক্তির বিষয়ও হচ্ছে আলোচিত। এর দায় কেন জনগণ বহন করবে, সে প্রশ্নও উঠেছে।
আমাদের আমদানিনির্ভর অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে উঠেছে বিশ্ববাজারে জরুরি খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায়। দেশে বিদেশি মুদ্রার সংকট পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। দেশ ফরেন রিজার্ভ সংকটে পড়েছে আইএমএফের কারণে নয়। প্রবাসী আয়ের প্রায় অর্ধেক এখনো আসছে হুন্ডিতে এবং সে কারণে অর্থটা দেশে এলেও রিজার্ভে যুক্ত হচ্ছে না। রিজার্ভের হিসাবায়নও এত দিন ধরে সঠিকভাবে করেনি সরকার। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয়ের মতোই এটাকে বাড়িয়ে দেখানোর প্রবণতা থেকে ‘এ মুহূর্তে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ’ না দেখিয়ে এটা থেকে ইতিমধ্যে বিযুক্ত তহবিলকেও রিজার্ভের অন্তর্ভুক্ত করে দেখিয়েছে এত দিন। আইএমএফের শর্তে ‘নিট রিজার্ভ’ দেখাতে এখন বাধ্য হবে সরকার। এভাবে বাধ্য হয়ে কাজ করাটা তো অগ্রহণযোগ্য। আর্থিক খাত পরিচালনা বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা যা-ই হোক না কেন, সে জায়গাটায় স্বচ্ছ হওয়া চাই নিজে থেকে।
খেলাপি ঋণ সীমার মধ্যে আনা এবং এ ক্ষেত্রেও হিসাবের কারচুপি থেকে বেরিয়ে আসার যে শর্ত দিয়েছে আইএমএফ, সেটাও আর্থিক শৃঙ্খলার পক্ষে যায়। ব্যাংকঋণ নিয়ে নজিরবিহীন কাণ্ড হচ্ছে দেশে এবং এর সঙ্গে অবধারিতভাবে রয়েছে অর্থ পাচারের সম্পর্ক। বাণিজ্যিক ব্যাংককে পরিবার ও গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে আসতে আইন সংস্কারের শর্তও ইতিবাচক। এটা তো সরকারের উচিত ছিল নিজে থেকে করে ফেলা। সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে এ ক্ষেত্রে অতীতে কী করা হয়েছিল, তা-ও কি আমাদের অজানা? সবশেষে বলা যায়, নিজে থেকে জরুরি সংস্কারগুলো সেরে ফেলে অর্থনীতি পরিচালনা করলে বাইরে থেকে এসে কারও শর্তারোপ বা চাপাচাপির সুযোগও বোধ হয় থাকে না।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪