Ajker Patrika

ছোট দুর্ঘটনায় বড় ঝুঁকিতে বিমান

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
আপডেট : ১৪ মে ২০২২, ১৭: ১৪
ছোট দুর্ঘটনায় বড় ঝুঁকিতে বিমান

দুর্ঘটনা যেন পিছু ছাড়ছে না বিমান বাংলাদশ এয়ারলাইনসের। রাষ্ট্রীয় এই সংস্থার উড়োজাহাজে ছোটখাটো দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। গত ছয় মাসেই দেশে-বিদেশে দুর্ঘটনা হয়েছে চারটি। এর মধ্যে তিনটিতে বড় ঝুঁকি থাকলেও, অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন যাত্রীরা।

বিমানের এসব দুর্ঘটনা নিয়ে কর্তৃপক্ষও খুব বিরক্ত। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোস্তফা কামাল নিজেই বলেছেন, স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) মেনে না চলার কারণেই দুর্ঘটনাগুলো হচ্ছে। তিনি সব সময় এসওপি মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন।

এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন কমিটির (এএআইসি-বিডি) প্রধান ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন এম রহমতুল্লাহ বলেছেন, গাফিলতির কারণে দৃশ্যত ছোট ছোট দুর্ঘটনা হচ্ছে। তবে ছোট দুর্ঘটনা থেকেই বড় দুর্ঘটনা ঘটে।

গত ১০ এপ্রিল শাহজালাল বিমান বন্দরের হ্যাঙ্গারে একটি বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজ বের করার সময় সেখানে থাকা আরেকটি বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজকে ধাক্কা দেয়। এ সময় দুটি উড়োজাহাজই বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনায় বিমানের প্রিন্সিপাল প্রকৌশলীসহ পাঁচজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।

ঘটনার এখানেই শেষ নয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার সময় বিমানের একটি ফ্লাইটের উইন্ডশিল্ডে ফাটল দেখা দেয়। সেখানে পরীক্ষার সময় ফাটল চিহ্নিত হওয়ায় ফিরতি ফ্লাইট বাতিল করা হয়। এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি সিলেট থেকে একটি ফ্লাইট ঢাকা আসার পথে ‘কোনো কারণ ছাড়াই’ ১০০ ভাগের বেশি ইমার্জেন্সি পাওয়ার ব্যবহার করছিলেন পাইলট। সামনের মনিটরে বিপৎসংকেত জ্বলে ওঠার পর তড়িঘড়ি করে স্বাভাবিক অবস্থায় যান পাইলট। ততক্ষণে ১৩ সেকেন্ড পেরিয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর কিছুক্ষণ থাকলেই আকাশে থাকা অবস্থায় আগুন ধরে যেত।

গত ৩০ নভেম্বর কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের সময় রানওয়েতে থাকা দুইটি গরুর সঙ্গে বিমানের ঢাকাগামী একটি উড়োজাহাজের ধাক্কা লাগে। এতে উড়োজাহাজটির পাখার ক্ষতি হয় ও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। অল্পের জন্য রক্ষা পান ৯৪ জন যাত্রী।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিমানে যেসব দুর্ঘটনা ঘটছে, সেগুলো খুবই সাধারণ। অথচ একটু সতর্ক হলেই এসব দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। তাঁদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আন্তরিকতার অভাবেই এসব দুর্ঘটনা ঘটছে।

জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাবেক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিদেশি এয়ারলাইনসে যে পরিমাণ দক্ষ পেশাজীবী লোকজন রয়েছে, বিমান বাংলাদেশে সেটা নেই। এখানে আছে শুধু দলাদলি আর ইউনিয়নবাজি। কোনো রকম জবাবদিহিও নেই। স্বাভাবিকভাবেই এসব নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের প্রভাব দৈনন্দিন কাজে পড়ছে।

১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি অভ্যন্তরীণ সেবার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বর্তমানে ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন কমিটির হিসাবে, এই সংস্থায় ২০২১ সাল পর্যন্ত ২৫টি দুর্ঘটনা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি বড় দুর্ঘটনা নথিভুক্ত করেছে কমিটি। ১৯৮৪ সালে একটি দুর্ঘটনায় ৪৯ জন প্রাণ হারান। এরপর ২০২২ সালে এ পর্যন্ত সংঘটিত তিনটিসহ মোট দুর্ঘটনা হয়েছে ২৮টি।

জানতে চাইলে এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এ টি এম নজরুল ইসলাম বলেন, এত দুর্ঘটনা হলেও কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, তা প্রকাশ করা হয়নি। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর মনেও সে প্রশ্ন। তিনি বলেন, সব দুর্ঘটনায় ব্যবস্থা নিলে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

মানিকগঞ্জে রাতের আঁধারে স্থানান্তর করা বিদ্যালয় ভবন পরিদর্শনে কর্মকর্তারা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত